কিছু কিছু ব্যর্থতার গল্প ও শক্তি যোগায়
“ আসসালামুআলাইকুম “
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি তিনি আমাকে সহ আপনাদের সকলকে সুস্থ রেখেছেন ।কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আমাদের মেন্টর প্রিয় স্যার জনাব ইকবাল বাহার জাহীদ স্যারের কাছে ।
উনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও শত চেষ্টার ফলে আমি পেয়েছি এত সুন্দর একটি প্লাটফর্ম ও শত শত ভালো মনের মানুষের দেখা।
গত একটি পোস্টে বলেছিলাম আসবো আবার আমি আমার জীবনের কিছু সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প নিয়ে।
শুধু সফলতার গল্প শুনেই আমরা অনুপ্রাণিত হই কিন্ত কিছু কিছু ব্যর্থতার গল্প ও শক্তি যোগায় ।
এই ৩৭ বছরের গল্প ২০/৩০ মিনিট কাগজে লেখে শেষ করা যাবে না তা আমি জানি । চেষ্টা করবো সংক্ষেপে কিছু বলার।
ব্যর্থতার অনেকগুলি কারণ থাকে। আমার জীবনের কিছু ব্যর্থতার কারণ তুলে ধরলাম
১।সিদ্ধান্তহীনতা বা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কিংবা আবেগের বশীভূত হয়ে কোন কাজ করা।
একদিন বাবা ফোন করে মায়ের অসুস্থতার কথা জানালেন।কি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে বলেন।
১৫ দিন পর বাবা বললেন মাকে অপারেশন করতে হবে তা না হলে বাঁচানো সম্ভব নয় । আর এ কারণেই আমাকে বাড়ি যেতে বললেন জরুরী।
আমি প্রায় ৪ বছর ধরে দেশে যাই নাই। এই চার বছরে তিলে তিলে আমার ব্যাবসাটাকে গড়ে তুলেছি।
আমিও কাল ক্ষেপন না করে প্রস্তুতি নিলাম বাড়ি যাওয়ার জন্য।কিন্তু ব্যাবসা কার কাছে রাখবো। তিলে তিলে গড়া আমার ব্যাবসা।বলে রাখা ভালো যে,
সৌদি আরবে কোন ব্যাবসার কাগজ পত্র নিজের নামে করা যায় না।সেখানের স্থানীয় লোকের নামে করতে হয়।
প্রতিমাসে মালিককে কিছু টাকা দিতে হয়।এদিকে মায়ের অসুস্থতা, বাবার ফোন,
ভালো লাগতো না কিছু ।
কি সিদ্ধান্ত নিবো আমি! সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি আমি। ভগ্নিপতি সহ চার ড্রাইভারের সাথে পরামর্শ করলাম।
গোডাউনের ৮০ ভাগ মাল বিক্রয় করে দিলাম এবং চার ড্রাইভার ও ভগ্নিপতিকে ব্যাবসার দায়িত্ব বুঝে দিয়ে রওয়ানা দিলাম দেশের উদ্দেশ্য
মায়ের বুকে ফিরে আসলাম কিন্তু গিয়ে দেখি মা/বাবা আর গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। উনারা শহরের ভাড়া একটি বাড়িতে আছেন।
মায়ের অসুস্থতা ছিলো আমাকে বাড়ি ফেরানোর একটা বাহানা। জিজ্ঞেস করলাম কেন আপনারা ভাড়া বাড়িতে ! উনাদের নাকি গ্রামের পরিবেশ ভালো লাগে না তাই তারা শহরে ।
প্রবাসে থাকা অবস্থায় বাবাকে প্রতিমাসে যে টাকা দিয়েছি সে টাকায় দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন এবং গ্রামে একটি বাড়ি ও পুকুর বানিয়েছেন ।
আসলে বাড়ি ও পুকুর তৈরীর সময় আমার জানা ছিলো না।
শহরের ভাড়া বাড়িতে বাবা / মায়ের মন খারাপ । আমাকে বিয়ে করাইবেন । তিনারা মিয়েও দেখেছেন আমার এক আত্মীয়র ভেতর । আর এজন্যই উনাদের এ অসুস্থতার বাহানা ।
আমি রাজি ছিলাম না । মাকে বললাম বিয়ে পরে করবো আগে শহরে একটা বাড়ি তৈরী করবো তারপর।
মা বললো , আমরা যে মেয়ের সাথে তোমায় বিয়ে করাইবো উনারাই তোমাকে শহরে বাড়ি বানানোর টাকা দিবে ।
মাকে খুশি করা এবং বিয়ে না করার জন্য আমি বলে উঠলাম আর যদি আমি নিজেই বাড়ি কিনে দেই তবে কিন্তু বিয়ে করবো না । আর এ সুযোগে আমার যে একজন পছন্দের মানুষ আছে সে কথা জানিয়ে দিলাম মাকে ।
সেই মূহুর্তে মা নিজেই বলে উঠলেন বাড়ি কিনতে পারলে আমার পছন্দের মিয়েকেই বিয়ে করাইবেন
প্রতিমাসে বাবা/ মাকে টাকা দেওয়ার পরও কিছু টাকা জমা করতাম । তা প্রায় ১৬/১৭ লাখ টাকা জমানো ছিলো আমার।আমি যে বাড়ি কিনতে পারবো উনারা বিশ্বাসই করলেন না ।
এক সপ্তাহের মধ্য একটি বাড়ি কিনলাম। সম্ভবত ২০০৫ সালের শেষে । খরচ পরেছিলো প্রায় ১২ লাখ টাকা মা/ বাবা অবাক !
