বাবা শুরু করলেন কৃষিকাজ কিছু জমিন খরিদ করলেন কিছু জমিন ভাগে নিলেন।
আমার জন্মএকটি অত্যন্ত দরিদ্র ফ্যামিলিতে
বাবা আমার দিনমজুর কৃষক দুঃখ-কষ্ট আমাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ও সম্বল
পৃথিবীতে যত সমস্যা আছে সবচেয়ে বৃহৎ সমস্যা হল খুদা
বাবা-মা সহ যতই সুখের হাওয়া বয়ে দিতে চেষ্টা করেছি কোন চেষ্টাই কাজে আসেনি
আমরা সর্বমোট পাঁচ ভাই এক বোন -
দুটো ভাই সবচেয়ে বড় তারাই মৃত্যুবরণ করলেন সেই অভাবের সময় লবণ শূন্যতার কারণে
বেঁচে থাকা তিন ভাইয়ের বড় ভাইয়ের সংসারে অভাব দারিদ্রতার কারণে ক্ষুধার যন্ত্রণায় লেখাপড়া করা সম্ভবকর হল না
তাই তিনি ক্ষুধার যন্ত্রণা নিবৃত্ত করার জন্য চলে গেলেন সেই ছোটবেলায় ডাকার শহরে
তখন ঢাকার শহরকে বলা হতো বিদেশ
এখনো আমার সেই দৃশ্য চোখে ধরা এবং দৃশ্যমান যখন বাবা ভাই ঢাকা যেতেন মা সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকত ফ্যালফ্যাল করে আর গড়িয়ে পড়তে চোখের পানি
কখনো সন্তানের জন্য কখনো স্বামীর জন্য
আজও সেই সব দৃশ্য যখন চোখে ভেসে ওঠে চোখ থেকে অশ্রু এমনিতে এমনিতেই গড়িয়ে পড়ে
বড় ভাই, বাবা এবং মায়ের সম্মিলিত যুদ্ধে ভালো চলছিল না কিছুতেই সংসার
বাবা যতই কষ্ট করুক না কেন আদর স্নেহ মমতা দিতে কখনোই কার্পণ্য করেনি
আস্তে আস্তে কাটতে লাগল দিন, বড় হতে লাগলাম স্কুলে যাওয়ার সময় এলো "কিন্তু বড়ই পরিতাপের ব্যাপার স্কুলে যাওয়ার সুযোগ তেমন হচ্ছিল না। এক বার স্কুলে যাই আর একবার ছেড়ে দেই- কারণটা তো জানাই সংসারের অভাব পেটে খুদা কে মিটাবে? কে নিবৃত্ত করবে সেই খুদা?
স্কুলে ভর্তিও হলাম কিন্তু লেখাপড়া কখনই ভালোভাবে শুরু করতে পারলাম না
ইতিমধ্যেই বড় ভাই আমারই কোন এক নিকটতম আত্মীয় হাত ধরে প্রবাসে পাড়ি দিলেন সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে
সংসারে একটু একটু সুবাতাস বইতে লাগলো।
মনে হচ্ছিল স্কুলে কন্টিউ করতে পারব! চলছিল কিছুদিন খুব ভালোই,
লেখা পড়ায় বেশ আমি একজন ভাল স্টুডেন্ট ই ছিলাম, রোল 5/4/6 এর ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল
কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ব্যাপার বেশিদিনের চল্লনা
বাবা শুরু করলেন কৃষিকাজ কিছু জমিন খরিদ করলেন কিছু জমিন ভাগে নিলেন।
কিনলেন গরু,কারণ একটাই এতদিন আমি মানুষের বাড়ি কাজ করেছি এখন আমি কৃষি কাজ করব আমার সাথেও মানুষ কাজ করবে আনন্দ উপভোগ করব হৃদয়ের প্রশান্তি আসবে আমার
সমস্যা হল আমার বাবা যখন কৃষি কাজ করবে একটু বড় ছেলে যিনি আছেন তার যে বাবার সাথে সহযোগিতা করাই লাগবে এটাই যেন নিয়ম।
সেই নিয়মে আবদ্ধ হলাম আমি
গ্রামে থেকে কৃষি এবং ইস্কুল দুটা চালানো একটু ডিফিকাল্ট এবং মুশকিল ছিল।
তবুও থেমে থাকিনি চলতেছিল স্কুলে যাওয়া
স্কুলের সময়টুকু আনন্দেই কাটত
আজও মনে পড়ে সেই অজো গাঁয়ের গ্রামের স্কুলের কথা মনে পড়ে সেই প্রিয় শিক্ষকগণের কথা আজও ভুলিনি খেলার সাথীদের আজও ভুলিনি সহপাঠীদের,
তোদের কথা এখনো মনে আছে জানিনা তোরা কে কোথায় আছিস ভালো থাকিস বন্ধু তোরা শুভকামনা তোদের প্রতি রইল
হাতে পায়ে খানিকটা বড় হলাম দৃশ্যমান হলাম বাবা মা ভাইদের চোখে
একটি ছেলের কামাই দিয়ে ভালো চলছে না যে সংসার আরো বড় হতে হবে আমাদের
কাল হয়ে দাঁড়ালো সেই লোব আমার জন্য।
ঘরে ফ্যামিলির সকলের সিদ্ধান্ত আমাকেও যে ঢাকা যেতে হবে! কাজ শেখার জন্য কারণ উদ্দেশ্য একটাই কাজ শিখবে বিদেশ যাবে কামাবে অর্থ।
এই জায়গায় আমার সিদ্ধান্ত যে কোনই কাজে আসবে না সেটি তো নিশ্চিত।
