আমার খুবই কষ্ট হতো তবুও আমি হাল ছাড়ি নি।
জীবন নাটকের চেয়ে নাটকীয়,, এই কথাটা একটা FM রেডিও স্টেশনে প্রায় সময় শুনে থাকি কিব্রিয়া ভাইয়ের মুখে। আসলেই সত্যি আমার জীবন টা ও নাটকের চেয়ে ও নাটকীয়।
আজ আমি আমার জীবনের গল্পটা আপনাদের সাথে সেয়ার করছি,, আমার জীবন সম্পর্কে জানার জন্য আশা করি সবাই গল্পটা পড়বেন।
আমি সাজেদা সুলতানা (সারা)। আমার জন্মস্থান কুমিল্লাতে । আমর দুই বোন এক ভাই। আমার ভাই সবার বড়, আর দুই বোনের মধ্যে আমি বড় আমার ছোট একটা বোন। ছোট বেলা থেকেই মা বাবার পরম স্নেহে আমরা বেড়ে উঠা । খুব ভালোই চলছিলো আমাদের ছোট সংসার। ভালোবাসা আদর মমতা কেন কমতিছিলো না। ফ্যামিলির সবাই অনেক আদর করতেন। ছোট বেলাটা অনেক আনন্দেই কেটে যায়। যখন আমি ক্লাস নবম শ্রেনীতে পড়ি, তখন আমার বড় ভাই বিয়ে করে। সেই অনেক বছর আগের কথা।
বড় ভাই বিয়ে করেছে নতুন ভাবী ঘরে আসছে, আমরা দুই বোন অনেক খুশি,, হাসি খুশিতে কাটতে থাকে আমাদের পরিবার।
আসলে একসাথে থাকতে গেলে পারিবারিক কত ঝামেলা হয়,, বড় ভাই হিসেবে সেই ঝামেলা গুলো তিনি মেনটেইন করে নিতে পারেননি সেটা ছিলো বড় ভাইয়ের ব্যর্থতা। সেই কারন বশত বিয়ের প্রায় ১ বছরের মধ্যেই আমার ভাই ভাবীকে নিয়ে মা বাবা আমাদের দুই বোনকে এক ফেলে আলাদা হয়ে একটা ভারা বাসায় উঠে।
মা, বাবা আমরা দুই বোন এক সাথে থাকতে শুরু করলাম, বাবা চাকরি করতো। হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে যায়,,, অসুস্থ্যতার কারনে চাকরী থেকে চলে আসতে হয়েছে । পরিবার খুবই বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো।
সংসারের পুরো চাপ আমার মাথা এসে পরলো। ঘরের সমস্ত কাজ আমাকেই করতে হতো। বড় ভাই আলাদা হয়ে যাওয়ার পর বড় ভাই যে সামান্য টাকা দিতেন সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যেতো,, পাশাপশি আমার চাচা চাচী আমাদেরকে সহযোগিতা করতেন।
এইদিকে মা বাবা বার্দ্ধক্য জনীত কারনে সব সময় অসুস্থ থাকতেন। তাদের ঔষধ পএ সব কিছু চাচা চাচীর সহযোগিতায় কোন রকম জীবন যাপন করতে লাগলাম। আমি ও বসে ছিলাম না সংসারের যাবতীয় কাজ করার পর টিউশনি ও করতাম।
আমার খুবই কষ্ট হতো। তবুও আমি হাল ছাড়ি নি।
যেই পরিবারে আমি টিউশন করতাম। সেই ছাত্রীর বাবা আমাদের ফ্যামিলির অবস্থা দেখে তাদের হসপিটালে রিসিপশনিস্ট এ আমাকে জব দেন।
আমি যে এত খুশি হয়েছিলাম। তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। বাবার চিকিৎসা চলছিলো।
আমি টিউশনি+ জব করে সারাদিন পরে বাড়ি ফিরতাম। এতটা ক্লান্ত ও দুর্বল লাগতো মনে হতো যেন আর পারছি না। আর আমাকে দিয়ে হবে না। মা বাবার কথা মাথা আসলে আবার প্রানটা তাজা হয়ে যেতো।
একদিন সন্ধ্যায় কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় হঠাৎ বেহুশ হয়ে পরে যাই। পরে পথচারীরা আমাকে হসপিটালে পৌছে দেয়। খবর শুনে সবাই আমাকে দেখতে গেলে ও আমার এক মাএ ভাই আমাকে দেখতে যায়নি। এটা ছিলো আমার মনে অনেক কষ্ট।
কষ্টে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার কষ্ট কিশের
সবাইতো আর সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায় না। ভেবেই নিলাম আমার জীবনটা হয়তো এমন করেই কাটাতে হবে। যাই হোক এভাবেই চলতেছে আমার জীবন যুদ্ধ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় শত চেষ্টা করে ও পারি নি আমার অসুস্থ বাবাটাকে সুস্থ করে তুলতে। আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে বাবা চলে গেলেন ও পাড়ে। বাবার মৃত্যুটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারিনি।
