লম্বা লম্বা বিদেশী চিঠির খাম, একটি চিঠি ও ফোন এর জন্য আমার মা অনেক অপেক্ষা করতো
আজকে আমি আমার মেজ ভাইকে নিয়ে ছোট একটি গল্প লেখবো :
👱যে ভাই ১৬ বছর বয়স থেকে পরিবারের জন্য নিজের ত্যাগ স্বীকার করে,
নিজের ভবিষ্যতের কথা না চিন্তা করে, পরিবারের জন্য করে গেছেন।
শুরু করেন মেকানিক্যাল গ্যারেজর কাজ দিয়ে আমার মেজো ভাইয়ের ব্রেইন অনেক ভালো, যে কাজ গুলো সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি নিজের মধ্যে নিয়ে নিতে পারেন।
প্রথম ২ বছর খুব সুন্দর কাজ করছিলেন,
ঐখান কার এক দালাল বললেন বিদেশ যা আরো ভালো টাকা উপার্জন করতে পারবি, এই একটু লোভ দেখিয়ে দালাল বলল তোর মার সাথে আমি কথা বলছি, আমার ভাই কিছু আর বলল না।
কাজ শেষ করে যখন বাসায় গেল মা বলল শাহ-আলম তুই বিদেশ যা কাজ যখন জানোছ করতে পারবি, আমার ভাই আর কিছু বললো না,
কি বলবে পরিবারের একটি অংশ তো উনিই বহন করে।
কি করেননি বলতে হবে:
আমরা ৪ ভাই ১ বোন :
👷 সাল টা হচ্ছে ১৯৯৮: মেজো ভাইয়ের বিদেশ সফর।
আমি অনেক ছোট এতোটুকু বুঝি একটি বিমান✈️ মাথার উপর দিয়ে গেলে বুঝতে পারি বিমান যাচ্ছে।
মেজ ভাই: ১৯৯৬ সালে আমাদের এলাকার এক দালাল ধরে ৮০,০০০/ টাকা লোন নিয়ে আমার ভাই সৌদিআরবে উদ্দেশ্য সফর দেন, তখন ঐ যে বললাম একটু বুঝি তখন।
একটু পরিবারের ইচ্ছে সুখ শান্তি কিছুটা গুছানোর জন্য, ঐ সময়টায় ল্যান্ডফোনের যুগ, লম্বা লম্বা বিদেশী চিঠির খাম, একটি চিঠি ও ফোন এর জন্য আমার মা অনেক অপেক্ষা করতো, ২,৪ মাস ভালোই চলছিল।
😂😂 একদিন আমাদের পাশের বাড়ির এক আংকেল এর ল্যন্ড ফোন এ কল আসলো সৌদিআরব থেকে আমার মাকে ডাক দিয়ে বলল শাহ আলম এর মা তোমার ছেলে ফোন দিয়েছেন,
মা তো অনেক আত্মহারা ছেলের ফোন পেয়ে যখন শুনলেন আমার ভাইয়ের জাল ভিসা দিয়েছে এখন জেলে তখন জীবনের সবচেয়ে বড় দূংখের দিন যা ভাষায় প্রকাশ করার মতোন না, যখন পরিবারের এক মাএ উপার্জনকারির কি রকম পরিস্থিতির মধ্য থাকতে পারে, সবাইর জানা। বেক করে চলে আসলো ৬ মাস পর সৌদিআরব ব্যর্থ সফর শেষ করে।
🚘নতুন জীবন ড্রাইভিং :
১৯৯৮ এর শেষ দিকে : মিরপুর এর একমাত্র রেন্ট একার ছিল মামা - জগতের "মামা" প্রথম বারের মতো ড্রাইভিং এ জয়েন্ট করলেন মেজো ভাই।
ঐ রেন্ট একার হাতে গোনা ১০ থেকে ১২ টা গাড়ি ছিল আমার ভাই একজনের গাড়ি বদলি চালাতো, পার্টটাইম হিসেবে এ করে সারাদিন ৩০০ টাকার এর মতো আসতো তখন কার সময়, এই টাকা এনে আমার মাকে দিত, এই ভাবে বদলি গাড়ি চালাতে বছর খানেক চলে গেল।
সালটা ১৯৯৯ এর মাঝামাঝি: রেন্ট-একার মালিক যাকে জগতের মামা বলে ডাকতো তিনি আমার মেজো ভাইকে বলল আলম তুই আজ থেকে এই গাড়িটি সবসময় এর জন্য চালাবি , আমার তো অনেক খুশী হয়ে গেল।
আর বলল গাড়িটি মনে কর তোর নিজের, খুব যতন করে চালাবি, গাড়িটি নিয়ে আমার মার কাছে চলে আসলো বাসায় বললো মা এই গাড়িটি এখন থেকে সবসময় পারমানেন্ট ভাবে চালাবো বলছে মেজো ভাই।
গাড়িটি ছিল -- লাইট নন এসি টয়োটা তখনকার সময় বিখ্যাত গাড়ি, মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ সূখের দিন চলছে.... এক বছর এর আমার ভাইয়ের এক নাম হয়ে গেল শাহ আলম ড্রাইভার। আস্তে আস্তে একটু নাম হওয়া শুরু হল ইনকাম শুরু হল।