এবার আমি বিয়ে করতে চাই আমার পছন্দের মিয়েকে । কিন্তু উনারা তখনো রাজি হলেন না । অবশেষে গোপনে বিয়ে করলাম । বিয়ের কথা গোপন রেখেই ৫ মাস পর যোগ দিলাম কর্মস্থলে।
সেখানে গিয়ে দেখি আরো করুণ কাহিনী।আমার যে দোকান ঘর দুটি ভাড়া নেওয়া ছিলো তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তারা মালিককে সাথে নিয়ে নতুন জায়গাতে দুটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়েছেন তাদের নামকরণ করে।
মালিককে প্রতিমাসে যে পরিমাণ টাকা আমি দিতাম তারা তা ডাবল করে দিতে শুরু করেছেন
তাই মালিক ও আর আমার প্রতি আকৃষ্ট নয় ।
আমাকে বলে সারাজীবন কি তারা কর্মচারী থাকবে ! তাই নিজেরাই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন ।
আর হ্যাঁ এখানে আর একটি কথা পরিস্কার করা ভালো যে, আমি দেশে যাওয়ার আগে তাদের সাথে কন্ট্রাক ছিলো , তারা আমাকে প্রতিমাসে এক লাখ টাকা করে দিবেন এবং দিয়েছেন ও বটে
এর মধ্য আমার ভগ্নিপতি বলে সে নাকি দেশে যাবে ।শুরু হলো আমার সফলতা আর ব্যর্থতার বেড়াজাল। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম থাকবো না আর প্রবাসে ।
দেশে গিয়ে কিছু একটা করবো । মালিককে বললাম আমার গাড়ি গুলি রেখে আমায় টাকা দিতে । সে বলে ঐগুলি নাকি তার গাড়ি ।উঁহ কি যে যন্ত্রণা , বুকটা আমার ধরফর করতে লাগলো
আবার ছুটে গেলাম সেই (বাকালা) দোকানদার ও সেলুনের কাছে । কোথায় থাকবো কি করবো দিশেহারা ।১৫ দিনের মধ্য ভগ্নিপতি দেশে ফিরে গেলো আমাকে একা ফেলে রেখে ।
আবার গেলাম মালিকের কাছে সেলুনওয়ালা ও দোকানদার সহ । অনেক কাকুতি মিনতি করার পর মালিক আমাকে দুটি গাড়ির দাম দিলেন আর পাসপোর্টি আমার কাছ হতে নিয়ে নিলেন ।
এবার গেলাম ত
ড্রাইভারদের কাছে । কেন আমার ড্রাইভার বলছি জানেন ! তারা কোনদিন আমার সামনে বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারবেন না । কারণ তারা প্রত্যেকে ছিলো ভিন্ন ভিন্ন মালিকের লোক ।
কেউ করতো মাজরাতে কাজ( কৃষি ) কেউ দুম্বা ছাগল দেখাশুনা কেউবা ছিলো ক্লিনার ।আমি তাদের ট্রান্সফার করে নিয়েছিলাম আমার মালিকের কাছে । ড্রাইভিং শিখানো থেকে শুরু করে ল্যাইসিন্স বাহির করা ও কাজ দেওয়া সব করেছিলাম আমি ।
তাদের কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছিলাম কেন তারা এরকম করলো ! কি দোষ ছিলো আমার ! কোন উত্তর তারা দিতে পারলো না । কাঁদতে কাঁদতে বাহির হয়ে আসলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম পাসপোর্ট ছাড়া দেশে যাবো ।
চলে গেলাম মক্কায় । উমরাহ পালন করলাম এবং সেই সময় একটি দালালের সাথে পরিচিত হয়ে তাকে বিস্তারিত বললাম । আর এটাও বললাম যে ২৪ঘন্টার মধ্য আমাকে সে দেশে পাঠাতে পারবে কিনা !
