রাত দিন শ্রম দেওয়ার পর এক বছরের মাথায় একটা ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছিলাম,,,,
আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার,ভৈরব উপজেলার কালিকা প্রসাদ গ্রামের ব্যাবসায়িক এবং কৃষিপ্রধান পরিবারে। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী। আমরা তিন ভাই দুই বোন। ১৯৭০ সালে আমার বাবা ব্যাবসা বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে অবসর গ্রহণ করেন। যে কারণে আমার শৈশব কাটে ভাই ও ভাবীদের সাথে । পারিবারিক অনটন না থাকলেও আমি ছিলাম অনাদরে,ভাইদের উঠতি ক্যরিয়ার আর ভাবীদের নিজ নিজ সন্তান ভাবনা আমার প্রতি আরও উদাসিন করে তুলে । আর আমার মাও ভাবীদের গন্ডির বাহিরে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতেন না কারণ পরিবার চলত ভাইদের আয়ের এবং সিদ্ধান্তরে উপর । ছোট বেলা থেকে পড়ালেখা আর খেলার প্রতি ছিল প্রচন্ড অাগ্রহ । কিন্তু খেলাধুলা সুযোগ খুব কমই পেতাম । পারিবারিক কৃষিকাজ দেখা ,ভাবীদের ফুট ফরমাশ এর বাহিরে গিয়ে খেলাধুলায় গেলে কড়া শাসন ।
শিক্ষা জীবণ ।
১ম- ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয় । ৬ষ্ট শ্রেনীতে থাকা অবস্থায় অবৃত্তি আর বিজ্ঞান বক্তৃতা দিয়ে নিজেকে বিদ্যলয়ে পরিচিত করে তুলি । তখনি মনে মনে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া ও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ।
বাড়ী থেকে পালিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা।
অধিক পারিবারিক শাসন এবং ভাই, ভাবীদের সাথে আমার মানিয়ে নিতে অনেক অসুবিধা হতে লাগল এবং এক সময় আমি পরিবারের উপর হতাশ হয়ে পড়ি। এই সময় পাঠ্যবই এর বাহিরে অনন্য বই বিশেষ করে সেবা প্রকাশনের সিরিজ বই পড়ার প্রতি একটা ঝুক ছিল । একদিন রাতে পাঠ্য বই এর বাহিরে গল্পের বই পড়া ও বই সংগ্রহ করতে ভৈরব রেলওয়ে ষ্টেশনে যাওয়ার অপরাধে বড় ভাই প্রচন্ড রাগারাগি করে এবং মাকে জানিয়ে দেয় আমার পড়াশেুনার খরছ তিনি আর দিবেন না । এ সকল কারণে,জীবনে একটা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় বাড়ির পুরাতন কাজের লোকের সাহায্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ,এক অচেনা গন্তব্যে। অচেনা অজানা ফেনী জেলার ছাগল নাইয়া উপজেলার এক বাড়িতে যেয়ে উঠি। ,আমার বয়স কম বিদায় পরিবারের কর্থা আমাকে লজিং রাখতে অপারগতা প্রকাশ করে । সাত দিন অবর্ণনীয় কষ্টের পর ,স্থানীয় এক জনের সহয়তায় এক প্রবাসী পরিবারের আশ্রিত হই এবং গৃহ শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করি। এভাবে কাটে ৩ টি মাস। ইতিমধ্যে মেজ ভাই জনকন্ঠ পত্রিকায় হারানোর বিজ্ঞাপন দেন। সেই এলাকার এক জনের সহযোগিতায় মেজ ভাই আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এসে দেখি আমার মা আমার চিন্তায় আর শোকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। ফিরে এসে গ্রামের স্কুলে ৭ম ও ৮ম শ্রেণী শেষ করি এবং অবসরে এলাকায় ছোটখাট ইলেকট্রিকের কাজ করে নিজের হাত খরচ চলাতে শুরু করি ।
শৈশবের স্বপ্নকে তছনছ করা ভুল সিদ্ধান্তঃ