তাই যেমনি পরিকল্পনা তেমনি তার বাস্তবায়ন ছেড়ে দিলাম ইস্কুল চলে গেলাম ঢাকা শুরু করলাম কাজ
সেজানো এক জীবন যুদ্ধ
ঢাকার শহরে যারা সারগিত গিরি করেছেন তারাই বুঝবেন সারগিতি করা কতটা দুঃসাধ্য
আমি যতটুকু এখানে দুঃখ আর কষ্টের কথা বলেছি তা শুধু মাত্র 100 ভাগের এক ভাগে উল্লেখ করতে পেরেছি বাকিগুলো অগোচোরে থেকে গেল
তারপরও আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া তিনি এখনো সুস্থ রেখেছেন ভালো রেখেছেন এবং জীবিত রেখেছেন
প্রিয় আমার ভাই এবং বোনেরা
যা চিন্তা তাই কাজ ভিসা চলে গেল সেই 1992 সালে,
মুশকিল হলো আমার তখনো গোপ অর্থ মোচ ভালো করে ওঠেনি।
পাসপোর্ট করতে হলে নিশ্চয়ই সবাই জানেন একটু বয়স্ক না দেখালে আপনাকে পার্মিশন দেবেনা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাংলাদেশ মেইন পাওয়ার থেকেও ক্লিয়ারেন্স দেবেনা।
তারপরেও যেভাবে হোক পাসপোর্ট হয়ে গেল।
বয়স তখন আনুমানিক ১৬ বেশি ছিল না।
ভিসা প্রসেসিং শেষ ফ্লাইট হল দিনটি ছিল ১৮/১০/১৯৯২
শুরু হলো নতুন একটি জীবন! নতুন আরেকটি যুদ্ধ, তবে হ্যাঁ এযুদ্ধে বেশি একটি বেগ পেতে হয়নি কারন আমার পিছনে ছিল আমার বড় ভাইয়ের অবদান।
বাহিরে আমাকে চাকরি করতে হয়নি নিজের যেহেতু কাজ শিখা ছিল।
বেশ খুব চমৎকার চলছিল
দুটি বছর যেতে না যেতেই মায়ের পীড়াপীড়িতে দেশে যেতে বাধ্য হলাম সংক্ষিপ্ত একটু সময়ের জন্য
ভালোই ছিল হাসি খুশির সময়
দেখতে দেখতে চলে গেল বেশ কিছুদিন বিবাহ-শাদী হল পর পর তিনটি সন্তানের বাবা হয়ে গেলাম
সকলে মিলে যৌথ একটি পরিবার ছিলাম একটি সময়ে ভিন্ন করে দিল আমাকে বাধ্যতামূলক
সেখানে রয়েছেন আরো দুঃখ আর কষ্ট সেগুলো নাইবা বললাম
আজ আমি আছি ভালোই আলহামদুলিল্লাহ্ সুখে রেখেছে মহান আল্লাহ। শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি আমার সেই রবের যিনি আমাকে এই সুখ এবং শান্তিতে রেখেছেন
বাবা আমার বেঁচে নেই মারা গেলেন ২০০৭এ
আল্লাহ তুমি বাবাকে সুখে রাখ এবং তোমার রহমতের কোলে তাকে লালনপালন করো
মা আমার বেঁচে আছে আজও আমার উপরে রহমত হিসেবে আল্লাহ মাকে নেক হায়াত দিন এবং সুস্থ রাখুন ভালো রাখুন
আজ আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই শুধু এতোটুকুই প্রত্যাশা আল্লাহ আমার রেখে যাওয়া সন্তানগুলোকে যেন একজন ভালো মানুষ বানান। একজন সুনাগরিক এবং একজন সুশিক্ষিত নাগরিক বানিয়ে দেশ ও জাতি ও সাধারণ মানুষের খেদমত করার-
তৌফিক দেন
আর কষ্ট আমার একটাই রয়ে গেল আমি আমি লেখাপড়া করতে পারলাম না
তাই আমার আকুল আবেদন এবং সবিনয় অনুরোধ করতেছি সেই আমার সন্তানদের এবং আমার নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের আমার ছেলের সমান যত লোক আছে মেয়েরা আছে সকলকে বাবারা মায়েরা লেখাপড়া ছেড়ে দিও না
একজন শিক্ষিত মানুষ সূর্যের আলোর মত
তাই আসুন আমরা সবাই সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত হই
পরিশেষে আমাদের প্রিয় স্যার ইকবাল বাহার স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
এবং তার পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
সর্বোপরি আমার এই প্রিয় নিজের বলারতম গল্প ফাউন্ডেশন এর সকল ভাই ও বোনদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে শেষ করছি, আল্লাহ হাফেজ
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭২
Date:- ২৬/০২/২০২১
আমি মোহাম্মাদ আলাতাফ হোসাইনঃ
১৩তম ব্যা
রেজিঃনং ৫৪৭৮৬
সৌদি আরবিয়া প্রবাসী
নিজ জেলা পটুয়াখালীঃ