কিছু কিছু কষ্টের কথা কখনও বলা যায় না, আবার সয্যও করা যায়
মা বাবা দুই বোন ও দুই ভায়ের ছোট একটা পরিবার । পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি আমার বাবা, ছোট করে নিজের বিসনেজ করতো ও মা গৃহিণী।
বড় বোনের বিয়ে হয়েছে এবং সেও একজন গৃহিণী। বড় ভাই অল্পতেই পড়া লেখা শেষ করে কর্মজীবনে পা রাখে পরিবারের সবার জন্য। ছোট ভাইও ২০০৪ সালে পড়ালেখা বন্ধ করে কর্মজীবন শুরু করে খুব অল্প বয়সে।
____আমি মেঝো সন্তান যে কিনা একাই পরিবারের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছি। বাংলায় অর্নাস ও মাস্টার্স শেষ করে হাই স্কুল শিক্ষিকতা করি অনেক দিন।
বর্তমানে একজন গৃহিণী।______
#মধ্যবিত্ত পরিবারের কষ্ট____________কিছু কিছু কষ্টের কথা কখনও বলা যায় না, আবার সয্যও করা যায় না। কোন কষ্ট থাকলেও কাউকে সহজে বলতে পারি না মুখ লজ্জায় কারো কাছে ছোট হবার চেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে বেশি ভালো মনে করি মধ্যবিত্তরা । কখনো সমস্যার মধ্যে পড়ে যায় শেয়ার করলেও সহজে কেউ সাহয্য করতে আছে না ভয় পায় যদি পরিশোধ করতে না পারি এটা চরম সত্য কেউ সাহায্য করতে আসে না।কেউ যদি খেয়ে পরে ভালো থাকে দেখা যায় তার প্রয়োজন না হলেও আত্মীয় স্বজনরা তাদের পাশে থাকে অথচ অন্য কোন আত্মীয়রা কষ্টে আছে দেখবেন তাদের পাশে সহজে কেউ দাড়ায় না। এটাই চরম বাস্তবতা।
#আমার বাবা - মা ___________
________আমাদের চার ভাই বোন খুব আদর দিয়ে আমার বাবা - মা সবসময় আগলে রেখেছে। কখনো কষ্ট পেতে দেয় নাই।বাবা মায়ের ভালোবাসা কখনো কম থাকে না কিন্তু আমার বাবা - মা আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন তার বিশেষ কারণ হচ্ছে তারা এতিম ছিলেন
আমার মা তার বাবা মাকে চোখে দেখনি। জম্মের আগে তার বাবা মারা যান আর পরে নানি নানার পরলোকগমন সহ্য করতে না পেরে সেও আমার মাকে রেখে চলে যান রেখে যান তার দুই মেয়েকে। আমার বড় খালা তো তার মাকে দেখেছে কিন্তু আমার মা তার বাবা মা কাউকে দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। তাই মা সবসময় আমাদের অনেক বেশি ভালো বাসতেন সে কখনো কোন প্রকার কষ্ট আমাদের চার ভাই বোনকে বুঝতে দিতো না সেতো মায়ের আদর ভালোবাসা পায় নাই তার ভিতরে সবসময় মায়ের ভালোবাসার না পাওয়ার কান্নার পানি তার চোখের কোনে থাকতো। বুঝতাম না মা কি জিনিস কত কিছু মা বাবা সহ্য করে আমারা সন্তানরা তখন বুঝি নাই হাসির আড়ালে কত কান্না যে লুকিয়ে থাকতো।
আমার বাবাও আমার দাদাকে হারায় খুব ছোট বয়সে। অল্প বয়সে তার পরিশ্রমের জীবন শুরু হয়। তখন সে একা সংসারের একমাত্র ছেলে দুই বোন আর মার দ্বায়িত্ব সে অনেক ছোট বয়স থেকে সে করে আসছে। আমার বাবার শৈশব কাটে কর্মজীবন এর মাধ্যমে।
এরকম দুজন এতিম ও পরিশ্রমি মানুষের সন্তান আমি ছোট বেলা থেকে অনেক দুঃখ - কষ্ট, হাসি কান্না দেখে আচ্ছি আমার পরিবারের।বাবা মা অনেক কষ্ট করেছেন তাদের জীবনে কারণ তাদের মাথার উপর মা- বাবার ছায়া ছিলো না। তারপর আমার বাবা নিজের পরিশ্রমের টাকা জমায়ে ঢাকা শহরে অল্প পরিমাণে জায়গা রাখেন, গুলিস্তান মার্কেট দোকান রাখেন।আমার মাও অনেক পরিশ্রম করতো বাবাকে অনেক হেল্প করতো কিন্তু দুঃখ যাদের নিত্য সঙ্গী তাদের কাছে সফলতার সোনার হরিণ খুব বেশি দিন থাকে না।
