বাবা থেকেও কাছে না থাকার যন্ত্রণা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আসসালামু আলাইকুম।
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
" বাবা থেকেও কাছে না থাকার যন্ত্রণা "
বাবা থেকেও কাছে না থাকার কি যন্ত্রনা,আমার জীবনের কস্টের বাস্তব গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। ফাউন্ডেশনের প্রিয় ভাই বোনদের প্রতি অনুরোধ করব দয়া করে গল্পটা একবার পড়ে দেখবেন।
শুরুতেই মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করছি কারণ তিনি আজও আমাদেরকে তাঁর এই সুন্দর ধরণীর বুকে সুস্থ রেখে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে দিচ্ছেন, এবং তার সমস্ত নেয়ামত ভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন। লাখো কোটি শুকরিয়া আলহামদুলিল্লাহ।
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই আমার প্রাণপ্রিয় মেন্টর লাখো তরুণ তরুণীর আইকন দিক নির্দেশক, পথ প্রদর্শক ভালো মানুষ গড়ার কারিগর, স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়া মানুষের মনে স্বপ্নের বীজ বপন করেন যিনি আমাদের প্রাণ প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। আল্লাহ আমাদের স্যারকে সুস্থ রাখুন ভালো রাখুন। স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা এত সুন্দর একটা ফাউন্ডেশন
উপহার পেয়েছি।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন সবাই আশা রাখি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আমিও রব্বুল আলামীনের দয়ায় ভালো আছি সুস্থ আছি। করোনার এই মহামারী থেকে আল্লাহ আমাদের সকলের পরিবার-পরিজনসহ সকলকে সুস্থ রাখুন ভালো রাখুন। এই মহামারী থেকে হেফাজত করুন।
আমার পরিবার বলতে আমার জন্মের পর যেখানে আমার বেড়ে ওঠা। পরিবার বলার কারণ হলো মেয়েদের কোন বাড়ি হয়না। বিয়ের আগে বাবার বাড়ি, বিয়ের পরে স্বামীর বাড়ি বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলের বাড়ি না হয় মেয়ে জামাইর বাড়ির মেয়েদের কোন জায়গায় বাড়ি নেই তারা যাযাবর।
* আমার শৈশব*
আমার বেড়ে ওঠা মোটামুটি এক স্বচ্ছল পরিবারে। আমি আমার বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। এখন আমি তাদের প্রথম সন্তান, প্রথম সন্তান এ জন্য আমার বড় এক বোন ছিলেন। তিনি এখন আর নেই এই দুনিয়ায়।
আল্লাহ তাকে বেহেস্ত দান করুন। আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তার চাকুরীর জন্য তখন ছুটি না পাওয়ায় তাদের প্রথম সন্তান আমার বড় বোনকে দেখতে পাননি। জন্মের ১১ দিন পর সে মারা যায়। এরপর আমার এই দুনিয়ায় আসাটা আমার পরিবারের জন্য ছিল খুবই আনন্দের।
* আমার বাবা *
যার কথা না বললেই নয় আমার বাবা তার যখন ২ বছর ৬ মাস বয়স তখন তার বাবাকে হারান। আমার দাদি ওই একমাত্র ছেলেকে বুকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেন। আমার বাবার আর কোনো ভাইবোন ছিল না। আবার আমার দাদাও ছিলেন একা। দাদা মারা যাওয়ার পর আমার দাদি শ্বশুর বাড়িতে থাকতে পারেননি, আমাদের এই সমাজের চিত্র যেটা মেয়েদের স্বামী মারা গেলে বেঁচে থাকতে হলে তাকে অনেক লড়াই করতে হয়। আমার বাবা ও তার নিজের বাড়িতে থাকতে পারলেন না, সে তার নানা বাড়িতে যেতে বাধ্য হলেন ওই সময় আমার বাবার দাদা দাদি বেঁচে ছিলেন। দাদা ভাল মানুষ ছিলেন, কিন্তু তার দাদু আমার দাদির উপর ভীষণ অত্যাচার করতেন।
