গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছি টাকা না নিয়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রচুর ক্ষুধা লাগত।
আমার যখন থেকে কিছু মনে পড়ে। আমার চার বোন আর আমি,,ছোট বেলায় আমাদের বাড়িতে ডাইরিয়া হয়েছিলো , আমাদের বাড়ির অনেকের হয়েছে। আমার ও হয়েছে, অনেক বেশি, অবস্থা খুব খারাপ ছিলো,,,আমার মা বাবা বোন চাচা দাদী খুব কান্না করছে আমার জন্য। আমার জতো দূর মনে পড়ে, তখন আমাকে মতলব আই সি ডি ডি আর,বি হাসপাতাল নিয়ে যায়। ওখান থেকে ৮ দিন পরে সুস্থ হয়ে ফিরি আমি। আমার বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। অন্যের জমি চাষ করতো। খুব কষ্টের সংসার চলতো আমাদের। খাওয়া-দাওয়ার খুব কষ্ট হতো আমাদের ।বড় দু'বোন পড়াশোনা এবং সংসারে খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়ে যেত বাবার।
কৃষিকাজ বাবাকে আমার সাহায্য🎊🎋🎋🎋🌽🧅🍍🍌
বাবার সাথে কৃষি কাজ করতাম আমি।প্রাতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবার সাথে জমিতে চলে জাইতাম। কাজ করার জন্য।অনেক কষ্ট হয়ে যেত তারপরও করতাম। না করলে তো বাবা একা পারতো না,,,, অন্যের জমি চাষ করাতে বেশি লাভ হতো না আমাদের। নিজেদের কোন জমি ছিল না। এভাবেই আমাদের সংসার চলত। আমার বয়স যখন দশ বছর। তখন আমার মামা বিদেশ গিয়ে আমাদের কিছু টাকা দেন। ঐ টাকা দিয়ে বাবা ছোট্ট একটা ব্যবসা করেন। তখন আমাদের সংসারে কিছু কষ্ট দূর হয় এবং কৃষি কাজের জমি বৃদ্ধি পায়।
বাবা 🏔️🏵️🏵️
আমার বাবা ছোট বেলা থেকে খুব কষ্ট করতো। যা আমি বলে প্রকাশ করতে পারবোনা। বর্ষাকালে নদীতে মাছ ধরা,শীত কালে জমিতে চাষ করা। ১২মাস কষ্ট করত আমার বাবা। সংসারে খুব অভাব ছিল।ছোটবেলা দাদার সংসারে। বড় হয়ে নিজের সংসারের জন্যে অনেক কষ্ট করেছে আমার বাবা। এরকম বাবার সন্তান হতে পেরে আমি ধন্য। আমার বাবা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি আমার বাবা মাকে খুব ভালোবাসি। লাভ ইউ বাবা💜💜। তোমার কষ্ট এখন আমি দূর করতে পারিনি।।।
মা🌹🌹🌹🌹
পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার পর, মা আমার জন্যে অনেক কষ্ট করেছে। আমার কিছু হলে মা কান্না করে দিত। মা নিজে না খেয়ে সবসময় আমাকে খাবার দিতো। আমার পছন্দের জিনিস গুলো আমায় এনে দিতে। না পারলে সান্তনা দিত। আমাদের সংসার দরিদ্র হওয়ার কারণে। ভালো কিছু পাক হত না। তখন আমি না খেয়ে থাকতাম। তখন মা মুরগি ঘর দেখত। মুরগি ডিম থাকলে মা আমাকে ভেজে দিত তখব আমি বাত খাইতাম,,,,মা আমাদের সংসারে খুব কষ্ট করছে। আমাদের ভাই-বোনদেরকে নিয়ে যা কষ্ট করেছেন মা
তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। আমার জীবন দিয়ে তার শোধ করতে পারব না। লাভ ইউ মা💜💜। অনেক ভালোবাসি তোমায়- মা।
ভাই বোন🏘️🌼🌼
