"যুগ জামানা পাল্টে দিতে চাইনা অনেক জন একজনই আনতে পারে জাতির জাগরণ"
বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে আমি মধ্যবিত্ত:
ছয় ভাইবোনের সংসার আমাদের। যার মধ্যে আমার স্থান পঞ্চম। আব্বা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন আবার বড় ভাই বিদেশে থাকতেন। আববা শিক্ষকতার পাশাপাশি টিউশনি করতেন ও মসজিদের ইমাম ছিলেন।
পড়াশোনার ব্যাপারে বড় ভাইটি খুব সচেতন ছিলেন। বারবার আব্বা আম্মাকে চিঠি লিখতেন কারো পড়ালেখা যেন বন্ধ না হয়। বলাবাহুল্য যে আমার ছোটবেলাটা আসলে অনেক ভালো কেটেছে অভাব কি জিনিস এটাও বুঝিনি, দায়িত্ব নিতে হয় সেটাও বুঝিনি।
আমার বড় দুই বোন থাকায় আমার পড়াশোনায় তেমন কোনো বাধা আসে নি। আববা রিটায়েড হয়ে গেলেন। বড় ভাইয়ের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। সংসারের পুরো দায়িত্ব বড় ভাইয়ের কাঁধে এসে পড়ল। বড় ভাইকে দেখেছি সংসারের হাল টা ভালো ভাবে আঁকড়ে ধরেছেন।
চলে গেলেন আব্বা না ফেরার দেশেঃ
তখন আমি ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। আব্বা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আমাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বাবা যখন চলে যায় এই শূন্যতা পূরণ করার আসলে কেউ থাকে না। সেই শূন্যতা আজীবন মানুষ বয়ে বেড়ায়। একটি সংসারের মেরুদণ্ডই বাবা। যেহেতু বড় ভাই সংসারের হাল আগে থেকে ধরেছিলেন তাই আর্থিকভাবে আমরা ভেঙে পড়িনি। বড় ভাই বাবার দায়িত্বটা পালন করে আসছেন।
শুরু হল আমার জীবনের যুদ্ধঃ
আমার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর আমার মেজ আপুর বিয়ে হয়। বড় ভাই পড়াতে চাইলেও আর কেউ পড়াশোনার ব্যাপারে সায় দিচ্ছিল না।বড় ভাই ছাড়া সবাই আমার বিপক্ষে চলে যায়। ইন্টারমিডিয়েট টা ভালোভাবে শেষ করলেও গ্রাজুয়েশন টা যেন আমার বাধা হয়ে দাড়ালো। বলাবাহুল্য যে আমি ঢাকায় হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতাম। ভার্সিটি খরচ সাথে আমার থাকা খাওয়া খরচ ও লাগতো। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হলে আমার টাকা দরকার। তাই বাসা থেকে প্রেশার ক্রিয়েট করল বিয়ে দেওয়ার জন্য। উপায় না পেয়ে বললাম টাকা দিতে হবে না আমি আমার খরচ চালাবো। অনেক কষ্ট করে টিউশনি যোগাড় করলাম দুইটা। দুপুরে খাবারের পর যখন সবাই ঘুমোয় তখন আমি কড়া রোদের মধ্যে হেঁটে গিয়ে টিউশনি করতে যাইতাম।আস্তে আস্তে আমার ৪ টা টিউশনি হয়ে গেলো। তারপরও আমার নিস্তার নেই। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যাওয়া লাগত কারণ হলো আমাকে দেখতে আসবে। যতই বোঝাই সবাই আমার বিপক্ষে চলে যায়। এইবার সবাই ভাবতে শুরু করলো আমার কোন পছন্দ আছে। জানিয়ে দিলাম পছন্দ নেই পড়াশোনা টা শেষ করতে চাই। টিউশনি করে চালাতে থাকলাম। থার্ড ইয়ারে পড়ি তখন মা আমাকে অনুরোধ করা শুরু করে দিলেন তার বোনের ছেলের জন্য প্রস্তাব এনেছেন। ফ্যামিলি অ্যারেঞ্জমেন্টে বিয়েটা হয়ে গেলো বসুন্ধরা মার্কেটে দোকান ছিল তার। বিয়ের পর বুঝতে পারলাম ঘরের মানুষ গুলো আমাকে পর করে দিতে চাইছে। বসুন্ধরায় দোকান থাকলেও তার ব্যবসায়িক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। সংসারের বড় ছেলে সেই সুবাদে আমি বড় ছেলের বউ। আমি গ্রাজুয়েশন টিউশনি চালিয়েই দিয়ে ফেললাম।
শুরু করে দিলাম চাকরিজীবনঃ
বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ির অবস্থা বুঝেই চট করে একটা চাকরিতে জয়েন করে ফেললাম। চাকরিটা তেমন সুবিধাজনক ছিলনা। ফিল্ডে যেতে হতো। তার পরেও কন্টিনিউ করতে থাকলাম। চাকরির অভিজ্ঞতার সুবাদে আইসিডিডিআরবিতে ঢোকার একটা সুযোগ পেলাম। ঢাকায় পোস্টিং ভালই যাচ্ছিল।
