যে বাবা মা আমাকে আমাকে এত ভালোবাসে তাদের কে আমি এতদিন
#আব্বা আমার টাকা লাগবে,
কত টাকা?
৫০০০ হাজার টাকা।
কি করবি এত টাকা দিয়ে?
ঈদের শপিং করবো।
আব্বা আমার কথা শুনে আর কিছু না বলে,আমার হাতে ৫০০০টাকা তুলে দিলো।
টাকা গুলি পেয়ে তো আমার আনন্দের সিমা নেই।
এবার মন খুলে শপিং করতে পারবো।
খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স দিলাম।
তারপর টাকা গুলো লুকিয়ে রেখে চলে আসলাম বন্ধুদের আড্ডাতে।
সবাইকে তো বলতে হবে,এবার এর ঈদের বাজেট টা।
সবার থেকে এবার আমার ঈদের বাজেট বেশি,
বন্ধুরাও সবাই বাহবা দিলো।
সন্ধার আগে বাসায় ফিরলাম,ইফতার করে নামাজ পড়ে আর বাইরে বার হলাম না।
শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছিলাম।
এমন সময় পাশের রুমে থেকে বাবা মা এর চাপা কন্ঠ ভেসে আসলো কানে।
<ওগো শুনছো?
<হ্যা বলো।
তুমি রিহানকে সব টাকা দিয়ে দিলে তো তুমি কি শপিং করবা আর ঈদের বাজার ও তো করতে হবে,কিছুই তো করা হয় নি।
৫০০০ টাকাই ছিলো।
ছেলের কথাই সেটাও বার করে দিলে।
<চিন্তা করো না,কারো কাছ থেকে ধার করে নিবো টাকা,আর রিহান তো এখন কলেজে উঠেছে বড় লোক ছেলেদের সাথে তাকে মিশতে হয়।
তাদের মতন না হলে চলে।
<তাই বলে সব টাকা দিয়ে দিবা,এখন যদি টাকা না পাও তাহলে কি ঈদ এ চুল বন্ধ করে রাখবো।
<তুমি অযথা চিন্তা করছো,কিছু একটা ঠিক ম্যানেজ করে নিবো,আর আমাদের তো সব কিছুই রিহানের জন্য।
তো রিহানকে দিবো ছাড়া কাকে দিবো বলো।
আর রিহান তো আমাদেরই ছেলে,বড় হয়ে দেখবা আমাদের কষ্টটাকে ঠিকই মুছে দিবে।
আব্বার মুখে কথা গুলো শুনে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললাম।
নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে এখন।
শুধু নিজের ভালোর জন্য,বাবা মাকে এতটা কষ্ট দেয় আমি।
যে বাবা মা আমাকে আমাকে এত ভালোবাসে তাদের কে আমি এতদিন অবহেলা করে এসেছি,শুধু নিজের দিকটাই ভেবে এসেছি।
ইচ্ছে করছে এখনই বাবা কে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদি কিন্তু বড় হয়ে গেছি,তাই কাঁদতেও পারছি না।
সেদিন রাতটা কোনো রকমে কাটালাম।
পরদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে,বেরিয়ে পড়লাম কাজের সন্ধ্যানে।
পরিকল্পনা এবার আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে আব্বা মাকে কাপড় কিনে দিবো।
আর ঈদের যাবতীয় খরচাবলি ও আমি নিবো।
রোজাই ছিলাম তাই মা খাওয়ার জন্য চিন্তা করতো না,রোজ সকালে বার হতাম আর বিকেলে ফিরতাম
বাড়ি ফিরলে মা একটু বকা দিতো
কিন্তু আমি কিছু বলতাম না।
কারন তখন আমি দিন মজুরি খাটতাম।
শুধু বাবা মায়ের জন্য।
টানা পনেরো দিন মজুরি খাটলাম।
রাতে শুয়ে আছি,
এমন সময় মা আসলো।
<রিহান তুই কাপড় কেনার জন্য টাকা নিলি কিন্তু কাপড় কিনলি না তো <কিনবো মা এখনো তো ৪দিন সময় আছে।
<কোই সময় আছে ঈদ তো চলেই আসলো।
<মা, তুমি আর বাবা কি কনলে দেখালে না তো
<আমরা আর কিনে কি করবো বল বাবা,তুই কিনলেই আমাদের হবে।
আচ্ছা ঘুমা অনেক রাত হয়ে গেছে
বলেই মা চলে গেলো।
মা তোমরা সত্যিই খুব স্বার্থপর,তবে সেটা নিজের ক্ষেত্রে না।
আমাকে উজাড় করে দিতে।
ঈদের আর মাত্র ৪দিন বাকি,
দেখলাম ঈদের কাচা বাজার ও কিছু কেন হয় নি তাই মাকে বলে সকাল সকাল বার হয়ে গেলাম
আমার মজুরির টাকা ৪০০০ আর বাবার দেওয়া ৫০০০ টাকা নিয়ে।
১ম এ মায়ের জন্য একটা সুন্দর দেখে শাড়ি কিনলাম,বাবার জন্য লুঙ্গি- পান্জাবি আর তারপরে আমার জন্য একটা পান্জাবি আর প্যান্ট।
এছাড়াও ঈদের টুকিটাকি বাজার করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে আসলো বুঝতেই পারলাম না।
তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা হলাম।
মা আমার হাতে এতগুলো ব্যাগ দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
<রিহান তুই কোথায় গেছিলি
<সব বলবো আগে ঘরে চলো,আব্বা কোই?
