বাবা হারানোর বেদনা
🌹বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
🌹আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওবারকাতুহু।
🌹শুরু করছি মহান আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তার বান্দা হিসেবে।
🤲শুকরিয়া আদায় করছি সেই মহান প্রতিপালক মহান আল্লাহর প্রতি যিনি আমাকে এবং নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশনের সকল ভাই বোনকে এর নেয়ামত ভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন আলহামদুুলিল্লাহ্।
🌹দুরুদে সালাম পাঠ করছি আমাদের বিশ্ব নবী, প্রানের নবী,আমাদের একমাত্র নেতা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি।
🙏শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রানপ্রিয় শিক্ষক, মেন্টর, একজন সপ্নবাজ মানুষ, বর্তমান প্রজন্মের আইডল, সমাজের একজন নিবেদিতপ্রাণ, "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব, Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি। সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে আমার জীবনের ছোট এই গল্পটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অনেক অনেক ভালবাসা জানাচ্ছি আপনাদের।
❤️বাবা হারানোর বেদনা ❤️
🌿আজ আব্বা আমাদের মাঝে নেই!😥 আজ আব্বা ছাড়া আমাদের ২৪ বছর! আব্বা চলে যাওয়ার পর, শিখেছি অনেক বাস্তবতা, দেখেছি অনেক নিষ্ঠুরতা।😶 মানুষকে আল্লাহ অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন। সেই অসাধারণ সুন্দর নিয়ামতের একটি সন্তানের জন্য তার মা-বাবা। বাবা সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো, সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় তাঁকে, আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। বাবার তুলনা বাবাই। যার কল্যাণে এই পৃথিবীর রূপ, রং ও আলোর দর্শন। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবাকেই আদর্শ মনে করে সন্তানেরা। বাবা সন্তানকে শেখান কীভাবে মাথা উঁচু করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়।
🌿বাবার মাঝে জড়িয়ে আছে বিশালত্তের এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ ।” ” বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন বয়সী সন্তানের হ্রদয়ে শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার এক অনুভব জাগে ।” ” একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কতভাবে অবদান রেখে যান, তার চুলচেড়া হিসাব কেউ কোনদিন বের করতে পারবে না ।”
🌿আমার আব্বা’-এই দুটি শব্দের মধ্যে নিহিত আছে বাবার জন্য আমার বলা না-বলা যত আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, গর্ব; তাঁকে হারানোর কষ্ট আর অশ্রু। আব্বু আমাদের কাউকে কিছু না বলে, কাউকে কিছু করার কোনো সুযোগ না দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলেন বাবা। বাবা থাকতেন প্রবাসে তখন ছিল না টেলিফোন ছিল না ফ্যাক্স আমাদের হাতের নাগালে। বাবা তার কিছুদিন পরেই দেশে ফেরার কথা ছিল। ফিরেছেন ঠিকই কিন্তু অসুস্থ হঠাৎ দেখি একদিন বাবা বাড়িতে চলে আসলেন। পাশের বাসার এক আংকেলের সাথে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আসছে । আমরাতো অবাক হঠাৎ কি হয়েছে! বাবাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আসছে কেন সে? বাবার কাছে গেলাম বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরল কোলে নিল চুমু খেলো আদর করে দিল।
🌿 বুঝতে পারলাম বাবা অসুস্থ অনেক অনেক মেডিসিন বাবার সাথে প্রবাসে নাকি হসপিটালে ছিল বেশ কিছুদিন। সেটা আমরা জানতাম না। আমি তখন অনেক ছোট ক্লাস সিক্সে পড়ি একা একা বাজারে গেলাম বাবা মা কে বার বার জিজ্ঞেস করেছিল আমি ঠিক মত আসতে পরব?পরের দিন সকালে বাবার সাথে বসে দাদু সহ নাস্তা করলাম। তখন মনে হয়েছিল বাবা সুস্থ হয়ে উঠছেন।তার ঠিক তিন দিন পর বাবার বুকে আবার হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা আর সেই ব্যথা আমারা সবাই বাবার কাছে আমার বাবা চলে গেলেন আল্লাহর কাছে। আর কখনো আব্বার সঙ্গে দেখা হবে না, কথা হবে না এটি আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। জীবন বহমান। সকল হারানো কিংবা শোক-তাপের ঊর্ধ্বেও জীবন স্বীয় গতিতে চলবে। এটাই চিরন্তন সত্য। স্মৃতি শুধুই স্মৃতি। কিছু স্মৃতি বড়ই বেদনাদায়ক। কিন্তু স্মৃতিকে যেমন ভুলে থাকা যায় না, তেমনি অস্বীকারও করা যায় না। আমি জানি, আমি আমার বাবাকে কতটা ভালোবাসি। কিন্তু আজ আমার সেই ভালোবাসা আমি কাকে প্রদর্শন করব? কাকে আমি সেই প্রিয় ‘আব্বা’ বলে ডাকব? আমার ভাগ্যবিড়ম্বিত এই আক্ষেপ অন্তরের। এই জ্বালা কি কোনো দিন নিভবে? আহ! দেখতে দেখতে আর হোচঠ খেতে খেতে আজ ২৪ বছর পার করে ফেলেছি, আমি আব্বাহীন অসহায়।
এখান থেকে শুরু আমার মায়ের যুদ্ধ একরকম যুদ্ধ জীবনের সাথে
🌿বাবা, তোমাকে মনে পড়ে
আমার স্বপ্নভঙ্গের দিনগুলোতে
কিংবা পরম সুখের মূহুর্তগুলোতেও
বাবা, তোমাকে মনে পড়ে
খুব মনে পড়ে!
