মধ্যবিত্তের এক লড়াকু সৈনিকের বাস্তব কাহিনী
একেকজন মানুষের জীবনের গল্প,কোটি কোটি টাকা দিয়ে নির্মিত সিনেমা হতেও মূল্যবান এবং ভিন্নধর্মী শিক্ষার মিশেলে তৈরি। কোটি টাকার সিনেমাও কপি হয়, কিন্তু একজন মানুষের জীবন আরেকজন এর জীবনে কপি করে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।
মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া আমি ফয়সাল। মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার অন্তর্গত পূর্ব আলীপুর গ্রামে আমার জন্ম। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমি ই বড়। অন্য সব শিশুর মতো আমিও বেড়ে উঠি একটি পরিবারে।
আমার দাদা ছিলেন তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তার ঘরে তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। আমার বাবা ছিলেন তার ভাই বোনদের মধ্যে চতুর্থ। তিন ভাইয়ের মধ্যে আমার বাবা ছিলেন দ্বিতীয়। গ্রামের রীতি অনুযায়ী এত বড় পরিবারে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা কেমন হয় তা সবার জানা। তবে তার মধ্যেও অনেক কষ্টে আমার বাবা লেখাপড়া সম্পন্ন করেছেন।
বলে রাখা ভালো আমার দাদা একা হওয়াতে তার সম্পদ মোটামুটি ভালই ছিল। আমার জন্মের ও কয়েকবছর পূর্ব পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে ছিল কাজের ধুম। সারাবছর একটার পর একটা ফসল উৎপাদন হত। এছাড়া আমাদের ছিল আঁখ ভাঙ্গার জন্য বড় ঘর ( গ্রামে যেটাকে গাছঘর) বলে চিনে থাকে। আঁখ থেকে উৎপাদন হতো অনেক মিঠাই। সে সময় গাড়ির রাস্তা ছিলনা তাই এই মিঠাই মাথায় করে নিয়ে যাওয়া হত সদরে।
যাহোক মূল গল্পে আসা যাক, আমার জন্মের ও কয়েক বছর আগ থেকে আমার বাবা মুন্সিগঞ্জ এ একটি মাদ্রাসায় জব করেন। বড় কাকা আলাদা হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সম্পন্ন দায়িত্ব আমার বাবার উপর পড়ে। তখন শিক্ষকদের বেতন ছিল খুব নগন্য। এত অল্প টাকা দিয়ে এত বড় ফ্যামিলি চালানো ছিল খুব কষ্টকর। বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। সংসার এর বোঝা যে বড় কঠিন তা হারে হারে টের পেয়েছেন আমার বাবা। শুরু করলেন টিউশনি করাতে, যদিও এর পূর্বে অনেক টিউশনি করিয়েছেন কিন্তু এবার যেন আদা জল খেয়ে নামলেন। সবার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন, তাই স্টুডেন্ট ও অনেক আগ্রহী ছিল পড়ার জন্য। টিউশনি এমন মাত্রায় চলে যায় যে, খাওয়া দাওয়া করার সময় পেতেন না। এভাবে কিছুদিন চলছিল। হটাৎকরে একদিন বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রচন্ড জর, হওয়ায় লোকাল ডাক্তারের পরামর্শে বেশি মাত্রায় এন্টিবায়োটিক সেবন করেন। যার ফলে আগের চেয়েও মারাত্মক অবস্থা ধারণ করে। আমি তখন একটু বুঝতে শুরু করেছি এমন। হটাৎ মুন্সিগঞ্জ থেকে চিঠি পাঠানো হয় আমার বাবা খুব অসুস্থ। চিঠি পাওয়া মাত্রই বড় কাকা চলে আসেন। এখানে তারা কয়েকজন ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার বলেছিল বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। নিরুপায় হয়ে বড় কাকা বাবাকে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল। আমরা তখন দুই ভাই,ছোট ভাই ছিল খুব ছোট। যত আত্মীয় স্বজন আছে সবাই চলে আসল। সবার মুখে এক কথা যা খাওয়ানোর খাওয়াও অন্তত শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করো।
গল্প অনেক বড় সংক্ষেপে বলছি, কথায় আছে না! রাখে আল্লাহ মারে কে? দুনিয়ার শক্তি যেখানে শেষ আল্লাহর ক্ষমতা সেখান থেকে শুরু। আল্লাহর অশেষ রহমতে ফরিদপুর এক ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া যায়। তার উছিলায় আমার বাবাকে আল্লাহ দুনিয়ায় রেখে গেছেন। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। যত যাই হোক বাবাতো, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বসে থাকতে পারলেন না চলে আসলেন গন্তব্যে। আবার শুরু করলেন চাকুরি এভাবে করে চলতে থাকলো দু'বছর। দু'বছর পর আমাদের নিয়ে আসেন মুন্সিগঞ্জ।
