২০০৪ আমার আব্বু কাজ করতো টঙ্গী গাজীপুর নিশাত জুটমিলে, একদিন হঠাৎ গেইটে নোটিশ মিল বন্ধ অনিদিষ্ট সময় এর জন্য
কল মানুষের মাঝে লুকিয়ে আছে একজন কবি একজন লেখক একজন শিল্পী কেউ প্রকাশ করতে পারে আর কেউ পারে না। সাপোর্ট ও উৎসাহ অনুপ্রেরণায় নতুন করে ভাবায়। স্যার এর অনুপ্রেরণায় আজ আমার জীবনি লেখার সাহস পেলাম।
আমার জীবনের গল্প আমার গুরে দাড়ানো আমি মো ফারুক মিয়া বাড়ি কুমিল্লা,
২০০৪ আমার আব্বু কাজ করতো টঙ্গী গাজীপুর নিশাত জুটমিলে, একদিন হঠাৎ গেইটে নোটিশ মিল বন্ধ অনিদিষ্ট সময় এর জন্য সকলের পাওনা পরিশোধ করে দেওয়া হলো। তখন যা পেনশন পেয়েছিল তা দিয়ে আব্বুর কিছু ঋণ ছিলো তা পরিশোধ করেন। অবশেষে আব্বুর পকেট শূন্য পড়েছেন বিপাকে।
আমি তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি মেধা ভালোই ছিলো স্যারেরা আমাকে খুব ভালোবাসতেন।ক্লাসের প্রথম কয়েকজনের একজন আমি।দুঃখের বিষয় আব্বুর চাকরি হারানো টা আমার জীবেনর অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।অভাবের কারনে আমার পড়াশোনা বন্ধ।
আমাদের পাঁচ ভাই এক বোনের পরিবার, আমার বোনের জন্মের সময় মায়ের অবস্থা আশঙ্কা জনক।কি যে করি আব্বুর চাকরি নাই আমি ও ছোট মানুষ।সহযোগিতা করবে এমন কেউ নেই।মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই পারি না।মা বলে বাবারে আমি হয়তো আর বাঁচবো না। আমি বলি মা তুমি এমন করে বলো না।এমন সময় তুমি এমন কথা বলো না।তুমি চলে গেলে আমাদের কি হবে।আমার তো পড়ালেখা বন্ধ তাতে সমস্যা নাই কিন্তু তুমি ছাড়া আমারা কার আঁচলের ছায়ায় রইবো। একটু সবুর করো মা আল্লাহ তো আছেন।
কি করবো ভেবে পাইনা দু-চোখের পানি শুধু ঝরছে। আব্বু ও অনেক ছুটাছুটি করছে কোনো লাভ নাই, গতে পড়লে কেউ তো এগিয়ে আসে না।আর আমরা তো যেন মহা সাগরের বুকে কুলকিনার নাই। নিজে ও ছোট কিন্তু কিছু তো করতেই হবে।এলাকার এক মামার ফার্নিচারের দোকানে মিললো কাজ।যাই বেতন পাই তা দিয়ে কি আর এতো বড় সংসার চালানো সম্ভব নয়।না খাই নাদাই সব সংসারে দেওয়ার পর ও সংসার চলে না।এই দিকে মা ও অসুস্থ চিকিৎসা চালাতে গিয়ে অনেক ধারদেনা হয়ে যায়।
এই ভাবে জীবনের দুইটি বছর পার করি দেই।পরিবর্তন আসে না। অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে। তখন চিন্তা করলাম আমাকে নতুন করে চিন্তা করতেই হবে।কিছু বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সাথে পরামর্শ করি কি করবো আমি।তারা সবাই পরামর্শ দিলো দেশের বাহিরে যাওয়ার।
পরামর্শ তো পেলাম কিন্তু অর্থ কোথায় পাবো অনেক টাকার ব্যাপার স্যাপার। আব্বুর সাথে কথা বলি বাবা বলে কিছু তো করতে হবে তোমার বয়স ও কম এই বয়সে তোমার উপর অনেক চাপ এসে গেলো আব্বুর চোখ পানি টলমল করছে।আমি বলি আব্বু চিন্তা করো না আমি পারবো আমাকে দেশের বাহিরে যেতে হবে।
তখন আব্বু জমি বিক্রি করে আমার জন্য ভিসা ক্রয় করে।বাগানের ভিসা পানি দেওয়া আমার কাজ খুব সহজ কাজ। আলহামদুলিল্লাহ সমস্যা হবে না।আল্লার নাম নিয়ে চলে আসলাম।মরুভূমির এই দেশে সংযুক্ত আরব আমিরাত আল আইন এর লোগানে।
একদিন রেস্ট নেওয়ার পরে বাগানে যাই দেখি এটা তো বাংলাদেশের বাগান না এটা খাজুর বাগান।দেখে তো মাথা ঠিক নাই কি করি জমি বিক্রি করে এসেছি বাড়ির অবস্থা করুন।কাজ তো শুধু পানি দেওয়া না খাজুর গাছ পরিষ্কার করা এতো লম্বা লম্বা গাছে উঠে ।
আব্বু ফোন দিলো জিজ্ঞেস করলো আব্বু কেমন আছো সব ঠিক আছে তো কোন সমস্যা নাই তো।চোখে জল বুকে সাহস নিয়ে বলছি আব্বু ভালো সব ঠিক আছে। কি করে বলবো আমি সত্য কথা বলা সম্ভব নয়।
লেগে গেলাম জীবন যুদ্ধে আমাকে পারতে হবে।এক দুই করে ২টি বছর পার হয়ে গেলো তেমন পরিবর্তন করতে পারিনি যেই বেতন তবুও সংসার চলছে। কিন্তু আল্লার কি লিলা আমাকে আবার পরিক্ষায় পেলে দিলেন ভিসা শেষ দেশে মা অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছে। মা হাসপাতলে অনেক টাকার প্রয়োজন। এই দিকে আমাকে ভিসা লাগাতে হবে সেইখানে ও টাকার প্রয়োজন। যেকোন মূল্য দুইটাই আমাকে করতে হবে।অবশেষে ধারদেনা হয়ে গেল অনেক।
