হ্যাঁ অনেকটা অসহায়। অনেকটা এলোমেলো। অনেকটা যাযাবরের মত পথ চলেছি....
যখন আমি এই পৃথিবীর বুকে জন্ম নিলাম, সেই সময়ের স্মৃতি গুলো আমার কিছুই মনে নেই।।।
আর না থাকাটাই স্বাভাবিক।।।।।
কারণ তখন আমি ছোট্ট শিশু।।।
আমার বাবা-মায়ের বহু প্রতীক্ষিত আমি।।।
জন্ম থেকে শৈশব-কৈশোর লম্বা সময় পার করেছি।।
জীবনের অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার করে যখন একটু একটু করে বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে পথ চলতে শিখেছি।
নিজেকে একটু একটু করে জানতে শিখেছি।
সবেমাত্র যেন মনে হচ্ছিল দাঁড়াতে শিখেছি।
ঠিক সেই মুহুর্তে এসে অজানা এক কালবৈশাখী ঝড় কেমন দুমড়ে-মুচড়ে দেয় আমার জীবন টাকে ।।।
প্রতিবারই আশার আলো জ্বালানোর পরে কেমন যেন দমকা হওয়া সেটাকে নিভিয়ে দেয়।।
কিন্তু এই দমকা হওয়া টা আমার কাছে একেবারেই অপরিচিত ছিল।।।।।।
💞কষ্ট জীবনে সবাই করে, আমিও করেছি। ভালবেসেছি।
ভালবেসে নিজের সাজানো সব কিছুকে তুচ্ছ করে আবার একা পথ চলেছি।।
সেই আমি কেমন যেন হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে যখন রাতে বিছানায় যেতাম, মনে হতো আমি বুঝি একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছি।।।
কিন্তু শেষটা যে কোথা থেকে হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলাম না।।
নিজের জীবনের চাওয়া পাওয়া আশা ভালোবাসা সবকিছু হারিয়ে যখন আমি আমার কাজের ক্ষেত্রকে সম্বল করে বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
ঠিক তখনই হঠাৎ পিঠে ব্যথা অনুভব করি।
মারাত্মক ব্যথা।।
অনেক ডাক্তার দেখাই।।।
মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা খুব।।।
বলতে গেলে ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে কোন ডাক্তার বাদ দিই নি।।।
আর ডাক্তার, টেস্ট, রিপোর্ট এসব করতে করতে নিজের জমানো সব কিছু যেন এক এক করে একেবারে শূন্য তে নেমে আসলো।।।
তখন খুবই কষ্ট হতো। হাসতে চাইলে হাসতে পারতাম না।
🙃🙃তার থেকে বড় কথা ধীরে ধীরে নিজের শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো।।
ব্যাথাটা খুব বেশি ছিল।।
কিন্তু কেনো জনি ঘার থেকে মাথা একেবারেই উঁচু করতে পারতাম না।।।।।
🙂🙂 করতে পারতাম না কোন কাজ।।
🙂🙂 একটা সবাই এমন হয়ে গেলাম যে,একা গোসল করতে পারতাম না।
🙂🙂গোসল করে নিজের বাথরুমে কাপড় টা ধরতে পারতাম না।
😀😀রান্না করতে পারতাম না।।।
ওই দিন গুলোতে খুব সাহায্য করেছে আমাকে আমি যে বাসায় থাকতাম সেই বাসার নিচ তলার এক ভাড়াটিয়া আপু।।।
তার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েটা প্রতিবন্ধী কথা বলতে পারতোনা ঠিকমত।।
আমি সেই মেয়েটাকে কথা শেখানোর জন্য একটা বছর চেষ্টা করেছি।।
আর সেই চেষ্টার ফলে ও ধীরে ধীরে মা-বাবা, আল্লাহ, এক দুই বলা শিখেছে।। এবং অনেকটা নরমাল পজিশনে চলে এসেছে।।
শুধু কথা শেখানোর জন্য চেষ্টা করেছি সেটাই না। তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য আমি এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করেছি।।