সর্ব পরি খরচ শুরু হল আমার সম্পুর্ন খরচ আমার ভাই দিতেন, আমার ছোট ভাইয়ের, সমস্ত খরচ তিনিই দিতেন।
💑হঠাৎ বিয়ে : কিছুদিন পর একদিন হঠাৎ বিয়ে করে নিয়ে আসেন বাসায় আমার মা মেনে নিতে পারলেন না, অনেক কস্ট পেলেন আশা ছিল তাঁর পছন্দের মতো বিয়ে করাবেন, কি আর করা শুরু হল তার জীবনের নতুন লাইফ। তারপরও তিনি সবার খরচ দিতেন বুঝতে পারছি একার পক্ষে তার সংসার চালানো অনেক খরচ হয়ে যায়।
একজন মেজো সন্তান হয়ে যা করেন অনেক বেশী
সেইদিন থেকে বুঝতে পারলাম একটি পরিবারের
মেজো সন্তানরা কিনা করতে পারেন।
★★#_মেজো_সন্তান★★★ -----
আমরা প্রায় সব পরিবারে দেখি বাবা মা মেজ সন্তানকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তাই মগ্ন থাকে।
কারণ মেজ সন্তান কেমন জানি সবার থেকে একটু আলাদা হয়। তারা একটু গাড় টেরা স্বভাবের হয়। অনেক বেশি স্বাধীনচেতা,
একটু একগুঁয়ে স্বভাবের হয়।
এমনকি অনেক সময় দেখা গেছে পরিবারে সবাই কোন সিদ্ধান্তে মত দিল মাঝখানে মেজ সন্তানকে দেখা গেল সে দ্বিমত পোষণ করে বসে আছে। শুধু তাই নয় মেজ সন্তান একটু বেশি জেদি হয়।
পৃথিবীর কারো সাধ্য নাই তাকে বুঝার সে নিজে যা বুঝে সেটাই ঠিক। তাই এইসব স্বভারে কারণে পরিবারের মেজ সন্তানকে নিয়ে বাবা মা অনেক চিন্তাই থাকেন।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো সবার থেকে একটু আলাদা এই মানুষটাই পরিবারে সবচেয়ে বড় সম্পদ।সেই মানুষটা সবার চেয়ে আলাদা।
অনেক ভাল মনের মানুষ এই ভিন্ন স্বভাবের মানুষটা।
🌴আত্মনির্ভরশীল মানুষ হয়ে গড়ে উঠে মেজ সন্তান:
বাবা মাকে অনেক সময় দেখা গেছে পরিবারের বড় আর ছোট ছেলেকে বেশি সময় দেয়। মাঝখানে দেখা গেল মেজ সন্তান তা থেকে বঞ্চিত হয় ফলে মেজরা ধীরে ধীরে আত্ননির্ভরশীল হয়ে উঠে।
💑সম্পর্কের মূল্য খুব ভাল বুঝতে পারে মেজ সন্তান:
বড় এবং ছোটদের সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তাদের সাথে কীভাবে চললে সম্পর্ক অনেক বেশি ভালো থাকে তা মেজোরাই ভালো বুঝে থাকেন।
কারণ তিনি তার বড় ভাই-বোনের কোনো ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকলে নিজের ছোটোজনের সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা বুঝে যান।
এবং তিনি নিজের বড় কারো সাথে যেভাবে ব্যবহার করবেন সেটাই তিনি তার ছোটজনের কাছ থেকে ফিরে পাবেন ভেবে তাও নিজে থেকেই শিখে নেন।
কিন্তু পরিবারের অন্য ছেলে মেয়েরা তা ভাবেনা।
একারণে দেখা গেছে আত্মীয়স্বজন থেকে সকলেই মেজো সন্তানটিকে বেশ পছন্দ করে ফেলেন। মোট কথা মেজরা অন্যদের থেকে একটু আলাদা থাকে তাদের নিয়ে, চিন্তার কোন কারণে নেই তারা অনেক ভাল মনের মানুষ হয়ে থাকে।
সেই মেজো ছেলে এখন যুদ্ধ করছে তার নিজের সংসার এর জন্য,
ইচ্ছা থাকলেও মা বাবা কে সময় দিতে পারছেন না,
আমার ভাই এতো নিস্টুর কেন হলো আজও অজানা রয়ে গেল।
#_সুমন_রায়হান
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার
রেজিস্ট্রেশন টিম মেম্বার
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন
ব্যাচ : নবম
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার : ১৯৭২৭
জেলা : মিরপুর, ঢাকা