আল্লাহর রহমতে গত তিন বছর এ ভালোই বিজনেস এবং মানুষের কর্ম হয়েছে
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহা মাত উল্লাহ ।
সালাম জানাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর রওযা মোবারক এ ।
সালাম দোয়া ও ভালোবাসা জানাই আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে ।
নিজের জীবনের বাস্তব গল্প
মধ্য বিত্ত পরিবারে জন্ম আমার , পরিবারে সদস্য সংখ্যা ছিল ৬ জন, বাবা, মা, বড় ভাই, আমি, ছোট দুই বোন এই ছয়জন মিলে আমাদের পরিবার ছিল ।
মনে হতে পারে আমার দাদা, দাদী, চাচা জেঠা ও ফুফু দের কথা আসছে না কেন,
আমার দাদির যখন বিয়ে হয় তখন উনার বয়স বার বছর , বিয়ের দুই বছর পরে আমার বাবার জন্ম হয়, আমার বাবার বয়স যখন তিন বছর তখন আমার দাদা মারা যায় , তখন আমার সদ্য বিধবা দাদির বয়স সতেরো বছর ।
আমার দাদি সতেরো বছর বয়সী সদ্য বিধবা রমনী ওনার বাবার বাড়ি চলে যায়, সাথে ওনার ছেলে, মানে আমার বাবাকে নিয়ে যায় ।
আমার বাবার শিশু, কিশোর বয়স ওনার নানার বাড়িতে কাটে, উনি উনার নানা, নানী ও তখন অবিবাহিত খালার কোলে পিঠে বর হয় ।
আমার দাদি উনারা বাবার বাড়ি দুই বছর থাকার পরে উনার বাবা-মা উনাকে আবার বিয়ে দেয় , আমার বাবা তিন বছর বয়সেে বাবা হারায়, এবং মায়ের আবার বিয়ে হওয়ার কারণে পাঁচ বছর বয়সে মা হারান ।
আমার বাবা নানার কাছে বড় হয়, কিন্তু নানা নিজের ছেলে, মেয়ের যেভাবে যত্ন নিতেন এই এতিম অসহায় নাতির সেই ভাবে যত্ন নিতে চায় নাই , আমার বাবা নানার বাড়িতে কৃষি কাজ এবং পড়াশোনা করতেন , উনি কখনো ঈদের আনন্দ , ঈদের নতুন জামা কাপড় পরতে পারে নাই।
বাবার বিয়ে ঃ আমার বাবা যখন বিয়ের বয়স হয়
তখন আমার মরহুম দাদার দুই জন ভাই ও উনার নানার সম্মতিতে আমার বাবাকে উনার জেঠাতো বোনকে বিয়ে করানো হয়, উনি (আমার বাবা) নতুন বউ নিয়ে উনার নানার বাড়ি নিয়ে যায় ।
আমার দাদা যখন মারা যায়, তখন পাকিস্তান সরকারের আইন অনুযায়ী উনি (আমার বাবা) না মোহর হয় (দাদার বিশাল সম্পত্তির উপরে অধিকার হারায়) এটা পাকিস্তান সরকারের আইন ছিল, পরে আইন পরিবর্তন হয়।
আমার বাবা সম্পত্তির অধিকার হারানোর কারণে উনার দাদা মৃত্যুর পূর্বে উনার এতিম অসহায় নাতির জন্য (আমার বাবার) ৩০০ শতাংশ যায়গা জমি হেবা নামা(সাফ কবলা) রেজিস্ট্রি করে দিয়ে জান, এবং মৃত্যুর সময় এই সম্পত্তির দলিল উনার বড় ছেলের কাছে রেখে যান।
বাবার বিয়ের আসল কারণ ঃ
উনার সম্পত্তির মালিকানার কারণে উনার দুই জেঠাই উনাদের মেয়ে বিয়ে দিতে চেষ্টা করেন, পরে উনার বড় জেঠা (আমার নানা) মেয়ে বিয়ে দিতে সফল হোন ।
বাবার চাকরি জীবন ঃ আমার বাবা বিয়ে করার পরে ছোট ছোট বিজনেস করেন, কিন্তু সফলতা পায়না , পরে চট্টগ্রাম জেলার বাড়বকুণ্ড আর, আর জুট (রাঁদা রানি) মিলে সহকারী টেকনিশিয়ান হিসেবে দায়িত্ব নেয় , চাকরি করতে থাকে, এবং একসময় হেড টেকনিশিয়ান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় উনাকে ।