আমার বাবা একসময় অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। তার চিকিৎসার জন্য আমাদের বাড়িটা বিক্রি করে দিতে হয় আর দোকানটা দোকানের এক সিনিয়র কর্মচারীর উপর দ্বায়িত্ব দিয়ে ছিলো কিন্তু সে বাবার মতো গোছায়ে রাখতে না পারায় অবশেষে সেটাও চলে যায়। আমরা তখন ছোট বাবার ব্যবসা ধরার মতো কেউ উপযুক্ত ছিলাম না।যার কারণে আমার বাবা আবারও শূন্য চলে আসে। তারপর বাবা সুস্থ হবার পর আবার নতুন করে শুরু করে তার কর্মজীবন। আবার তার শুরু হয় হার ভাঙা পরিশ্রম আমরা সবাই তখন স্কুলে পড়ালেখা করছি যার কারণে বাবাকে আরো পরিশ্রম করতে হতো সবার পড়ালেখা, খাবার, ঢাকার শহরে বাসা ভাড়া যোগান দেওয়া তার উপর আমার মা এবং বড় ভাই বেশিরভাগ অসুস্থ থাকতো তাদের চিকিৎসার খরচ ভালো পরিমাণে হতো। মার ছিলো দীর্ঘদিন টিবি আর পেটে টিউমারের যন্ত্রণা আর বড় ভাই ছিলো বাথজ্বর এবং চোখে এর্লাজির সমস্যার জন্য চোখ কিছু দিন পর পর ফুলে যেতো, রক্ত পরতো চুলকাতে চুলকাতে তার চিকিৎসায় বাবার অনেক টাকা খরচ হতো। তারপরও আমার বাবা কখনো হার মানে নি আমাদের ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া খুলো সবমসময় পূরণ করার চেষ্টা করতো।এভাবে টানা পোরানের মধ্যে কাটতে লাগলো আমাদের জীবন। একসময় বড় বোন ও ভাই পড়ালেখা ছেড়ে দেয় পরিবারের হাল ধরে। বোন বাবার মাল বাসায় সেলাই করে হেল্প করতো আর ভাই চাকরিতে যোগ দেন। আমরা ছোট দুজন তখন পড়ালেখা করি মোটামুটি স্বস্তিতে কাটছিলো দিন।
২০০৪ সাল
কিন্তু চলে আসলো ভয়াবহ ২০০৪ সাল । বড় বোনের বিয়ে দিয়েছিলো ২০০১ সালে বাবা - মা। বাবাকে হেল্প করার একজন সদস্য কমে গেলো। তার মধ্যে আমরা গ্রামে বেড়াতে যাই প্রতিবছর একবার বা দুইবার এ বছর আমের সিজনে আমরা যাই তখন বড় ভাই আম গাছ থেকে পরে মারাত্মক আঘাত পেয়ে কোমরের হার ভেঙে যায়। বাবা আরো সমস্যা পরে যায়।
এ বছর বোনের হাসবেন্ড বিদেশ চলে যায় যার কারণে কিছু সমস্যা পড়ে যায় যার কারণে ২০০৪ সালে বোন আমাদের বাসায় অবস্থান করে। তার উপর আমার একমাত্র ভাগিনা ২বছরের এর বেবি ফুট সব মিলায়ে হযবরল অবস্থা হয়ে যায়। বড় ভাই ৬ মাস বিছান শুয়ে দিন কাটাছে উঠে দাঁড়াতে পারতো না।বোন কিছু টা হেল্প করছে।
"মরার উপর খারার গাঁ হয়ে "
আমার দাদি এবছর ২০০৪ সালের নভেম্বর প্যারাল্সাট হয়ে পরে তার চিকিৎসা খরচ আরো বেশি ঝামেলা ফেলে দেয় বাবাকে কারণ এসময় বাবা একাই উর্পাজন করছে। ছোট ভাই তখন ক্লাস ৬ পড়ে ওর স্কুলের বেতন আটকে গেলো প্রতিদিন স্কুল শিক্ষকরা চাপ দিচ্ছিলো বেতন পরিশোধ করার জন্য। ও ছোট হলেও বিষয়টা ও নিতে পারলো না তাই ২০০৪ সালে ওর পড়ালেখা ইতি ঘটে কর্মজীবন প্রবেশ করে।
আমি তখন ২০০৪ সালের কমিনিউকেশন ইংলিশের প্রথম ব্যাচ ইংরেজি আমি খুব দূর্বল তার উপর নতুন সেলেবাস বাসায় কোন শিক্ষক রাখতে পারছে না আবার বলতেও পারছি না যে আমাকে একটা শিক্ষক রেখে দিতে কারণ পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিলো।কি বলবো খবার খাওয়া সেই বছর কষ্ট হয়ে পড়ছিলো।শিক্ষক কিভাবে রাখতে বলবো।কি আর করা নিজে নিজে চেষ্টা করছিলাম তাও আমি পড়ালেখা ছাড়ি নাই।পড়ালেখা ছাড়া কথা মনে হলে অনেক কষ্ট পেতাম নিজে নিজে অনেক কান্না করতাম। তাও চেষ্টা করতে লাগলাম। নভেম্বরের শেষ আমার দাদি চলে গেলেন না ফেরার দেশে
বাবা অনেক ভেঙে পরলেন কারণ তার মা তার সবচেয়ে আপন ছিলেন আমার দাদা মারা যাওয়ার পর দাদি বাবা আর দুই ফুফুকে নিয়ে দীর্ঘ পথ একা কাটিয়েছেন।আল্লাহ আমার দাদা- দাদি ও নানা -নানীকে জান্নাত দান করুণ ______ আমিন।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭২
Date:- ২৬/০২/২০২১
সাথী আক্তার
ব্যাচ নং ১২ তম,
রেজিঃ ৩৭৯৫৫
বর্তমান অবস্থান মিরপুর