স্বপ্ন দেখতাম শিল্পী হওয়ার
★★ ২০০৬ সালের চ্যানেল আই এর ক্লোজ-আপ সেরা কন্ঠ আমার জীবনের লক্ষ ঠিক করে দিলো।
ছোটবেলা থেকেই আমি লেখাপড়ার দিকে একটু কম মনোযোগী ছিলাম।
তবে আমি খুব ভালো গান করতাম (নিজের ডোল নিজেই পিটাই)😜
আর সারাক্ষণ শুধু সাজগোছ নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম।
স্কুল শিক্ষক, বন্ধুমহল,আত্নীয় সবার কাছেই আমার গানের জন্য আমি এক্সট্রা কদর পেতাম।
আর সবার আমার গানের কদর করতে দেখে আর নিজেও ভালো গাই এই সব ভেবে সবসময় ভাবতাম যদি আমি স্টেজে হাজারো মানুসামনে গান করতে পারতাম।
স্বপ্ন দেখতাম শিল্পী হওয়ার।
যাই হোক সেই সব স্বপ্ন আমি কিছু কারনে দেখা বন্ধ করে দিয়েছিমাম।
কারন আমার ফ্যামিলি ছিলো অনেকটা ইসলামিক মাইন্ডের।
যাইহোক পড়াশোনা তো করতে ভালোই লাগতোনা
তারপরও ও অই যে কথায় আছেনা, গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা।
ঠিক তাই হয়েছে আমার ব্যাপারেও।
পড়াশোনা করতে ইচ্ছা না করলে যা হয় আর কি।
প্রত্যেক ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষা এলে আমার মায়ের আমাকে নিয়ে চিন্তার আর অন্ত থাকতোনা।
সে বলতো তুই পরিক্ষায় যাই রেজাল্ট করবি তা মনে করবি আমার সফলতা।
কারন এই পড়া আর পরিক্ষা তো তুই দিচ্ছিস না দিচ্ছি আমি।
অবশেষে যখন ফল ভালো আসতো আমার মায়ের খুশি ☺ আর কে দেখে।
অনেক দিন আগের কথা ২০০৬ সালের চ্যানেল আই তে ক্লোজ-আপ সেরা কন্ঠ প্রতিযোগিতা যখন শেষ হলো,তখন প্রথম বিজয়ী ছিলো সালমা।
তখন আমি সালমার গান গুলো খুব গাইতাম সবসময়।
তার মধ্যে বানিয়া বন্ধ,
লালন তোমার আরশি নগর,
আর যেজন প্রমের ভাব যানেনা এই গান গুলো আমি খুব বেশি গাইতাম।
কারন এই গান গুলো গেয়ে সবার কাছে বেশি প্রশংসা পেতাম।
২০০৬ সালে কোনো একটা কারনে
আমার একমাত্র বড় ভাইয়া আমার ওপর রেগে আমাকে কথা শোনালো, দেখ মানুষের কতো প্রতিভা।
জীবনের লক্ষ কি তোর?
কিচ্ছু তো নাই মনে হয়।
লেখাপড়া করিস না ঠিক মতো, কথা শুনিস না, তো কি করবি জীবনে বল?
একটা তো লক্ষ্য থাকে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে।
দেখ এই যে ক্লোজ-আপ প্রতিযোগিতায় সালমান কতো গরিব ঘর দিয়ে এসেছে, আর ও ওর প্রতিভা দিয়ে এতো এতো মানুষের মাঝেও প্রথম স্থান অধিকার করে নিছে।
কিভাবে জানিস?
