প্রতিটা মেয়েই তার পরিবারে রাজকন্যা হয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ কোন একদিন সেই রাজকন্যা রাজ্য হারিয়ে জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়াইয়ে নামতে হয়
প্রতিটা মেয়েই তার পরিবারে রাজকন্যা হয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ কোন একদিন সেই রাজকন্যা রাজ্য হারিয়ে জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়াইয়ে নামতে হয় সেই গল্পই করতে এসেছি।
সেই রাজকন্যা ছিলাম আমি। বি বি এ থার্ড ইয়ার এ পড়া পর্যন্ত কোন কাজই পারতাম না। ঘরের কাজ তো দূরের কথা কাপড় যে কেচে পড়তে হয় সেটাও জানতাম না। এমনকি ভাত মাখিয়ে খেতেও জানতাম না। সেটাও আম্মু করত। আমার পৃথিবী ছিল বই, স্কুল কলেজ আর মা-বাবা-বড় ভাই। কিন্তু হঠাৎ ০১-০৩-২০১৫ তারিখে জীবনটা পাল্টে যায়। আম্মুর স্ট্রোক হয়, বাম সাইড প্যারালাইস্ড হয়ে যায়। শুরু হয় জীবন যুদ্ধ। যে মেয়ে ভাত মাখিয়ে খেতে জানত না সে রান্নাও করে। হাতের ১০ আঙ্গুলে ১০ টা ব্যান্ডেজ করা থাকত প্রায়ই। তবে
আব্বু ভাইয়া সবাই অনেক সাহায্য করত। আর আম্মু সব সময় কাঁদত আমাকে দেখে। তবে আমি শুকরিয়া আদায় করতাম যে আনার জান্নাত তো আমার কাছেই আছে। একটু হলেও সেবা করার সুযোগটা পাচ্ছি যেটা হয়ত অনেকেই পাই না।
বি বি এ প্রচুর খরচ। বাবা বেসরকারি চাকুরী করে। ভাইয়া পড়াশেনার পাশাপাশি ছোট্ট ১ টা জব করে। বাবার টাকায় চিকিৎসা, সংসার চালানো, আমার পড়াশোনা ১ সাথে চালানো কষ্টকর ছিল। ভাবলাম আমিও চাকরি করব। কারন আমার পরিবার বা আত্নীয় সবাই
চাকরি করে। তাই ব্যবসা কি সেটা জানা ছিল না। চাকরি পেয়েও গেলাম ১ টা। শুরু হলো নতুন অধ্যায়। ভোরে নামাজ শেষে রান্না করা, সংসারের সব কাজ, মায়ের কাজ সেরে অফিসে যেতাম। রাতে বাসায় ফিরে আবার সংসার। পড়ার সময় পেতাম না। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনরা এমনকি বন্ধুরাও বলত যে মেয়ে ভাত মাখিয়ে খেতে পারে না সে পড়াশোনা, সংসার, অসুস্থ মা, সব সামলে চাকরি করতে পারবে না। দেখবে ২ দিন পর বাসায় ফিরে আসবে।
আমি ছোট বেলা থেকেই খুব জেদি ছিলাম। মনে জিদ চেপে গেল। আমি সবই করব। দেখিয়ে দিব আমার পরিবার আমাকে হারতে শেখাইনি। গত ৫ টা বছর রক্ত মাংসের রোবট হয়ে গেছিলাম। এভাবেই শেষ হলো এম বি এ। চাকরী ভালই চলছিল। ম্যানেজার হিসাবে কাজ
করছিলাম। বসের উন্নতি ঠিকই হচ্ছিল। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই থেকে গেলাম। তাছাড়া মেয়েদের চাকরির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যখন দেখলাম আমার স্হানের পরিবর্তন হয়নি এবং অন্য কিছু কারনে চাকরিটাও ছাড়তে হয়। তখন খুব ভেঙে
পড়েছিলাম। জব ছেড়ে নিজেকে শুন্য মনে হচ্ছিল।
অনেক খোঁজ চেষ্টা করার পর সন্ধান পেলাম নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের এটা যেন মেঘ না চাইতেই জল এর মত মনে হলো। আমার হতাশাগ্রস্ত জীবনে আলোর প্রদীপ এর মতো।
কি করা যায় সেটা নিয়ে কয়েকজনের সাথে আলোচনা করতে যেয়ে এই ফাউন্ডেশনের কথা শোনা। নিজের বলার মতো একটা গল্প নামটা শুনলেই মনের মধ্যে একটা জায়গা তৈরি হয়ে গেছিল। কিন্তু তার কাছে শুধু নামটাই শোনা। কি করতে হয়, বা গ্রুপটা সম্পর্কে কিছুই
জানতাম না। কার কাছে সাহায্য নিব তাও বুঝছিলাম না। একটা পোস্টে কমেন্ট করলাম আমি রেজিষ্ট্রেশন করতে চাই। হঠাৎ মেসেন্জার এ সাড়া পেলাম। খাইরুল আমিন ভাইয়া যিনি নিজ দায়িত্বে অত্যন্ত যত্নসহকারে রেজিষ্ট্রেশন করে দিলেন। তারপর সাড়া পেলাম
আর এম রনি ভাইয়া যিনি যশোর মেসেঞ্জারে এড করে দিলেন। শুরু হলো স্যারের সেশন থেকে শিক্ষা নেওয়া। আস্তে আস্তে পরিচিত হতে শুরু করলাম সকলের সাথে।
