জীবন মানে চলতে হবে, থেমে গেলেই অচল গাড়ি! আমাদের চাওয়া-পাওয়া গুলোও সেই জীবনের গতির সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়।
গ্রামের ছেলে আমি, গ্রামেই জন্ম এবং গ্রামেই বেড়ে উঠা। বাবা, মায়ের একমাত্র ছেলে আমি।পরিবারে আমি ছাড়া ও আছে আমার একটি বোন আছে ।
-
আমার বাবা-মায়ের আদরের দুই সন্তান। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করি । মধ্যবিত্ত পরিবার বলতে শুধু দুই মুঠো ভাত ও কোন রকম সংসার চালানোই ,,,,,
-মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন দেখতে নেই, -দেখতে নেই বড় লোক হওয়ার স্বপ্ন -দেখতে নেই সমাজের চোখে ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন । -নেই সমাজে বুক ফুলিয়ে চলার সেই অধিকার -নেই উচ্চবিত্ত পরিবারের কারো সাথে চলার সি অধিকার।
এই তথাকথিত মধ্যবিত্ত পরিবারের নিয়মের বেড়াজালে আমিও আটকে যাই সবার মত।
শুধু আর্থিকভাবে নয়, এই পরিবারের স্বপ্ন-চিন্তাচেতনা সবই আটকে যায় সেই মধ্যবিত্ত জীবন নামক বৃত্তের মধ্যে। বৃত্তের চাপ অতিক্রম করে আমাদের যেতে মানা। আবার বৃত্তের মধ্যে টইটই করে ঘুরতেও মানা। মধ্যবিত্ত সন্তানগুলো সব চেয়ে বেশি তাদের মা-বাবাকে উপলব্ধি করতে পারে। নিজের সাধ্যের সঙ্গে মা-বাবার সাধ্য কতটুকু সেটা ওরাই ভালো বুঝতে পারে। না পারলেও চেষ্টা করে। এক অদ্ভুত শিকলে বদ্ধ থাকে এই পরিবারগুলোর প্রতিটি জীবন।
এখানে জীবন মানে চলতে হবে, থেমে গেলেই অচল গাড়ি! আমাদের চাওয়া-পাওয়া গুলোও সেই জীবনের গতির সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই জীবনে সুখ থাকবে, থাকবে দুঃখ। তবে কষ্টগুলো প্রকাশ করতে মানা। জীবনের কোনো ক্লান্তিলগ্নে খুব কান্না এলে তাতেও মানা। আমাদের মধ্যবিত্তদের জীবনের গতি প্রায় সকলের একই রকম। যদি কোন ভাবে উপরের দিকে উঠতে চাই আমাদের আসেপাশের উচ্চবিত্ত লোকদের কারনে উঠা হয়না।।।।
তার যে কোন প্রকারে আমাদর নিচের দিকে নামিয়ে দেয়। এটা শুধু আমাদের মধ্যবিত্তদের বেলায় হয় না। আপনি যখন একটু উপরে উঠতে চাইবেন তাতে আপনার আশে পাশের লোকের সহ্য হবে না। তারা যেকোন ভাবে আপনাকে নিচে নামানোর চেস্টা করবে আর এটাই আমাদের সমাজে হয়ে আসছে। তবে আমাদের মধ্যবিত্তদের জন্য একটু বেশিই কঠোর হয়ে যায় সমাজের তথাকথিত উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষ গুলো। তারা হয়তো জানে না,,, সফলতা মানে নিজে নিজে সব ভোগ করা নয় সফলতা মানে আপনার আশে পাশের মানুষের জন্য কিছু করা যা তাদের কে মৃত্যুর পরও স্বরণ করবে আর এটাই হলো প্রকৃত সফলতা।
আমাদের জীবন হলো এমন একটা জীবন নিজের কোন আশা নাই কোন ইচ্ছা নাই। যদি কোন কিছু আশা করি তাও আমাদের মা,বাবা পুরন করতে পারেনা। তাই আমিও অন্যান্যদের মত বাবা-মা এর কাছ থেকে আশা করি না। নিজের সকল আবদার নিজের কাছেই গোপ্ন রেখে দিয় আর লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করি ।
যখন আমি ৫ম শ্রেনীতে নাঙ্গলকোট আফছারুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় পড়ি তখন আমাদের বাড়িতে থেকে আমাদের নাঙ্গলকোট বাজারে নাঙ্গলকোট আফছারুল কামিল মাদ্রাসায় হেটে হেটে যাওয়া শুরু করেছি। বাবাকে অনেক বলেও একটা সাইকেল বা কোন জানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারলাম না। বাবা শুধু আশাই দিল। সেই ক্লাস ৫ ম থেকে শুরু আজ আমি আলিম ২য় বর্ষে পড়ি সেই আশা এখনো চলছে। কারন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবারা সন্তানদের কোন কিছু দিতে না পারলেও আশাটা ভালো করে দিতে জানে। একটা মজার বিষয় হলো আজও আমি হেটে হেটে মাদ্রাসা যাই । অবশেষে বাবা আজ আমাকে সাইকেল কিনে দেয়। মনে হচ্ছে আমি সাইকেল পাইনি পেয়েছি আস্ত একটা বিমান। "অপেক্ষার ফল মিস্টি হয় " সাইকেল পাওয়ার পর আজ বুঝতে পারছি মানুষ কেন এই কথা বলে। বলার সাথে সাথে কোন কিছু ফেলে তাতে এত মঝা পাওয়া যায় না।
