আমি আবারও একটি কথা বলতে চাই, আমাদের সবারই যে কোন কাজের জন্য ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে।
আমি একটি শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমি আমার বাবা মায়ের বড় মেয়ে। আমরা দুই বোন আমাদের কোন ভাই নেই। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গ্রামেই। তখনকার সময়ে কোন পরিবারে মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করাটা সমাজের মানুষের কাছে ততোটা আনন্দের বিষয় ছিলো না। আমি মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি সে খবরটা কারও কাছেই তেমন একটা উচ্ছাসের ছিলো না। বরং তারা বলতো হয়েছে তো মেয়ে তা নিয়ে এত উচ্ছাসের কি আছে। মেয়ে হয়েছে তাতেই এতো উচ্ছাস ছেলে হলে না যেন কত কি করত। আমার মাকে আমার কাকা, ফুপুরা প্রতিনিয়ত ছোট করতো। আর আমার মা নিরবে নিভৃতে শুধু কস্ট পেতো। আজ এত বছর পরে আমি এসব কথা আপনাদের বলতে গিয়ে আমার চোখে সত্যি সত্যি পানি চলে এসেছে।
এর কয়েক বছর পরেই আমার ছোট বোনের জন্ম। আর তখনও আমাদের আত্মীয় স্বজনরা ততোটা খুশি ছিলোনা। তখন আবারও সবার একই কথা আবারও মেয়েই হলো। ছেলের ভাগ্য কি তোমাদের জীবনে ও হবে না। আমার এক ফুপা তো আমার মাকে বলেই ফেললো যে তোমার তো দুই মেয়ে তোমার তো শুধু মানষকে দিতেই হবে। কারও কাছ থেকে কিছু পাবা না। কিন্তু সব কিছুর পরে ওআমরা ছিলাম তাদের সব ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু। তাই তাদের জীবনের সব ভালোবাসা দিয়ে আমাদের বড় করতে লাগলো। জীবনে কখনো কোন চাহিদা তারা অপূর্ণ রাখেনি। তাদের চোখে আমরাই তাদের মেয়ে, আবার আমরাই তাদের ছেলে।
তারপর শুরু হলো আমার ছেলেবেলা। প্রাইমেরিতে ভতি হলাম। স্কুলে খুব ই শান্ত সভাবের ছিলাম আমি। কিন্তু পড়ালেখায় খুব একটা খারাপ ছিলাম না। পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলাম।
এরপর আমার প্রাইমেরি শেষ হলে, ভতি হলাম মাধ্যমিকে। মাধ্যমিকে ক্লাস ষষ্ঠ পযন্ত পড়ার পর, আমার বাবা তখন ঢাকাতেই থাকতেন বেশি। কারন তার কাজের সুবাদে থাকতে হতো। আর আমরা গ্রামে একা থাকবো, এটা আমার বাবার ভালো লাগলো না। তার কাছে তখন আমাদের নিরাপত্তা টাই বেশি। তাই আমার বাবা মনে করলো আমার মেয়েদের যদি আমার কাছে রাখতে পারি তাহলে, ওদেরকে আমার আদশে' বড় করতে পারবো। ওদের নিয়ে আমার সপ্ন গুলো পূরন করতে পারবো। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আমাদের কে ও তার কাছে নিয়ে আসবেন। তো যেই বলা সেই কাজ।
আমার বাবারা দুই ভাই। আমার বাবা ছোট। আর আমার বড় কাকা তখন ছিলো গাজীপুরে। সে তখন গাজীপুরের একটা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। তো আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা ও গাজীপুরেই থাকবো।
তখন আমরা গাজীপুরে চলে আসলাম। তারপর আমি গাজীপুরের একটি মাধ্যমিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভতি হলাম। তারপর সাফল্যের সাথে মাধ্যমিক শেষ করলাম। তারপর আমাদের আত্মাীয় সজনদের অনেকেই বলতে লাগলো যে মেয়েদের বেশি পড়তে হয় না। মেয়েদের এতো পড়াশোনা করে কি হবে। বেশি মানুষের সাথে মিশলে মেয়েরা খারাপ হয়ে যায়। এরকম আরও বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলতে লাগলো। আর আমার বাবাও সিদ্ধান্ত নিলেন যে আমার বিয়ের ব্যাবস্তা করবে কিন্তুু অবশ্যই আমার পড়াশোনা ঠিক থাকবে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তারপর উচ্চ মাধ্যমিকে ভতি হবার পরই আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমার ছিলো পারিবারিক বিয়ে। আমার সামী ছিল পড়ালেখার ব্যাপারে খুব ই আগ্রহী। তাই বিয়ের পরে ও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে ও আমার কোন অসুবিধা হয়নি। তা কথা হলো আমাকে পড়াশোনা শেষ করতেই হবে। আমি তারপর আমার সামী ও বাবা মায়ের সাহায্যে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করলাম। তারপর আমার সামী যেহেতু ঢাকায় জব করতেন, তাই ঢাকায় বাসা নিলো এবং আমি ও ঢাকায় চলে আসলাম।