🌿যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি
মাথার উপর তোমাকেই পেয়েছি,
সেই অভাবও মিটিয়েছ তুমি
অনেক আদরে, পরম স্নেহ মায়ায়
আজ তুমিহীনা কষ্টের প্রহরগুলো
বুকের ভিতর জমাট কান্নার ঢেউ তুলে যায়!
🌿প্রতিদিন ঘর হতে বের হবার সময় তুমি বলতে
সাবধানে চলিস বাবা!
আমি হেসে বলতাম, তোমার দোয়া সাথে আছে তো!
🌿বাসায় ফেরার সময়ও দেখতাম
দাঁড়িয়ে আছ তুমি বারান্দায়
তীর্থের কাকের মত! আমার অপেক্ষায়,
আজ তুমি নেই, আমি একা; বড় একা!
আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেনা কেউ আর বারান্দায়,
মাথায় রাখেনা ভরসার হাত!
🌿তোমাকে দেয়া কথাগুলো এখনও ভুলিনি বাবা!
তোমার শেখানো পথে আজও হেঁটে চলেছি
দুর্গম সে পথে ঝড় আসে, ঝঞ্ঝা আসে
তবু ছুটে চলি অবিরাম, জানি
পাশে আছ তুমি; ছায়ার মত!
🌿বিষাদে ছেয়ে যাওয়া মনটা
বার বার খুঁজে ফেরে শুধু তোমায়
চোখের কোণে তপ্ত জল জমে,
মাঝে মাঝে বড্ড জ্বালা করে চোখদুটো,
বার বার তোমাকে মনে পড়ে যায়
খুব মনে পড়ে!
খুব!!
🌿তার পর থেকে শুরু আমার মা এর জীবন যুদ্ধ আমাদের দুই ভাইকে পড়াশোনা করানো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মারা যাওয়া ও পরিবারের চাকা থমকিয়ে যাওয়া।
বাবার রেখে যাওয়া কিছু টাকা এই ছিল আমাদের একমাত্র সম্বল আবার সেই টাকা ছিল বাবার একাউন্টে ঐ টাকা তুলতে পারবোনা দাদুকে ছাড়া এই দিকে আমার বড পুফা আমার দাদুকে উল্টো পাল্টা বুদ্ধি দিয়ে দাদুকে টিপ সই দিতে বারন করেন। আমার চাচা রা তখনো প্রবাসে আমার মামা ও তাদের সাথে প্রবাসে জব করতেন একই কোম্পানিতে সবাই মিলে বসে দাদুকে বোঝানোর চেষ্টা পরিশেষে দাদু রাজি হলেন।
মা আমার মামার সহযোগিতা নিয়ে এই সামান্য টাকা সম্বল নিয়ে আমাদের মানুষ করেন।
আমি মোটামুটি তখন বুঝতাম আমার মা অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের মানুষ করতে গিয়ে আমার বাবার পরিবার থেকে এতটা সাপোর্ট হয়নি কিন্তু আমার মামা ছিলেন আমাদের সকল দুখের সাথে আজও আছেন আমাদের বুদ্ধি পরামর্শ দেন। আমরা আজ অব্দি মা আমাকে ছাড়া কোন
🌿যার কথা না বললেই না তিনি আমার কাছে দুঃসময় আল্লাহর দেওয়া এক দয়া আমার বাবার বস ভদ্র লোক লেবাননের আদিবাসী আমাদের প্রতি মাসে লেখা পড়ার খরচ এর জন্য টাকা দিতেন। আমাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে আমাদের খোঁজখবর নিতেন। পরিশেষে প্রবাসে এসে ভদ্রলোকের সাথে দেখা হল আঙ্কেল কে জরিয়ে ধরলাম আঙ্কেলও আমাকে অনেকে স্নান করল আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুক সব সময়।
আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
🌿বাবার যে কম্পানিতে চাকরি করতেন আমি এখন একই কম্পানিতে চাকরি করি। আমার বাবার কলিগদের কাছে বাবার প্রশংসা শুনে নিজেকে গর্বিত মনে হয়। বাবা বেঁচে থাকলে আজ আমাকে এতো চিন্তা করতে হতো না।
🌿আজ আমি প্রবাসী নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন কি করব দেশে গিয়ে কি নিয়ে শুরু করব নিজের জীবন। তখনই খুঁজে পেলাম। #নিজের বলার মত একটি গল্প প্ল্যাটফর্ম। এখন যেন একটু একটু করে স্বস্তির নিঃশ্বাস পাচ্ছি। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
বাবা সবসময় বলতেন দেশে চলে যাবে গিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করবে। স্বপ্ন আজ আদুরা হয়ে রয়ে গেল।