মেয়েটার নাম ছিল সুমাইয়া।।
আজও মেয়েটাকে খুব মিস করি।।
যাই হোক ওর আম্মা আমাকে খুব সাহায্য করত।। আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়লাম বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না। আমাকে রান্না করে দেয়া। আমি গোসল করে আসার পরে আমার কাপড়টা ধুয়ে দেয়া।। আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া।। অনেক সাহায্য করেছে।।।
কোনদিনও আমি তারে সাহায্য কথা ভুলতে পারবোনা।।
💝💝তখন মনে হতো নিঃস্বার্থ ভাবে কাউকে ভালবাসলে, কারো জন্য ভালো কিছু করলে, সেই ভালবাসার ;ভাল কাজের প্রতিদান কোনো না কোনোভাবে থিকই পাওয়া যায়।।।।
একটা পর্যায়ে যখন নিজের আর্থিক অবস্থা একেবারে শূন্যের কোঠায় চলে আসলো।।
সেই সঙ্গে আমার চাকরি ও নাই অবস্থায়।।
অফিস থেকে আমাকে জানানো হলো আমাকে দুই মাস ছুটি দিচ্ছে। ছুটির পরে আমি আবার জয়েন করতে পারব। কিন্তু আমার চিকিৎসাতে লম্বা সময় লেগে গেল।।
ঢাকাতেই আমার এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতে করতে সময় চলে গেল প্রায় তিন মাস।।। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়ি।। সেই অসুস্থতার ধীরে ধীরে ২০২৫ সালের মার্চে এসে অপারেশন হল।।
যখন আমি একেবারে আর্থিক অবস্থা 0 অবস্থানে। তখন আমি চলে গেলাম গ্রামের বাড়িতে।
ঢাকার চাকরি, টিউশন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে গ্রামে যাওয়ার পর আমার মা, বাবা, ভাই, বোন, নানি, মামা সবার মুখের অবস্থা দেখে বুঝতাম তারা আমাকে নিয়ে ঠিক কতটুকু দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
🙄🙄🙄 আসলে সব থেকে বড় কথা হচ্ছে কোন ডাক্তার আমার রোগ ধরতে পারছিল না।। একের পর এক টেস্ট এটা-সেটা চলতেছিল।
আমি নিজেও খুব অস্বস্তি মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম। ডাক্তারের রোগ ধরতে না পারায় আমি নিজেই ভীষণ ভয় এর মধ্যে সময়ের কাজ করছিলাম।।।
ডাক্তার, কবিরাজ, হুজুর সবকিছুই হল।।।
কিন্তু ফলাফল শুন্য🙄🙄🙄
টেস্ট করতে করতে আমি বিরক্ত।
এম আর আই করা হলো তাতে প্রবলেম ধরা পরলো না।।
তখন সবাই খুব ভয় পড়ে গেল।।
এর মধ্যে এই ডাক্তার সেই ডাক্তার করতে করতে পরিবারের সবাই একরকম অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছিল।।
কোন কুল।কিনারা হচ্ছিল না।।
🤔🤔🤔🤔🤔
সবারই ভয়ের একটাই কারণ ছিল যে,,, রোগ ধরা পড়ছিল না।।।
ফরিদপুর থেকে ঢাকা।
ঢাকা থেকে ফরিদপুর।।
ইবনে সিনা,
অ্যাপোলো
সিএমএইচ
ল্যাবএইড।।।।
কোন কিছুই বাদ দেয়নি।।।।
আসল।সমস্যা।বোঝার জন্য ডাক্তার দের বোর্ড মিটিং হল।।
শেষ চেষ্ট হিসেবে আবারও MRI করা হল।।
সেই দিনের কথা মনে পরলে আজ ও আমি।কান্না।করি।।।টানা ১ঘন্টা। ৫৭ মিনিট আমি এম আর আই মেশিনের মধ্যে।।।।
এরপর পুনরায় ডাক্তার এর মিটিং হল।।
খুব শর্ট নোটিশ।। হঠাৎ করেই ডক্টর বললেন আমার অপারেশন করতে হবে।।।
তখন পর্যন্ত আমার ব্যথাটা মারাত্নক ছিল।।
এবারে কিছু ধরা না পড়ায় ডাক্তার ও চিন্তিত ছিলেন অপারেশন টা কোথায় করবেন? কিসের করবেন? এটা নিয়ে তারা নিজেরাই অনেক কনফিউশন ছিল.
