সততা , ইচ্ছা ও প্রার্থনা পুঁজি যোগানের সহায়ক।
“ আসসালামুআলাইকুম “
সবার সুসাস্থ্য কামনা করছি।
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি মহান রাব্বুল আল আমীনের নিকট ।যিনি আমাকে সহ আপনাদের সবাইকে সুস্থ রেখেছেন ।
ধন্যবাদ জানাই বর্তমান প্রজন্মের যুগউপযোগি প্রিয় মেন্টর, আমাদের সকলের প্রিয় মানুষ জনাব ইকবাল বাহার জাহীদ স্যারকে।যিনার
অনুপ্রেরণায় আমি একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি অনবরত ।
উদ্যোগ-কর্ম-ও সফলতা এ তিনটি বিষয়ে আমার জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো বিশেষ করে প্রবাসী ভাইয়াদের জন্য-
আমি আমাকে নিয়ে গর্বিত কারণ, আমি কাজকে ভালোবাসি।কোন কাজকেই ছোট মনে করি না ।
সমাজের খারাপ মানুষের পাল্লায় পরে নষ্ট হতে চেয়েছিলাম দেখে আমার বাবা উদ্যোগ নিলেন
আমাকে দেশের বাহিরে পাঠানোর ।
কারণ সেখানে অন্তত আমি বেঁচে থাকতে পারবো এটাই ছিলো আমার বাবার ধারণা।১৯৯৮ সালে পারি দেই প্রবাসে। খরচ হলো ১ লাখ টাকা ।
কাজ ছিলো রাস্তা ঝাড়ুদার। বেতন ছিলো তিন হাজার টাকা।কন্ট্রাক ছিলো তিন বছর ।১০/১২ ঘন্টা ডিউটি করার পর বাহির হতাম রাস্তাতে ভাংঙ্গা চূড়া টোকাইতে।
২/৩ ঘন্টা হাটাহাটির পর প্রায় ১০০/১৫০ টাকা আয় করতে সক্ষম হতাম।এভাবে চলে ৬ মাস।
ভেঙে পরলাম , পারবো না এতো কষ্ট করতে । চলে আসবো বাড়ি ।
বাংলাদেশি একটা ম্যানেজার স্যার ছিলেন। উনাকে বললাম বিস্তারিত । উনি পরামর্শ দিলেন এবং গাড়িতে কাজ করতে বলেন। যেনো আমি ড্রাইভিং শিখি এবং তিনি ড্রাইভারকে বলেও দিলেন ।
করলাম ৩/৪ মাস হেল্পারি । হলাম ড্রাইভার , সুপারভাইজার এবং ম্যানেজার । যখন ড্রাইভার হলাম তখন ডিউটির পাশাপাশি ক্যাম্পে ছোট একটা মনিহারি দোকান দিয়েছিলাম।
ডিউটি ১০ ঘন্টা করার পর বাঁকি সময়টুকু দোকানে কাটাতাম।” আলহামদুলিল্লাহ “ ৩ বছর পর কোম্পানীর কন্ট্রাক শেষ করে বাড়ি ফিরে গেলাম ।
আবার ৩ মাস পর রওয়ানা হলাম প্রবাসে। এবার ১০ মাস কাজ করার পর কোম্পানী বন্ধ । কোন বেতনও নেই । হলাম ট্রান্সপার , সেখানেও কোন কাজ নেই ( যাকে বলে ফ্রী ভিসা )।
চিন্তা করলাম এবার নিজে একটা কিছু করবো। নিলাম উদ্যোগ, নিজে একটা গাড়ি ( পিক আপ ভ্যান ) কিনার।কিন্তু বিশ্বাস করেন একটি টাকা ও আমার কাছে ছিলো না ।
গাড়ি দেখেও আসলাম, দাম চায় বাংলার ২/৩ লাখ টাকা। হা হা হা , আমি পাগল , আমার কাছে নাই ভাত খাওয়ার টাকা ।আমি কিনবো গাড়ি !!
কিন্তু না ! আমার চোখে ছিলো স্বপ্ন মনে ছিলো বল।একদিন বি-বাড়িয়ার এক বুন্ধুর হাত ধরলাম এবং তাকে কিছু টাকা দিয়ে আমার সাহায্য করতে বললাম।
সে আমাকে ৭০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। বিশ্বাস করেন সেদিনই আমার স্বপ্নের অর্ধেক পূরণ।এখনো এক/দেড় লাখ প্রয়োজন ।কোথায় পাই । মালিক (কফিল) ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেন তবে, এক মাসের মধ্য তার টাকা ফেরত দিতে হবে।
আমি যে ( বাকালা ) দোকান ও সেলুনে যাওয়া আসা করতাম তিনারা দু’জন মিলে ৩০ হাজার টাকা দিলেন।আবার গাড়ি দেখতে গেলাম।
কিন্তু এ টাকা দিয়ে কি গাড়ি হয় ? আরো কমপক্ষে এক লাখ টাকা লাগবে ! মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছি আর ট্যাক্সি করে বাসায় যাচ্ছি। বাসার কাছাকাছি এসে ট্যাক্সি ওয়ালাকে মাঝ পথে নেমে দিতে বলি।কারণ বাসা পর্যন্ত যাওয়ার মতো টাকা ছিলো না।
মাথা নিচু করে সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করে এগিয়ে চলতেছিলাম বাসার দিকে। হঠাৎ দেখি ধূলো-বালি মাখা একটি ভেনেটিব্যাগ রাস্তার ধারে পরে আছে । তখন সময় রাত আনুমানিক ১০/১১ হবে।
২৫/৩০ কিলোমিটারের ভেতর কোন বাসা বাড়ি নেই , শুধু আমাদের লেবার ক্যাম্প ছাড়া ( যদি কেউ রিয়াদ , সৌদি আরব থেকে থাকেন তবে চিনবেন ওয়াদিলাবান তাহাদ ) । ব্যাগটি উঠিয়ে আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলাম আর এদিক ওদিক দেখলাম কেউ আসে কিনা!