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল।ক্লাস নাইনে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর আমার প্রিয় শিক্ষক ( কালিকা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ওসমান গনি স্যার) পরামর্শে এবং নিজের ইচ্ছায় আমি এস,এস, সি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। এটি ছিল আমার আর একটি ভুল। যথারীতি ক্লাস নাইনে থাকা আবস্থায় এস এস সি পরিক্ষার জন্য মানবিক বিভাগে রেজিষ্ট্রেশন শেষ করে আমি ১০ম শ্রেণীতে ক্লাস করতে যায়। বিষয়টি কোন শিক্ষক ভালো ভাবে নেন-নি এবং ইংরেজি শিক্ষিকা আমাকে ক্লাস থেকে বাহির করে দেন। বিষয়টি এখানে শেষ হতে পারতো কিন্তু যখন এটি পরিবারে জানাজানি হল আমার বড় ভাই খুব রাগান্বিত হলেন এবং জানিয়ে দিলেন উনি আামার কোন দায়িত্ব পালন করবেন না। ইতিমধ্যে আমার স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ি। পাড়ার বন্ধু, সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজন সবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখি। মনে মনে সংকল্প করে এস,এস,সি পরীক্ষার ভাল ফলাফল করার প্রস্তুতি নিতে থাকি। প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় টেস্ট পরীক্ষার অংশ নিয়ে দুটি বিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে কৃতকার্য হয়। পরবর্তী তে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক লিয়াকত আলী স্যার ,আমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলেন এবং আমাকে পারিবারিক সাহায্য ও উৎসাহ দিতে বলেন। পরে বড় ভাই প্রাইভেট পড়ার সুযোগ করে দেন। মানবিক বিভাগে এস,এস,সি তে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হই। সবকিছু ঠিক থাকলেও আমি হারায় আমার ভালো লাগা,বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ।
পলিটেকনিকে ভর্তি ও জীবনে চরম বিপর্যয়ঃ
পরিবারের সবাই ভৈরবে হাজী আসমত কলেজে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেয়। আবারো পারিবারিক সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পলিটেকনিকে পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। সিলেট,ময়মনসিংহ,কুমিল্লা চেষ্টা করে ,কোথাও সুযোগ না পেয়ে ফেনী পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হয়। পছন্দের সাবজেক্ট পেয়ে ফেনী পলিটেকনিক লাইফ ভালই কাটছিল। আবাও এক রাতের ঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়।।
৩ জন রুমমেট এবং আমি সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক। ৩ মাস যেতে না যেতেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক হত্যা কান্ড ঘটে। হত্যাকারীগন একজনকে হত্যা করে আমাদের ৩ জনকে চোখ বেধেঁ একটি অজানা স্থানে নিয়ে যায় এবং সারারাত রেখে দেন। ভোর বেলা আমাদের চরম হুমকি দেন এবং ফেনী শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে না আসার জন্য শাসিয়ে খাগড়াছড়ি বাসে উঠিয়ে দেন। বাকি ২ জন রাস্তার মাঝ পথে নেমে যায়। আমি খুব ভীত অবস্থায় খাগড়াছড়ি জেলার রাঙামাটি উপজেলার খেদাছড়া ইউনিয়নের এক আত্নীয় বাসায় আশ্রীত হয়। কিছু দিন পর আবার ভৈরবে ফিরে আসি। কিন্তু আমার পরিবার আমার উপর রাগান্বিত হন এবং আমার দায়িত্ব নিতে আপারগতা প্রকাশ করে । বাধ্যহয়ে ভগ্নিপতির জুতার কারখানায় পুরান ঢাকা চলে যায় । সেখানেও মন ঠিকল না ৬ মাস পর আবাও বাড়ী চলে আসি ।