চাকরি জীবন শুরু করার পরে আমার মাকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন ও বসবাস করতে থাকেন।
সম্পত্তি অর্জন ঃ আমার বাবা চাকরি জীবন ভীষণ পরিশ্রমী মানুষ ছিলন, উনি সপ্তাহে ছয়দিন চাকরি করে প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসতেন,
এবং কৃষি কাজ করতেন, আমার মা ও খুবই সহযোগিতা করতেন, বাবা শুক্রবার নিজেদের জমি, জমা নিজে এবং লোকজন নিয়ে চাষাবাদ ও পশুপালন করতেন, সেই কারণে কিছু সম্পদ নিজে অর্জন করতে সমর্থ হয় ।
আমার বাবা নিজেকে বাড়িতে চোট বেলা থেকে না থাকার কারণে উনার সম্পত্তি (যাহা সাফ কবলা রেজিস্ট্রিকৃত) জমি জমা উনার বড় দুই জেঠা সমান ভাবে ভোগ দখল করেন, যাহা উনারা দীর্ঘদিন চাষাবাদ করেন, এই নিয়ে অনেক যামেলা হয়।
আমার দাদারা তিন ভাই , ১ নং আমার নানা৷ ২ নং মেজো নানা/দাদা
৩ নং আমার দাদা
আমাদের সম্পত্তি নিয়ে অনেক অনেক ঝামেলা হয়, ততদিনে আমরা চারজন ভাই বোন বড় হইতে থাকি, সংসার কিছু উন্নত হয়, বাবা-মায়ের পরিশ্রমের ফলে , আমার নানার মৃত্যুর পরে আমার বাবা চিন্তা করলো, সম্পত্তির যামেলা থাকতেচে, আর আমাদের মুরুব্বিরা দুনিয়া ছেড়ে চলে যাইতেছে,
পরে আমার বাবার অনেক ছাড় দেওয়ার কারণে , আমাদের সম্পত্তির ঝামেলা আপোষ মিমাংসা হয়।
আমাদের নতুন বাড়ি ঃ মিমাংসা হওয়ার পরে আমারা ১৯৯৩ ইং সনে নতুন বাড়ি করি, ও সুখ শান্তিতে বসবাস করতে থাকি ।
বাবার চাকরি জীবন শেষ হওয়া ঃ আর আর জুট মিলে স্হানীয়, অ স্হানীয় ঝামেলা লেগে যায় , এবং তার উপর রাজনৈতিক নেতাদের দলাদলি এসব নিয়ে সবসময় টেনশনে থাকতাম পরিবারের সবাই, তাই নিজের ইচ্ছায় চাকরি চেড়ে চলে আসেন।
বাবা চাকরি চাড়ার পরে আমাদের ছয়জনের ভরনপোষণ ও পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পরে,
বাবা-মা আমাদের নিয়ে টেনশনে থাকেন, আর দিন-রাত পরিশ্রম করতে থাকেন।
১৯৯৫ ইং সনে আমার বড় ভাই ঢাকায় চাকরি জীবন শুরু করে, সামান্য আয় বাড়িতে তেমন টাকা পয়সা পাঠাতে পারে না ।
আমার চাকরি জীবন ঃ ১৯৯৬ ইং সনে এইস এস সি পাস করি, পাস করার পরে আমাদের এক আত্মীয়র প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান এ চাকরি জীবন শুরু করি, নতুন চাকরি কঠিন জীবন, মেনে নিতে হবে,
মেনে নিলাম, মন প্রান দিয়ে কাজ করতে থাকি ।
সবার থেকে আমার ভিন্নতা ঃ সবাই অফিস করে সময় দেখে, সবাই সপ্তায়, সপ্তায় বাড়ি যায় ,
আর আমি সময় দেখিনা কাজ দেখি, বাড়ি যাই তিন /চার মাস পরে , আমার চিন্তা ভাবনা চিল কাজ শিখা, আমি কাজের অভিজ্ঞতায় আমার সিনিয়র কয়েকজন থেকে ভালো পজিশন এ আমি , যতসব নতুন এবং ঝামেলা পূর্ণ কাজ আমার দায়িত্বে আসতো, আমি এসব ঝামেলা সানন্দে গ্রহন করতে থাকি, এসব এনজয় করি।