চাকরির সুবাদে মাস্টার্স কমপ্লিট করে ফেললাম। পাঁচ বছর এখানে কাজ করেছি। চাকরিটা রিজাইন দিয়ে দিলাম কনসিভ করলাম তাই। চাকরি ছাড়ার পর হইতে আমার বড় ভাই আমাকে বেশ সাপোর্ট দিতেন। যার কারণে আর্থিক ভাবে ভেঙে পড়িনি। এইদিকে আমার হাজব্যান্ড বসুন্ধরার দোকান ছেড়ে দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার সাথে জড়িত হলেন। অনেকটা সময় দেওয়া ও লেগে থাকার কারণে মোটামুটি ভালই যাচ্ছিল।
2018 সালের শেষের দিকটায় একটা রিক্রুটিং লাইসেন্স এর অফার পেলেন। যেহেতু সে এই লাইনের কাজ গুলো ভাল বোঝেন তাই আমি আর না করি নি। নিজের জমানো টাকা ছিল দিয়ে দিলাম। গহনা ছিল অনেক সেল করে দিলাম। রিলেটিভসদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেলাম। 20 লাখ টাকার মতো লেগেছিল। 2019 সাল টা অনেক কষ্ট করেছি। তারপরও ভালো ছিলাম বড় ভাই সাপোর্ট দিত।2020 সালের জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আট লাখ টাকা লোন পরিশোধ করে ফেললাম।
এরমধ্যে আমার মাথায় চিন্তা আসলো আমি সমস্যায় পড়লে বড় ভাইকে কেন বলি। যত কষ্টই হোক আর বলবো না। যেহেতু তার ব্যবসাটা প্রায় নতুন আবার প্রতিমাসেই লোন পরিশোধ করে যাচ্ছে। আমার কোন জমানো টাকা নেই। এসে গেল মার্চ মাসে বাংলাদেশে কোভিড নাইনটিন। প্রথম দুই মাস না যেতেই আমাদের চলার টাকা শেষ। আমিতো নিয়ত করেছি বড় ভাইয়ের কাছে টাকা চাইবো না। নিয়তের উপর ই থাকলাম। তিন-চার মাস পর দেখি আমার ঘরে খাবারও ফুরিয়ে আসছে। কিছুটা মানসিক চাপে পড়লাম। ঘরে কিছু খাবার থাকতেই চলে গেলাম বাবার বাড়ি। বাবার বাড়ি চার মাস অবস্থান করলাম। ভাইয়ের বউ এটা ভালো চোখে দেখছে না আবার চলে আসলাম নিজের আপন ঠিকানায়। না খেয়ে থেকেছি তবু ও আত্মীয়-স্বজন কাউকে বলিনি। শ্বশুরবাড়ির সবাই সাফ সাফ জানিয়ে দিলো কাজ নেই,টাকা নেই বাসা ছেড়ে দিয়ে ফার্নিচারগুলো বাড়িওয়ালাকে দিয়ে গ্রামে চলে যাও।বড় আপু ফোন করে বারবার জিজ্ঞেস করতেন কেমন আছিস? আপুকে বললাম আপু আপনার মেয়েদের তো টিউশনি আছে আমার তো তাও নেই আপু। আমাকে কিছুটা রেগে গিয়ে বলতেন সাবিনা মাস্টার্স পাশ করলি তুই চাকরি করলিনা। আমি আপুকে বললাম আপু আমার চাকরি করতে ভালো লাগেনা। নয়টা-পাঁচটা অফিস এত বাধ্যগত জীবন আমার ভালো লাগেনা। আমি তো নিজে কিছু করতে চাই।
"যুগ জামানা পাল্টে দিতে চাইনা অনেক জন একজনই আনতে পারে জাতির জাগরণ"
আমি আমার দেশকে খুব ভালবাসি।ভাবতাম কি হবে বাংলাদেশের।এত হতাশা, এত বেকার তরুণ তরুণী, এত ফিতনা চারপাশে, এত মাদক,বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবার কেউ নেই? আল্লাহতালা সহায় হলে একজন ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার ই বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট।
আমি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ভিডিও গুলো খুব দেখতাম। আর এ কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগত। ভাবলাম আমি তো কিছু করার চেষ্টা করতে পারি। কিছু করার ইচ্ছায় নিজের পরিচয় নিজেকে পরিচিত করার প্রচন্ড বাসনায় স্যারের ভিডিও দেখে আমি স্বাভাবিক হলাম। রেজিস্ট্রেশন করলাম নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে।
কয়েকদিন আগে কথা আমার বড় আপু ফোন দিয়েছেন কিরে কেমন আছিস বললাম আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আপুঃ কিরে ফোন করিস না যে?
আমিঃআপু আমার তো এখন সময় নেই সারাদিন ব্যস্ত থাকি।
আপুঃ কি নিয়ে এত ব্যস্ততা?
আমিঃআপু আমি রেজিস্ট্রেশন করেছি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে।এখানে স্যার আমাদের প্রতিদিন ক্লাস নেন।
আপুঃআরে কি বলিস তুই না অসুস্থ কিভাবে ক্লাসে যাস আর তুই টাকা পেলি কোথায়?
