ছোট ছিলাম তখন একুশ মানেই আমার কাছে এক প্রকার মধুর ধ্বনি
ভাষা আন্দোলন দিবস (যা রাষ্ট্রভাষা দিবস বা শহীদ দিবস নামেও পরিচিত) বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫২ সালে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে যারা শহীদ হয় তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই জাতীয় দিবসটি পালন করা হয়।
আমার ছোট্ট একুশ :-
ছোট ছিলাম তখন একুশ মানেই আমার কাছে এক প্রকার মধুর ধ্বনি, একুশ মানেই আমার অজানা এক ইতিহাস সামনে উঠে আসার স্বপ্ন উদযাপিত দিন, একুশ মানে সালাম বরকত রফিক রক্ত সাম্নের স্নিগ্ধ সূর্যোদয়, একুশ মানে বসন্তের বাতাসে নিজেকে মাতিয়ে তোলা, একুশ মানে মায়ের কোলে শিখা অ- অজগর, আ- আম, একুশ মানে আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী গানের সাথে নিজ আত্মাকে জাগ্রত করা।
এরকম হাজারো চিন্তা মনে আসে একুশ মানে..... একুশ মানে........
ছোটবেলায় যখন একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে আসতেও তার আগের রাত ছটফট করতে থাকতাম কোথায় থেকে যেন গাঁদা ফুল, পলাশ ফুল বা একটা গোলাপের হলেও ব্যবস্থা করে সুন্দর করে নিজ হাতে সর্বোচ্চ কারিগরি দিয়ে চেষ্টা করে একটা ফুলের তোড়া ফুলের ঢালা তৈরি করে শহীদ মিনার এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করব। কখন সবার আগে গিয়ে শিক্ষকের কাছে কে বলব স্যার আমি সালাম বরকত, রফিক এর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিজের হাতে দিয়ে তৈরি করা সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাঞ্জলি টুকু নিয়ে এসেছে আপনার-ই সামনে শিক্ষকের কাছ থেকে কখন শুনবো তুমি ভাষা প্রেমিকের মতো একজন বাধ্যগত ছাত্র এমন অনেক আবেগ কাজ করতো ভাষা দিবসের দিন সারা দিন বাংলা কবিতার চর্চা গদ্যপদ্য নিয়ে আলোচনা নিজের পছন্দের লেখক-লেখিকা কবি সাহিত্যিকগণ টেবিলে বসা এ যেন এক নেশা। সবকিছু মিলিয়ে এই দিনটি ছিল বছরের অন্যতম একটি দিন যা ঈদ এর চাইতে আনন্দের কোনো অংশে কম নয়।
ঘর থেকে বের হলেই শুনতাম শুধু আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি এই গানটি যতবার বাস্তব ততবার নিজের ভেতর আলাদা শক্তি সঞ্চার হত দেশের ভালোবাসা নিজের বিবেককে জাগ্রত করে তুলতো আজও আমি ভুলিনি সালাম বরকত রফিক কে আজও আমরা কোন অংশে কম মর্যাদা করিনি ভাষা দিবসকে। এটাই ভালোবাসা মাতৃভূমির প্রতি।
ঢাকাতে ভাষা দিবস :-
যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর্বে আসিলাম তখন থেকে ১২.০১ মিনিট শহিদ মিনারে ফুল দিব বলে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের উদ্যশ্যে রওনা দিতাম। তারপর ফুল দিয়ে আত্ম প্রশান্তি আনতাম। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ও বাসায় ভাষা দিবস পালন করতাম সব মিলিয়ে।
প্রবাসের একুশ :-
আমরা সবাই জানি প্রবাসী মানে একজন হতভাগার তালিকার সর্ব প্রথম সারির ব্যক্তি গুলো, প্রবাসীরা ওই একটি প্রদীপ যেই সব সময় নিজে জ্বলে অন্যকে আলোকিত করে মানে সকল প্রকার হাসি-আনন্দ ভালোবাসা ও সুখময় মুহূর্ত সময় মুহূর্তগুলো প্রবাসীদের কপালে তেমন একটা জোটে না কারণ প্রবাসী হচ্ছে এমন কট্টোর জায়গা।
প্রবাসে ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস বা ঈদ বলে কোন কিছু নাই। কিছু প্রবাসীরা আছে যারা নিজের টাকায় খেয়ে অন্যের বনের মোষ তাড়ায় তাদের জন্য কখনো কখনো এগুলোকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করার মতো সৌভাগ্য হয়ে থাকে এবং তার শতকরা হার ২% বা তারও কম তাই প্রবাসে ভাষা দিবস মানে ফেসবুকে লম্বা লম্বা স্ট্যাটাস ভিডিও কল কমেন্টসের মাধ্যমে নিজের আত্ম উপলব্ধি করা এছাড়া অন্য কিছু নয়।
আমি কাতার আসার পরে প্রথম তিনটি বছর কখনো কোন দিবস উদযাপন করার মত সেরকম সক্ষমতা হয়নি ঠিক তিন বছর পরে মাঝে মধ্যে কোন না কোন দিবস পালন করার জন্য নিজে উপস্থিত হতাম, আলহামদুলিল্লাহ এখন প্রতিটা দিবসেরই নিমন্ত্রণপত্র পেয়ে থাকি আর এসবই হচ্ছে মহান রব্বুল আলামীনের অশেষ রহমত আমার উপরে সেই সুবাদে গত তিন বছর ধরে ভাষা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করার মত সক্ষমতা আমার হয়েছিল।
