আজ নানা ও দুটো নাতনির জীবনের গল্প শেয়ার করলাম_______________
আজ নানা ও দুটো নাতনির জীবনের গল্প শেয়ার করলাম_______________
আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করছি, আমার প্রিয় প্লাটফর্ম "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর ও প্রিয় শিক্ষক ও তরুন প্রজন্মের আইকন জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার।
যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি।
তিনি আমাদেরকে এই প্লাটফর্মে আজীবন সদস্য পদ লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কর্মহীন ও স্বপ্নহীন মানুষ।
মানুষের পাশে তাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করেন উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
যার অক্লান্ত পরিশ্রমে পেয়েছি হাজার হাজার সহযোগিতা পরায়ন ভাই ও বোন।।।
♥️♥️গল্পটা শুরু করলাম_____________________________
১৯৯৫ সালে আমাদের বাবা মারা যায়। বাবা মারা যাওয়ার সময় আমরা দুই বোন খুব ছোট ছোট। বড়ো বোন ৬/৭ বছর আর আমার ২/৩ বছর।
সেই থেকেই জীবন নামের যুদ্ধের সাথে পরিচিত।
আরেকটু বলে নেই,,,,,,,,,, আমার নানা নানীর একমাত্র সন্তান আমার মা। তারমানে আমাদের কোনো মামা বা খালা নাই।
সেই সুবাদে নানা বাড়িতেই থাকতাম আমরা । আমার বাবা একজন মাদ্রাসার শিক্ষক ,,ও কাজী ( নিকাহ্ রেজিষ্টার )ছিলেন।
কিন্তু বাবার হঠাৎ মারা যাওয়াতে আমাদের পরিবারে একটা সাইক্লোন ঝড় বয়ে গেলো ,,মা অসহায় হলো দুটো ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে আর নানা নানী অসহায় হলো একমাত্র জামাতা কে হারিয়ে নিজের মেয়ে ও নাতনিদের কথা ভেবে ।
যত কষ্টই হোক বাবা তো আর কখনো আসবে না।।
শুরু হলো মায়ের যু্দ্ধ । তার মা বাবা ও মেয়ে দুটোকে নিয়ে ।
নানাও মোটামুটি বৃদ্ধ ছিলো তাই মায়ের কষ্ট টা বেশি হতো সব কাজে।
কষ্ট করতে করতে একসময় যখন একটু বড়ো হলাম তখন নানার হাত ধরে ধরে সবখানে যাওয়া ,,সব কাজেই সহযোগিতা করা মোটামুটি যতটা পারতাম ,,,
নানা খেজুর গাছ কেটে রস বের করতো তা তার সাথে টেনে টেনে বাড়িতে আনা ,, কৃষি কাজে সহযোগিতা করা,, বাজার থেকে বাজারের ব্যাগ আনা,, বাজারে নারিকেল বিক্রি করতে যেতো তার সাথে সেই নারিকেল বাজারে নিয়ে যাওয়া,ধান চারা উঠানো লাগানো সহ ধান কাটা ,ধানের আটি মাথায় করে বাড়িতে আনা সহ আরো নানান ধরনের কাজ করতাম সব সময় ।।।
নানা কখনো আমাদের দুই বোনকে নাম ধরে ডাকতো না ।।। আমাদের "ইলু" ডাকতো।
তার সব কাজে সহযোগিতা করায় নানা প্রায়ই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতো শুধু তুই যদি ছেলে হতি তাহলে আমার আর কোনো দুঃখ থাকতো না।।
নানার এই কথাটা প্রায়ই আমার লাগতো,, ছেলে না তো কি হয়েছে ,,আমি তখন বলতাম আমি তো আপনার সাথে মাছ ধরি, গাছ নারিকেল পেরে দেই ,, বাজার করি ,,রসের হাঁড়ি টানি তাহলে ছেলে নাতির কি দরকার ❓