নতুন উদ্যমে চলতে শুরুঃ
সবকিছু উপেক্ষা করে এক বছর গ্যাপ দিয়ে আবারও আমি হাজী আসমত কলেজে ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়।পারিবারিক সাহায্য না পেয়ে নিজে কর্মসংস্থান খুজতে থাকি। এক সহপাঠীর সাহায্য স্থানীয় একটি পএিকায় বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করি। আস্তে আস্তে সম্পাদক খুশি হয়ে আমাকে পএিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্ব দেন।
অল্প বয়সে বিয়ে ও শুন্য হাতে যাত্রাঃ
সব ঠিক ছিল। হঠাৎ নেমে আসে আরো একটি ঝড়। আমার দুই ভাই পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। আমাদের যৌথ পরিবারটি ভেঙে যায়। সে সময় মা- বাবার সম্মতিতে ১৯৯৭ সালে অল্প বয়সে বিয়ে করি এবং স্ত্রী কে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার স্ত্রী ও আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । আমার স্বল্প আয়ে বাবা,মা,আমার ও স্ত্রীর পড়াশোনা, সংসার সব মিলিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে মা-বাবাও আমাদের আলাদা করে দেন।
এ অবস্থায় আমরা চলে আসি ভৈরব শহরে। ছোট একটি বাসা নিয়ে শুরু করি নতুন সংসার। না ছিল কোন জমানো টাকা,না ছিল কারো সহায়তা পএিকার সিমিত আয় ছিল সংসার চালানো একমাত্র অবলম্বন। তবে সাপ্তাহিক পত্রিকার আয় দিয়ে আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম।
সরল বিশ্বাসে নিঃস্ব হলামঃ
হঠাৎ একদিন বিপওি ঘটে বন্ধুবেশী এক প্রতিনিধির একটি সংবাদ প্রকাশ নিয়ে। এই সংবাদটির কারণে ভৈরবের অনেক মানুষ মনে কষ্ট পান এবং আমার উপর রাগান্বিত হন। সবাই এটাকে আমার ভুল হিসাবে দেখে। যদিও প্রকাশিত ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ সত্যি। তাই আমি ভুল স্বীকারে অসম্মতি জানায়। সবমিলিয়ে পছন্ড চাপ সৃষ্টি হয় এবং আমি চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে পত্রিকার দ্বায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেয়। আমি আবার বেকার হয়ে যায়। পত্রিকার বিজ্ঞাপন সূত্রে ঢাকার একটি মার্কেটিং কোম্পানিতে ডিস্ট্রিবিউটর পদে নিয়োগ হই। স্ত্রীর দেওয়া অল্প কিছু জমানো টাকা জামানত হিসাবে কোম্পানিতে জমা করে,ভৈরবে ফিরে আসি । স্থানীয় মার্কেটে অর্ডার কেটে প্রডাক্ট জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ১সপ্তাহ পার হয়ে যায় কিন্তু প্রডাক্ট আসেনা।পরে আমি খোঁজ নিতে আবার ঢাকা যায়। যেয়ে দেখি কোম্পানির অফিস বন্ধ। কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।সম্পূর্ণ হতাশ অবস্থায় পাশে একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসি এবং দেখলাম আমার মত আরো কয়েকজন প্রতারিত ব্যক্তিও বসে আছে। সবার কথা শুনে চা দোকানি চাচা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,
[এসব কোম্পানির আশা ছেড়ে নিজে কিছু উৎপাদন করার চেষ্টা করো, তাও যদি না পারো ভৈরবের বয়লার মিলের ছাই পেকেট করে বিক্রি করো]
প্রথম উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টাঃ