আমিঃ আপু আমি তো অনলাইনে ক্লাস করি আর এখানে টাকা লাগে না স্যার এখানে বিনামূল্যে শিক্ষা দেন।
আপু ঃ তোর স্যার কি কি শেখান?
আমি ঃ90 সেশন, আইসিটি ক্লাস, ইংরেজি ক্লাস, বেসিক একাউন্টিং ক্লাস, মেয়েদের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ এমনকি কথা বলার জড়তা কাটানোর সেশন ও আছে আপু। আরও আছে আপু.......
প্রতিটি ৯০ দিনের ব্যাচে ৩৫৮টি কন্টেন্ট !
আমাদের "নিজের বলার মতো একটা গল্প" প্লাটফর্মে উদ্যোক্তা বিষয়ক প্রশিক্ষন সহ ১০ টি স্কিলস শেখানোর অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালার টানা ৯০ দিনের প্রতিটি ব্যাচে মোট ৩৫৮ টি কন্টেন্ট নিয়ে ক্লাস/সেশান দিয়ে বিনামূল্যে অর্থাৎ কোন ফী ছাড়া ট্রেনিং করানো হয়ঃ
১। প্রতি ব্যাচে টানা ৯০ দিনে ৯০ টি সেশান হয়
২। প্রতি ৯০ দিনে ৯০ টি ভিডিও সেশান হয়
৩। প্রতি ৯০ দিনে ৯০ টি প্রতিদিন “নিজের সাথে কথা বলা” ও অন্যান্য বিষয়ে সেশান করানো হয়।
৪। প্রতি ব্যাচে ২৪ টি লাইভ শো (জীবনের গল্প/বিষয় ভিত্তিক) ২৪ জন নতুন নতুন গুণী ও অভিজ্ঞ মানুষকে Utv Live এ এনে সেশানের মতো করে করা হয়।
৫। প্রতি ব্যাচে ১২ টি বেসিক আইসিটি ক্লাস
৬। প্রতি ব্যাচে ১২ টি ইংরেজি শেখা ক্লাস
৭। প্রতি ব্যাচে ৯ টি বেসিক অ্যাকাউন্টিং ক্লাস (for non Accountants)
৮। প্রতি ব্যাচে টানা ৩০ দিনের প্রেজেন্টেশান ও কমিউনিকেশান স্কিলস (for Idea pitching, Sales, Interview, Leadership, Business Meeting etc.)
৯। প্রতি ব্যাচে দেশ ব্যাপী ৬৪ জেলায় অন্ততঃ ১টি করে সামাজিক ও মানবিক কাজ ও ভলান্টিয়ারিং কাজ করা হয়।
আপুঃ তুই কি কি করবি এখানে?
আমিঃআপু আমি উদ্যোক্তা হতে চাই
আপু ঃকিভাবে
আমি ঃ আপু আমি নিজে নকশি কাঁথা সেলাই করতে পারি আমি খুব ভালো আচার বানাতে পারি আর ভাইয়া বলেছে সৌদি মদিনা থেকে খেজুর আনবেন আমি সেগুলো সেল করব আপু।
আপুঃ আরে বিক্রি করবি কিভাবে?
আমিঃ আপু এখানে আমরাই ক্রেতা আমরাই বিক্রেতা। আবার স্যার একদিন মঙ্গলবার আমাদের জন্য হাটের ব্যবস্থা রেখেছেন।
আপুঃআরে কি বলিস তুই?
আমিঃহ্যা আপু।
আমিঃ আপনার মনে আছে আমি কিভাবে আইডি কার্ডের জন্য কেঁদেছিলাম?
আপুঃ হ্যাঁ মনে আছে চাকরি ছাড়ার সময়। কেন তোর কি আইডি কার্ড হয়েছে?
আমি ঃআজীবন সদস্য পদ পেয়েছি।এখানে রেজিষ্ট্রেশন করলে স্যার আজিবন সদস্যপদ রেখেছেন।
আপুঃতাই নাকি রে তুই আমার মেয়েটাকে রেজিস্ট্রেশন করে দিস।
আমিঃআপু আপনার মেয়েকে বলবেন আমার মেসেঞ্জারে মেসেজ দিতে।আমি রেজিষ্ট্রেশন করে দিব।
আপুঃ অত পড়াশোনা করে এসব ক্লাস করতে পারবে?
আমিঃজি আপু পারবে ওর গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর চাকরি অথবা ব্যবসা রেডি থাকবে।
আপু ঃঠিক আছে আমি রাখি তাড়াতাড়ি বলি রেজিস্ট্রেশন করতে।
আমি ঃঠিক আছে আপু রাখি। আল্লাহাফেজ।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৬০
Date:- ১১/০২/২০২১
নামঃসাবিনা ইয়াসমিন
ব্যাচঃ 13
রেজিস্ট্রেশন নাম্বারঃ 52 190
ব্লাড গ্রুপঃ ও পজেটিভ
নিজ জেলাঃ ঢাকা
থানাঃ দোহার
বর্তমান অবস্থানঃ খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, ঢাকা।