ওর লক্ষ্য এটাই ছিল।
ধ্যান, জ্ঞান,সাধনা সব এই একটা দিকেই ছিলো।
আজ ও একটা সাধারণ ঘরের মেয়ে হয়েও হাজারো মানুষের মন জয় করে নিছে, আজ ওকে সবাই চিনে।
তো তুই ও জীবনে এমন কিছু কর জাতে তোকে নিয়ে আমরা সবাই গর্ব করতে পারি।
সেইদিন ভাইয়ার কথা গুলো খুব মনে লাগছিলো।
প্রায় ১৫ বছর আগের কথা তখন আমার বয়স মাত্র ১২ বছর।
তখন থেকেই আমি ভাবতে থাকি জীবনে এমন কিছু করবো যাতে সারা বিশ্বের মানুষ আমাকে চিনে।
কিন্তু সেটা কি করবো তা তখন পরিকল্পনা করে উঠতে পারিনি।
কারন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ইত্যাদি যাই হোক এগুলো হইতে চাইলে তো আমার পপড়াশোনা অনেক করতে হবে।
আর আমি তো এই জায়গায়-ই বেশি ফাঁকিবাজ।
তো কি?
বিকল্প পথ বার করতে হবে যাতে লেখাপড়া কম করতে হয় আমাকে।
কিন্তু একজন সফল মানুষ ও হতে হবে আর ভাইয়ার কথার যবাব ও দিতে হবে।
আর আগে যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করতো জীবনে কি হতে চাও?
তখন নিজের সাথে যুদ্ধ করতাম উত্তর দেওয়ার জন্য।
আর নিজে নিজেকে প্রশ্ন করতাম আমি আসলেই কি হতে চাই?
সবসময় মনে একটা ই উত্তর আসতো একজন সৎ আর ভালো মানুষ হতে চাই।
তখন প্রশ্নদাতা রা উত্তর দিতো এটা কোন লক্ষ্য হলো?
আমি তাদের সেই প্রশ্নের ও কোন উত্তর দিতে পারতাম না, চুপ করে সরে পরতাম আর নয়তো টপিক চেঞ্জ করে ফেলতাম।
কারন কে যানতো জীবনের লক্ষ্য কি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা মেয়েটা আজ সারা বিশ্বের মানুষ নিয়ে কাজ করবে?
আজ একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে?
আলহামদুলিল্লাহ বিশ্বের ১৪টি দেশে আজ আমার উদ্যোগ বাঙালিয়ানা এর পন্য হোলসেলে যাচ্ছে।
আজ আমি সম্পুর্ন টা না হলেও কিছুটা সফল।
আজ আমাকে হাজারো মানুষে চিনে।
আজ আমাকে নিয়ে মানুষ আমার পিছনে ষড়যন্ত্র করে।
আমাকে হিংসা করে।
আমাকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
আলহামদুলিল্লাহ, একেই বুঝি সফলতা বলে,
এগুলো আমার হিংসা বা অহংকার নয় আমার অর্জন।
আজ চিতকার করে ভাইয়াকে বলতে ইচ্ছা করে ভাইয়া।
তোমার কি তোমার বোনের ওপর এখন আর একটুও রাগ আছে?
এখন কি তোমার বোনের জন্য তোমার গর্ব হয়?
আজকের এই পোস্ট টা আমি আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই Dr.Md Abu Naim এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম।
কারন সেদিন সে ওইভাবে আমাকে আঘাত দিয়ে কথা না বললে হয়তো আজ আমি মারিয়া রিয়া হইতাম না বা আজ আমার বাঙালিয়ানা হইতোনা।
প্রত্যেক টা মানুষের-ই সফল হওয়ার পিছনে অনেক কঠিন কিছু গল্প থাকে, যার ওপর ভিত্তি করেই মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে নেয়।
এরকম অনেক কঠিন গল্প আছে আমার জীবনে।
যার কারনে আজ আমি কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
ইনশাআল্লাহ ধিরে ধিরে সব শেয়ার করবো।
দোয়া করবেন সবাই।
Maria Riya..
বরিশালের মেয়ে, বর্তমান ঠিকানা উত্তরা, ঢাকা
ব্যাচঃ ১২
রেজিষ্ট্রেশনঃ ৪৮১৩০।
#স্বত্বাধিকারীঃ #বাঙালিয়ানা।
https://www.facebook.com/Mariabagaliana/