অসুস্থতার জন্য সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে গল্প।
আসসালামু আলাইকুম,
প্রতিটা মানুষের জীবনে একটা গল্প থাকে,এই গল্পের মধ্যেই নিহিত থাকে জীবনের হাসি-কান্না,আনন্দ-বেদন,সফলতা-ব্যার্থতা,উত্থান-পতন।
এই প্রানের ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে অনেক ভাই-বোনের জীবনের গল্প পড়ে এত বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি যে নিজের জীবনের না বলা গল্পটা এই ভালো মানুষের পরিবারের সদস্য ভাই-বোনদের কাছে প্রকাশ করার সাহস সঞ্চার হয়েছে।
আমার জীবনের গল্পটি মূল্যবান সময় নিয়ে পড়ে লাইক ও গঠনমূলক কমেন্ট করার জন্য সকল ভাই-বোনদের কাছে বিনীত অনুরোধ রইলো।
.....আমার জীবনের গল্প....
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম......
সবার প্রতি আমার সালাম.............
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ








চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামে
আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা।
শুরুতে আমি আমার পরিবার সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেই আমাদের যৌথ পরিবার ছিলো আমার মা-বাবা,দাদা- দাদি কাকা-কাকি ফুফু। আমার বাবা পরিবারে বড় সন্তান ছিলো,আমিও আমার মা বাবার ০৫ সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান।বাবা বড় ছিলো বলেই পুরো পরিবারে চাপ আমার বাবা উপরে ছিলো। বাবা অনেক সংগ্রামের মধ্যে আমাদের পরিবার পরিচালনা করতেন।


আমি আমার পুরো পরিবারে বড় সন্তান ছিলাম সবার চোখের মনি ছিলাম।আমার এখনো পুরোপুরি মনে আছে আমার প্রথম স্কুলে যাবার কথা আমার দাদা তার সাথে সাথে আমাকে রাখতে আমার দাদা আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। আর প্রতি দিন নিয়ে যেতেন আর নিয়ে আসতেন।এভাবে চলে গেলো প্রথম শ্রোণি থেকে পঞ্চম শ্রোণি পর্যন্ত। আমি যখন হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছি তখন আমার দাদা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছু দিন পড়ে আমার দাদা মারা যায় ২০০০ সালে। তখন থেকে আমাদের যৌথ পরিবার ভাঙ্গা শুরু করে।তখন আমার একটা ছোট ভাই পৃথিবীতে আসে।আমার ফুপুর বিয়ে হয়ে যায়।আমার দাদার বেশ কিছু টাকা ঋণ ছিলো। আমার কাকা কাকি আলাদা হয়ে গেছেন আমার কাকা ঋণের টাকা দিতে রাজি ছিলনা। আমার বাবার পক্ষে তখন ঋণ দেওয়া সম্ভব ছিলনা। আমি আর কিছু দিন লেখাপড়া করে ছিলাম। বাবা কষ্ট দেখে মা আমাকে লেখাপড়ার ফাকে বাবার সাথে কৃষি কাজ শেখার জন্য দেয়। তারপরে আমার একটা বোন আসে পৃথিবীতে আমি আর বাবা আমার দাদা রেখে যাওয়া ঋণ শোধ করতে থাকি। ঋণ শোধ করার জন্য আমাদের বাবা ছেলে কে দিন রাত পরিশ্রম করতে হয়ছে। আমি দোকানে কাজ করতাম।রাত হলে আমরা বাবা ছেলে আমাদের বাড়ির সামনে একটা নদী ছিলো ওই নদীতে মাছ দরতাম। রাতে আমি ও বাবা ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারতাম না। আসলে কষ্টে বা দুঃখে না পরলে বোঝা যায় জীবন কতটা কঠিন।তখন বুঝেছি কঠোর পরিশ্রম করলে কিছু না কিছু আল্লহ মানুষকে দেয়। এভাবে ০৪ বছর লেগে গেছে আমার দাদার রেখে যাওয়া ঋণ শোধ করতে।
কিন্তু ছোট বেলায় আমি অনেক দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম।পড়াশোনা আমার ভালো লাগতো না তবে খেলাধূলা অমার অনেক ভালো লাগে।

আমি হাই স্কুল জীবনে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাই।আমার বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করে তার পর স্কুলে যাই,স্কুল শেষে আবার বাবার সাথে কৃষি কাজে সহযোগিতায় লেগে যাই।আমার বাবা ০৫ সন্তানের জনক বিধায় আমাদের পরিবারের খরচ জোগানো অনেক কষ্ট হয়ে যেতো ।এরপর দেখতে দেখতে আলহামদুলিল্লাহ এস এস সি পাস করি।তার পর কলজে ভর্তি হই।পড়ালেখা ও বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে করতে এইস এস সি পাস করি আলহামদুলিল্লাহ।