বাধ্য হয়ে আমার দাদি তার বাবার বাড়ি থাকতে শুরু করেন। তারও কিছু বছর পর আমার বাবার দাদা মারা যান। তখন আবার আমার দাদি বাবাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। এভাবে আমার বাবা বড় হয়, এরপর সে বিয়ে করেন। তারপর চাকরিতে চলে যান। কিন্তু চাকুরীতে গেলেও আমার বংশের (বাড়ির) অন্য যারা ছিলেন তারা সবসময় চাইতেন আমার দাদি আর আমার আম্মু যেন এখানে না থাকে, তাহলে তাদের সুবিধা হয় বাড়িঘর জায়গা-জমি তারা সবকিছু ভোগ দখল করতে পারে।
এক সময় অত্যাচারের সীমা পার হয়ে যায় আমার বাবা চাকরি ছেড়ে দেন, এবং দেশ ছেড়ে দেশের বাইরে চলে যান। এদিকে আমরা পাঁচ ভাই বোন দুই বোন তিন ভাই, আমি মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমার বাবা বিদেশে চলে যায়। আমার দাদি আম্মু আর আমরা পাঁচ ভাই-বোন এই নিয়ে আমাদের দিন কাটে আমরা দুই বোন বড় ভাইয়েরা ছোট।
আমার বাবা দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পরি। আমাদের চারদিকে শত্রু জমির ফসল নারিকেল বাগান এর নারিকেল, সুপারি বাগানের সুপারি, কলা ক্ষেতের কলা, গোয়ালের গরু, হাঁস-মুরগি সব মানুষ চুরি করে নিয়ে যেত এমনকি রাত হলে পুকুরের মাছ ও চুরি করে নিয়ে যেত।
একটা ঘটনা বলি আমরা একটু নিরাপদে থাকার জন্য গ্রামের মানুষ বাড়িতে মানুষ কুকুর পোষে। আমাদেরও দুইটা কুকুর ছিল যে কুকুরের জন্য বাসার আশেপাশে চোর আসতে পারতো না ওরা একটা কুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে আর একটা কুকুর অসুস্থ হয়ে যায়। এই সুযোগে চোরের দল আমাদের গোয়ালে যে গরু গুলো ছিল কলাপাতায় বিষ দিয়ে রাতে গোয়ালে রেখে দেয় অবলা প্রাণী সেই কলাপাতা খেয়ে গোয়াল ঘরে মরে পড়ে থাকে। আমার ভাইরা ছোট ছোট ছিল ওরা কি করবে।
* আর এক রাতের ঘটনা *
কত বছর যে রাতে আমরা ঘরের জানালা দরজা খুলি নি। তখন ছিল পবিত্র রমজান মাস। প্রচন্ড গরম কারেন্ট ছিল না সারারাত ঘুম হয়নি সেহরি খাওয়ার সময় প্রায় হয়ে এলো আমরা ভাবলাম এত গরম একটু জানালা খুলি, ভয়ে ভয়ে জানালা মাত্র ছিটকানি খুলে একটা পাল্লা একটু খুলেছি আর সাথে সাথে ইটের খোয়া ছোরা শুরু অনেক কষ্টে জানালা বন্ধ করে দেই। মনে হয় সারারাত মানুষ বাসার চারপাশে অপেক্ষা করে থাকত কখন আমরা দরজা-জানালা খুলবো। কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেনি সকলে চেয়েছিল আমরা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাই। এক বাবা কাছে না থাকার কারণে। আর একদিন রাত আঁটটা কি নয়টা বাজে আমাদের রান্নাঘরে কারা যেন আগুন লাগিয়ে দেয়। এমন ঘটনা আমাদের সাথে প্রতিদিন ঘটতে থাকতো। শুধু এক বাবা আমাদের কাছে না থাকার জন্য।
* আমার আম্মু *
মমতাময়ী মা আমার ১৭ দিন বয়সে তার মাকে হারান। এতিম হয়ে তার দাদু আর ফুফু চাচাদের কাছে মানুষ হন। মা, না থাকলে দুনিয়ায় যা হয় এভাবে যখন সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে তখন তার বিয়ে হয় বিয়ের পরে সংসার সন্তান নিয়ে দিন কাটতে থাকলো। আমার বাবা আগেই বলেছিলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরীরত ছিলেন। মানুষের অন্যায় অত্যাচারের সীমা যখন পার হয়ে যায় আমার বাবা চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশের বাহিরে চলে গেলেন।সেই যে গেলেন