আবারও ছোট একটু আশা নিয়ে ভৈরবে ফিরে আসলাম। ভৈরবে তখন নতুন করে জুতা শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। দুই বন্ধু সহায়তায় এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে জুতা তৈরীর ছোট একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করি। রাত দিন শ্রম দেওয়ার পর এক বছরের মাথায় একটা ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছিলাম।১৯৯৮ সালে সর্বনাশা বন্যা শুরু হয়। ফলে ভৈরব তলিযে যায়,। বন্যার পানিতে সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকার সাথে ভৈরবেব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এদিকে আমার লাখ টাকা মার্কেটে বাকী পড়ে। পরে বন্যা নেমে গেলে আমি ব্যবসায়ীদের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করি।আগের টাকা পরিশোধ না করে, বাকীতে আবার প্রডাক্ট নিতে চায়। আমি অপারগতা জানালে তারাও বকেয়া টাক দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমতাবস্থায় কারখানাটা চালু রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, বাধ্য হয়ে একমাত্র আবলম্বন কারখানা টা বন্ধ করে দিতে হয়।
আবাও নতুন স্বপ্নের দেখাঃ
এর মধ্যে আমি H.S.C শেষ করি এবং এক বন্ধুর সহায়তায় ঢাকা তিব্বিয়া হাবিবিয়া ইউনানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে ২য় বর্ষে উত্তীর্ণ হয়েছি। মিরপুরে আমার এক পরিচিত জনের মাধ্যমে চুমকি-মতির,কারচুপির ব্যবসার সন্ধান পায়।আবারো নতুন করে শুরু করার স্বপ্ন দেখি। শুরুহয় নতুন উদ্যোগ মিরপুরের বিহারিদের কাছ থেকে কারচুপির পন্য সংগ্রহ করে পুরান ঢাকা, ভৈরব,চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় সরবরাহ করতে থাকি।আয় রোজগার ভাল হচ্ছিল, কিছু দিনের মধ্যে ভালো একটা পরিচিতি পাই। সিদ্ধান্ত নেয় নিজে পুনরায় কারখানা গঠন করার।পরে বিহারি একটি পরিবার সহ ৫ জন কারিগর নিয়ে এসে আবারো একটি কারচুপির কারখানা গঠন করি। সবকিছু খুব ভালো চলছিল আমার পণ্যের চাহিদা আস্তে আস্তে অনেক বাড়তে থাকলো। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আমি পণ্য দিয়ে আসতাম। একবার চট্টগ্রাম গেলাম এবং সেটি আবারো অন্ধকার ডেকে আনলো। চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এসে দেখি বিহারি পরিবার ও সকল কারিগর রাতের অন্ধকারে আমার কারখানা সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। তাদের কে মিরপুর, মোহাম্মদপুর অনেক খুজলাম কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে নেয়।আমি সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙ্গে পড়ি।
হাত বাড়ীয়ে দিলেন প্রিয় শিক্ষকঃ
এমন আবস্থাতে আবারো ঘুরে দাঁড়তে সাহায্য করে আমার ইউনানী মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক। তিনি বিনা জামানতে ইউনানী ঔষধ কোম্পানির ডিষ্ট্রিভিউটর করে দেন। এক বছরে কর্মদক্ষতায় কোম্পনীর অনেক বিশস্ত হয়ে উঠি। ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ টি উপজেলা চষে বেড়িয়েছি কখন সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত আমি বুঝতে পারি নি ।
পেশার পরিবর্তনঃ