গত বছর ২০২০ সালে আমার ভালোবাসার প্রিয় ফাউন্ডেশন "নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনের" হয়ে নিজেদের তৈরি শহীদ মিনারে ফুল দিতে পেরে গর্বিত মনে করেছিলাম যা ফাউন্ডশনের হয়ে আমার অন্যতম অর্জন। কারন সেদিন কাতারে অবস্থিত বাংলাদেশ কমিউনিটির কাতার এবং বাংলাদেশ লেখক-সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন কাতারের সকলের নজর এসেছিল আমাদের এই স্বপ্নের ভালোবাসা আবেগময় ফাউন্ডেশন এর নাম কি এবং সেজন্য আমি নিজে অনেক গর্বিত।
এই বছরে কোভিড সিচুয়েশন সর্বোচ্চপর্যায় থাকার কারণে কাতারে কোন ভাবে চেষ্টা সত্ত্বেও শহীদ মিনারে যথাযথভাবে ফুল দিয়ে পালন করতে পারেনি তবে বাংলাদেশ লেখক-সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন কাতারের কতৃক নিমন্ত্রিত হয়েছে আমাদের ফাউন্ডেশন এর সকল মেম্বার তাদের একটা ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আমাদেরকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং উক্ত মিটিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস কাতারের রাষ্ট্রদূত সহকারে বিশ্বের প্রায় তিনটি দেশের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অবস্থিত বাংলা ভাষা চর্চা করেন এমন বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারে আরো অন্যান্য গুণীজন উপস্থিত থাকবেন।
অনাদরে বিষয়বস্তুটি বিশেষ করে ভাষা দিবসে প্রবাসীদের ভূমিকা তা নিয়ে বিশদ আলোচনা সবকিছু মিলিয়ে একটি বড় পাওয়া আমার জন্য আমাদের ফাউন্ডেশন এর এনআরবি টিমের জন্য সবটাই কিন্তু একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সম্ভব হয়েছে তিনি আর কেউ নন প্রিয় আমার প্রিয় শিক্ষক ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
ফাউন্ডেশনে ভাষা চর্চা :-
আমি একজন প্রবাসী নিঃসন্দেহে সকল প্রকার বাংলা কিতাব বা পুস্তক থেকে সম্পূর্ণভাবে অনেক দূরে আছি। তাই প্রায়ই বাংলা পড়ালেখার তেমন কোনো চর্চাই নাই আর সেই সুবাদে বাংলা লেখাটাও আমি ভুলে গেছিলাম। কিন্তু এ প্রিয় ফাউন্ডেশনে এসে বাংলা ভাষার শব্দ চর্চার পাশাপাশি বাংলা লেখার অভ্যাসকে জাগ্রত করতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া হয়তো চর্চার জায়গাটা না থাকলে আমি প্রিয় মাতৃভাষা ঠিক ভাবে লেখার চর্চা করার সুযোগ পেতাম না একজন প্রবাসী হিসেবে আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের অন্যতম গর্বিত সন্তান ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর একমাত্র চেষ্টায়।
আমি স্যারের কাছে চির কৃতজ্ঞ আমাকে এই ফাউন্ডেশন এর একজন গর্বিত সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে
কৃতজ্ঞ ফাউন্ডেশন এর সকল ভাই-বোনদের প্রতি যাদের সাথে থেকে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্ত তাদের ভালবাসায় মুগ্ধ হচ্ছি আমি।
আজ আমি আপনাদের সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো, যারা লেখালেখির অভ্যাস এখনো করছেন না দয়া করে একবার নেমে পড়ুন এই চর্চায় দেখবেন নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে বের করে আনবে।
আজকের এই মাতৃভাষা দিবসেরদ প্রতিজ্ঞা করুন আমরা সবাই ভাষা চর্চা করার জন্য হলেও এই ফাউন্ডেশনকে ব্যবহার করব শুদ্ধ ভাষা চর্চা করব প্রেজেন্টেশন স্কিল বৃদ্ধি করার জন্যে আমরা সুন্দরভাবে স্ট্যাটাস ও কমেন্ট লিখে নিজেদেরকে একজন কনটেন্ট রাইটার হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।
কবি আবিদ আনোয়ার এর দুটি লাইন খুব মনে সাড়া দেই ----
ফুল কুড়াতে গিয়েছিলাম
অন্য কোথাও না--
দৈত্য-দানোর চোখ এড়িয়ে
ফুল এনেছি মা!
এখন এই কথাগুলো খুব মিস করি প্রবাসে থাকার কারনে।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারীর শুভেচ্ছা রইল সকলের প্রতি।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৬৭ Date:- ২১/০২/২০২১
ধন্যবাদান্তে
______________
সি.এম. হাসান
তৃতীয় ব্যাচ, রেজি- ১০১
লক্ষ্মীপুর জেলা - কাতার প্রবাসী
মডারেটর & কোর ভলান্টিয়ার
রিসার্চ & প্রমোশন টিম
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
Founder of "Trade Mark Group"
HD of "Nojoom Group"
Founder of "QB Fashion World"
Founder of "FSSQ"
Founder Of "Cm Global Tech"
Co - Founder of "Hello-64"
www.facebook.com/qbfashionworld
https://www.facebook.com/trademarkgroup/