আমার ভাষার প্রতি, আমার সংস্কৃতির প্রতি কোন অবিচার করিনি
❤️❤️ভাষার জন্য যাঁরা দিয়ে গেছো প্রান, ভুলিনি তোমাদের আমরা, রয়ে গেছ হৃদয়ে অম্লান।❤️❤️
⏲️২১শে ফেব্রুয়ারী
দেখতে দেখতে এগিয়ে এলো আরেকটি ফেব্রুয়ারী, তার সাথেই চলে এলো আমাদের পরম আকাংক্ষিত ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারী’। অমর একুশে শব্দটি আমার চেতনাতে আসে আমি যখন ৮ম শ্রেণীতে পড়ি। আরও ছোটবেলায় প্রতিটি একুশে ফেব্রুয়ারীর সকালে খালি পায়ে স্কুলে যেতাম, সবার সাথে শহীদ মিনারে ফুল দিতাম, বাড়ী ফিরে আসতাম। কিনতু নবম শ্রেণীতে যখন পড়ি, তখন বিজয় দিবস উপলক্ষে আন্তঃস্কুল রচনা প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের একটা ইচ্ছে জাগে মনে, সেই থেকে শুরু। আমি ঐ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করেছিলাম এবং অবাক হয়েছিলাম জীবনে প্রথমবারের মত কোন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে ‘প্রথম পুরস্কার’ জিততে পেরে। বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় আমাদের বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে অনেক বড় অনুষ্ঠান করে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছিল।
এই ধরনের প্রতিযোগীতা নিশচয়ই আগেও হতো, কিনতু আমার নজরে আসে অনেক পরে। তবে একবার প্রথম পুরস্কার পেয়ে আমার আগ্রহ বেড়ে যায়, অপেক্ষায় থাকি একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে যে কোন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের জন্য। পেয়ে গেছিলাম সুযোগ, দশম শ্রেনীতে উঠেই একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে আন্তঃস্কুল রচনা প্রতিযোগীতায় নাম দিয়ে দিলাম। যত বাংলা বই জোগাড় করে পড়তে শুরু করলাম, ধারনা নিতে শুরু করলাম একুশ সম্পর্কে। রচনা লিখে দেখাতে নিয়ে গেলাম আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকে। স্যার আমাকে খুব স্নেহ করতেন, উনি অনেক যত্ন করে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যেখানে যা বুঝানোর, উনার নিজের অভিজ্ঞতাও ছিল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। তাই আমি সরাসরি একজন রাজনীতিবিদের সাহচর্য্য পেয়ে রচনাটিকে দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলাম। এবারেও আমি ‘প্রথম পুরস্কার’ পেলাম।
প্রথম পুরস্কার পাওয়াটা ঐ বয়সে অনেক বড় ব্যাপার ছিল, কিনতু রচনা লিখতে গিয়ে আমার ভেতর যে দেশপ্রেম বা ভাষাপ্রেমের একটা বোধ জাগ্রত হয়েছিল সেটাই আমার সারা জীবনের সঞ্চয় হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে আমি পত্রিকাতে বিভিন্ন কলামিস্টদের কলাম পড়তাম, স্বদেশী আন্দোলনের গল্প শুনতাম মায়ের কাছে, মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত যে কোন বই হাতে পেলেই পড়ে ফেলতাম। এভাবেই বাংলা ভাষার প্রতি আমার এক নাড়ির টান টের পেতে শুরু করি। উচ্চশিক্ষার্থে ইংরেজী পড়তে হয়েছে, সেটাও ভালোভাবে পড়তে পেরেছি শুধুমাত্র নিজের ভাষাটাকে আগে বুঝতে পেরেছি বলে। আমি বাংলা ভাষা ভালো রপ্ত করেছিলাম বলেই ইংরেজী শিখতে গিয়ে কোন অপরাধবোধ মনে জাগেনি। আমার সবসময় মনে হয়েছে নিজের সংস্কৃতি, নিজের ভাষাকে ঠিক রেখে অন্য যে কোন ভাষা শিখলে পরে নিজের ভাষার সাথে তুলনা করা যায়, আর অন্য ভাষার সাথে তুলনা করেই মাতৃভাষার মাধুর্য্যের শ্রেষ্ঠতা নির্নয় করা সম্ভবপর হয়।
আমার ব্যক্তিগত জীবনে আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রবাসে আছি।
আমি আমার জীবনের এই পর্যায়ে এসে নানারকমভাবে বিশ্লেষন করে দেখেছি, আমি আমার দেশের প্রতি, আমার ভাষার প্রতি, আমার সংস্কৃতির প্রতি কোন অবিচার করিনি। জীবনের প্রয়োজনে দেশ ছেড়ে বিদেশে পড়ে আছি, কিন্তু দেশকে ধারন করে আছি আমার প্রতিদিনের চলনে, বলনে, জ্ঞান চর্চ্চায়, সন্তান পরিচর্যায়, অতিথি আপ্যায়নে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। শুধুই কি আমি, আরও অনেকেই হয়তো আমার মত করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, বড় আকারে না হলে তা প্রকাশিত হয়না। ৬০টি বছর পার হয়ে গেলো ভাষার জন্য প্রান উৎসর্গ করেছিলেন সালাম, রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারের মত তরুনেরা। আজ আমরা কথা বলছি বাংলায়। আমরা প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী সাড়ম্বরে পালন করেই ক্ষান্ত হইনি, একুশে কে ছড়িয়ে দিয়েছি বিশ্ব দরবারে। আধু্নিক যুগের কিছু তরুনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, এটা ভাবলেই মনে হয়, এই ছেলেগুলোর মত করে যদি সবাই একুশের চেতনাকে মনের গহীনে লালন করে, এবং দৈনন্দিন জীবনে চর্চ্চা করে, তাহলেই একুশের সার্থকতা, তাহলেই বাঙ্গালী হয়ে জন্মানোর সার্থকতা।
যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদের মাঝে বাংলাকে ছোট করার একটা প্রবণতা দেখেছি। আবার যারা দেশের বাইরে থেকেও বাংলার কেয়ার করে, তাদের প্রতি ও আমার একধরনের অভিমান কাজ করে- এতোই যদি ভালোবাসো দেশকে তবে কেন বিদেশ বিভূঁইয়ে একা একা পড়ে আছো! লেখাটি লিখতেও সেরকম ছেলেমানুষি অভিমান হচ্ছিল। তবে শেষের দিকে এসে অভিমানটি কেটে গেল। জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে অনেক কিছুই করতে হয়... যা হোক- এতো দূরে থেকেও বাংলাকে ভুলে যাইনি, আন্তরিকভাবে নিজে বাংলাকে ভালবেসেছি। নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ব হচ্ছে।কারন আমি বাংঙ্গালী।বাংলা আমার মায়ের ভাষা।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৬৭
Date:- ২১/০২/২০২১
✅ধন্যবাদান্তে,
------------------++++++----------------
🙋♂️মোহাম্মদ এম আলী
✅ রেজিষ্ট্রেশন টিম সদস্য
✅কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
✅ব্যাচ ১২
✅রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ৩৬১০৫
✅জেলা টাংগাইল
✅বর্তমান আল কাছিম সৌদি আরব