২০০১সালে ইউনানী মেডিসিনে ডি,ইউ,এম,এস ডিগ্রি লাভ করি এবং ডি,ইউ,এম,এস এ ভর্তি হই।সিদ্ধান্ত নেয় ভৈরবে একটি চেম্বার খুলবো। বনৌষী ক্লিনিক নামে ভৈরবে মিতালী ম্যনশনে ২য় তলায় একটি ইউনানী চেম্বার খুলি। ঠিক ঠাক ছিল সব কিছু। এগিয়ে যাচ্ছিলাম ধীরে ধীরে। একবছর অতিবাহিত হতে না হতেই এক রাতে দুর্ধর্ষ চুরি হয়। পাশে মোবাইলের দোকানের পাশাপাশি আমার চেম্বারের যাবতীয় ঔষধ, চেম্বারে রক্ষিত ক্যাশ টাকা সব নিয়ে যায় চোরেরা । উপায় না পেয়ে ভৈরব ছেড়ে কিশোরগঞ্জে চলে যায়।
ভৈরব ছেড়ে কিশোরগঞ্জেঃ
২০০২সালে কিশোরগঞ্জে ইবনেসিনা ইউনানী চেম্বার নামে একটি চেম্বার প্রতিষ্ঠিত করি। ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ে,সুনামও অর্জন করি।
রোজা মাস তারাবির নামাজ শেষে এক জনের অনুরোধে চেম্বারে অপেক্ষারত,এমন সময় চেম্বারে একটি সন্ত্রাসী দল আসে এবং মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। আমি চাদাঁ না দেওয়ায় আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভোর রাত্রে ছাড়া পায়। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন আমাকে মামলা করার পরামর্শ দেন। আমি পুনরায় সমস্যা এবং আমার স্ত্রী,সন্তানের কথা চিন্তা করে মামলা করা থেকে বিরত থাকি। অনেক আতঙ্ক এবং চারদিকের চাপের কারণে চেম্বারটি বন্ধ করে দিতে হয়।
প্রশিক্ষক ও কলকাতা যাত্রাঃ
উপায়ান্তর না পেয়ে মর্ডান হারবাল গ্রুপে মেডিক্যল অফিসার পদে যোগদান করি এবং কিশোরগঞ্জ জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত হয় । এরি মাঝে আকুপ্রেশার চিকিৎসার বিষয়ে জানতে পারি এবং প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। পরবর্তীতে চাকুরির পাশাপাশি আমি আকুপ্রেশার চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষক হিসাবে প্রশিক্ষণ দিতে থাকি।
২০০৫ সাল নূর মজিদ আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ থেকে ডি,ইউ,এম,এস ডিগ্রি লাভ করি এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের উদ্যেশে কলকাতা চলে যায়।
কিশোরগঞ্জ ছেড়ে সিলেটে নতুন উদ্যোগ।
২০০৮ সালে ডিগ্রি লাভ শেষে কলকাতা হতে দেশে ফিরে সিলেট শ্রীহট্র সংস্কৃত কলেজে এ আয়ুর্বেদিক বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করি। এর মধ্যে আবার সিলেটে ন্যচার কিউর নামক আকুপ্রেশার ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্টা করি যেখানে ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়।
২০১০ সালে আমার প্রতির মেয়াদ ২বছর পূর্ণ হয়। এরিমাঝে স্বনামধন্য হাউজিং কোম্পানী আমাদের সাথে একএিত হয়ে বৃহৎ পরিষরে চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান ও পরিচালনার প্রস্তাব দেয়। এদিকে ন্যাচারকিউর এর বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া চুক্তি নবায়ন করলেন না। পরে আমি হাউজিং কোম্পানীর প্রস্তাবে রাজি হই। একত্রে আমরা প্রতিষ্ঠা করি ( গার্ডেন ইয়োগা ন্যচার কিউর)। সুনাম ও লাভের সহিত ২ বছর ব্যবসা পরিচালনা করি। ২০১২ সালে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন হয় । নতুন পর্ষদের সাথে কিছু বিষয়ে মতের অমিল হয় এবং আমার সহযোগী থেরাপিষ্টরা দু ভাগ হয়ে যায়। কেউ কেউ চলে যায় ঢাকায়।সব মিলিয়ে আমি হারিয়ে ফেলি আমার দীর্ঘদিনের শ্রম ও ভালবাসায় গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি।