আর হ্যা আমি যখন নবম(৯ম) শ্রেণীতে পড়ি তখন আমি বাড়িতে নিজে নিজে ইলেকট্টিক কাজ শিক্ষার পরিকল্পনা করি কারন ইলেকট্রিক কাজ করতে আমার আগে থেকেই ভালো লাগতো তাই এটাকে আমি প্রফেশনালি নিয়ে নিয় কারন আমি আবার পড়ালেখার প্রতি খুবই মনোযোগী ছিলাম তাই নিজের পড়া লেখা চালানোর জন্য কিছু খরচের দরকার হয় আর এই ইলেকট্টিক কাজ দিয়ে আমার (৯ম) শ্রেনীর পড়ালেখা চলতো । তারপর যখন আমি আমি (১০)শ্রেণীতে পড়ি তখন আমি এইদিক ওদিক প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। এই টিউশনি ও ইলেকট্টিক কাজ করে যে টাকা উপার্জন করি তা আমি নিজের কাছে জমিয়ে রাখি।
কিছু দিন পর মাথায় আসলো এমন কিছু করা দরকার যা আমার পড়ালেখার জন্য ভালো হয়। বসে বসে কিছু করার চিন্তা আসলো কারন ইলেকট্রিক কাজ করতে গেলে পড়ালেখা তেমন করা যায় না। তাই সিদ্ধান্ত নিই একটা স্টুডিও টাইফের দোকান দেয়ার আর এর জন্য তেমন টাকা দরকার হবে না। কিন্তু আমার তো স্টুডিও কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই। কি করা যায় মাথায় আসে না। হঠাৎ করে মনে পড়লো এক ভাইয়ের কথা যিনি একজন ক্যামরা ম্যান। তখন ওই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে ক্যামেরার কাজ শিখার আগ্রহ প্রকাশ করি তার কাছে এবং তিনিও সম্মতি যানান শেখানোর জন্য তাই কিছু দিন কাজ শিখি। তারপর আমাকে আরেক ভাই হঠাৎ করে বলেন যে তুই তো ক্যামরার কাজ জানিস এখন তুই চাইলে ক্যামরা একটা কিনতে পারিস এবং কাজ শুরু করতে পারিস।
তখন আমারও মনে হলো তাই করি। তাই সেই জমানো টাকা দিয়ে দেখি একটা ক্যামেরা কেনা অসম্ভব । তাই বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু টাকা দার নিয়ে একটা ক্যামেরা নিয়ে নিই।
ক্যামেরা কিনে নিলাম তখন ২০১৮ সাল। আমি ক্যামেরা কিলাম ১৮-০৮-২০১৮ সালে ক্যামেরা নিতে আমার ৩৫০০০ হাজার টাকা গেলো। মোটামুটি আমি ২ থেকে ৩ দিনের মধ্য পাই ২০০০ টাকা কাজ করলাম।
২/৩ দিনের মধ্যে এত ইনকাম দেখে আমার স্বপ্নটা অনেক বড় হতে লাগলো।
কারন মধ্যবিত্তদের জন্য ২/৩ দিনে ২০০০ টাকা ইনকাম মানে অনেক কিছু।
কিন্তু ক্যামেরা কিনার ৭ (সাত) দিনের মাথায় ২৫-০৮-২০২০ তারিখে আমার ক্যামেরা চুরি হয়।
ক্যামেরা চুরি হওয়ার পর থেকে প্রায় ১০/২০ দিনের মত আমি অসুস্থ ছিলাম । মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি। কারন সাহস দেয়ার মত কেউ ছিল না। এরপরই বন্ধুদের কাছ থেকে দার নেওয়া টাকার জন্য চাপ আসতে থাকে। কি আর করা আবার আগের মত প্রাইভেট পড়িয়ে ও ইলেকট্টিক কাজ করে বন্ধুদের টাকা দিলাম।
-
তার পর আমি S.S.C পরিক্ষা দিলাম।
-
আমরা সকলেই জানি S.S.C এর পর ২/৩ মাস ফ্রি সময় থাকে। তাই এই সময়ে আমি কিছু কাজ শেখার সিদ্ধান্ত নিই আর সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি একটা কম্পিউটার দোকানে কাজ শেখা শুরু করি। কাজ শিখতে শিখতে এই কাজের প্রেমে পড়ে গেলাম।
কোন টাইম নেই , ঠিকমত খাওয়া নেই, নিয়মিত চালিয়ে গেলাম ক্লাস, একটাই পরিকল্পনা তা হচ্ছে যেকোন মুল্যে এই সময়ের মধ্যে আমাকে কাজ শিখে নিতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে কাজ শিখতে পেরেছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে। আর তা একমাত্র কাজের প্রতি প্রেমে পড়ার কারনে করতে পেরেছি।
আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার একটা কথা সব সময় বলেন,,, কাজকে নিয়মিত করতে চাইলে কাজের প্রেমে পড়তে হবে।