চাকরি না করে নিজে কিছু করব শুনে সবাই বলে এটা সম্ভব না। অনেক টাকার দরকার, আবার একা একটা মেয়ে করতে গেলে সমস্যা হবে ইত্যাদি। যখন স্যারের সেশন গুলো ফলো করতাম মনে মনে সাহস পেতাম। তাড়াহুড়ো না করে নিজেকে নিজে সময় দিতে লাগলাম।
সাথে ছিল লিটন ভাইয়া, ফারুক ভাই, রাসেল ভাই, রুবেল ভাই, ইউনুস ভাই, রোজ আপু আরো অনেকে। অনলাইন অফলাইন সব মিটআপে থাকতে লাগলাম আর শিখতে লাগলাম। ভাল মানুষের সাথে থাকলে নিজেও ভাল কিছু করা যায় এটার প্রমান পেলাম। তবে পথটা সহজ
ছিলনা। অনেকে অনেক বাজে মন্তব্য করেছে, ঠকিয়েছে। তবে একটা কথা মনে গেথে নিয়েছি লোহা যত পোড়ে তত খাটি হয়
তার পর থেকে শুরু হয় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা। উদ্যোক্তা জীবনে পথচলা শুরুটা হয় একা। শুরুতে ঠকেছি তবে হাল ছাড়িনি। প্রতিটা হার একটা শিক্ষা দেয়। একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্রথম শর্ত হলো প্রবল ধৈর্যশক্তি নিয়ে লেগে থাকা।প্রথমেই আমাদের সফলতা আসবে না।হেরে যাবো কিন্তু তাই বলে তো থেমে থাকবো না।আবার উঠে দাঁড়াবো। চলার পথে যদি থেমে যাই তবে সে পথ পাড়ি দেওয়া আর সম্ভব হয়ে উঠে না।হেরে গিয়ে আবার শুরু করবো তবেই তো সফলতার গল্প তৈরি করতে পারবো। উদ্যোক্তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা যেটা সবার মাঝে থাকেনা।
আমি বর্তমানে কাজ করছি হাতের কাজের ড্রেস, ঘড়ি ও জুয়েলারি নিয়ে। নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন আমাকে আজ এখানে আসতে সবথেকে বড় অবদান রাখে। সকলের সহযোগিতা কাম্য।
তবে আফসোস হয় আরো আগে যদি এখানে আসতাম তাহলে জীবনের গল্পটা ভিন্ন হতো। এখান থেকে যা শিখেছি তা হলো.......
প্রতিটা ব্যার্থতার পিছনে লুকিয়ে থাকে সফলতা।
সমস্যা থেকে বের হয়ে আসে নতুন কোন সম্ভবনা।
লোকের কাজ সমালোচনা করা, জয়ী হয়ে দেখিয়ে দেওয়াটাই সঠিক উত্তর।
আপনার প্রতিটা স্বপ্ন হয়ত সফল নাও হতে পারে। তবে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করা যাবে না কারন স্বপ্ন আপনাকে জাগিয়ে রাখবে।
সবসময় জিততে হবে এই মানষিকতা আমাদের অসুস্থ করে দেয়। কোন কোন হার নতুন পথ দেখাই।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে পজিটিভিটি এর সাথে সাথে আমরা তৈরি করছি সারা পৃথিবী জুড়ে অসাধারণ একটি নেটওয়ার্ক। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে আমাদের বিভিন্ন নতুন নতুন দক্ষতা, আর এই সমস্ত দক্ষতা গুলো আমরা আমাদের
প্ল্যাটফর্ম থেকে শিখছি। সারা পৃথিবী জুড়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করা সহজ নয়। আর এই কঠিনতম কাজটি একেবারে সহজ করে দিয়েছে আমাদের এ প্রিয় নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন প্রানপ্রিয় মেন্টর ইকাবাল বাহার জাহিদ স্যার।
সকলে স্যারের সেশনগুলো ফলো করবেন, কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন। লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ। স্যারের যে কথাটি অনুপ্রাণিত করে-
"সফলতার চার "স" সুশিক্ষা, সুসাস্থ, সুখ ও সম্পদ।"
"স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন,শুরু করুন লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই।"
মূলধনের চেয়ে সাহস ও সততা বেশি জরুরী।
কমিটমেন্ট নিষ্টা নিয়ে কাজ করলে সবি সম্ভব।
এই গ্রুপ থেকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। সকলের জন্য দোয়া রইল। ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন। সকলের দোয়া নিয়ে, স্যারের শিক্ষা নিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে এগিয়ে যেতে চাই।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৫৬
Date:- ০৬/০২/২০২১
সৈয়দা শাহনাজ সুলতানা
জেলা যশোর
ব্যাচ ১২
রেজিষ্ট্রেশন ৪৪৮১৮