সিলেট থেকে মালয়েশিয়াঃ
২০১২ আবারও রুরাল এনভাইরনমেন্ট কমিউনিটি হেল্থ সোসাইটি প্রতিষ্ঠাকরি এবং সিলেট সদর সহ ৬ টি উপজেলায় সমন্বিত সাস্থ্য শিক্ষা প্রকল্প গড়েতুলি ,যার মাধ্যমে ৩০ এর অধিক লোকের কর্মসংস্থান হয় ।
২০১৬ সালে মালয়েশিয়া ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি (UTM) এ একটি TCM মেডিসিন বিষয়ক আন্তজার্তিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে মালয়েশিয়ায় আসি । মালয়েশিয়া পরিবেশ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা খুব ভালো লাগে।পরবর্তীতে আমি ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার, ইনস্টিটিউট অফ বায়োপ্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট (IBD) তে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।
মালয়েশিয়ায় কোম্পানী গঠনঃ
যথারীতি পড়াশোনা পাশাপাশি মালয়েশিয়া অবস্থান করে ব্যবসা বানিজ্য করার চিন্তা করি । পরবর্তী বাংলাদেশী এক ব্যবসায়ী এর পরামর্শ ও সহযোগিতায় ব্যবসা করার লক্ষ্যে কোম্পানী গঠন করি ও ২০১৭সালের আগস্ট মাসে কোম্পানী ডিরেক্টর হই । আমার ডিরেক্টরস ভিসার সুবিধা থাকায় ,আমি উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ,স্টুডেন্ট ভিসা না করে ডিরেক্টরস ভিসা করার চেষ্টা করি । ডিরেক্টরস ভিসার জন্য মালয়েশিয়ার অবস্থানরত ঐ বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে ভিসার যাবতীয় খরছ বাবদ ১৬৫০০ রিঙ্গিত প্রধান করি । হঠাৎ একদিন আমাকে কিছু না জানিয়ে তিনি মালয়েশিয়া থেকে পালিয়ে গেলেন । যাওয়ার সময় যথারীতি তাহার হাতে রক্ষিত আমার পাসপোর্ট এবং সমস্ত কাগজপত্র সাথে করে নিয়ে গেলেন ২০১৭ সালে ২৫ নভেম্বর থেকে, আমি মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে পরি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে নতুন পাসপোর্ট হাতে পাই। তখন আবার ইউনিভার্সিটিতে ভিসার জন্য চেষ্টা করি। এমত আবস্থায় ইউনিভার্সিটি ভিসা দিতে অপারগতা জানায়। পরে এক বন্ধুর সহায়তায় মাই ইজি মাধ্যমে ৮৫০০ রিঙ্গিত চুক্তিতে এক কোম্পানীতে ভিসা করতে নিবন্ধন ২০১৭ সালে ডিসেম্বর মাসে। এক বছর অপেক্ষার পর ১২০ জনের মধ্যে ৩৪ জন বাদে সবার ভিসা হয়। তবে দুঃখ জনক হলেও সত্যি ৩৪ জনের মধ্যে আমিও ভিসা পাইনি ।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাস ও স্বপ্নের অপমূত্যঃ
ভিসা না থাকায় বাংলাদেশ যেতে না পারাই আমার রুরাল এনভাইরনমেন্ট কমিউনিটি হেল্থ সোসাইটি নামক,প্রতিষ্ঠান দিন দিন লাভ জনক আবস্থা থেকে লসের দিকে যেতে থাকে । ভাই,বন্ধু ও সন্তান তুল্য আমার অধিন্থরা, নিজেরা লাভমান হয়ে, আমার মাথায় লসের বুঝা দিয়ে ২০১৮ সালে পরস্পর যোগ সাজসে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয় এবং ২০ লাক্ষাদিক টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক বড় একটি ঋণের বোঝা মাথায় চলে আসে এবং সেই সাথে অপমৃত্য ঘটে আমার স্বপ্নের সমন্বিত স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প এর । অন্য দিকে বাংলাদেশ যেতে না পারায়, সিলেট আমার স্ত্রী কতৃক পরিচালিত চেম্বার ও পাইকারী ঔষধের ব্যবসা দিন দিন লসের দিকে যেথে থাকে । বিশেষ করে আমার ছাত্র,ও বন্ধু,বান্ধব যারা এক সময় খুব কাছের ছিলেন তাহারা অচেনা হতে শুরু করল,পাওনা টাকা জন্য মোবাইলে কল করলে কল রিসিব করত না । এমত আবস্থায় স্ত্রী,কন্না,সংসার,চেম্বার সব কিছু মিলিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপে দিশেহারা । প্রচন্ড মানসিক চাপের ফলে ব্যবসায়ীক বন্ধু বান্ধব ছাত্রদের এরং যাদেরকে বিশ্বাস করে ঠকেছি,যারা আমাকে ঠকিয়েছে তাদের প্রতি ঘৃনা আর ক্ষোভ বাড়তে থাকে ।