আমার তখন ছ’বছর বয়স। ভর্তি হলাম বাবার প্রতিষ্ঠানেই। শুরু হলো নতুন পথের যাত্রা। এতদিন অনেক কষ্ট, ব্যাথা, যন্ত্রণা ঘিরে নিয়েছিল আমাদের পরিবারকে। প্রথমদিন ভর্তি হয়ে নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে মনে হলো এ যেন এক অন্য জগত। ধীরে ধীরে পড়ালেখা শুরু করে দিলাম। কয়েক মাস লেগেছিল সবার সাথে মানিয়ে নিতে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। ক্লাসে সবসময়ই ফার্স্ট পজিশনটা ধরে রেখেছিলাম। স্যারদের ও খুব প্রিয় ছিলাম। ছোট বেলা থেকে কেরাত, ইসলামিক সংগীত, এগুলো ভাল লাগতো। একবার সরকারি দপ্তর থেকে কয়েকজন অডিট আসেন আমাদের প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণের জন্য। তাদের মধ্যে সিনিয়রজন ছিলেন হিন্দু ধর্মের। অনুষ্ঠানে আমি একটি হামদ পরিবেশন করি যা শুনে হিন্দু ধর্মের হওয়া সত্ত্বেও তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এভাবে করে দেখতে দেখতে চলে গেল আমার বাল্যকাল। দাখিল পরীক্ষার পর ভর্তি হলাম বরিশালের বিখ্যাত মাদ্রাসা "ছারছীনা"। ওখানে দুই বছর পড়ালেখা করি, আলিম পরীক্ষা শুরুর প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ করে জর। ডাক্তার দেখালাম টেস্ট এ টাইফয়েড ধরা পড়লো। শরীরের শক্তি ধীরে ধীরে শুন্য হতে লাগলো। আমার এক কাছের বন্ধু ছিল ইব্রাহিম, ও আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে যে ৠণ কখনো পরিশোধ করার নয়।
বাড়িতে খবর জানার পর আমার মা জায়নামাজ এ পড়ে কান্না শুরু করে দিলেন। খাওয়া দাওয়া এক পর্যায়ে বন্ধ করে দিলেন। মায়ের কলিজা যে সন্তানের জন্য ছিরে দিতে চায়। বাবা ও যে কাঁদেন নিরবে নিভৃতে, যেমন বাবর কেঁদেছিলেন হুমায়ুন এর জন্য। আমার বাবা মায়ের আমি প্রথম সন্তান। আর বড় কাকার কোন ছেলে নেই। ঘরের মধ্যে আমি ছিলাম প্রথম ছেলে তাই সবার খুব আদরের ছিলাম। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল যে, আমি অবশপ্রায় হয়ে গেলাম। আমাকে দুজনে ধরে কাঁধে ঝুলিয়ে পরীক্ষার হলে নিয়ে যেত। হাতে শক্তি ছিলনা কি লিখবো? কখনো পরীক্ষায় ফেল করিনি এবার কি তাহলে ফেল করবো? হাতে শক্তি না থাকলে ও কিছু লেখার চেষ্টা করলাম। এভাবে করে শেষ পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দিলাম, হুজুর কে গিয়ে বললাম হুজুর আমি আর পরীক্ষা দিতে পারবো না আমাকে বাড়ি যেতে দিন। হুজুর বললেন : আর মাত্র দুটো পরীক্ষা আছে একটু কষ্ট হলেও এটেন্ড করো বাকিটা পরে যা হবার হবে। এদিকে বাড়ি থেকে আমার মেঝ ভাই কে পাঠিয়ে দিল আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হুজুরের কথা শুনে থেকে গেলাম কষ্ট হলেও এটেন্ড করলাম বাকি দুইটা পরীক্ষায়। পরীক্ষা শেষে সেদিন-ই মুন্সিগঞ্জ চলে আসি মা বাবার কাছে।
বাবা মা আমাকে দেখে চিনতে কষ্ট হচ্ছিল শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম। মা তো জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন বাবা তুই এসেছিস আল্লাহর কাছে লাখ কোটি শুকরিয়া। ধীরে ধীরে বাবা মা ভাই বোনের সংস্পর্শে থেকে সুস্থ হয়ে উঠলাম।
কয়েকমাস কেটে গেল রেজাল্ট খুব নিকটবর্তী। যেহেতু ছোটবেলা থেকে ছাত্র হিসাবে খারাপ ছিলাম না, ইচ্ছে ছিল ঢাকা ভার্সিটিতে পড়বো। স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল। আমি ধরে নিয়েছিলাম আমি ফেল করবো। বাবা মা বললেন এত দূর্বল ভাবিস কেন নিজেকে? তুই পাসতো করবি মোটামুটি ভাল রেজাল্ট ই করবি। ভেতরের দূর্বলতা থেকে ভার্সিটি প্রিপারেশন ও নেইনি। সময় হলে রেজাল্ট পাবলিসড হলো আমার রেজাল্ট দেখলো খালাতো ভাই আসিফ