।।।।
যাই হোক আবারও কিছু পরিক্ষা করে কিছু একটা তারা আন্দাজ করলেন। সেই থেকেই অপারেশন।।
সবার প্রথমে আমার শরীরের মধ্যে ক্যান্সারের জীবানু সৃষ্টি হয়েছে কিনা এই রিপোর্টের জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করার পরে ডাক্তার বললেন আর একটা মুহূর্ত অপেক্ষা করা যাবে না।।।
তাতে হয়তো বা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।।
কিন্তু অপারেশনের মাধ্যমে আমি বেচে থাকব তারও গ্যারান্টি নেই।।
আমার পরিবার তখন খুব দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে।।। অপারেশন করবে নাকি করবে না।।।
অপারেশনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমি জানতাম আমি খুব অল্প কয়েকদিনের অতিথি এই পৃথিবীতে।।
আর হয়তো বেশি দিন বাঁচবো না।।
সত্যি বলতে তখন কাছের মানুষদের কে একেবারে কাজ ছাড়া করতে ইচ্ছা করতনা।।
পাড়া-প্রতিবেশী যখন আসত আমাকে দেখতে। তাদের কাছে মাফ চেয়েছি।।
আমি সিওর ছিলাম আল্লাহ আমার জিবন প্রদিপ এখানেই স্তব্ধ করে দিবেন।।
😶 যখন আমাকে অপারেশনের জন্য অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও আমি জানতাম সাময়িক সান্তনা মাত্র।।
আমার খুব মনে পরে যখন আমাকে অপারেশনের জন্য হসপিটালে এডমিট করা হয়, জীবনের একটা সময় যে মানুষটাকে নিজের সবকিছু ভাবতাম।। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলাম।।
😶অথচ কথা বলতে তেমন কিছুই না।
হয়তো এটাই বলতে চেয়েছিলাম।
মরে তো যাব যদি কোন ভুল করে থাকি মাফ করে দিও।।।
সে কথাটাও বলতে পারেনি। তবে আজকে বুঝি একটা মানুষ কতটা নির্দয় হলে একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ কেউ এতটা নির্মম ভাবে কষ্ট দিতে পারে।।।
দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা অপারেশনের পর যখন আমাকে অপারেশন রুম থেকে বের করা হয়।
আমি নিশ্চিত ছিলাম ব্যথা হতো পিঠে।।হয়তো পিঠ্রি কাটা ভহেড়া হবে। কিন্তু না অপারেশনের জন্য আমার গলার সাইডে কাটা হয়।।।। ঘারের পাশে।।
একচুয়ালি আমার ব্রেনের নার্ভ গুলোর খুব কাছে এ্যাবসেন্স ছিল।।। যার বিষাক্ত জীবানু আমার শরীরের প্রতিটা অংশে ছড়িয়ে গিয়েছিল।।।
অপারেশন করে ভেতর থেকে যে পরিমান পুচ বের করা হয় যা দেখে সবাই শিউরে উঠেছিল।।
যদিও আমার দেখা হয়নি।।
অপারেশনের পর সেলাই দেয়া হয়না। দুইটা মাস সেলাই ছাড়া এই জায়গাটাতে ড্রেসিং করতেন ডাক্তার। অসহ্য যন্ত্রণা পেয়েছি।
এরপর ধরা পড়ে আমার টিবি হয়েছে।।
অনেকেই তখন আমার কাছে আসত না।।
অনেক মানুষ আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।
কেউ লজ্জায়। কেউ ভয়ে।।।।
অথচ আমার টিবি হয়েছিল আমার শরীরের বিষাক্ত রক্তকণিকার জন্য।। যাইহোক ২০১৭ পর্যন্ত আমার ট্রিটমেন্ট চলে।।।