তিনি ১ লাখ টাকা চাইলেন,দিয়ে দিলাম । দু’ঘন্টা পর পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেলো। ১ মাস ১৩ দিন জেল খাটার পর দেশে ফিরলাম । জেলের করুণ কাহিনী না হয় না বললাম । সেখানে নিশ্চয় জামাই আদর করেন না তাই না !
এতোদিনে বিয়ে যে করেছি বাবা-মা তা অবগত হয়েছেন । কারণ বিয়ের সময় কিছু বুন্ধু আমাকে সাহায্য করেছিলেন তাদের মুখে ।
বাবা/মা মেয়েটিকে তালাক দিতে বললেন । কিন্তু আমি রাজি ছিলাম না । কয়েক দিন পর বাসায় শালিশ বসালেন বাবা/মা আমার আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে। কেন আমি তালাক দিবো না তার কারণ দর্শানোর জন্য ।
হঠাৎ করে সেদিন আমার স্ত্রী ও উপস্থিত হলেন । স্ত্রী আমাকে বললো আমি যদি তাকে গ্রহণ না করি তবে সে আত্ম হত্যা করবে ।
কি করবো আমি নিরুপায় । উভয়সংকটে পরে গেলাম ।
কিছু বুন্ধুদের স্মরণাপন্ন হলাম । তারা বাসায় আসলো এবং আমাকে শক্ত হতে বললো।
২। বুন্ধু নির্বচন ও অভিজ্ঞতাহীনতা:-
বুন্ধুদের সাহায্যে ১৫০০ টাকার টিন সেডের একটি ভাড়া বাসাতে উঠলাম । আমার একটি স্বর্ণের আংটি( রিং) বিক্রয় করে কিছু আসবাবপত্র ও কিছু খাবার কিনলাম ।
৩ দিন পর আবার মা/ বাবার কাছে গেলাম এবং কাঁদতে লাগলাাম । তারা কিছুতেই রাজি হলেন না । ৭ দিন পর মালিকের দেওয়া টাকা হতে নিজের ঘরের জন্য কিছু ফার্ণিচার কিনলাম ।
এভাবেই ২/৩ মাস অতিবাহিত হলো । নিজের কিছু ক্যাশ টাকা থেকেই সংসার চালাতাম । কিন্তু এভাবে আর কত বসে বসে খাওয়া যায় ! এভাবে মা/বাবার কাছে প্রায় দিনই যেতাম আর বলতাম আমি কি করবো ! কি করে চলবে আমার সংসার ! তাদের একটাই কথা ছিলো মেয়েটিকে তালাক দিতে হবে ।
আমার এক বুন্ধু ছিলো কাউন্সিলর। ও প্রায় আমার খোঁজ খবর নিতো এবং আর্থিক সমস্যাতে পরলে সাহায্য ও করতো ।
প্রায় সে ব্যাবসার কথা বলতো । দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকাতে কি ব্যাবসা করবো তা আমার জানা ছিলো না । আর তাছাড়া ব্যাবসা করার মতো টাকাও ছিলো না ।
আবার মা/ বাবার কাছে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে ক্ষমা করতে এবং ব্যাবসার জন্য কিছু টাকা দিতে । টাকা তো দিবেই না আরো ছাপ জানিয়ে দিলো যে, টাকা আমরা দিতে পারবো না তুমি ইচ্ছে করলে তোমার বাড়িটা বিক্রয় করতে পারো ।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, আমার বাবা ছিলেন একজন সরকারি ব্যংকের কর্মচারী ও ১৫ বিঘা জমির মালিক।
সাত দিন পর আবার গেলাম বাবা/মায়ের কাছে আমার কাউন্সিলর বুন্ধুকে সাথে নিয়ে । এর আগেও বুন্ধু আমার সাথে অনেক বার এসেছে । আজ গিয়ে দেখি পুরো বাসা খালি ।
আশেপাশের লোক থেকে জানতে পারলাম উনারা অন্য একটি ভাড়া বাসাতে উঠেছেন । গেলাম তাদের কাছে সেখানে বোনেরাও ছিলো । আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ ও অপমান করে বিতারিত করলেন ।