এখন আমি একটা কম্পিউটার দেকানে চাকরি করি। আর চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম। এরই মাঝে একদিন চোখে পড়ে যায় আমাদের প্রিয় প্ল্যাটফর্ম To Be an Entrepreneur #নিজের_বলার_মত_একটা_গল্প Foundation। আর আমি এই ফাউন্ডেশনকে নিয়মিত ফলো করা শুরু করি। ফলো করতে করতে বুঝতে পারলাম এই ফাউন্ডেশনের সকল সদস্য স্বপ্নবাজ এবং ভালো মানুষ। যেখানে স্যার নিয়মিত সেশন দিয়ে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন,,,
-কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়।
-কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়।
-কিভাবে অন্যের জন্য কাজ করে নিজে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।
-কিভাবে মধ্যবিত্ত হয়েও একজন সফল মানুষ হওয়া যায়।
-কিভাবে মধ্যবিত্ত হয়েও সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিস্টিত করা যাই।
-কিভাবে নিজে প্রতিস্টিত হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের কে প্রতিস্টিত করার জন্য কাজ করা যায়।
এতদিন অন্যের দোকানে কাজ করেই যাচ্ছি কিন্তু কি করবো ভবিষ্যতে তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। প্রিয় স্যার জনাব Iqbal Bahar Zahid
স্যার এর প্রিয় ফাউন্ডেশন #নিজের_বলার_মত_একটি_গল্প_ফাউন্ডেশন এর সান্যধ্যে আশার পর আমার সামনের পথচলাটার ভবিষ্য খুবই পরিস্কার দেখাচ্ছে।
এখন শুধু স্যার এর এই সেশনটি ফলো করে অপেক্ষা করছি নিজে কিছু করার । আর এই সেশন টি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করে দিয়েছে,,,,,,
..........সেশনটি হলো,,,,,
"""""""চাকরীকে না বলার আগে ব্যবসাটা নিশ্চিত করুন দেশে এবং বিদেশে যারা বর্তমানে চাকরীতে আছেন, একটা ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু না করে হুট করে চাকরী ছেড়ে দেয়াটা বোকামি। আমি অসংখ্য বার বলেছি, যারা চাকরী করছেন তারা চাকরীর পাশাপাশি একটা পার্ট টাইম বিজনেস ছোট করে বা অল্প কয়েকজন পার্টনার নিয়ে শুরু করেন এবং ব্যবসাটা শিখে আস্তে আস্তে বড় করেন। যখন দেখবেন, আপনার বিজনেস আপনাকে ফুল টাইম ডিমান্ড করছে এবং আপনার বাজার ধরার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে, তখন ৩-৬ মাস আপনার হাত খরচ চালানোর টাকা বেতনের চেয়ে কম হলেও, আপনি চাকরী ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যারা এখন বিদেশে থাকেন, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা বা উদ্যোগ রেডি করে তারপর দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিবেন। কোন কিছু রেডি না করে করে হুট করে চলে আসবেন না। তাতে ব্যবসা শুরু করতে ১ বছর লাগলে, এই ১ বছর জমানো টাকা ভেঙ্গে মাসের খরচ চালাতে হবে এবং আপনার মূলধন নষ্ট হবে। আমি তো বলবো, ওখানে বসেই দেশের সাথে বা বিদেশের সাথে পার্ট টাইম ব্যবসার হাতে খড়ি নেন, দেশের থেকে প্রোডাক্ট ইম্পপোর্ট করেন এবং আপনার ঐদেশ থেকে বাংলাদেশে প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট করেন। তখন চাইলেই আপনি যখন তখন দেশে আসতে পারবেন। তবে বড় কিছু করতে হলে রিস্ক নিতেই হবে কিন্তু রিস্কটা যেন ক্যালকুলেটিভ হয়। জীবনে বড় কোন স্বপ্ন পূরণ করতে হলে সেটা ব্যবসা করেই অর্জন করতে হবে। আবারও তাড়াহুড়া নয়, জানুন, শিখুন, ছোট ছোট রিস্ক নিন, একদিন বড় রিস্ক নেয়াটা সহজ হয়ে যাবে।"""""""""""""
-
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন একজন সফল ও ভালো মানুষ হতে পারি।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৫৩
Date:- ৩১/০১/২০২১
আমি
নাম: মোঃ আল আমিন
রক্তের গ্রুপ: O+
ব্যাচ: ১০ম
সদস্য নং-১৭৫৯০
ছাত্র: নাঙ্গলকোট আফছারুল উলুম কামিল মাদরাসা
গ্রাম : নাঙ্গলকোট।
জেলা: কুমিল্লা।