আল্লাহর রহমতে ২০১৭ মার্চ থেকে তে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ।।।
💝অসুস্থতা টানাপোড়ন এসবের মাঝেও আমি আমার ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ার শেষ করেছি।।
💝ক্লাস করেছি পরীক্ষা দিয়েছি।।
আমি ২০১৫ তে আবার নতুন করে চাকরিতে জয়েন করেছি।
💝মার্চে অপারেশন হয় আর আমি নতুন করে চাকরিতে জয়েন করি সেপ্টেম্বর এ।।
চাকরি শুরু করে এই কাজের মধ্যে ডুবে পরি।
কিন্তু যে সময়টা পার করে এসেছি।
অনেককে চিনেছি।
অনেককে জেনেছি।
🦋নিজের শক্ত হতে পেরেছি,
🦋যে আমি ভাবি নি যে বেঁচে থাকবো সেই আমি যেন দ্বিতীয়বার জন্ম নিয়েছি।।
🦋যে আমি ভাবতাম, স্বপ্ন দেখতাম, হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছুকে ফিরে পাওয়ার।।
💝💝💝সেই আমি কোনকিছুকেই আর ফিরে পেতে চাই না। হারিয়ে যাওয়া কোনো কিছুকেই আর আঁকড়ে ধরতে চাই না।
অনেক কিছু শিখে নিলাম এই কয়েকটা মাসে।।
চললাম নিজের মতো করে।।
হ্যাঁ অনেকটা অসহায়।
অনেকটা এলোমেলো।
অনেকটা যাযাবরের মত পথ চলেছি।।
সুস্থ হয়ে ফিরে এসে ঢাকাতে আবার নিজের অবস্থান তৈরি করতে অনেকটা সময় লেগে গিয়েছে।
💞নতুন করে চাকরি খুঁজে পাওয়া।
💞নতুন করে টিউশন খুঁজে পাওয়া।
💞এর বাইরে নিজেকে নিয়ে ভাবতে।
💞নিজের কাজের পরিধি তৈরি করতে।
আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমার প্রতিটা কষ্টের পিছনে একটা উপন্যাস ও হার মেনে যাবে।।
একটু একটু করে পথ চলতে থেমে যাচ্ছিলাম। আবার চলছিলাম। এমনি করে করে হঠাৎ করে একদিন খুঁজে পেলাম নিজের বলার মত একটা গল্প।।।
💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐💐
🌺এখন আমি সত্যি ভাবি আর হোঁচট আমি খাব না।
🌺 এখান আমি সত্যি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী আর পিছনে ফিরে তাকাবো না কখনো।।
🌺এখন আমি সত্যিই অনেক বেশি সাহসী কোন অতীত আমাকে আর একটু দুর্বল করতে পারে না।
🌺 এখন আমি সত্যি অনেক বেশি চঞ্চল যাইহোক না বেঁচে থাকার জন্য অনেক প্রেরনা আমার সামনে দাঁড়িয়ে।।।
সব সময় ভাবি আর কয়েকটি দিন আগে যদি এই ভালো মানুষের মাঝে নিজেকে যুক্ত করতে পারতাম।
যাইহোক সবকিছুর পরে আল্লাহ মহান তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করি।? তিনি আছেন বলেই আজ মানুষ সব হারিয়েও কিছু একটা অবলম্বন করে বেঁচে থাকার সাহস পায়।।।।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭১
Date:- ২৫/০২/২০২১
ফারজানা খানম জিতু
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার
রেজিষ্ট্রেশন ১৩৮১৬
১০ম ব্যাচ
ক্যান্টনমেন্ট থানা। গুলশান জোন
ফরিদপুর জেলা।
www.facebook.com/rosepetalsbd
www.facebook.com/hasnahenacollection