রেজাল্ট দেখে ও বললো ভাইয়া তুমি 3.79 পেয়েছ। তখন মনে হলো আল্লাহ কি না পারেন। আমার মনেই হচ্ছিল এক দুই বিষয় হলেও ফেল আসবে কিন্তু আল্লাহ রহম করলেন আলহামদুলিল্লাহ। রেজাল্ট দেখে মনে হচ্ছিল যদি ভার্সিটি প্রিপারেশন টা নিতাম তবে হয়তো এই রেজাল্ট দিয়েও ফাইট করতে পারতাম, যেহেতু দাখিলে রেজাল্ট ভালো ছিল। "ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন" ঠিক তেমনি হল আমার সাথে। মনের তৃপ্তির জন্য ভার্সিটিতে এডমিশন টেস্ট দিলাম,যা হবার তাই হল। এরপর বাবা বললো ঢাকায় যেহেতু পড়ার ইচ্ছে তবে একমাস একটু প্রিপারেশন নে সাত কলেজ এ ট্রাই করে দেখ। যেমন কথা তেমন কাজ। একমাসের মত প্রিপারেশন নিলাম চান্স পেলাম ফার্স্ট চয়েস ঢাকা কলেজ। এভাবে অনার্স লাইফের সূচনা হলো।
এখানে একটি কথা না বললেই নয়, সব বাবা মায়ের ইচ্ছে থাকে ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে ভাল একটি সরকারি চাকরি করবে আমার বাবা মা ও তাদের ব্যতিক্রম নন।বাবা যেহেতু একজন শিক্ষক তিনি সবসময় চাইতেন আমি পড়ালেখা করে অনেক বড় হই।তিনি সবসময় বলেন আমিতো তেমন বড় পজিশনে যেতে পারি নি, দেখ আমার সেই অপূর্ণতা তোরা পূর্ণ করতে পারিস কি না। প্রতিটি ভাল সন্তান চায় তার বাবা মায়ের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দেয়ার। আমিও তার বিপরীত নই।কিন্তু আমি স্বাধীনতা প্রেমিক, স্বধীন পেশাটা তাই আমার বেস্ট চয়েস ছিল স্বাধীন ব্যবসা। বাবা যে পরিমাণ কষ্ট করেন তা দেখতে দেখতে নিজে নিজেকে প্রশ্ন করতাম কি জন্যে এখনো কিছু করতে পারছি না, বাবার পাশে দাঁড়াতে পারছি না। এই ভাবে মাঝে মধ্যে বুকের মধ্যে কষ্ট জমাতে না পেরে নিরবে কাঁদতে বাধ্য হই।
আমার জীবনে বাবার আবদান
প্রতিটি বাবা তার সন্তানের জন্য আশীর্বাদ। পূর্বেই বলেছিলাম আমি যখন খুব ছোট তখন থেকে আমার বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, সকলের ধারণাকে পাল্টে দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার বাবাকে আমাদের জন্যে ফেলে গেছেন বলা যায়। ছোট বেলা থেকে বাবা একটা কথা শিক্ষা দিয়েছেন " যত যা কিছু হোক না কেন সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে ফেলো না, কখনো কাউকে ছোট ভাববে না, কারণ আজ তোমার চোখে সে ছোট হলেও আল্লাহর কাছে সে খুব দামী ব্যক্তি হতে পারেন। আজ পর্যন্ত বাবা আমার জন্য যা করেছেন তার ৠণ কখনো শোধ করার নয়। বাবারা নাকি কাঁদেন না আমি অসুস্থ হলে বাবা গভীর রজনীতে জায়নামাজে বসে নিরবে কাঁদেন। আমি গর্বিত আমি এমন বাবার সন্তান হতে পেরেছি।
আমার জীবনে মায়ের ভালোবাসা
" মা" ছোট একটি শব্দ তবে এর মাহাত্ম্য অনেক গভীর। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে সন্তান এর জন্য নিজেকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকেন তবুও সন্তান কে পৃথিবীর আলো থেকে বঞ্চিত করতে চান না। এরকম আত্নত্যআগ শুধু মা ই পারেন। মা আমার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তিনি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমার একটু মন খারাপ হলে তিনি ধরে ফেলেন, বুঝতে না দিলেও তিনি কিভাবে যেন তিনি বুঝে যান। সবসময় তিনি আমাকে সাপোর্ট দেন, কখনো ভুল করে বসলে ভুল ধরিয়ে বলেন বাবা এটা এভাবে নয় এভাবে কর। মায়ের প্রতিটি উপদেশ আমার জীবনে টনিক হিসেবে কাজ করে।
যাহোক মূল গল্পে আসা যাক,,,
ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মাথায় একটা চিন্তা ছিল পড়ালেখার পাশে কি করা যায় কি করব? হঠাৎ একদিন ফেসবুক এ স্ক্রোল করছিলাম ঠিক কিছুক্ষন পর টপ পেইজ এ একটি হেডলাইনে দেখতে পেলাম "নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপ" পোস্টের হেডলাইন এমন ছিল "চাকরি করবো না চাকরি দিব" এতটুকু পড়ে আমার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেল। ভাবলাম বাংলাদেশ এ চাকরি হল 'সোনার হরিণ' সেখানে সে চাকরি করবে না চাকরি দিব বলছে এর মানে কী? কোন রকম বোকা বানানোর ফাঁদ নয়তো? যেহেতু মনুষ্য জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো উৎসুক প্রবণ, আমি ও তার ব্যতিক্রম নই । ধীরে ধীরে গ্রুপের কিছু পোস্ট পড়লাম মনে হল এখানে যারা পোস্ট করে সবার মধ্যে একধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। তাদের কথাগুলো পড়তে পড়তে মনে হলো নিজে একটু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছি। সেদিন গ্রুপে জয়েন করি। বেশ কয়েকমাস পর গ্রুপে @Md Asaduzzaman ভাইয়ের একটা পোস্ট দেখলাম যারা রেজিষ্ট্রেশন করেন নি এখনি করে নিন। ভাই কে নক দিলাম তিনি রেজিস্ট্রেশন করতে আমাকে সহায়তা করেছেন এবং তিনি ই ছিলেন এই গ্রুপে আমার প্রথম পরিচিত। এছাড়া আসাদুজ্জামান ভাইও সহায়তা করেছেন। এরপর গ্রুপে সার্চ দিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা এম্বাসেডর কে খুঁজে বের করলাম। তিনি ছিলেন আমার প্রিয় একজন মানুষ @Omit Hasan ভাই। ভাইয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমাকে সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন এখনো করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে অনেকের সাথে পরিচিত হই।
গ্রুপ থেকে আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা : এখানে পেয়েছি জীবনের সেরা একজন মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে। যার প্রতিটি কথা আমার ভিতরে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব তৈরি করেছে। পেয়েছি একটি ভালমানুষের খনির সন্ধান। স্বর্ণের খনিতে যেমন রুপা থাকে না ঠিক তেমনি এই খনিতে ভালমানুষ ছাড়া খারাপ মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। আমি আগে মানুষের সাথে খুব একটা কথা বলতাম না, এই পরিবারের সদস্য হয়ে আমি সবার সাথে কথা বলার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। ছোট থেকে ব্যবসার প্রতি একটা অন্যরকম টান ছিল এখানে এসে আমার স্বপ্ন আরো বড় হয়েছে। এখানে শিখেছি কিভাবে সহস করতে হয়, শুরু করতে হয় ও লেগে থেকে সাফল্যের মুকুট মাথায় তোলা যায়।
গ্রুপ থেকে আমার অর্জন
আগে আমি মানুষের সাথে তেমন মিশতে পারতাম না। কিন্তু এখানে এসে আমি অনেক মানুষের পরিবারের সদস্য হয়েছি বিধায় সবার সাথে ধীরে ধীরে মিশতে শিখেছি যা এই গ্রুপের অন্যতম অবদান।
আগের চেয়ে অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী হতে পেরেছি যা হয়তো কখনো এভাবে পেতাম না। স্যারের প্রতিটা সেশন আমার ভিতরে আত্মবিশ্বাস কে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
সাহস করতে শিখেছি যা আগে ছিল না। আগের চেয়ে এখন যে কোন কাজে সাহস পাই, আগে যেটাকে পারবনা বলে শুরুতেই ফেলে রাখতাম এখন আগে বলি কেউ যদি পারে ইনশাআল্লাহ আমিও পারবো, যা কেবল প্রিয় স্যারের অবদানেই সম্ভব হয়েছে।
আগে স্বপ্ন দেখতে ও ভয় হতো কারণ যেটা আমার দ্বারা হবে না সেটা স্বপ্ন দেখাও যে অন্যায়।
এখন স্বপ্ন শুধু দেখি না কাজে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।
আরো অসংখ্য অর্জন রয়েছে এই গ্রুপের থেকে যা আমি বিনা পয়সায় পেয়েছি।
গতকালকের একটি ছোট মূহর্ত দিয়ে শেষ করবো ইনশাআল্লাহ। গতকাল শুক্রবার আমাদের মাদারীপুর জেলা গ্রুপের সাপ্তাহিক মিটাপ ছিল, যেখানে আমি ও অংশ নিয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। মিটাপ শেষে আমার মা জিগ্গেস করলেন: বাবা মাঝে মধ্যেই দেখি খালি গ্রুপ গ্রুপ বলে মানুষের সাথে কথা বলস, আসলে কিসের গ্রুপ এইটা?