রাগ সইতে না পেরে বুন্ধুকে বলে দিলাম ৭ দিনের মধ্য বাসাটা বিক্রি করে দিতে । কথা মতো কাজ । ১২ লাখ টাকার বাসা বিক্রয় করলাম ৮ লাখ ।
অভিজ্ঞতা না থাকায় বুন্ধুকে বিশ্বাস করে তার হাতে তুলে দিলাম আমার সমস্ত অর্থ ।
বললাম টাকা আমার ব্যাবসা তোর । লাভ হবে ৩ ভাগ , দুটি আমার একটি তার ।
কথা মতো কাজ । ১০/১২ দিনের মধ্য কিনলাম দুটি (ট্র্যাক্টর) গাড়ি । খরচ পরলো প্রায় ৫ লাখ । ৬ মাস কোন লাভ দেখি না । বরং আমাকে হিসেব দেখাই আরো গ্যারিজে বাঁকি টাকার ।
আজ টায়ার, কাল ইন্জিন, পরশু বডি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি । উঁহ আর এক যন্ত্রণা ।
এদিকে সংসার চালাতে হয় নিজের ক্যাশ থেকে । গাড়ি কিনার এক বছর পর কোন লাভ দেখলাম না । মনে করলাম পরের বছর বুঝি হবে , বুন্ধুও সেভাবেই বুঝাতো আমায় ।
তার সংসার কিন্তু সে চালাতেন আমার গাড়ি থেকেই । আমি অন্ধর মতো তার সব কথা বিশ্বাস করতাম ।
৩। অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তির পরামর্শ :-
দেড় বছর পর আমার বাসায় পা রাখলেন আমার এক গার্ডিয়ান । উনাকে বিস্তারিত সব খুলে বললাম । উনি বললেন গাড়ি দিয়ে হবে না । কিছু ক্যাশ থাকলে ঠিকাদারী করতে পারি উনার বুন্ধুদের সাথে ।
তিনি আমাকে লাভ দেখালেন অনেক । আমিও আপন ভেবে উনার বুন্ধুদের সাথে ব্যাবসা করতে রাজি হই । শুরু করলাম ঠিকাদারী কাজ পার্টনারে ।
কাজটি ছিলো ৮০ লাখ টাকার । পার্টনারে জমা করলাম ৫ লাখ টাকা । তিন মাসের মধ্য কাজ উঠার কথা সেখানে ৬ মাস হতে চলেছে কাজ উঠেনা ।কোন পার্টনারের কাছে টাকা নেই । টাকার অভাবে কাজ বন্ধ । বিক্রয় করলাম দুটি গাড়ি ।
৪। জমাকৃত সব অর্থ একি খাতে ব্যাবহার ।
সব অর্থ ইনভেস্ট করলাম একি খাতে । টাকা তুলে দিলাম গার্ডিয়ানের হাতে ।এখন আর টাকার সমস্যা নেই । কাজ শুরু জোড়ে সোরে । কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় । শুরু হলো বর্ষা মৌসুম । কাজ আবারো বন্ধ । ছয় মাস পর শুস্ক মৌসুমে কাজ আবার শুরু । এতোদিনে আমি ঋণ গ্রস্থ হয়েছি । কারণ আমার স্ত্রী পেগনেট ছিলেন তার ঠিকমতত চিকিৎসা করাতে পারি নাই । সংসার চালানোতেই আমি হিমশিম । বাড়ি ভাড়া প্রতি মাসে । পরের বছর কাজ শুরু হলো ।
আমার ঘরে জন্ম নিলো একটি কন্যা সন্তান । মেয়ের বয়স যখন আট মাস তখন সেই কাজ শেষ হলো । লাভ তো দূরের কথা , ক্যাশ টাকা ও ফেরত পেলাম না ।
কি আর করার যে টাকা ফেরত পেলাম সেই টাকা দিয়ে একটি ডিপার্টমেন্টাল দোকান দিলাম । তা দিয়ে সংসার চলতো না ।
সংসারের এমন অবস্থা দেখে ৭ মাসের বাচ্চাকে রেখে বউ চাকুরী নিলো একটি ইন্জিয়তে । সেই সকালে যেতে হয়,রাত ৭/৮ টা বাজে বাসায় ফিরে। দোকানের অবস্থা ও খারাপ ।