<ঘরেই আছে।
<চলো তাহলে
<কি তোর ব্যাগে
<আছে কিছু আগে চলো তো।বাবা মাকে বসালাম এবার ব্যাগ থেকে ১ম এ শাড়ি টা বার করে মা এর গায়ে ঠেকিয়ে বললাম
মা দেখো তো কেমন লাগছে,খুব সুন্দর মানাবে তোমাকে।
বাবা তোমার জন্যও আছে লুঙ্গি আর পান্জাবি।
<রিহান এসব কোথায় পেলি?
<মা তুমি না,শুধু প্রশ্ন করো।
আগে বলো কেমন হয়েছে,কোনোদিন তো তোমাদের জন্য কিনি নাই।
খারাপ হলেও কিছু করার নাই।
এসব মুখ বুজে বাবা দেখছিলো।এবার বললো
<রিহান এসব কোথায় থেকে আনলি এত কাপড় ঈদের বাজার টাকা কোথায় পেলি তুই।
<আব্বা,তুমি রাগ করবা না তো।
<না বল
<আমি ১৫ দিন রফিক আংকেলের সাথে দিন মজুরেরে কাজ করেছিলাম,তার থেকে ৪০০০ টাকা পেয়েছি
আর তাই দিয়ে তোমাদের জন্য সামান্য কিছু কিনে এনেছি।
কথা গুলো শুনে বাবা রেগে গেলো।
আমাকে একটা থাপ্পড় ও মারলো,
খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না,কে বলেছে তোকে রোজা মুখে কাজ করতে আমি কি মরে গেছি,তুই কাজ করবি।
জীবনে অনেক সময় পাবি তখন কাজ করিস এখন যদি আর কোনোদিন কাজ করিস তাহলে তখন আমার থেকে খারাপ আর কেও হবে না দেখে নিস।
বলেই আব্বা রাগ করে চলে গেলো।
ভেবেছিলাম আব্বা অনেক খুশি হবে কিন্তু আব্বা তো রেগে গেলো।
মাও কোনো কথা না বলে চলে গেলো।
সব কিছু অগছালো অবস্থাতেই পড়ে রইলো।
এশার নামাজ শেষ করে মন খারাপ করে শুয়ে আছি,
এমন সময় আব্বা আসলো।
<রিহান খেয়েছিস?
<খাবো না ক্ষুধা নেই
<আই খেতে আই
<আব্বাকে খুব ভয় পাই তাই বেশি কিছু না বলে চলে আসলাম।কিছু না বলে মুখ বুজে খাবার খেয়ে আবার চলে আসলাম।
রাত প্রায় ১১ টা বাজে,
দেখি আব্বা মা দুজনেই রুমে আসলো।
<কিরে আমার লুঙ্গি আর পান্জাবি দিবি না।
<তাড়াতাড়ি করে উঠে ব্যাগ থেকে বার করে বাবার হাতে দিলাম।
দেখি আব্বা কাদছে।
<আব্বা আমি কি ভুল কিছু করে ফেলেছি।
< না রে বাবা তুই ভুল কিছু করিস নি,আজকে সত্যি আমার নিজেকে একজন বাবা হিসাবে গর্ভবোধ হচ্ছে।
যে আমি তোর মতন একটা ছেলের বাবা।
আজকে আমি অনেক খু্শি, যে আমার ছেলে ১ম রোজকারের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য ঈদের কাপড় কিনে এনেছে।
তুই তখন বলেছিলিস না,যে পছন্দ হয়ছে কিনা,
এগুলোর থেকে সারাবাজার ধরে খুজলেও আর পছন্দের কিছু পাবি না।
এগুলো আমার কাছে অনেক দামি রে।
অনেক যত্ন করে রেখে দিবো।
কারন এগুলো যে আমার ছেলের ১ম রোজকারের টাকায় কেনা।
বলেই বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
জীবনে ১ম বুদ্ধি হওয়ার পর আমি বাবার বুকে মাথা দিলাম।
খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো যে আমি আজকে দুনিয়ার সব থেকে বড় সুখি মানুষ।
সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম,
আসলে বাবা মা কি জিনিস।
এদের কে খুশি করতে দামি কিছু লাগে না।
এরা অল্পতেই খুশি যদি সেটা দেওয়া হয় ভালোবাসার সংস্পর্শ দিয়ে।
বাবা চলে গেলেন আজ ১৫ বছর হলো আজও ইচ্ছে করে বাবাকে জুড়িয়ে ধরে বলি বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসি বাবা ফিরে আস আবার একসাথে বসে ভাত খায় বাবা ফিরে আস আবার আমাদের মাঝে কিন্তু নিয়তির বিদান বাবাকে হারানোর পরে বুঝতেছি বাবা ছিলো আমার জিবনে কতটা মৃল্যবান আজ প্রবাসে দিন রাত বসে পরিশ্রম করছি আজ কেউ জানতে চায় না কেমন আছি বাবা আজ তোমার সেই ছোট্ট ছেলেটা একটা অচেনা দেশে এসে এক মুঠো ভাত এর জন্য হার ভাংগা খাটুনি খাটে যাচ্ছে কেওতো তোমার মত আদর করে বুকে নেয়না কেউতো আগের মত শাষন করেনা আজও মাঝরাতে গুমের ঘরে তোমার কথা মনে করে কেদে ফেলি মিস ইউ বাবা
সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করে।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭৩
Date:- ২৮/০২/২০২১
নাম- পাঠান সোয়েব
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার -১৫৩৪১
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার।
মরিচাস প্রবাসী।
দশম ব্যাচ।
নিজ জেলা ময়মনসিংহ।
নিজ থানা গফরগাঁও।