আর আসলেন দীর্ঘ ২২ বছর পর এই ২২ বছর আমার মা আমার জান্নাত আমাদেরকে বুকে নিয়ে তার জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে মানুষের জুলুম অত্যাচার সহ্য করে দীর্ঘ ২২টি বছর পার করে দিয়েছেন।
আরেকজনের কথা না বললে আল্লাহ আমাকে মাফ করবেন না। তিনি আমার দাদু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত দান করুন।আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেও বেশিদিন আমাদের মাঝে তাকে ধরে রাখতে পারেনি। তিনি আমাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। একমাত্র সন্তানের মুখ ও তিনি মৃত্যুর সময় দেখতে পাননি। আমরা আরও অসহায় হয়ে পরি।
এই ২২টি বছরে আমাদের কত উত্থান-পতন ততদিনে আমরা সব বড় হয়ে গিয়েছি। এমনও দিন যেতো কারো বাবা যখন তাদের ছেলেমেয়েদের কে আদর করত, বিশেষ করে দুই ঈদে বাবাকে আমরা খুব মিস করতাম, ভাবতাম রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যদি দেখতে পেতাম আমার বাবা হেঁটে আসতেছে কিন্তু তা হয়নি বাবা আসেনি কেউ মা বলে ডাক দেয় নি।
* এবার আসি আমার কথায়*
লেখা পড়ায় ভালোই ছিলাম ক্লাসে প্রথম দ্বিতীয় হতাম। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমার বাবা দেশের বাইরে চলে যায় আমি কিভাবে স্কুলে যাব চারিদিকে শত্রু আমাকে আর পড়াবেনা বাড়ির কাছে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়া হয়। সেখানে আমি মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পড়তে থাকি তিন চার মাস ওখানে আমি পড়ি। ওখানে কোন বাংলা ছিলনা হাফিজি মাদ্রাসা আমার গত তিন চার মাসে ১২ পারা কোরআন শরীফ মুখস্ত হয়ে যায় । এর ভিতরে আমার এক দুঃসম্পর্কের নানা হয় যিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমার দাদু কে বলেন নাতিকে কেন ওই মাদ্রাসায় দিয়েছেন ওতো পড়াশোনায় ভালো। আমার দাদু তখন বল্লেন কি করে স্কুলে দিবো ওর কোন বড় ভাই নাই, ওর বাবা দেশে নাই, স্কুল তো অনেক দূরে যদি কেউ ধরে নিয়ে যায় কোন অঘটন ঘটে তখন কে দেখবে, তিনি বললেন আমার মেয়ে তো ওর সাথে একসাথে পড়তো তাকে আমি আমার সাথে করে স্কুলে প্রতিদিন নিয়ে যাই নিয়ে আসি আপনি বললে আপনার দুই নাতনিকেও
আমি ভর্তি করে দিব। আর আমার সাথে আসা যাওয়া করবে, আমার দাদু রাজি হয়ে যায়। আমাকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। একটা কথা বলি আমার বাবা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাত ঠিকই কিন্তু সেই টাকা আমরা পেতাম না কারণ পোস্ট অফিস থেকে টাকা আমার দাদী,চাচা উনারাই তুলে নিয়ে যেত, টাকা থাকতেও আমরা ভোগ করতে পারতাম না, আমরা ঠিকমত বাজার করতে পারতাম না। আমার রেজাল্ট ভাল হওয়ার কারণে স্কুল থেকে আমাকে বেতন ফ্রি করে দেওয়া হয়েছিল। টাকা পয়সা থাকতেও না থাকার না পাওয়ার যে কি যন্ত্রনা এটা যারা পায়নি তারা বুঝবে না।
এমনি করে আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকে আমার বিয়ের প্রস্তাব আসে আমার আম্মু দাদু ভেবে পায় না কি করবে, এত কম বয়সে তারা বিয়ে দিতে রাজি হয় না আবার ভয়ও পায় যদি কেউ তুলে নিয়ে যায় কেউ ক্ষতি করে দেয় ওই যে বাবা কাছে না থাকা।