চার বোন আর আমি। খুব আদরের ছিলাম আমি।বোনেরা আমাকে খুব ভালোবাসতো,,,আমাদের সংসারে খুব অভাব ছিল। আমার বোনেরা না খেয়ে আমাকে খাবার দিতো।আমার ছোট কিছু হলে বোনেরা কান্না করে দিত। আমার কষ্ট তাদের সহ্য হতোনা। আমিও আমার বোনদের কে খুব ভালবাসতাম। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে প্রকাশ করতে পারতাম না। বা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারতাম না। তারা খুব কষ্ট করছে আমাদের পরিবারে। তাদের কষ্ট দেখে আমার খুব কষ্ট হতো। প্রথমে বড় বোনের বিয়ে হল। তার এক বছর পর মেজো বোনের বিয়ে হল। ছোট দুই বোনকে নিয়ে তখন আমি খুব কষ্টে আছি।।।
পড়াশুনা🖼️🖼️
পড়াশোনায় ভালো ছিলাম না আমি। যতটুকু মনে পড়ে কোন রকম পাশ করতাম আমি।আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। আমার পড়াশোনা চালানোর মত টাকা আমার পরিবারের ছিলোনা,।তখন আমি বাবার সাথে কৃষি কাজ করতাম। এবং অন্যের জমিতে কাজ করতাম। দুই ঈদে ঈদগা বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করতাম। এভাবে পড়াশোনা কিছু খরচের টাকা আসতো।স্কুল লাইফে একটা কাহিনী আমার মনে পড়ে। যে বছর ১০ম শ্রেনণীতে পড়ি আমি। সকালে স্কুলের সামনে যায়। ক্লাসে গিয়ে বইগুলো রাখি। একটু বসি ক্লাসে বাইরে থেকে একটা চিৎকার শুনে। শুনে দৌড়ে যাই আমি যে দেখি আমাদের প্রধান শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখন আমি আর আমার একটা বন্ধু মিলে আর দুইজন ম্যাডাম মিলে স্যার কে ধরে একটা খাটে সুয়াই। স্যার অনেক অসুস্থ ছিল। আমি আর একটা ম্যাডাম মিলে স্যার কে পানি পান করায় ।। পানি পান করার সাথে সাথে স্যার মোখ একটা ভেঙ্গান দিল। হাত পা ছেড়ে দিল। সবাই কেদে দিলো। স্যারের জন্য আমার খুব কষ্ট হলো।দুই জন শিক্ষক আর আমি আর বন্ধু মিলে স্যার কে নিয়ে গেলাম চাঁদপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে। সেখান কার ডাক্তার বলল।স্যারআর জীবিত নেই। জীবনের প্রথম চোখের সামনে একটা মানুষের মৃত্যু দেখলাম। স্যারের জন্য অনেক কষ্ট হল। এবং স্যারের জন্য মন থেকে দোয়া করলাম। আল্লাহ তুমি স্যারকে জান্নাতবাসি কইরো। আমিন।।।
প্রেম♥️♥️
আমার জীবনে ও প্রেম আসছিলো,,তখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি, আমার বন্ধু প্রেম করতো, তার সাথে মাঝে মাঝে আমি মজা করতাম। তার সাথে অনেক দুষ্টামি করতাম। আমার দুষ্টামিতে টিকতে না পেরে। ও আর ওর গার্লফ্রেন্ড মিলে। আমার জন্য একটা মেয়ে ঠিক করে। মেয়েকে গিয়ে বলে আমি তাকে পছন্দ করি। আর আমাকে এসে বলে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে। এটা বলে ওরা ক্লাসে আমার সাথে অনেক মজা করে। প্রতিদিন আমাকে মেয়েটা কথা বলে। তারপর আমি মেয়েটাকে দেখি। দেখার পর মেয়েটাকে আমার ভালো লাগে। তখন আমি হ্যা বলে দেই। তারপর মেয়েটার সাথে কথা বলি। তারপর চলে আমাদের তিন বছরের সম্পর্ক। মেয়েটির ফ্যামিলি থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছিল প্রচুর। তখন আমার ফ্যামিলিতে আমার ছোট বোন এবং দরিদ্রতার কারনে পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ ছিলো না। তাই আমি আমার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারিনি । আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। ফ্যামিলির জন্য ছেড়ে দিলাম মেয়েটিকে। তখন আমি মাত্র কাজ শিখতেছি। তার জন্য মেয়েটিকে আর পাওয়া হলো না।সে আমাকে প্রচুর ভালোবাসতো।আমি ও তাকে ভালোবাসতাম। সেই ক্ষত এখনো মাঝে মাঝে ব্যথা করে।।।।। অনেক কষ্ট পেয়েছে যা বলে বুঝাতে পারব না তাকে হারানোর জন্য।