🌿আব্বা তোমার মতো আমাকে আপন করে আর কেউ ভালোবাসে না। আব্বার মতো মমত্ব নিয়ে কেউ তো আর এল না এ জীবনে। কেউ আর আব্বুর মতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসে না। সবার ভালোবাসার ভণিতার মাঝে স্বার্থ কাজ করে। সবাই ভালোবাসার অভিনয় করে বিনিময়ে কিছু নিতে চায়। কিন্তু বাবা, তুমিত তো কিছুই নিতে চাও নি, শুধু দিতে চাইতে। পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা নেই, এমন কোনো সাহিত্য নেই, যা দিয়ে আমার মনের এ ক্ষতকে প্রকাশ করতে পারব। এমন কোনো সান্ত্বনার বাণী নেই, যা শুনিয়ে আমার বুকের মাঝে পাথরচাপা কষ্টগুলোকে কমানো যাবে। আমার আব্বা নেই। আমার বটবৃক্ষ নেই। যে আমার জন্ম থেকে তার শীতল ছায়া দিয়ে বড় করেছে। এখন গ্রীষ্মের দাবদাহে আমার গা পুড়ে ছারখার হলেও। কেউ আর বটবৃক্ষের ছায়া নিয়ে আমার পাশে দাঁড়াবে না। কেউ না। হয়ত আমি সূর্যের তেজে মোমের মতো গলে গলে নিঃশেষ হয়ে যাব ধীরে ধীরে।
🌿আমার আব্বা ছিল একজন ভালো ও নীতি–আদর্শবান ছিলেন। তিনি ছিলেন বললে ভুল হবে, তিনি এখনো আমাদের সঙ্গে প্রতিমুহূর্তে থাকেন, এটা আমার অনুভব, আমার বিশ্বাস। আমার জন্ম ও শিক্ষাজীবনের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত। চলার পথে, কি পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে, কি পেশা/চাকরি জীবন ক্ষেত্রে, আব্বা আমার, তার মেধা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাকে তাঁর প্রশস্তবুকে আগলে রেখেছিলেন। এখন কোনো বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়ি। অভিভাবকহীনতার কষ্টে ভুগি। এখন কেউ বলার নেই, থাম, দেখছি, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ, সব ঠিক হয়ে যাবে, নিজে ভালো তো জগৎ ভালো- নিজে ভালো থাকলে, ঠিক থাকলে, সবই ভালো থাকে বা হয়। মাথায় স্নেহের হাত বোলানোর কেউ নেই। আব্বা থাকতে মনে হতো না আমি বড় হয়েছি, মনে হতো এখনো ছোট আছি।
🌿এখন মনে হয় বয়স হয়েছে, নিজেরই বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আব্বু হারানোর ব্যথা বা আব্বুহীন জীবনের কষ্ট ভয়ানক। যে বাবা হারায়নি, সে এই ব্যথা বুঝবে না। আমার আব্বা অনেক সময় আমাকে বলতেন, তুমি খুব আবেগপ্রবণ, বাস্তববাদী না, ঠিক সময় ঠিক কাজ করতে পারি না, যার কারণে অনেক সময় অনেক সমস্যায় পরেছি। এখন আব্বার কথা গুলার প্রমাণ পাচ্ছি! 😶 আব্বা আমাদের জন্য তাঁর আদর্শ রেখে গেছেন। না, আদর্শ মানে গালভরা কিছু নয়। সামান্য নিয়েও সততার শক্তিতে আর ভালোবাসায় কীভাবে সবকিছু কানায় কানায় ভরিয়ে রাখা যায়, এ শিক্ষা তো দিয়ে গেছেন। ছোট্ট একটা জীবন আনন্দময় করার জন্য সততার চেয়ে বড় আদর্শ আর কী হতে পারে। আব্বা! আজ তুমি নেই, আজ তুমি ছাড়া আমি যে কী অসহায়, তা বুঝতে ভুল হয় না একটিবারও।
🌿তুমি ছিলে আমার প্রাণ আর আমিও ছিলাম।আল্লাহ, আমার আব্বার সব পাপ মাফ করে দিও! কবরের আজাব মাফ হঠায় দিও,তার রুহের শান্তি দিও, হে খোদা তুমি আব্বাকে জান্নাতবাসী করিও। আর’ বাবা” তোমার বড় ছেলে মালেক কখনো কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি। ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করো! যেভাবে শৈশবে আব্বারা আমাদের প্রতিপালন করেছিলেন।’
🙋 শুভেচ্ছান্তে
এম এইচ মালেক (মোল্লা)
ব্যাচ নাম্বার ১২
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার 43 871
জেলা চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলা
বতমানে রিয়াদ সৌদি আরব
💖প্রিয় ভাইয়া ও আপুরা আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে আমার জীবনের ছোট এই গল্পটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অনেক অনেক ভালবাসা জানাচ্ছি আপনাদের।
সেই সাথে সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের লেখার সমাপ্তি টানলাম এখানেই।
সবাই সাবধানে থাকবে