বাঁকি বিক্রয় হতো বেশি । আর তাছাড়া একার পক্ষে সম্ভব না দোকান চালানো । এক বছরের মাথায় দোকানও বাদ । নিজে বেকার হয়ে ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতাম । মিয়েকে দুধ খাওয়ানোর টাকা নেই। কি এক করুণ পরিণতি।
হতাশা আমাকে গ্রাস করতে চায় । কিন্তু আমি শক্ত ছিলাম । এখনো আছি । একজন আওয়ামীলীগের বড় নেতার সাথে পরিচয় । তিনি তার খামার পরিদর্শনের চাকুরী দিলেন । বেতন ছাড়াই দেখাশুনা করতাম । কিন্তু তিনি মাঝে মাঝে বেতনের চাইতে বেশি দিতেন ।
উনার কাছের লোক দেখে অনেক লোক আমার কাছে কাজ নিয়ে আসতেন । বলতেন কাজ করতে পারলে টাকা দিবেন ।
আমি সেই কাজ গুলি করতাম না ।তবে, টাকা ছাড়াই কিছু কিছু লোকের ভালো কাজ করেছি ।
চোখে মুখে আমার হতাশা । বাড়ি শেষ , গাড়ি শেষ , দোকান শেষ , টাকাও শেষ । কি করবো আমি হতাশাগ্রস্থ।
ইবাদত করতাম । মনে প্রাণে আল্লাহকে ডাকতাম । তখনো আমি ভেঙে পরি নাই । আমার স্ত্রী কখনোই আমাকে ভেঙে পরতে দেই নাই ।
আংকেলকে বললাম আমার স্ত্রীকে সরকারি একটা চাকুরী দিতে । কয়েক মাস পর স্ত্রী পেয়ে গেলো শিক্ষকতার চাকুরী । শুরু করলাম আবার দুজন মিলে দিন বদলানোর চেষ্টা ।
মনে স্বপ্ন ছিলো,যে বাড়ি আমি বিক্রয় করেছি তার চেয়ে দ্বিগুন দ্বিগুন অর্থ দিয়ে বাড়ি করা ।
একদিন আমার স্ত্রী খবরের একটি কাগজ হাতে বাসায় ঢুকলো আর বললো পড় এই বিজ্ঞপ্তিটা । পড়লাম সেখানে ইউ.এ.ই ট্যাক্সিতে লোক নিবে - শুরু হলো নতুন পথে যাত্রা ।
কখনোই ভাবতাম না যে, আমি পারবো না কিংবা আমার দ্বারা সম্ভব নয় । স্বপ্ন তখনো দেখেছিলাম যেমনটি এখনো দেখি । চেষ্টা তখনো করেছিলাম যেমনটি এখনো করি ।
তবে এখন যা করি তা একটু সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে করি । কাউকে বিশ্বাস করার আগে ভেবে চিন্তে / জেনে শুনে করি । কোন বুন্ধু নির্বাচন করার আগে শতবার যাচাই করি ।
কারো পরামর্শ নিতে হলে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নকরি । ব্যাবসা করার আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করি ।
ঘুরে দাঁড়াবো আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম । স্বপ্ন দেখি আকাশ ছোঁয়া । হেরে যাবো ভেবে চুপ করে বসে থাকি না । শুরু করে দেই ।
স্বপ্ন দেখি , সাহস করি , শুরু করি এবং সফলতা না আসা পর্যন্ত লেগে থাকি ।
আসবো আবারো আমি , আমার অসীম সফলতার গল্প নিয়ে । হার না মানার গল্প নিয়ে
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন । সৃষ্টিকর্তা আমাদের সুন্দর সুস্থ থাকার ও সফল ব্যাক্তি হওয়ার তৌফিক দান করুন ।
শেষ প্রশ্ন দোষ ছিলো কার ?
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭২
Date:- ২৭/১১/২০১৯ ইং
ফরহাদ হোসেন
৭ম ব্যাচ
রেজি: নং ৩৫৯৬
আবুধাবি ( ইউ.এ.ই )
হোম ডিস্ট্রিক
নওগাঁ
Blood Group-B+