আমি বললাম: মা এটা একটি সেবামূলক গ্রুপ। এখানে ৬৪ জেলার ভাই বোন ও ৫০ টির ও বেশী দেশের প্রবাসী ভাই বোনদের নিয়ে গড়ে উঠা একটা পরিবার। এখানে সবাই সবার উপকারে এগিয়ে আসে, এখানে তরুনদের ট্রেইনিং এর মাধ্যমে তার পছন্দের ব্যবসা করতে সহায়তা করা হয়। এছাড়া আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্কিল শিখানো হয় যেগুলো সব বিনা পারিশ্রমিক এ। আর এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন@ ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। তিনি নিজ উদ্যোগে তার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের সময় দিয়ে এগুলো শেখাচ্ছেন। মা বললেন আজকাল মানুষের অপকার করার সময় পায়না সেখানে এত উপকার করতাছে তাহলেতো খুব ভালো মানুষ হবেন। আমি বললাম হ্যাঁ মা "স্যার"কোনদিন আমাদের শিখানো বাদ দেন না, এমনকি স্যারের কাছের আত্নীয় মারা গেছেন সেদিন ও আমাদের ভুলে যান নাই।
প্রতিটি মানুষের জীবনে সফল হতে হলে একজন গাইডলাইন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ গাইডলাইন পেয়েছি প্রিয় মেন্টর প্রিয় স্যারের থেকে। স্যারের নেক হায়াত কামনা করছি। আল্লাহ যেন আমাদের কে প্রতিনিয়ত শিখিয়ে যাওয়ার জন্য স্যার কে সুস্থ রাখেন (আমিন)
আমি ছোট করে অনলাইন এ টি শার্ট, খাদি পাঞ্জাবি ও থ্রিপিছ নিয়ে কিছু কাজ শুরু করেছি। সবার দোয়া প্রার্থী।
বলতে গেলে অনেক বলা যায়, আপনাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গতে চাইনা। আজ আর বলবো না অন্য একদিন আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব ইনশাআল্লাহ।
স্যারের প্রতি আবার ও কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই, যিনি হাজারো ব্যস্ততা উপেক্ষা করে আমাদের জন্যে নিজের মূল্যবান সময় দিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখিয়ে যাচ্ছেন। যার পরিশ্রমী উদ্যোগের প্রতিদান ধীরে ধীরে আমরা পেয়ে যাচ্ছি। বিশ্ব থেকে আজ আমাদের সম্মাননা দেয়া হয়, খবরের পাতায় হেডলাইন হয় "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এর পেছনের অন্যতম কারিগর প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। স্যারের একটি সাহসী সিদ্ধান্ত আজকের এই ফাউন্ডেশন। তাইতো স্যার প্রতিনিয়ত বলেন - স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন ও লেগে থাকুন। ইনশাআল্লাহ সেইদিন বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের বুলি ফুটবে।
পরিশেষে সকল প্রিয় ভাই ও বোনদের প্রতি আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা রইলো, এত ধৈর্য্য নিয়ে পোস্ট টি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফিজ।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৫৬
Date:- ০৬/০২/২০২১
মো: ফয়সাল আহসান
গর্বিত সদস্য "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন"।
ব্যাচ : নবম
রেজি নং: ১২৬৩৩
নিজ জেলা : মাদারীপুর
বর্তমান অবস্থান : মুন্সিগঞ্জ