কোন দিন স্বপ্নেও ভাবেনি বাবা এভাবে চলে যাবে
জীবনের এত বড় বিপর্যয় কোনদিন আসবে এটা ভাবেনি। কোন কিছু লেখার মত অবস্থায় আমি নাই। তারপরও মনের শক্তি সঞ্চার করে লিখতে বসেছি। জানিনা আপনারা পরবেন কিনা?
আগস্টের 3 তারিখ সকালেই শুনলাম বাবার শরীরটা একটু খারাপ। হালকা জ্বর। সারারাত ঘুমাতে পারেনি বাবা। তাই সবাই মিলে ডিসিশন নিলাম তাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করব। এরইমধ্যে যেখানে জাকে পেয়েছে পরিচিত সবাইকে বলেছি। বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ পেয়েছি।
তারপর শুনলাম বাবা একটু সুস্থ। তাই মনের জোর বেড়ে গেল। সবাইকে খেতে দিলাম। ভাবলাম আমি একটু পরে খাবো। বাবা তো এখন সুস্থ আছে। হঠাৎ ফোন। বাবাকে হসপিটালের নেওয়া হয়েছে বাবার শরীর খুব খারাপ। তার মধ্য থেকে আর যেন কে ফোন দিয়ে বলল আমার বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। মনে হলো পৃথিবীর সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল।
কোন দিন স্বপ্নেও ভাবেনি বাবা এভাবে চলে যাবে। চলে যাওয়ার বয়স তো তার হয়নি। চলে যাওয়ার আগেও আমার সাথে কথা বলেছে। তখনও বুঝতে পারিনি এই শেষ কথা।
বাবা হারানোর কষ্ট তারাই বুঝবে যারা বাবা হারিয়েছে। এ যেন বুকের ওপর পাথর চাপিয়ে দেওয়া। চারিদিকে শুধু বাবা কে দেখছি। মনে হচ্ছে এইতো বাবা ডাকছে। যেখানেই তাকায় সেখানেই শুধু বাবা। বাবা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না।
অভিমান শুধু একটাই কেন এভাবে চলে গেলে। কিছুই তো বলে গেলে না।
আজ ও মেনে নিতে পারি না বাবা নেই।কোথায় তুমি বাবা।
শুধু দু চোখ ভরে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে। কত অপূর্ণতা রয়ে গেল। কিছুই করতে পারলাম না তোমার জন্য। তোমাকে সেবা করার সুযোগ টা ও দিলে না।
মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই পারছিনা। সাজানো সংসার টা নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। সুস্থ মানুষ টা কথা বলতে বলতে চলে গেলেন।
কত মানুষ এসেছে শুধু একবার দেখার জন্য। সবার মুখে শুধু একটাই কথা তার মতো ভালো মানুষ পৃথিবীতে একটাই হয়। বাবার কাছে সাহায্য চাইলে কখনো কেউ ফেরে নাই। যেকোনো মানুষের বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে তার সর্বস্ব দিয়ে।
সন্তান হিসেবে আমরা গর্বিত এরকম বাবা পেয়ে। ভালো থেকো বাবা ওপারে।
অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে কিন্তু লিখতে পারছিনা।
যে চলে গেছে সে তো আর ফিরবে না। কিন্তু যে আছে তার কথা চিন্তা করে বুকে পাথর চেপে সবকিছু মেনে চলছিল দিনগুলি।
কিন্তু আবারো ঈশ্বর নতুন পরীক্ষায় ফেললেন। হঠাৎ করেই মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অজ্ঞান হয়ে বাথরুমে পড়ে গেলেন। তার সাথে আবার হালকা জ্বর। তখন যে কি অবস্থার মধ্যে দিন কাটিয়েছি তা শুধু আমরাই জানি। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় এবং করোনা টেস্ট করিয়ে নিই।
সৃষ্টিকর্তার আবার নতুন খেলা বোঝা বড় দায়। মা করোনা পজিটিভ। বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না। মনে হল আমাদেরও করনা টেস্ট করানো উচিত। তাই আমরা সবাই টেস্ট করলাম। আমি এবং আমার ছোট ভাই পজিটিভ হলাম।
মনের মধ্যে অবশিষ্ট আর কোন শক্তি রইল না। আক্রান্ত হওয়ার দ্বিতীয় দিন রাতে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেক কষ্ট করে রাতটা পার করি। সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাগেরহাট ডাক্তারের সম্মুখীন হয়। সেখানে সমস্ত টেস্ট সম্পন্ন করি। তারপর কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলাম। হয়তো সবার ভালোবাসা এবং আশীর্বাদে এখনো সুস্থ আছি।
এখানে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব আমার প্রিয় বাগেরহাট টাইগার্স দের প্রতি। তারা সব সময় আমার পাশে ছিল। সাহস যুগিয়েছেন। এছাড়া প্রিয় নিজের বলার মত একটি গল্প পরিবারের যত সদস্যদের সাথে আমি পরিচিত সবাই আমাকে সাহস যুগিয়েছেন আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার প্রিয় ভাই Shaikh Al Amin । তার ঋণ আমি কোনদিনও শোধ করতে পারব না। আমার পাশে সবসময় ছিলেন তিনি। এবং তার সাথে ছিলেন Debasis Dey Prètøm ভাই। Nazrul Islam ভাইয়া। তাদের এই ভালোবাসা ঋন আমি কোন দিন ভুলব না।
সর্বোপরি টিম টাইগার্স এর সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। অনেক সাহস যুগিয়েছে।
✍️✍️নিজের বলার মত একটি গল্প আসলেই একটা পরিবার।এই পরিবারের সদস্য হয়ে আমি গর্বিত। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমাদের সবার প্রিয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। সুস্থতা কামনা করছি। এত সুন্দর একটি পরিবার আমাদেরকে দেওয়ার জন্য।
🙏🙏সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা সবাই এখন করোনা নেগেটিভ হয়েছি।
আমার শরীর এখনো সুস্থ নয় তাই আর বেশি কিছু লিখতে পারছি না। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
🙏🙏সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন স্বর্গবাসী হন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৩
Date:- ২২/০৮/২০২১ ইং
লাবন্য
নিজের বলার মত একটি গল্প পরিবারের গর্বিত সদস্য এবং কমিনিউটি ভলিন্টিয়ার।
ব্যাচ-দশম
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার-২১৬৬৯
জেলা-#বাগেরহাট
বর্তমান-ঢাকা।
আমার ছোট্ট উদ্যোগের নাম-বহুমাত্রিকা - BohumatrikaP