কাজের জন্য ঢাকায় আসা🚎🚎
২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষার শেষ হওয়ার, তিন দিনের মাথায় আমি ঢাকায় আসি কাজের জন্য।আমি এসির কাজ শিখার জন্য আসি। প্রথম দিন মালিক ওস্তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ওস্তাদ কাজের জন্য সাইডে নিয়ে যায় আমাকে। ভালো ভালো কাজগুলো ওস্তাদে করে, খারাপ কাজগুলো আমাকে দিয়ে করায়। ওস্তাদ প্রচুর পরিমাণ সিগারেট খাই তো।তা আবার আমাকে দিয়ে কিনায়তো, এটা আমার মোটেও পছন্দ হইতো না। কারণ আমি সিগারেটের ধোয়া সহ্য করতে পারিনা। ওস্তাদ আমার সামনেই সিগারেটের দোয়া গুলো আমার সামনেই ছেডে দিত। তার জন্য প্রচুর মন খারাপ হইত কি আর করবো ওস্তাদ তো ওস্তাদই। আর ওস্তাদের কথা না শুনলে জারিত আছে ওস্তাদের। প্রতিদিনই বকাবকি গালাগালির শুনতে হয়।একদিন সাইডে গেছিলাম কাজ করার জন্য, কাজ করতে গিয়ে কাস্টমারের গ্লাস ভেঙে ফেলি,তার জন্য ওস্তাদের হাতে মার খেতে হয়েছে। কি জে মাইর খাইছি বলে প্রকাশ করতে পারবো না।সেদিন মনে হয়েছে বাড়িতে চলে যায়। তারপর মনে মনে ভাবলাম আমার বাবার আর কেউ নাই আমি একা।কাজ আমাকে শিখতে হবে। আমি শিখে ছাড়বো এই কাজটাকে। এদিকে ওস্তাদ তো মূল কাজ তো শিখায় না। এভাবেই কাটে কিছুদিন । সম্পূর্ণ শিখার আগ পর্যন্ত আমি একটা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি । কবে আমি কাজ শিখব কবে আমি ওস্তাদ হব। ক্ষুধার কথা কি
আর বলব রে ভাই। গ্রামে থেকে ঢাকায় আসছি টাকা না নিয়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রচুর ক্ষুধা লাগত। নিজের কাছে টাকা নাই পরিচিত কেউ ছিলনা। কত কষ্ট যে দিন কাটছে প্রতিটা দিন যা বলে বুঝাতে পারব না। একদিন নতুন একটা এসি ফিটিং করালাম। ওখানে কিছু বকশিশ পাই। ওস্তাদেরা সব টাকা ভাগ করে নিয়ে সামান্য কিছু টাকা আমি পাই এবং বড় দুলা ভাই কিছু টাকা দেয়। ওই টাকা দিয়ে মুড়ি কিনে সন্ধ্যায় মাঝেমধ্যে মুড়ি খাইতাম। এভাবেই প্রথম একটা বছর আমার প্রচুর কষ্ট হয়। তারপর কিছু কাজ শিখি।কাজ শিখতে সময় লেগে গেল চার বছর। আমার প্রতি আমার ওস্তাদেরা যে অত্যাচার করছে। তার কিছুটাই আমি আমার হেল্পার সাথে ব্যবহার করিনা। তাদেরকে আমি সুন্দর করে কাজটা বলে দেই। না পারলে বুঝাই আবার। তাদের হাতে কাজ তুলে দেই। কারণ আমি বুঝি কাজ শিখতে কত কষ্ট। তাদেরকে কষ্ট বুঝতে দিই না। তাদের মাঝে আমি একজন ভাল মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই। আমি এখন ঢাকায় আছি এবং এসির কাজের সাথে যুক্ত আছি। এখন আমারে স্যার স্বপ্ন দেখাইছে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। তার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি.
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭০
Date:- ২৪/০২/২০২১
✍️✍️নামঃবোরহান
✍️✍️ব্যাচঃ১২
✍️✍️রেজিঃ৩৯২৮৫
✍️✍️জেলাঃচাঁদপুর
✍️✍️বর্তমানঃতেজগঁও
🛠️🔧কাজকরিঃ এসি টেকনিশিয়ান
☎️☎️মোবাইলঃ 01682225028