শুরু হল রাত জেগে কাটানো।
নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপে যোগদানঃ
মানসিক চাপ কমাতে দিন রাত্রে ,ফেসবুকে, ইউটিউব এ মোটিভেশান ভিডিও, গল্প পড়তে ও দেখতে থাকি ।হঠাৎ একদিন একটি ভিডিও সামনে আসে। ভিডিওটি অনেক ভালো লাগে আমার। ভিডিওটি ছিল নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের।ভিডিওটি আমাকে খুবই আকৃষ্ট করে। আমি স্যারের গ্রুপে যোগদান করি। নিয়মিত গ্রুপের পোষ্ট,স্যারের লেখা এবং ভিডিও গুলো,দেখতে থাকি । মনে আবাও বিশ্বাস জন্মাতে থাকে, প্রিয় স্যারের বানী "পড়ে গেলেও থামা যাবেনা " আথবা যে অন্যকে ঠকিয়েছে সে নিজেকে নিজে ঠকিয়েছে । স্যারের দেওয়া শিক্ষা কে ধারণ করে আবাও আস্তে আস্তে চেষ্টা করি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর । দেশে ও প্রবাসে যারা আমাকে প্রতারণা মাধ্যমে ঠকিয়েছে ও চরম ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের প্রতি ক্ষোভ আর ঘৃনা দূরিভুত হচ্ছে । আল্লাহর রহমতে ২০১৯ সালে ডিসেম্বর মাসে নতুন ভিসা প্রাপ্ত হয় এবং এরি মাঝে নিজের বলার মত একটি গল্প গ্রুপের মালয়েশিযা টিমের সাথে যোগাযোগ হয় । মালয়েশিয়া কান্টি অম্বাসেডর মো : আসাদুজ্জামান ভাই এর সহযোগিতায় নবম ব্যাচ এ রেজিষ্টেশন করি, যদিও আমি সপ্তম ব্যাচ থেকে গ্রুপের সাথে আছি । মনে আগ্রহ জাগে প্রিয় মেন্টরের সাথে সাক্ষাত করা ও প্রিয় মেন্টর এর মাধ্যমে দেশে নতুন একটি কোম্পানী করার সংকল্প করি । আর সেই লক্ষেই ২৫ মার্চ সারের সাথে সাক্ষাতের উদেশে দেশে যাওয়া সকল প্রস্ততি গ্রহন করি । সর্বনাশা করনার কারনে বিমান যোগাযোগ বন্ধ হলে আর দেশে যাওয়া সম্ভব হয়নি ।
Ayu Nature প্রতিষ্ঠা ও ঘুরে দাঁড়ানোঃ
তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে অনলাইনে প্রিয় মেন্টর, মালয়েশিয়াতে Aye Nature নামে নতুন কোম্পানিটির শুভ উদ্বোধন করেন ।আবাও একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা শুরু করি। বর্তমানে আমার এই কোম্পানিতে আমি সহ ৩ জন কর্মরত আছি। ইনশাআল্লাহ অতি শীগ্রয় আরো ১০-১৫ জনের কর্মসংসথান করতে পারবো। স্যারের মানবিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটি মৃতদেহ দেশে প্রেরণ, অসুস্থ ব্যক্তিকে পূর্ণ আর্থিক সহায়তা দিয়ে দেশে প্ররণ এবং মালয়েশিয়া জেলে আটকা থাকা মানুষদের আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দেশে প্রেরণ করতে পেরেছি। আমি খুব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে এবং মানবিক কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৬৭ Date:- ২১/০২/২০২১
ডা.মো: মনিরুজ্জামান
ব্যাচ নং ৯
রেজিষ্ট্রেশন নং ১০৯৬৬
জেলা কিশোরগঞ্জ
উপজেলা ভৈরব
বর্তমান অবস্থান মালয়েশিয়া
মোবাইল নাম্বার +60182339834