মাগো তোমার মুখখানি এখনো চোখে ভাসে, তুমি নেই তো অনেকদিন তবু কেনো ব্যথা লাগে
হাটি হাটি পা পা করে যখন একটু একটু করে কিছু জানার আগ্রহ, বুঝার আগ্রহ, শেখার আগ্রহ, এবাড়ি ওবাড়ি যাওয়ার আগ্রহ,এটা ওটা নিয়ে মা কে বিরক্ত করা, বায়না ধরা,পিঠাপিঠি ভাই বোনদের সাথে আদর ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া করা, আরও কত কি,, সবে মাত্র বয়স চার(০৪) বছর শেষ, হঠাৎ একদিন খাটের উপর অসুস্থ মায়ের কোমরের একপাশে বসে ছিলাম সেঝ ভাই মায়ের মাথার একপাশে বাবা ছিলেন অন্য পাশে,অন্যান্যরা আসে পাশেই ছিলেন, মা ছোট ছোট করে ভাইয়ার সাথে কি যেন বলছিলেন, ভাইয়া খুব মনোযোগ দিয়ে মায়ের কথা গুলোর জবার দিচ্ছিলেন, কি যেন কি হলো চারিদিকে সবাই খুব হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,কি হলো কিছুই জানিনা,বুঝতেছিনা,সবাই কাদে তাই আমিও কাদি, তখন বুঝতে পারিনি তিনি আমাকে এই নশ্বর পৃথিবীতে একা রেখে চলে গেলেন। " মা" কে "মা" বলে ডাকলে কত টুকু শান্তি আসে মনের ভিতর সেটা আমি জানিনা। মা দেখতে কেমন ছিলেন স্পষ্ট করে মনে নেই,মায়ের কোন ছবি কাউকে তিনি তুলতে দেননি,তাই মনের ভিতর হাজারো আকুলতা থাকলেও কোন উপায় নেই,,,,z
মাগো তোমার মুখখানি
এখনো চোখে ভাসে,
তুমি নেই তো অনেকদিন
তবু কেনো ব্যথা লাগে।
দিন যায় যত,বাড়ছে ব্যথা
প্রয়োজন বাড়ছে তোমার,
তোমার মুখখানি দেখে যে মাগো
ঘুম ভাঙ্গতো আমার।
কতদিন হয় খাইনি মাগো
তোমার হাতে ভাত,
জরিয়ে ধরে ঘুমাইনি তোমায়
হলো যে কত রাত।
বাড়ছে কেনো দিনে দিনে
তোমায় হারানোর ব্যথা,
যেদিকে তাকাই শুধুই যেনো,
তোমার স্মৃতিখাতা।
ঘরজুড়ে আজ শুধুই যেনো
শূন্য হাহাকার,
সবথেকেও কি যেনো কি
নেই জীবনে আমার।
কেনো যেনো মনে হয় মা
আসবে আবার তুমি,
সেই প্রতিক্ষায় প্রতি রাতে,
যন্ত্রনায় পুড়ি আমি।
বুকটা আজ খালি আমার
চাই না কিছু আর,
চাই শুধু তোমায় আমি
থাকবো চরনে তোমার।
তবু তুমি ফিরে আসো মা
এসো আমার ফিরে ঘরে,
কষ্ট দেবো না তোমায় আর
রইবো চরণে পড়ে।
,,,,,,,সেই থেকেই জীবনের একটা গল্প শুরু,,,,,
এর পর পিঠাপিঠি তিন ভাইবোন একসাথেই থাকতাম। ঠিক এক বছর পরেই বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলেন। এ যেন মরার উপর খরার ঘা,,তিনি আমাকে এতটাই আদর করেছেন, আজ পর্যন্ত উনাকে মা বলে ডাকার ভক্তি/ শ্রদ্ধা আসেনি। "সৎমা" শব্দটার যথোপযুক্ত ব্যবহার তিনি করেছেন, স্কুল থেকে এসে দুপুরের খাবার সন্ধায় খেতাম, তিনি দিব্যি আরাম করতেন, বেশির ভাগ সময়ে সপ্তম/অষ্টম শ্রেণীতে পড়া বোনেরা স্কুল থেকে দুপুর চার (০৪) টায় এসে রান্না শুরু করতো। তারপর খাওয়া হতো।