কেউ নেই , মাঝে মাঝে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে শাঁ শাঁ শব্দে চলে গাড়ি । আর অপেক্ষা না করে রওয়ানা দিলাম বাসার দিকে।
বাসায় ফিরে আমার (কফিল) মালিক ও বুন্ধুকে বিষয়টি অবহিত করলাম এবং ব্যাগের ভেতর যে দু লাখ টাকা আছে সে বিষয়ে ও জানালাম।ততোক্ষণে আমি ব্যাগটি চেক করেছিলাম।
পরের দিন মালিক কে নিয়ে ব্যাগটি সহ ( দাখিল মাহদুদ ) থানায় গেলাম এবং পুলিশকে বিস্তারিত বললাম। ব্যাগটি অনেক পুরাতন ও ছেড়া ছিলো। ব্যাগের ভেতর কোন ধরণের কাগজ পত্র ছিলো না।
পুলিশ ব্যাগটি জমা রাখলেন এবং আমার মোবাইল নং রাখলেন।ব্যাগটির মালিককে খুঁজে না পেয়ে পুলিশ ৭দিন পর আমাকে ফোন করলেন এবং আমি কি কাজ করি তা জেনে টাকাগুলি আমাকে দিলেন এবং সাথে দোয়াও করলেন আমার জন্য।
আমার বুন্ধুদের কাছ থেকে হাওলাত করা টাকা ও পুলিশের দেওয়া টাকাসহ পরের দিন কিনলাম ১টি গাড়ি ।
শুরু হলো ভাঙা-চূড়া টোকানো ।ডাস্টবিনে ডাস্টবিনে ঘুরে ঘুরে ভাঙা-চূড়া টোকাইতাম।গাড়ি Full হলে দোকানে বিক্রি করে আসতাম ।
দিনে ৪/৫ বার বিক্রয় করতাম । গাড়ি কিনার পর কোম্পানী আর ক্যাম্পে থাকতে দিলো না।টাকাও ছিলো না ঘর নেওয়ার মতো । তাই রাতের বেলা গাড়িতেই ঘুমাতাম। আর বাথরুম করতাম মসজীদে।
আমার জীবনটা এক যাযাবর কিন্তু না , আমি পরিশ্রমি, আমি আমার স্বপ্নের প্রতি অনড়।
আমার প্রথম মাসের আয় ৪ লাখ টাকা । এ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে বাঁকি টাকা দিয়ে একটি ছোট দোকান ঘর ভাড়া নেই ৩ মাসের জন্য।
দুই বছর পর আমার মোট ৫টি গাড়ি ( ৪টি পিক আপ ও একটি ডায়না ) এবং দুটি স্ক্রাবের ( ভাঙা-চূড়ার ) দোকান ( দাখিল মাদুদ ও সোলাই )। ১৪ জন কর্মচারী( ৪জন ড্রাইভার ও ১০ জন লেবার ) । প্রতি ড্রাইভারের বেতন ছিলো ৪০ হাজার টাকা ।
উদ্যোগ গাড়ি কিনবো ,লক্ষ্যস্থীর ছিলো আমার ।সততা , ইচ্ছা ও প্রার্থনা পুঁজি যোগানের সহায়ক।১৪ জন কর্মচারী -পরিশ্রম ও লেগে থাকার ফল=
উদ্যোক্তা ।
আমি সবাইকে বলবো“নিজের বলার মতো গল্প”
গ্রুপের প্রথম উক্তিটি হৃদয়ে লালন করা।
স্বপ্ন দেখুন-সাহস করুন-শুরু করুন এবং সফলতা না আসা পর্যন্ত লেগে থাকুন। ধন্যবাদ প্রিয় স্যার , ধন্যবাদ সবাইকে।
বি: দ্র:- যথাক্রমে ৪ টি পর্বে আমার জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরবো “ ইনশাল্লাহ “ ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০
Date:- ২৫/১১/২০১৯ ইং
ফরহাদ হোসেন
৭ম ব্যাচ
রেজি: নং ৩৫৯৬
আবুধাবি (ইউ.এ.ই)
হোম ডিস্ট্রিক :নওগাঁ
Blood Group:B+