এইস এস সি পাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা জন্য চেষ্টা করার জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাই পরিবারের অভাবের কথা ভেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করি।তার পর শুরু হয় সামরিক জীবন। চলতে চলতে ০৪ বছর পর শারীরিক অসুস্থতা কারনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হই।অসুস্থতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে মেডিকেল বোর্ড আউট হয়ে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিতে হয়।তারপর আবার নিজ গ্রামের বাডীতে অবস্থান। বেকার সময় আর ভালো লাগেনা না ০৪ মাস পর একটি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষাকতার চাকুরী নেই।অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে ০৯ শিক্ষাকতা করি।ভাগ্যের চাকা পরিবতনের জন্য আমি আবার রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চলের জাপানি কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করি। এর পর গ্রামীন শক্তিতে ফিল্ড সুপারভাইজার হিসাবে যোগদান করি। প্রায় ০৪ বছর সাউথইস্ট ব্যাংক যোগদান করি।এর পর বতমানে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি।

সব সময় চিন্তা করি কিভাবে নিজের একটা সফল ও সুন্দর জীবন গডতে পারবো।হতাশা থেকে বের হয়ে ফেসবুকে সময় দিতে থাকি।
এর মধ্যে আমি ফেসবুক ভালো ভাবে চালাতে শুরু করি। ফেসবুক ব্যবহার করতে একদিন জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটি ভিডিও দেখতে পাই। স্যার এর কথা গুলো আমার অনেক ভালো লাগলো। এর পর থেকে স্যার ভিডিও গুলো নিয়মিত দেখতে থাকি।এর ফাউন্ডেশনের ফেসবুকে সময় দিতে থাকি। আমার রেজিষ্ট্রেশন করে দেন Abdul motin ভাই । ভাইয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা । Roknurzaman dider ভাই আমকে ধানমন্ডি জোন এ যুক্ত করেদেন। ভাইয়ার প্রতি অনেক কতৃতজ্ঞতা। আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের এই সুবিশাল এই ছায়াতলে এসে স্যার এর প্রতিটি বাক্য নিজেকে গডে তুলতে পারি। সেই প্রত্যাশায় আস্তে আস্তে লিজেন্ড ধানমন্ডি জোনে সেশন চচা অংশ গ্রহন করতে থাকি।রেগুলার মিট আপ, সেশন চচা ও বিভিন্ন ভলেন্টিয়ারিং কাজে নিয়োজিত থাকব ইনশাআল্লাহ।


১। প্রিয় স্যাররের মতো একজন ভালো ও মানবিক মানুষ পেয়েছি।
২। প্রিয় প্লাটফর্মে বিভিন্ন জেলা সহ নিজের জেলার কিছু প্রিয় ভাই ও বোন পেয়েছি যারা সবসময় পাশে থাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে।
৩। নিজেই নিজেকে প্রতিদিন তৈরি করতে পারছি হতাশা কেটে উঠতে পারছি।
৪। নতুন করে জীবন কে এগিয়ে নেওয়ার শক্তি ও সাহস অর্জন করতে পারছি।
৫। প্লাটফর্মে স্যারের সেশন ও ১৬ টি স্কিলস অর্জন করার চেষ্টা করছি।
৬। সর্বপরি একজন ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করছি।

সব সময় নিজে একটা কিছু করব এটা সবসময় মাথায় ঘূরপাক খায়।যে নিজে ভালো থাকে ও অন্যকে ভালো রাখে তিনি একজন ভালো মানুষ। শুধু ভালো মানুষের প্রতিযোগিতা হোক।
তাই স্বপ্ন দেখি নিজের জন্য, নতুন প্রজন্মের জন্য, দেশ ও জাতির জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও আমার লক্ষ্য আলহামদুলিল্লাহ।
আমি বর্তমানে অফলাইনে বিভিন্ন কোয়ালিটি সম্পন্ন সিলেটের চা পাতা নিয়ে কাজ করছি( সম্পূর্ণ কেমিক্যাল মুক্ত চা পাতা)। আমি প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে চাকুরীর পাশাপাশি পার টাইম প্রতিদিন ৪ ঘন্টা করে সময় ব্যায় করছি চা পাতার ব্যাবসা নিয়ে।আমার প্রথম মূলধন ৪০০০ টাকা দিয়ে শুরু হয়।আলহামদুলিল্লাহ এখন মাসে ১১৫০০০ টাকা সেলস হচ্ছে। আমার ব্যবসায়িক মেয়াদ ০৯ মাস চলিতেছে।


আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া ও ভালো মানূষ হওয়া।জীবনে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের শিক্ষা আমার জীবনের কাজে লাগাতে চাই। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।তাই লেগে আছি প্রিয় প্লাটফর্মের সাথে আগে শিখবো। সবাই আমার পাশে থাকবেন দোয়া করবেন আমি যেন সফল হতে পারি।



Date:- ২১/০৩/২৩




নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন গর্বিত আজীবন সদস্য