দিন যায় আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করি, আর মনের ভিতর একটা জিনিষ খুব অভাব বোধ করি কি যেন নেই ,কি যেন নেই। সৎমায়ের বকুনি,বাজে ব্যবহার,বাবার শাসন, মায়ের আদরের অভাব, মনের চাপা কষ্ট প্রকাশ করতে না পারা,,,,,শুধু নীরবে কেঁদে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না,,,,
এর পর থেকেই মনের ভিতর একটা হতাশা,আকাঙ্ক্ষা,দুশ্চিন্তা,উদাসীনতা কাজ করা শুরু হলো, পড়তে বসলে কখন যে কোন ভাবনায় চলে যেতাম সেটা নিজেও জানতাম না।
নবম শ্রেণী থেকেই বাড়ির বাহিরে, এর পর থেকেই মাঝে মাঝে বাড়িতে বেড়াতে আসতাম।
এসএসসি এর পর যখন কলেজে ভর্তি হলাম,কলেজ হোস্টেলে থাকতাম,কলেজ ছুটির পর সবাই যার যার বাড়িতে বেড়াতে যেত আর আমি হোস্টেলে থেকে যেতাম,বাড়িতে আসতে ইচ্ছে করলেও বাড়ির পরিবেশ মনকে বাধা দিত।একেবারেই থাকা সম্ভব না হলে আসা হতো না। এমনও হয়েছে হোস্টেলের সবাই চলে গেছে শুধু আমি একা বিশাল তিন তলা বিল্ডিং এ একটা রুমে একা একা দিনের পর দিন কাটিয়েছি। এভাবেই কাটতে থাকলো,,,,
একটা ভালবাসার অপমৃত্যু:
স্কুল জীবনে একটা মেয়েকে অনেক ভাল লাগতো, মেয়েটাও আমাকে অনেক পছন্দ করত মনে হয়,,কিন্তু আমার পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে কখনো তাকে বলা হয়নি মনের সেই আকুলতা,,ব্যাকুলতা। একটা চিঠি লিখেছিল আমাকে সেটা আজ ২০ (বিষ) বছর হলো পরম যত্নে এখন পর্যন্ত রেখে দিয়েছি। ১০০০ তম দিন উৎযাপন উপলক্ষে ঢাকা জেলার অনুষ্ঠানে প্রিয় স্যার একটা কথা বলেছিলেন ,অনেক প্রেম না বলার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়,,আমারও তাই হয়েছে। খুব স্মৃতিচরণ হয়েছিল।
শত বাধা পেরিয়ে এসএসসি, এইচএসসি এর পরে "মুক্ত বিহংগের মত আকাশে উরবো" আর "বাংলার আকাশ কে রাখিব মুক্ত" এই সপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেছিলাম, ট্রেনিং শুরু হলো, যারা সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেন নাই বা এই বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তাদের কে বুঝানো যাবে না যে, ট্রেনিংয়ের সময় কি হয়। তবে নয় (০৯) মাস ট্রেনিং করার একটা কথা বলেছি, "শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহায় তাহাই সয়" মানুষ পারেনা এমন কোন কাজ নেই। তবে এই ট্রেনিং করার পর মনের আত্ববিশ্বাস এতোটাই বেড়ে যায় যে পৃথিবীর কোন কাজই আর কঠিন মনে হয় না। অসম্ভব বলে মনে হয় না।
২০১৫ সালে হাসপাতালে বাবাকে খুব যত্নে বুকের ভিতর দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম, নার্স ডা: গন খুব চেষ্টা করতেছিলেন, তার ভিতর থেকেই বাবাকে নিয়ে গেলেন উপরে,আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম যখন তিনি চলে গেলেন। মনে হলো একেবারেই যেন নিঃস্ব হয়ে গেলাম,একা হয়ে গেলাম। মাথার উপর ছায়াটা যেন আর রইলো না।