আমার চাকরির প্রথম বেতন ঃ প্রতি মাসে ১০০০(এক হাজার) টাকা বেতন ছিল আমার, এর মধ্যে থাকা অফিসের ছিল , খাওয়া নিজের ছিল , এই টাকার থেকে বাছিয়ে বাবা-মা কে টাকা পাঠাতাম ।
আমার প্রথম চাকরি জীবনের খাওয়ার মেনু ঃ
সকাল বেলা ভাত+আলুর বত্তা+ডাল ফ্রী =৫ টাকা
দুপুর বেলা ভাত+ মাছ +ডাল ফ্রী = ১৪ টাকা
রাতের বেলা ভাত +সবজি +ডাল ফ্রী =১০টাকা
দৈনিক মোট ৫ + ১৪ + ১০ = ২৯টাকা
যখন বাড়িতে ছিলাম এইরকম খাইনি কখনো, বাবা মা আছে সব চিন্তা তাদের, যেখান থেকে আসি ঘরে আসলে খাবার রেডি, মায়ের হাতের কত রকমের খাবার, তবে শহরে কি খাবার খাই
কখনো বাড়িতে বলিনা, যা আছে আমার তখনকার ইনকাম অনুযায়ী তাতে মানিয়ে নিয়ে ছিলাম, এসব আমার পরিবারের কেউ এখনো জানেনা , আর আমি মনে মনে চিন্তা ভাবনা করতাম কত মানুষ খাবার পায়না, আমিতো খাইতেছি , মেনু যা-ই হোক, মজা কম বেশি হোক ।
আমার বিজনেস লাইফ ঃ ১৯৯৬ সাল হইতে চাকরীর পাশাপাশি কিছু করার মানসিকতা ছিল আমার সবসময় , তিনবছর শুধু চাকরি করছি, শিখতে চেষ্টা করেছি, তিন বছর পর থেকে অল্প কিছু পারটাইম বিজনেস করি, কিছুটা সুফল পাই, পরিবারে ছোট দুই জন বোন লেখা পড়া রে তাদের দায়িত্ব নিই, বাড়িতে ভালোই টাকা পাঠাই, নিজের বিজনেসের জন্য কিছুটা মূলধন হয়।
চাকরি করা অবস্থায় নিজের বিজনেস চালু করি,
বিজনেস একটু ভালো যখন চলে তখন চাকরি জীবন ছেড়ে পুল টাইম বিজনেসে সময় দিতে থাকি,এবং সফল হই অনেকটা।
বিজনেস যেমন ভালো হয়,তেমন মন্দ ও হয়, বিজনেস ভালো চলতেছে এই অবস্থায় একজনকে ওয়ার্কিং পাটনার করে একটা দোকান দিই, এবং ঐ লোক পরে সত ছিল না, সে কিছু টাকা তসরুপ করে , যাই হোক ঐ অনেক টাকা লোকসান দিয়ে ছেড়ে চলে আসি । এর মধ্যে আমার আগের দোকানের মালিক তার যায়গা বিক্রি করে দেয়, নতুন মালিক কিছু দিন সময় দিয়ে পরে দোকান ভেঙে ফেলে, এবং ছয়তলা বাড়ি তৈরী করে , যার ফলে আমার দুটি দোকানই
খতিগসত হয়।
আমার বিয়ে ঃ ১৯৯৬ সাল হইতে চাকরী করি, এগারো বছর পরে বিজনেস এ সময় দেয়ার জন্য চাকরি ছেড়ে দিই, ২০০৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিজনেসে মনোনিবেশ করি, ২০০৮ সালের ২ রা মার্চ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই, এবং তখন খুব ভালো চলছে, বিয়ে অনেক ধুমধামে সম্পুর্ন করি ।
আমার ছেলের জন্ম ঃ
আমার বিয়ের পরে ২০০৯ সালে আমার ছেলে ফাইয়াজ ইকবাল মাহির তার মায়ের কোল আলো করে জন্ম গ্রহন করে ।
আমার মেয়ের জন্ম ঃ
২০১০ সালে আমার মেয়ে ফৌজিয়া জান্নাত মাইসা জন্ম গ্রহন করে ।
আমার পরিবার চট্টগ্রাম বাসায় নেওয়া ঃ
২০১৩ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম বাসা নিয়ে আমার বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে উঠি, এবং ডিসেম্বরে ছেলে মেয়ে দের কে জি স্কুলে ভর্তি করে দিই ।
দোকান দুটিতে লোকসান হওয়া ঃ