তখন নানা দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলতো এখন নারে,,,,,,
এখন তো আমি আছি তোদের একটা ভরসা আছে যখন আমি থাকবো না তখন এই সংসার ,তোর মাকে কে দেখাশোনা করবে ❓
তখন চুপ হয়ে যেতাম , যদিও এতো কিছু ফেস করতে হবে সেটা সেই ছোট্ট বেলায় অনুভব করতে পারিনি কিন্তু আমার নানা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো।
নানা যখন খুব বৃদ্ধ হয়ে গেলো তখন আসলেই জীবনের বাস্তবটা ফেস করতে শুরু করলাম কঠিন ভাবে ।
বাজার থেকে শুরু করে সব কিছু করতে হতো আমাদের ।
সংসারে ইনকাম না থাকায় আরো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো,,,,
তখন আগে যে কাজ নানা করতো,, নারিকেল সুপারি বিক্রি, ডিম বিক্রি ,কবুতর বাচ্চা সহ বাড়ির সব তরকারি বিক্রি করতে হতো আমাকে। হতে হলো ছোট হাত দুখানা লোহার ইস্পাতের মতো শক্ত ,,নরম মনটা হয়ে উঠলো সাহসী ।
এভাবেই চলতে চলতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নানা চলে গেল না ফেরার দেশে।
আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত নানী ও মায়ের পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আছি দুই বোন ,,যদিও এখানে দায়িত্ব পালনে বড়ো বোন সামনে এগিয়ে-----
প্রিয় ফাউন্ডেশন থেকে আমার পাওয়া_____
বিবাহিত জীবনে খুব ভালোই চলছিল জীবন যাপন ।
কিন্তু একটু বেশি ভালো থাকতে সবাই চাই আমরা ।
সেই লক্ষ্যে হাজব্যান্ড কুয়েত পাড়ি জমালো কিন্তু ভাগ্যে যে বেশি সুখ নাই সেটা জানতাম না ।
কুয়েত যাওয়ার সব টাকা বিফলে গেলো ফেরত আসতে হলো দেশে কিন্তু দেশে এসে ঠিক হতে না হতে শুরু হলো কোভিট 19 এর লকডাউন।
হাজব্যান্ড এর পরিবার নিয়ে টেনশন না হলেও টেনশনে পরে গেলাম মা ও নানীকে নিয়ে কিভাবে কি হবে কিছু বুঝতে পারছিলাম না তখন হঠাৎ করেই ফেসবুকিং করতে করতে ""নিজের বলার মতো একটা গল্প"" গ্রুপের দেখা পেলাম তখন গ্রুপের এক্টিভ সদস্য Nijhum amin আপুর সহযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন করলাম ১০ম ব্যাচে । তারপর ৯০ টি সেশন কমপ্লিট করে সাহসী মেয়েটা আরো সাহসী হয়ে উঠলো ।
ইনশাআল্লাহ সেই থেকে আছি গ্রুপে ,, থাকবো আজীবন ।
কারন গ্রুপটি আমাকে নিশ্চিন্ত রাখে ,, আমার সাধ্যমতো আমি দায়িত্ব পালন করতে পারি দুই পরিবারের এটাই আমার জীবনের ব্যাপক শান্তি।।
আমার নানা হয়তো দেখতেছেন তার সেই ছোট্ট নাতি দুটো আজ পর্যন্ত তার কবরের মাটি টা পর্যন্ত ক্ষয় হতে দেয়না ।
সবটাই নানা আর বাবার দোয়ার ফলাফল ।
দোয়া করি ,, আল্লাহ আমার মতো সকলের মনের আশা পূরণ করুক।।।
সবার ভালোবাসায়_______&___________
মানসুরা রিনা
দশম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন নং ১৩৪২৪
জেলা প্রতিনিধি
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
রেজিস্ট্রেশন টিম মেম্বার
২৪/৭ লাইভ টিম মেম্বার
বরগুনা জেলা