দ্বীর্ঘ ১৩(তের) বছর সামরিক জীবনের হাজারো সুখ দুঃখের ঘটনার স্মৃতি কে মাটিচাপা দিয়ে ২০১৮ সালে, কোন একটা ঘটনার কারনে আমাকে সেচ্চায় অবসরে আসতে হয়েছে। আবারও সপ্ন ভঙ্গ হয়। আবারও জীবনের আরেক টা পরিবর্তন চলে আসে। আমি সেই ঘটনা কে দোষ দিবো না বরং বলবো আমার রিজিক আর বিমান বাহিনীতে ছিলো না। আমি কাজে বিশ্বাসি তাই কাজ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই,,অনেক হতাসা, অনেক মানসিক চাপ,অনেক প্রতিকুলতার মাঝে কেটেছে বিগত কয়েকটি বছর, তবুও ভেংগে পরিনি, একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল,আছে এবং থাকবে। "চাকরি করবো না ,চাকরি দিবো" প্রিয় স্যারের এই কথা টা আমাকে যেন নতুন আশার সঞ্চার করে, হতাশা গ্রস্থ জীবনে এনে দেয় এক শান্তির বাতাস,জাগিয়ে তোলে নতুন সপ্ন ,তাই এই ফাউন্ডেশন কে আকড়ে ধরে আছি অক্টোপাসের মতো। চাকরি ছাড়ার পর ব্যবসা করার ইচ্ছার কারনে এখন পর্যন্ত কোন চাকরিতে যোগদান করিনি। এই ফাউন্ডেশনের শিক্ষা নিয়েই জীবন কে আবারও সাজাতে চাই। আমি আবারও দেখতে চাই রক্তিম সূর্য। ফাউন্ডেশনে জয়েন করার পর সবার পোষ্ট দেখে অনেক ভালো লেগেছে। সবার আন্তরিকতা দেখে,ভালোবাসা দেখে মনে হচ্ছে আবারও আমি সেই মুক্ত বিহংগের মত উড়তে পারবো। সামাজিক কাজের মাধ্যমে আমি পাশে দাঁড়াতে পারবো একটা অসহায় মানুষের, একটা মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করতে পারবো। ফাউন্ডেশনে যুক্ত হবার পর থেকে আমার ভিতর সেই হতাশা , দুশ্চিন্তা,মানসিক চাপ আর নেই ,আমার মাঝে এক গুচ্ছ স্বপ্নের বীজ বপন করে দিয়েছেন প্রিয় স্যার, সেই বীজ কে অঙ্কুরিত হতে আপ্রাণ চেষ্টা করতেছি, সপ্ন দেখেছি ,সাহস করেছি,শুরু করে দিয়েছি।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই Iqbal Bahar Jahid স্যার কে। আরও ধন্যবাদ জানাই আমার অত্যান্ত কাছের ও আদরের ছোট ভাই Jahangir Khan কে, ও আদরের ছোট বোন Runa Ahmed কে, যারা অনেক বার বলেছে আমাকে এই ফাউন্ডেশনে আসার জন্য, আমাকে অনুপ্রানিত করেছে কোন ব্যবসা করার জন্য, মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে ভালো থাকার জন্য।
আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আপনাদের সবার মাঝেই থাকতে পারি,আপনাদের ভালোবাসা পেতে পারি,আপনাদের কাজের সহযোগি হতে পারি, আমার মত অসহায় দের দাড়ানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে দাড়াতে সাহায্য করতে পারি।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৫৭
Date:- ০৮/০২/২০২১
এম এ বকর
রেজিঃ টিম মেম্বার
ব্যাচ: ১০ম
রেজিঃ ২৭৫৮১
জাজিরা শরীয়তপুর
আজিমপুর লালবাগ (বর্তমান)