যখন আমি নবম শ্রেণীতে উঠি তখন আমার বিয়ে হয় কিন্তু শ্বসুর বাড়ীর লোকেরা প্রথমে বলেছিল আমাকে পড়াশোনা করাবে, কিন্তু বিয়ের পরে তারা আমাকে বলে পড়াশুনা করতে দিবেনা। এক প্রকার জোর করে নিজের প্রচন্ড মনোবল থাকার কারণে পড়াশুনা চালিয়ে যাই দশম শ্রেণীতে যখন উঠি তখন আমার প্রথম সন্তান হয়। এরপর এস,এস,সি পাস করি।কিন্তু আমাকে কলেজে পড়াবে না অনেক অনুরোধ কাকুতি-মিনতি করে বাবার বাড়ি থেকে টাকা চেয়ে এনে নিয়ে কলেজে ভর্তি হই। আমার বাচ্চা তখন আমার দাদুর কাছে রেখে আমি কলেজে যেতাম আমাকে লেখাপড়ার জন্য কোন টাকা-পয়সা দেয়া হতো না। আমার কলেজ ছিল আমার বাড়ি থেকে প্রায় ৯/১০ কিলোমিটার দূরে আবার একটা বড় নদী পার হয়ে যেতে হতো ওই সময় বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে যেতে হতো বাস স্টান্ডে ওখান থেকে বাসে করে নদীর ঘাট পর্যন্ত যেতাম। তখন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ১ টাকা করে বাসে যাতায়াত ভাড়া নেয়া হত।আসা যাওয়া ২ টাকা ভাড়া নেয়া হত। নদী পার হওয়ার জন্য নৌকা ছিল ওখানে ভাড়া দিতে হতো না বছরে একবার হালখাতা করতে হতো নদী পার হয়ে ওপারের যেয়ে আবার হাঁটা শুরু আবার প্রায় ১ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হতো এভাবে ফেরার পথে প্রচন্ড ক্ষুধা লেগে যেত, আমার আর একটা ক্লাস মেট ছিল আমারই এলাকার দুজনে একত্রে কলেজে যেতাম যেদিন আমাদের কাছে বাস ভাড়া দুজনার দুই টাকা করে চার টাকার বেশি থাকত সেদিন আমরা দুই টাকার চানাচুর আর এক টাকার মুড়ি খেতাম দুজন মিলে। কারণ বাবা দেশে নাই, ঠিকমত টাকা পয়সা দিতে পারত না। আর আমার স্বামী সে আমাকে পড়াশোনা করাবে না তাহলে টাকা দেবে কেন?
একটা কথা না বললেই না আমি যখন এইচ,এস,সি পরীক্ষা দিব তখন আমার সন্তানের বাবা আবার দেশের বাহিরে চলে যায় আমার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন খাওয়া-দাওয়া পোশাক-পরিচ্ছেদ সব কিছুতে কষ্ট দেয়া, এভাবে দিন চলতে থাকে আমার এইচ,এস,সি পরীক্ষা শেষ, রেজাল্টও আসে আমি খুব ভালোভাবে পাশ করি। আমি অনার্স পড়তে চাইলে আমাকে বলে আর পড়াশোনা করতে হবে না।
আবার সেই অনেক কাকুতি-মিনতি করে এখান থেকে ওখান থেকে টাকা এনে বি,এ ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পরে আমি কখনো ক্লাস করি নি কলেজে যাইনি এখানে আমার এক ক্লাসমেট এর কথা না বললেই না ও প্রতিদিন ক্লাস করত আর ক্লাস করে বাড়ি ফেরার পথে আমাকে ক্লাসে যে পড়া গুলি দিত সেগুলো বলে যেত এবং পরীক্ষার আগে আগে আমাকে নোটস সাজেশন
কলেজ থেকে এনে দিয়ে যেত।
এভাবে বি,এ পরীক্ষা এসে যায় আমার সন্তানের বাবা আমার বি,এ পরীক্ষার অনেক আগেই দেশে আসে আমার দ্বিতীয় সন্তান তখন আমার গর্ভে আমি ওই সময় একটু অসুস্থ ছিলাম ডাক্তার আমাকে রিক্সা, ভ্যান গাড়িতে জার্নি করতে বারণ করেছে কারণ বাচ্চার সমস্যা হতে পারে। আমার পরীক্ষার হল বাড়ি থেকে ৮/৯ কিলোমিটার দূরে ঐ উপজেলার কোন বাসায় থেকে আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে। আমার সন্তানের বাবা বলে সে আমার সাথে যাবে না, আমাকে একা একা যেতে বলে। পরে আমি একা একা যাই। তারা জানে যে আমার শরীর কতটা খারাপ। তারা চেয়েছিল আমি যেন পরীক্ষা দিতে না পারি। আমার শরীর কতটা খারাপ ছিল তারা সেটা জানে। আমার সন্তানের বাবা সে তার গ্রামের বাড়িতে তার পরিবারের সাথে থেকে যায়, আমি যেখানে থেকে পরীক্ষা দিয়েছি