তারপর অনাসে ও চান্স পেলাম ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজে, বাংলা বিভাগে। অনাসে ভতির পরই আমার প্রথম সন্তানের জন্ম হলো। তখন আমার জন্য জীবন টা একটু কষ্টকর হয়ে গেল। কারন বাচচা রেখে আবার ক্লাস করাটা আমার জন্য কঠিন হলো। তখন আমার শশুর বাড়ির লোকজন বললো আর পড়াশোনার দরকার নেই। এখন শুধু সংসার আর বাচচাকে সামলাও। কিন্তুু আমার হাজবেনড আমার পাশে থেকে আমাকে অনেক উৎসাহ দিলেন। অবশেষে আমার আমার মা, বাবা আর হাজবেনড এর সাপোটের কারনে আমি প্রথম বিভাগ নিয়ে অনাসে' উত্তিন' হই।তখন আমাকে নিয়ে আমার পরিবারের সবার মনে একটা প্রশান্তি আসে যে না আমি জীবনের একটা কঠিন অধ্যায় অতিক্রম করেছি। আমার মনে সব সময়ই একটা জেদ থাকতো যে আমাকে পড়ালেখা করতেই হবে। যেহেতু আমার বাবা মায়ের কোন ছেলে নেই। তাই আমি যদি পড়ালেখা শেষ করে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি সেটাই হবে তাদের পরম পাওয়া।
তারপর আমি মাষ্টারসে' ভতি হই এবং দিতীয় বিভাগ নিয়ে উত্তীন' হই। একটি মেয়ের জন্য সংসার, বাচ্চা সামলিয়ে পড়ালেখা শেষ করাটা খুব একটা সহজ ছিলো না। যতোই সবাই পাশে থাকুক। কিন্তু কষ্ট আর সংগ্রামটা তো আমাকেই করতে হয়েছে।
কিন্তু তারপরে ও ইচ্ছা ছিল কোন একটা চাকরিতে ঢোকার অন্তত নিজের একটা পরিচয় তৈরি হবে। সেখানে ও পরিবারের সবার ইচছা ছিলো। কিন্তুু সব দিক সামলিয়ে সেটাও সম্ভব হয়নি। কিন্তুু মনে সব সময়ই একটা সপ্ন ছিল, একটা আশা ছিল যে আমি যদি নিজে কিছু করতে পারতাম। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতাম।
এরপর আমার এক বন্ধু আমাকে এই "নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফমে' এড করে। তারপর আমি গ্রুপের সব কিছু দেখে ভালো লাগে। আর মনে হলো নিজেকে প্রমান করার আরও একটা সুযোগ আমি পেয়েছি। তারপর রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলি। এখন আমার একটাই সপ্ন সেটা হলো একজন ভালো মানুষ হওয়ার। আর ভবিষ্যতে একজন সফল উদ্যোক্তা হবার। এখন আপনারা সবাই যদি আমার পাশে থাকেন তাহলে নিশচয়ই আমি আমার সপ্ন পূরন করতে পারবো, এবং আমার লক্ষে পৌঁছাতে পারবো। আর ছোটবেলা থেকে যারা আমাদের ছোট করে যত নেতিবাচক কথা বলেছেন, তাদের ও প্রতিটা কথার যোগ্য জবাব দিতে পারি। কারণ সবার সব জবাব আমি জমিয়ে রেখেছি ভবিষ্যতে তার যোগ্য জবাব দেবো বলে।
সবশেষে আমি আবারও একটি কথা বলতে চাই, আমাদের সবারই যে কোন কাজের জন্য ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। ইচ্ছাশক্তির বলেই আমরা যে কোন অসাধ্য ও কঠিন কাজ কেও সহজে করে ফেলতে পারি।
"এতক্ষন আমার লেখাটা পড়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আবারও সবার জন্য অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।আমি সবার জন্য দোয়া করছি। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭৩
Date:- ২৮/০২/২০২১
শারমিন জাহান সুমা
ব্যাচ- ১৩
রেজিষ্ট্রেশন নং- ৫১৬৫৪
নিজ জেলা- বরগুনা
অবস্থান- ঢাকা