মধ্যবিত্তের এক লড়াকু সৈনিকের বাস্তব কাহিনী
একেকজন মানুষের জীবনের গল্প,কোটি কোটি টাকা দিয়ে নির্মিত সিনেমা হতেও মূল্যবান এবং ভিন্নধর্মী শিক্ষার মিশেলে তৈরি। কোটি টাকার সিনেমাও কপি হয়, কিন্তু একজন মানুষের জীবন আরেকজন এর জীবনে কপি করে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।






বাড়িতে খবর জানার পর আমার মা জায়নামাজ এ পড়ে কান্না
শুরু করে দিলেন। খাওয়া দাওয়া এক পর্যায়ে বন্ধ করে দিলেন। মায়ের কলিজা যে সন্তানের জন্য ছিরে দিতে চায়। বাবা ও যে কাঁদেন নিরবে নিভৃতে, যেমন বাবর কেঁদেছিলেন হুমায়ুন এর জন্য। আমার বাবা মায়ের আমি প্রথম সন্তান। আর বড় কাকার কোন ছেলে নেই। ঘরের মধ্যে আমি ছিলাম প্রথম ছেলে তাই সবার খুব আদরের ছিলাম। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল যে, আমি অবশপ্রায় হয়ে গেলাম। আমাকে দুজনে ধরে কাঁধে ঝুলিয়ে পরীক্ষার হলে নিয়ে যেত। হাতে শক্তি ছিলনা কি লিখবো? কখনো পরীক্ষায় ফেল করিনি এবার কি তাহলে ফেল করবো? হাতে শক্তি না থাকলে ও কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। এভাবে করে শেষ পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দিলাম, হুজুর কে গিয়ে বললাম হুজুর আমি আর পরীক্ষা দিতে পারবো না আমাকে বাড়ি যেতে দিন। হুজুর বললেন : আর মাত্র দুটো পরীক্ষা আছে একটু কষ্ট হলেও এটেন্ড করো বাকিটা পরে যা হবার হবে। এদিকে বাড়ি থেকে আমার মেঝ ভাই কে পাঠিয়ে দিল আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হুজুরের কথা শুনে থেকে গেলাম কষ্ট হলেও এটেন্ড করলাম বাকি দুইটা পরীক্ষায়। পরীক্ষা শেষে সেদিন-ই মুন্সিগঞ্জ চলে আসি মা বাবার কাছে।

বাবা মা আমাকে দেখে চিনতে কষ্ট হচ্ছিল
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম। মা তো জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন বাবা তুই এসেছিস আল্লাহর কাছে লাখ কোটি শুকরিয়া। ধীরে ধীরে বাবা মা ভাই বোনের সংস্পর্শে থেকে সুস্থ হয়ে উঠলাম।


















ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মাথায় একটা চিন্তা ছিল পড়ালেখার পাশে কি করা যায় কি করব? হঠাৎ একদিন ফেসবুক এ স্ক্রোল করছিলাম ঠিক কিছুক্ষন পর টপ পেইজ এ একটি হেডলাইনে দেখতে পেলাম "নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপ" পোস্টের হেডলাইন এমন ছিল "চাকরি করবো না চাকরি দিব" এতটুকু পড়ে আমার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেল। ভাবলাম বাংলাদেশ এ চাকরি হল 'সোনার হরিণ' সেখানে সে চাকরি করবে না চাকরি দিব বলছে এর মানে কী? কোন রকম বোকা বানানোর ফাঁদ নয়তো? যেহেতু মনুষ্য জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো উৎসুক প্রবণ, আমি ও তার ব্যতিক্রম নই । ধীরে ধীরে গ্রুপের কিছু পোস্ট পড়লাম মনে হল এখানে যারা পোস্ট করে সবার মধ্যে একধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। তাদের কথাগুলো পড়তে পড়তে মনে হলো নিজে একটু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছি। সেদিন গ্রুপে জয়েন করি। বেশ কয়েকমাস পর গ্রুপে @Md Asaduzzaman ভাইয়ের একটা পোস্ট দেখলাম যারা রেজিষ্ট্রেশন করেন নি এখনি করে নিন। ভাই কে নক দিলাম তিনি রেজিস্ট্রেশন করতে আমাকে সহায়তা করেছেন এবং তিনি ই ছিলেন এই গ্রুপে আমার প্রথম পরিচিত। এছাড়া আসাদুজ্জামান ভাইও সহায়তা করেছেন। এরপর গ্রুপে সার্চ দিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা এম্বাসেডর কে খুঁজে বের করলাম। তিনি ছিলেন আমার প্রিয় একজন মানুষ @Omit Hasan ভাই। ভাইয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমাকে সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন এখনো করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে অনেকের সাথে পরিচিত হই।







এখন স্বপ্ন শুধু দেখি না কাজে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।
আরো অসংখ্য অর্জন রয়েছে এই গ্রুপের থেকে যা আমি বিনা পয়সায় পেয়েছি।



আমি বললাম: মা এটা একটি সেবামূলক গ্রুপ। এখানে ৬৪ জেলার ভাই বোন ও ৫০ টির ও বেশী দেশের প্রবাসী ভাই বোনদের নিয়ে গড়ে উঠা একটা পরিবার। এখানে সবাই সবার উপকারে এগিয়ে আসে, এখানে তরুনদের ট্রেইনিং এর মাধ্যমে তার পছন্দের ব্যবসা করতে সহায়তা করা হয়। এছাড়া আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্কিল শিখানো হয় যেগুলো সব বিনা পারিশ্রমিক এ। আর এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন@ ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। তিনি নিজ উদ্যোগে তার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের সময় দিয়ে এগুলো শেখাচ্ছেন। মা বললেন আজকাল মানুষের অপকার করার সময় পায়না সেখানে এত উপকার করতাছে তাহলেতো খুব ভালো মানুষ হবেন। আমি বললাম হ্যাঁ মা "স্যার"কোনদিন আমাদের শিখানো বাদ দেন না, এমনকি স্যারের কাছের আত্নীয় মারা গেছেন সেদিন ও আমাদের ভুলে যান নাই
।









সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৫৬
Date:- ০৬/০২/২০২১
মো: ফয়সাল আহসান
গর্বিত সদস্য "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন"।
ব্যাচ : নবম
রেজি নং: ১২৬৩৩
নিজ জেলা : মাদারীপুর
বর্তমান অবস্থান : মুন্সিগঞ্জ