আমি সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাই,অনেক কাজ করতে চাই।
ছোট বেলা থেকেই সবার খুব আদরের ছিলাম।পড়াশোনায় কোনো আগ্রহ ছিলনা।কোনো রকমে পাশ করে ক্লাসে উঠতাম আর তাতেই আমি খুশি ছিলাম।সেভেন থেকে এইটে উঠার পরীক্ষায় অনিচ্ছাকৃত ভালো ফলাফল করলাম।আর দেখলাম সবার আদর,ভালোবাসা আর কতো কতো উপহার।মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে গেল।রেজাল্ট ভালো করলে এতো কিছু পাওয়া যায়...তাহলে এটাই হবে আমার এক মাএ উদ্দেশ্য।
সারাদিন পড়তাম,অনেক রাত পর্যনত পড়তাম।ফলাফল ও আর খারাপ হয়নি কোনোদিন।নাইন থেকে টেনে উঠলাম।আরো বেশি পড়াশোনা করতে থাকলাম।
এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেল প্রচন্ড মাথা ব্যাথা,অবশ্য আগেও হয়েছে কয়েকবার।ওষুধ খেয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু এবার আর হোলনা।এক দিন,দুই দিন,পাঁচ দিন,দশ দিন এক মাস হয়ে গেল ওষুধ খেয়ে ও ঠিক হলোনা।পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলো।ঢাকা ল্যাব এইডে নিউরোলজি ডাক্তার দেখালাম।সিটি স্ক্যান সহ সব রকম টেস্ট করালাম।কোনো সমস্যা নেই ডাক্তার বললেন। পড়াশোনার চাপের কারনে হতে পারে,পড়াশোনা,পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে বললেন।আমি রাজি হলাম না।কিন্তু এতো ব্রেণের ওষুধ খেয়ে আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়লাম।শুধু ঘুম আসতো।প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিতে পারলাম না।ব্যাথা ও কমলো না।আমি নিজের মতো একটা রুটিন করে অল্প অল্প করে পড়তে থাকলাম।এস,এস সি পরীক্ষা চলে এলো।পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়তাম বইয়ের উপর।পরীক্ষা দিলাম।যতোটুকু চেয়েছিলাম ততোটুকু ই পেলাম রেজাল্টে।দুই মাস পর পর ডাক্তার দেখাতাম আর ওষুধ খেতে থাকলাম।এভাবে এইচ,এস সি দিলাম।অবস্থার কোনো পরিবর্তন হলোনা।চলতে থাকলাম যনত্রনার সাথে যুদ্ধ করতে করতে।বেশি চাপ নিতে পারবোনা তাই ডিগ্রিতে ভর্তি করে দিল।
প্রথম বর্ষেই বিয়ে হয়ে গেল।সংসার পড়াশোনা চলতে থাকলো।অনেক টা সুস্থ ও ছিলাম।ডিগ্রি শেষ হলে ছেলে হলো।মাস্টার্স শেষ করার পর মেয়ে হলো।আবার শুরু হলো প্রায় প্রায় ব্যাথা।চলতেই থাকলো ব্যাথা।দুটো বাচ্চা, সংসার আর অসহ্য মাথা ব্যাথা নিয়ে আর পেরে উঠছিলাম না।প্রতিটা মুহুর্তে মনে হোতো এ অসহ্য জীবনের বোঝা আর টানতে পারছি না,বাঁচতে ইচ্ছে করতো না।অনেক বার মনে হয়েছে সব গুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিই।বাচচাদের জন্য বেঁচে রইলাম।বাংলাদেশের কোনো ডাকতার বোধ হয় আর বাকি নেই দেখাতে।পড়াশোনা করে কিছু করবো ভেবেছিলাম,পারলাম না।এভাবে চলতে চলতে জেসমিন রোজ আপুর সাথে পরিচয় হলো।নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে দিলেন।
স্যারের সব ভিডিও,সেশন গুলো দেখতে থাকলাম।বাঁচার আশা জাগলো নতুন করে।অনেক সাহস পেলাম,নিজেকে ভালোবাসতে শিখলাম,কিছু করতে হবে,মস্তিসক কে ব্যাসত রাখতে হবে,এগুলো জানলাম।
ছোট করে শুরু করলাম।জানি সবার মতো দৌড়াতে পারবো না কিন্তু হাটতে তো পারবো আস্তে আস্তে। সবাই এক বছরে গন্তব্যে পৌঁছাবে আমি না হয় দশ বছরে এক পা এক পা করে কচ্ছপের মতো ধীর গতিতে পৌছাবো,কিন্তু ঠিক পৌছাবো।এই বিশ্বাস টা ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের কাছ থেকে পেয়েছি।বেশি একটিভ থাকতে পারিনা,বেশি কিছু করতে পারিনা।কিন্তু লেগে আমি থাকবো।
৩০ জানুয়ারি স্যার এসে ছিলেন যশোরে।ঐ অনুষ্ঠানে থাকা অবস্থায় প্রচনড ব্যাথা শুরু হয় এবং আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি,আজ পর্যনত ব্যাথা কমে নি।কতো ডাক্তার যে দেখালাম তার ঠিক নেই।যনত্রনার কাছে বড় অসহায় আমি।আমার বর ও পাগলের মতো এ ডাক্তার ও ডাক্তারের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছে।সবসময় আমাকে খুশি রাখার চেষটা করে,বেড়াতে নিয়ে যায়।বর্ডার খুলে দিলে ভারতে যাওয়ার চিন্তা করছে।আমি অসুস্থ, বাচ্চা রা ও খুব অসহায়।আমার ছোট্ট মেয়ে টা আমাকে বলে,মা মনে কর তোমার কিছছু হয়নি,কোনো ব্যাথা নেই,সব ভুলে যাও,মন দিয়ে কাজ কর সব ঠিক হয়ে যাবে। সত্যিই যদি সব ঠিক হয়ে যেতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি আমি হতাম।
ভালো থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি কই?আমি সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাই,অনেক কাজ করতে চাই।ব্যাসত রাখতে চাই নিজেকে।ভুলে যেতে চাই সব ব্যাথা।প্রাণ খুলে হাসতে চাই।বাইরে থেকে সবাইকে ই সুখি দেখায় কিন্তু ভেতরে ঢুকলে বোঝা যায়।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে এসে অনেক বন্ধু, ভাই,বোন পেয়েছি।সবাই আমার জন্য আশির্বাদ করবেন।ভালো থাকবেন সবাই।
আমার ছোট্ট উদ্যোগ পুষ্পলতা।কাজ করছি যশোর থেকে গয়না,কুরুচের কাজ,কুমিল্লার খাদি পাঞ্জাবি নিয়ে।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৬১
Date:- ১৩/০২/২০২১
নামঃতমা পাল স্বণর্লতা
ব্যাচঃ১২ তম
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৪৪৭৪৫