কিন্তু আত্মবিশ্বাস ও মনোবল এখন আর আগের মতো নয়। নিজের প্রতি নিজে চ্যালেঞ্জ করলাম আমাকে সফল হতে হবে।আমাকে গুরে দাড়াতে হবে।কিন্তু কি ভাবে তা তো জানা নাই।এই ভাবে আরো দুই বছর শেষ হয়ে গেলে। মোট চার বছর প্রবাস জীবনের।
মা ফোন দিলেন আব্বু এই ভাবে আর কত তোর ছোট ভাইকে নিয়ে যা বা অন্য কোন দেশে পাটানোর ব্যবস্তা কর।একা পারবি না।মায়ের কথা আমাকে চিন্তা করতে বাধ্য করে মা ঠিক বলেছে ছোট ভাই পাশে দাঁড়ালে সুবিধা হবে।
দেরি না করে কাতার এর একটা ভিসা ক্রয় করে ছোট ভাইকে পাটিয়ে দি।৮ দিন পর খবর আসে মা আমার নাই
আল্লার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আসমান যেন আমার মাথায় পড়লো।জীবন কেনো এতো পরিক্ষা নিচ্ছে আমার থেকে জানি না।
তার পর সাথে সাথে দেশে যাই মায়ের দাফন কাফন শেষ করি।কত স্বপ্ন মাকে নিয়ে সুস্থ করবো মায়ের হাতে কত দিন খানা খাওয়া হয়না। মায়ের হাতের খানা খাবো বলবো মা আমি তোমার ছেলে সংসারে হাল ধরেছি তোমার চিন্তা দিন শেষ।তা আর হলো মায়ের সাথে সাথে দাফন হয়ে গলো।
দশ দিন পর আবার ফিরে আশা হলো। এই ভাবে চলছে জীবন, তার বছর দুই পরে ছোট ভাই আরেক টাকে ও কাতার পাটিয়ে দিলাম।নিজে দেশে গেলাম বিয়ে করলাম। আমার ঘর জুড়ে এলো আমার এক পুত্র সন্তান জিসান। তাকে পেয়ে আমার অতীতের সব কিছু যেন ভুলে গেলাম।
এইভাবে চলছে নিজের মাথা কাজ করছে নিজে কি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবো।চিন্তা করলাম ড্রাইভারি করবো কিন্তু এইদেশে লাইসেন্স নেওয়া তো খুব টপ সোনার হরিন এর মত অনেক টাকার ও প্রয়োজন তবু নেমে গেলাম এবং সফল ও হলাম এইদেশে গাডির লাইসেন্স নিলাম।
এক দিন একভাইয়ের সাথে পরিচয় আমার বন্ধু মানুষ মন্জুরে আলম সে বলে ভাই ফেসবুক একটি গ্রুপ আছে যেই খানে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার বিনামূল্যে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস করায় কিভাবে একজন মানুষ উদ্যেক্তা হবে কিভাবে ব্যবসা করবে এবং সেই খানে নতুন পুরান সারাদেশে এবং প্রবাসের অনেক উদ্যেক্তা রয়েছে। আপনি যুক্ত হোন তাহলে তাদের সাথে পরিচিত হতে পারবেন নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।এবং শিখতে পারবেন।
আমি বলি নাম কি ভাইয়া বলে,"নিজের বলার মত একটা গল্প" তার পর যুক্ত হই এবং উনি নিজে আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করে দেন।আলহামদুলিল্লাহ আমি স্যার এর সেশন পড়ে এবং ভিডিও দেখে কতটুকু শিক্ষা পেয়েছি তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।আমার মনে যে একটা প্রশ্ন ছিলো কিভাবে আমি উদ্যেক্তা হবো প্রতিষ্ঠিত হবো তার রাস্তা যেন পেয়ে গেলাম। যেন এসেই ব্যক্তির অপেক্ষায় ছিলাম আমি।
আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি প্রিয় স্যার এর আল্লার স্যার কে নেক হায়াত দান করুন স্যার এর পরিবার কে সুস্থ রাখুন আমিন।স্যার জন্য আমার মত কত পথহারা দিশাহারা হতাশা যুক্ত আজ নিজে বলার মত একটা গল্প তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক তৈরি করে পেলেছেন।আমি প্রস্তুতি নিয়ে পেলেছি আপনার আমার জন্য দোয়া করবেন এবং পাশে থাকবেন।আমি এগ্রো ফার্ম নিয়ে কাজ করছি।খুব তারাতাড়ি শুরু করবো।
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি এতো কষ্ট করে আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার লেখা টি পড়েছেন।ভুল হলে ক্ষমা করবেন।আমার দোয়া ও ভালোবাসা সবসময় আপনাদের জন্য।আমরা সবাই ভালো মানুষ একে অপরের সহযোগী হয়ে পাশে থাকবো।ইনশাআল্লাহ
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৫৫
Date:- ০৩/০২/২০২১
------আমি----
মোহাম্মদ ফারুক মিয়া
জেলা: কুমিল্লা
ব্যাচ :সপ্তম
রেজিস্ট্রেশ :৩২৩৪
Blood: O+
United Arab Emirates(Al Ain)
009710569539181