সেখানে কোন আত্নীয় স্বজন ছিল না,অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ এক কিলোমিটার হেটে পরীক্ষার হলে যেতে হতো আবার আসতে হতো এভাবে আল্লাহর রহমতে পরীক্ষা শেষ করে আমি বাবার বাড়ি ফিরে আসি পরীক্ষা ৩ মাস পর আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়।
কিছুদিন পরে রেজাল্ট দেয় আমি খুব ভালোভাবে বি,এ পাস করি। আলহামদুলিল্লাহ। আবার এম,এ ভর্তি হওয়ার পালা তারা আর পড়াবেনা জানিয়ে দেয়। যাইহোক অনেক চেস্টা করে আবার ভর্তি হই এম, এ ফাইনাল পরীক্ষা আসে আমাকে আর ফরম ফিলাপ করতে দেয়া হয় না আমি আর পরীক্ষা দিতে পারলাম না।এর মধ্যে আমার একটা চাকুরী হয় শিক্ষকতা পেশায় তো আমি ওই পশায় মন বসাতে পারছিলাম না ওই পেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় আমি একটি আন্তর্জাতিক মানের এন জি ও তে সার্কুলার পাই আমি দরখাস্ত করি যথাসময়ে আমার ইন্টারভিউর জন্য ডাক আসে আমি ঢাকায় এসে ইন্টারভিউতে জয়েন করি লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করি। কয়েকদিন পরে রেজাল্ট হয় আমি সেখানে সিলেক্ট হই আমার নতুন চাকুরী জীবন শুরু হয়, কিন্তু আমার সন্তানের বাবা বা আমার শশুর বাড়ির পরিবার এগুলো পছন্দ করতেন না তারা ভাবতো যে আমি ভালো কিছু করলে তারা ছোট হয়ে যাবে বা আমার হাজব্যান্ড আমার চেয়ে ছোট হয়ে যাবে।
আমার সন্তানদের বাবা আবার দেশের বাইরে চলে যায়, আর আমাকে বলে চাকরি ছেড়ে দিতে আমি তার কোন কথা শুনেনি। চাকুরী ছাড়িনি তার দেশের না থাকার সুযোগে আমি আবার এম, এ ভর্তি হই চাকুরী ছেলে, মেয়ে লেখা, পড়া নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে ছিল। ঠিক এম,এ পরীক্ষার ফরম ফিলাপের আগে দেশে চলে আসে এসে একই কথা পরীক্ষা দিতে হবে না, আমার পড়াশুনা ছেলে মেয়ের সব খরচ আমি বহন করেছি সে কিছুই করেনি। তারপরও সে পুরুষ তার পুরুষত্ব আমার উপরে ফলাতে হবে। যাইহোক ফরম ফিলাপ করি, যথা সময়ে পরীক্ষা এসে যায় পরীক্ষাও দেই কিন্তু সে জানে না আমি অফিসের কথা বলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি সে বুঝতে পারিনি আমি পরীক্ষা দিচ্ছি এ বিষয়ে আমার অফিস কলিগরা আমাকে সহযোগিতা করেন।
যথাসময়ে রেজাল্ট বের হয় রেজাল্ট প্রতিবারের মতো ভালো হয় সে তখন দেখে, কি করে পরীক্ষা দিলাম এত ভালো রেজাল্ট এ পর্যন্ত যতগুলো পরীক্ষা দিয়েছি তার চেয়ে আমার রেজাল্ট অনেক ভালো ছিল।
এই চাকুরী করা অবস্থায় সে যখন দেশের বাহিরে ছিল আমি ওই দুই বছরে কোন দিন শুক্রবার ছুটি নেই নাই। যে উপজেলায় আমি চাকুরী করতাম সেখানে ১৭ টা অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াই ১১টা মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করি।
ওই ১৭ টা পরিবারের মায়েদের বিনা টাকায় সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে মেশিন কিনে দেই এবং ৫ হাজার টাকার কাপড় কিনে দেই যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে এবং তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে।
চাকুরী জীবন ভালই চলতেছিল সেখানেও আমি প্রতিটা ধাপে ভালো করি এবং প্রমোশন হতে থাকে। কিন্তু যত ভালো চাকুরী করি না কেন আত্মতৃপ্তি ছিলনা বাঁধাধরা নিয়ম মেনে নয়টা-পাঁচটা অফিস ভালো লাগতো না। শুধু মনে হতো নিজে কিছু করি স্বাধীনভাবে যতটুকু সম্ভব নিজের জন্য নিজের কিছু হবে সব সময় ভাবতাম কি করা যায়, কি করব কি করা উচিৎ। কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় ইউটিউব, ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইনে থাকতে থাকতে একদিন আমার সামনে চলে আসলো নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন যেখানে আছেন আমাদের সকলের নয়ন মনি