বাড়িতে বাবা মা ও শহরে বউ ছেলে মেয়ে সবাই ভালো ই আছে, সবার দেখা শুনা আমি করি, এর মধ্যে আমার দুই টাই দোকান লোকসান হলো, কিছুটা টেনশনে থাকি আমি, পরিবার চট্টগ্রাম থাকতে পারে কিনা, ছেলে মেয়ে পড়া লেখার খরছ বহন করতে পারবো কিনা ।
আবার শুরু করেছি নতুন লড়াই , চট্টগ্রাম বিজনেস আবার যতটা পারি ঠিক করলাম, খরছ বেড়ে গেছে , নতুন করে সিলোনীয়া বাজার ফেনী বিজনেস আরেকটা শুরু করেছি , এইটা হলো নারিকেল আরত, ভালোই চলিতেছে এই বিজনেস ।
নারিকেল আড়তদারি ভালোই চলে , ইনকাম হয় লোক নিয়োগ করি কয়েকজন ওদের বেতন, নিজের খরছ সব চলে , এরমধ্যে কিছু টাকা বাকি গেল , ুই বাকি টাকা আসেনা , এই টাকা না আসলে তো লস হবে , এই চিন্তা ভাবনা মনের মধ্যে, ১ম বছর, ২য় বছর , ৩য় বছর হিসাব করলে অনাদায়ী পাওনার কারণে লোকসান দেখা যায় ,
বিজনেস ছেড়ে দিবো কিনা এই ভাবনায় ঃ
বিজনেস চালু রাকলে লোকসান হবে , ছেড়ে দিলে লোকজন বেকার হয়ে যাবে, এসব চিন্তা ভাবনা চলে কয়েক দিন , তারপর সাহস করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও নতুন করে ইনভেস্ট করি, আরও অনেক বেশি মাল কিনতে থাকি, নারিকেলের চোপড়ার মেশিন বসাই ।
আল্লাহর রহমতে গত তিন বছর এ ভালোই বিজনেস এবং মানুষের কর্ম হয়েছে , আমার এলাকার কিছু লোক আমার এখানে কাজ করে ওদের পরিবার নিয়ে ভালো আছে, আর ওদের পরিবারের লোকজন আমার জন্য দোয়া করে।
আমি কোথায় সফলতা খুঁজে পাই ঃ
আমি বিজনেস করে দুই বোনের পড়ালেখা, বিবাহ , ওদের বাচ্চা হওয়ার খরছ, বাচ্চাদের সাতটা সোনার চেইন দেওয়া, আমার বাবা দুই বার হজে যাওয়া, মা একবার হজে যাওয়া, বাইয়ের বিয়ে , নিজের বিয়ে করা, বড় ভাইয়ের সাউথ আফ্রিকা যাওয়া ছেলে মেয়ে দের জন্ম নাম রাখা, পড়াশুনার খরচ , বাড়িতে বিল্ডিং জরা, কিছু জমি কিনা, সদকা করা, আত্মাীয় দের যাবতীয় ভালো মন্দের সাথে থাকতে পারা, বাবা মায়ের সকল চাহিদা মিটাতে পারা,
সমাজের মধ্যে বাবা মা এর মুখ উজ্জ্বল করা ।
পরিশেষে বলবো আমি চাকরি করে আজকের এই যায়গায় আশা কোন ভাবেই সম্ভব ছিলো বলে আমার মনে হয় না।
প্রিয়৷ ভাই ও বোনেরা এটা আমার নিজের জীবনের বাস্তব কাহিনী, তবে এর অনেকটা আমার পরিবার এর কেউ জানেনা / আমি জানতে দিইনি , আমার বাবা যে রকম আমাদের জন্য অনেক কিছু হজম করেছেন, আমি এসব এতদিন হজম করেছি, আজকেই প্রথম লিখনির মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি, আপনারা লিখাটা পড়লে আমার কষ্ট সার্থক হবে।
,
সবার কাছে আমার বাবা ও মায়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া ্কামনা করি ।
সবার দীর্ঘায়ু ও মংগল কামনা করি ।
সবার দোয়া ভালোবাসা সহায়তা ও সমথর্ন কামনা করে আজকের মত বিদায় নিলাম ।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭১
Date:- ২৫/০২/২০২১
জে এম ফারুক
৯ম ৪১০৮০ এ পজিটিভ
দাগনভুইয়া ফেনী