৯বছর বয়সের কালে সংসারের পুরো দায়িত্ব এলো আমার উপর
""মা"" তুমি শুধুই মা পৃথিবীতে তোমার নেই তুলনা
""মা ছোট্ট একটি শব্দ এর মূল্য যে কতখানি তা শুধু পৃথিবীতে মা হারা সন্তানেরাই বুঝে,মায়ের কোল ছেড়ে যারা সাত সমুদ্র তেরো নদীরওপারে থাকে তারা মর্মে মর্মে মায়ের অনুভূতি অনুভব করে।মা শব্দটা এতই মূল্যবান যে আমরা একটু কষ্ট পেলে অন্তর থেকে মা শব্দটাই চলে আসে । পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সম্পদ হলো মা শব্দটি।
মা শব্দটি অতি মধুর এই ত্রিভুবনে মায়ের মত এত দরদী সন্তানের জন্য আর কেউ নাই। মা অনেক কষ্ট করে দশ মাস দশ দিন পেটে ধারণ করে এই সুন্দর পৃথিবীর মুখ দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।
=======আমার_ জীবনের _গল্প =======
আজ বলবো আমি আমার জীবনে গল্প,আমরা তিন বোন এক ভাই, ও মা বাবা এই ছয় জনের সংসারে বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক, একজন ছোট ব্যবসায়ী,বাবা কৃষি কাজ ব্যবসা করে যতোটুকু উপার্জন করতো তা দিয়ে ডাল ভাত খেয়ে কোনরকম আমাদের সংসার চলে যেতো বাবা একার মেহনতের কোন ভাবেই চলছিল আমাদের লেখা-পড়া,আয়-রোজগার তেমন ভাল না থাকায় কোথাও কোনো টাকা পয়সা সঞ্চয় করে রাখা সম্ভব হয়নি,,হয়নি কোনদিন আমাদের স্বচ্ছন্দ আরাম দায়কভাবে চলা,আমি ভাই বোনের মধ্যে বড়। সংসার টাকাপয়সা ছিল না আমার জীবন মোটামুটিভাবে,টেনেটুনে চলছিল।
অন্ধকার কালো রাতের মহাপ্লাবন।
আমার বয়স যখন ৯-বছর হঠাৎ কালবৈশাখী।
=====অন্ধকার _রাতের _করুন _কাহিনী=====
কালো রাতে অন্ধকার মহাপ্লাবন ঝড় এল আমার পরিবারের উপর। আমার আমার """মা""" আমাদের ছেড়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে,আমরা হয়ে গেলাম মাতৃহারা এতিম সন্তান।
""মা"" নামের সেই মায়ার আঁচল না থাকার কারণে আমাদের সংসারে চলে এলো করুণ পরিস্থিতি ছোট ছোট ভাই বোন নিয়ে অনেক কষ্টে দিনরাত পার করতে হয়েছে, খেয়ে না খেয়ে অতিবাহিত করেছি আমাদের জীবনের সময় গুলো,, বাবা শুধু সান্তনা দিতেন আল্লাহু মুখ দিয়েছেন আহারের ব্যাবস্হাও আল্লাহ করবেন চিন্তা করো না বাবার মুখের এই সান্তনা শুনে একটু একটু সাহস পেতাম,আব্বু সবসময় বলতো মা নেই তাতে কি হয়েছে, আমি তোমাদের মা আমি বাবা আমি,এক বুক দিয়ে আগলে রাখবো সারা জীবন।
ভাই বোন গুলো অনেক ছোট ছিল অবুজ ছিল।
বুঝতো না যে মা মারা গেছে,২/৩ দিন যখন পেরিয়ে গেল মা ফিরে এল না, তখন আমার ভাই-বোন সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিল,এদিকে-সেদিকে পাগলের মত ছোটাছুটি শুরু করলো,যাকে পায় তাকেই জিজ্ঞেস করে আমার মা কোথায়,সবাই খবরটাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলল তোদের মা ওখানে আছে,
আমি মেজ বোন মোটামুটি সবই বুঝি,কিন্তু ভাই ছোট বোনটা কিছুই বোঝেনা।পাবো বলে বায়না ধরতে থাকে।সারাদিনই মায়ের কবরের কাছে গিয়ে চালাচালি করে আর ডাকাডাকি করে, ছোট ভাই-বোন দুটো কবরে উপরে শুয়ে থাকে।ঘরে ফিরিয়ে আনতে চাইলে কান্নাকাটি করে, আসতে চায় না।
"দেখতে দেখতে দশ দিন কেটে গেল,ভাই বোন গুলোর কান্নাকাটি দিন দিন বাড়তে শুরু করলো,
কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিনতি করে করে ডাকাডাকি করে,এসব দৃশ্য মর্মাহত বেদনাদায়ক পরিস্থিতি দেখতে দেখতে,আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি,মনে হয়েছিল আমি পাগল হয়ে যাব,
এদিকে মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে,আব্বু কাজে যেতে পারেনি,প্রায় ১৫ দিন কাজ ছাড়া কিভাবে সংসার চলে ,এদিকে মায়ের পেছনে প্রায় ৪০/৫০হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে,ঘরে কোন চাল নেই কোন বাজার নেই,ভাই বোন খুদায় কান্না করছে আর মাকে ডাকছে,,ছোট ছোট বাচ্চারা না খেয়ে কতক্ষণ কয়দিন থাকতে পারে,