পরম শ্রদ্ধার ভালোবাসার পথপ্রদর্শক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। ওইখান থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু কিছু জানতে পারলাম এরপর প্রতিদিন স্যারের সেশন গুলো ফলো করি এবং ১ থেকে ৯০ তম সব গুলো সেশন ফলো করেছি। সপ্তম ব্যাচ থেকে দেখা শুরু এর ভিতরে অনেক দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তারপর ১৩ তম ব্যাচের সময় ভাবলাম কী ভাবে এই লাখো-কোটি ভালো মানুষের ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়া যায়। এরপর একদিন এই ফাউন্ডেশনে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। তখন বুঝিনি কিভাবে পরিচিতি পোস্ট দিব সবার সাথে পরিচিত হব ওই মুহূর্তে পেয়ে গেলাম আমার প্রিয় ফাউন্ডেশনের কয়েকজন ভালো মনের ভাই-বোনকে যাদের কথা না বললেই না যেমন, মাসুদ রানা ভাই, পলাশ ভাই, শেখ আল আমিন ভাই, জাহিদ জুম্মান ভাই, ইনায়া ইসলাম বৃষ্টি আপু, জাকিয়া মুন আপু, তারপরে যাকে পেয়েছি তারপর আমি যাকে পেয়েছি তিনি হলেন আমাদের সকলের প্রিয় আল মামুন ভাইয়া (কান্ট্রি এম্বাসেডর, মরিশাস)এই ফাউন্ডেশনের প্রচন্ড একজন অ্যাক্টিভ ভালো মনের মানুষ। তাদের সকলের সহযোগিতায় বিভিন্ন গ্রুপে এবং মাসিক মিট আপে যুক্ত থাকা আরও অনেক ভাই বোনের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য তারা অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাদেরকে আমি ধন্যবাদ দিব না তাদের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা ও শুভ কামনা।
এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। আমি প্রতি মুহূর্তে শিখছি, কিভাবে ভাল মানুষ এবং কিভাবে তিলে তিলে একজন উদ্যোক্তা তৈরি হয়। এটা এমন একটা ফাউন্ডেশন যেখানে না এলে আমি কিছুই জানতে পারতাম না আমার মনের লুকায়িত স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যেত। উদ্যোক্তা হতে হলে প্রচণ্ড মানসিক সাহস থাকা দরকার। যে কোনো সময় ঝড় এলে মোকাবেলা যেন করতে পারি, মনোবল হারিয়ে না ফেলি মনের মাঝে প্রচন্ড আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করা এবং নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করে এগিয়ে যাব বহুদূরে। আশা রাখি আমার প্রিয় ভাই বোনদেরকে চলার পথে সব সময় পাশে পাব ইনশাআল্লাহ। আমি প্রিয় এই ফাউন্ডেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে আপনাদের পাশে থেকে সকলের মজ্ঞলে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই,আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
লেখার মাঝে ভুলত্রুটি হলে সবাই ক্ষমার দৃস্টিতে দেখবেন।
এতক্ষন আপনাদের মুল্যবান সময় ব্যয় করে আমার লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সব শেষে সকলের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে, আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
শুভেছান্তেঃ
আসমা আখতার মিতা।
ব্যাচ নং ১৩
রেজিস্ট্রেশন নম্বরঃ ৫৩০৭৯
জেলাঃ- বাগেরহাট।
বর্তমান বসবাস উত্তরা, ঢাকা।