তাছাড়া প্রতিদিন বা কে খাবার দেবে আমাদেরকে
মা মারা যাওয়াতে আব্বু খুব দুর্বল অসহায় একা হয়ে পড়েছে,অস্থায়ী সে বা কি করবে মনকে শক্ত করে কাজ ধরবে,
সংসারের এরকম করুণ পরিস্থিতি দেখে মনকে কোন ভাবেই মানতে পারলাম ভাই বোন যদি না খেয়ে মারা যায় আমি বেঁচে থেকে কি করব ,
আমি বা কি করতে পারি আমি ওতো ছোট্ট একটা মানুষ,সামলাতে পারিনা,বাবাকে কি করে সামাল দিব,ভাই বোন কেই বা কি বোঝাবো,হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও তো পেটে খাবার আসবেনা,
মেজ বোন কে বল্লাম তুই বাড়িতে থাক আমি রিজিকের সন্ধানে,শহরে যাচ্ছি,চিটাগাং চলে গেলাম কিছুদিন পরে মেজ বোনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলাম,পরিবারের সবাইকে চিটাগং নিয়ে যাব,ভাই-বোন তিনজন কে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবো,আব্বুকে একটা চায়ের দোকান করে দিব,ভাই বোন বাসায় থাকবে,আমি স্কুল থেকে ফিরে চায়ের দোকানে বসবো আমার আব্বু রেস্ট করবে,ভালই চলবে আমাদের সংসার।
মানুষের সব স্বপ্ন কি সত্যি হয়?আমার তো ক্ষমতা আছে শুধু স্বপ্ন দেখার,চাইলেই তো পরিবারের সবাইকে বাধ্য করতে পারিনা আমার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে,আব্বুকে প্রস্তাব দিলাম,আমার স্বপ্ন সহানুভূতি প্রকাশ করলাম,সে রাজি হলো না,সে সিদ্ধান্ত নিল,একটা বিয়ে শাদী করে ঘড়ে ভাই বোন দেখাশোনার লোক নেই আসবে,ভাই বোনকে ঘরে একা রেখে আব্বু তো কাজে যেতে পারে না,
ওই বছর আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়ে সপ্তম শ্রেণীতে উঠেছি,নতুন বছরে অনেক লেখা পড়ার চাপ,সকালে দুইটা প্রাইভেট পড়তাম,পঞ্চম শ্রেণীর দুইটা ছাত্রী,স্কুল থেকে বাসায় ফিরে এসে বিকেলে পাঁচজনকে পড়াতাম,তারা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী,আমার নিজের লেখা পড়া,সাতজন প্রাইভেট ছাত্রীকে লেখাপড়া করানো,আমার কাছে অনেক কষ্টদায়ক মনে হতো,
তবুও ভাই বোন বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সমস্ত কষ্ট কে আমি আপন করে নিয়েছিলাম,
শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল,নিজেকে মানুষ হতে হবে জীবনকে মানুষ করতে হবে,মা অসুস্থ অবস্থায় যে ঋণ নেওয়া হয়েছে সেটা শোধ করতে হবে,আমি একা মানুষ দুইহাতেই সবকিছু সামলাতে নিতে হবে,
=========দায়িত্ব কর্তব্যবোধ =========
এই" ৯=বছর বয়সের কালে সংসারের পুরো দায়িত্ব এলো আমার উপর লেখাপড়ার পাশাপাশি রান্নাবাড়া ভাই বোনের দেখাশোনা সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব।তবে অনেক কষ্টে থাকার পরেও লেখাপড়া করতে চালিয়ে গিয়েছি,এবং প্রতিটি ক্ষেত্রের জিদ নিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টা করেছি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি লেখাপড়া করতে পারিবা না পারি আমার ছোট ভাই বোনকে কে লেখাপড়া ঠিকই করাবো এতে আমার যত কষ্টই হোক,তাদেরকে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ উপহার দেবো,আলোকিত জগতে তাদের কে প্রতিষ্ঠা করবো,,সেই থেকে শুরু হলো আমার সংসার জীবনের যুদ্ধ,আজও সেই যুদ্ধ করে চলছি,বিগত 20 বছর ধরে এই যুদ্ধে চালিয়ে আসছি,,
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৬৫
Date:- ১৮/০২/২০২১
✨নিজের বলার মতো একটা গল্প ফান্ডেশন
✨আমি সাবিনা অপি
✨কান্ট্রি অ্যাম্বাসেডর লেবানন
✨ব্যাচ নং ১১
✨রেজিঃনং ২৮৭৭৪
✨উপজেলা কাঠালিয়া
✨জেলা ঝালকাঠি
✨বিভাগঃ বরিশাল
✨ব্লাড গ্রুপ বি প্লাস
✨বর্তমানে লেবানন রেমিটেন্স যোদ্ধা