আমাদেরকে একা করে এতো তারাতাড়ি চলে যাবেন ভাবতেই পারিনি। এতটা কষ্ট হয়েছিলো আমার, মনে হচ্ছিলো আমাদের পুরো পৃথিবীটাই অন্ধকারে ঢেকে গেছে।
যেই বাবা নামের বট গাছটা আমাদেরকে এতোদিন ছায়া দিয়ে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছিলেন আজ সেই বাবাই চিরদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন । বাবার মৃত্যুর শোকে আমাদের কথা ভেবে আমার মা ও অতিরিক্ত ট্রেস থেকে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এমনটা হওয়ারি কথা- কারন বড় ভাই থাকা সত্যে ও আমাদেরকে এই ভাবে জীবন যাপন করতে হয়েছে। সেটা মা কখনো মেনে নিতে পারেনি। তাছাড়া আমরা দুই বোন ও বিয়ে উপযুক্ত ছিলাম। বড় ভাই উনার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করলে হয়ত আমার জীবনটা আজ এমন হতো না,,।
যাই হোক জীবন জীবনের গতিতেই চলছে চলবে বিপদের সময় আমাদের পাশে যার ছিলেন আমার ফুফাতো ভাই এবং বোন। তারা আমাদের জন্য অনেক করেছেন অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক দিয়ে সব সময় পাশে থেকে সাহায্য করেছেন। আমাদের বিপদের সময়ে যারা আমাদের পাশে ছিলেন আমি তাদের প্রতি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
মাঝে মাঝে নিজের জীবনের প্রতি অনিহা চলে আসতো, জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না - জীবন জীবনের গতিতেই চলছে। বেচে থাকতে হলে আবার নতুন করে ভাবতে হয় শুরু হলো পথ চলা - মা এবং বোনকে ঘিরে আমার পৃথিবী । শুরু হলো নতুন করে জীবন যুদ্ধ। বাবার মৃত্যুর পর আমার মা, বাবার ভালোবাসার অভাব পূরন করেছেন । বাবার অভাব বুঝতেই দেয়নি। এক দেড় বছর ভালোই ছিলাম। বাবার শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই। মা ও দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন । যত দিন যাচ্ছে ততো অসুস্থ হয়ে পরছেন। মায়ের জন্য আবার প্রতি নিয়ত যুদ্ধ শুরু,,,সব কিছু আামকেই করতে হয়। আমার সাধ্য মত আমি চেষ্টা করে ও মাকে বাচাতে পারিনি -বাবা মারা যাওয়ার ২ বছরের মধ্যেই আমার মা পরলোক গমন করেন । মা হাড়ানো বেদনা যে কতটা কষ্টদায়ক সেটা বুঝতে পারবেন যাদের মা নেই। বাবা মৃত্যুর পর একটা ভরসা ছিলো আমার মা আছেন। এখন মা ও আমাদেরকে একা করে চলে গেলেন। বাবা মা হাড়িয়ে আমি সর্বশান্ত
বোবা হয়ে গেছি, আমার চোখের পানি শুকায় না। ভাবতাম এটাই কি আমাদের কপালে ছিলো নিয়তি আমাদের দুই বোনকে একা করে দিলো। আল্লাহ আমাদেরকে এতিম করে দিলো। পৃথিবীতে যার মা বাবা নেই সেই তো সেই বুঝে বাবা মা হাড়ানোর বেদনা কতটুকু।
আমরা দুই বোনই বড় চারদিক থেকে বিয়ের চাপ আসছে । আমার ভাই চেয়েছিলো বিয়ে হয়ে যাক। কিন্তু আমি বিয়েতে অনিহা প্রকাশ করি। চিন্তা ছিলো প্রথমে নিজের পায়ে দাড়াবো তারপর বিয়ে করবো । আল্লাহ যা কেড়ে নেওয়ার তা তো নিয়ে নিয়েছে
এই পৃথিবীতে আর কেউ ছিলো না, যার কাছে মনের দুঃখ গুলো প্রকাশ করবো ।
যাদের কোলে মাথা রেখে একটু নিশ্বাস নিবো তারাই তো আমাদেরকে একা করে চলে গেছেন
মনের মধ্যে কোন শান্তনা খুজে পাচ্ছি চতুর্দিক থেকে ডিপ্রেশনে আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। আমি পারছি কাউকে বুঝাতে পারছি না নিজেকে সামালাতে যখন হতাশায় জর্জরিত। ঠিক তখনই আমি সন্ধান পাই "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশন এর। প্রিয় স্যারের ভিডিও দেখি স্যাররে কথা গুলো আমার মনে দাগ কেটে যায়। প্রতিদিনের সেশন গুলো ফলো করি লাইক কমেন্ট সেয়ার করি। এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে ৯০ দিনের কোর্স করে মোটা মোটি হতাশা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এতো সুন্দর প্লাটফর্ম পেয়ে আমি চমৎকার ভাবে আনন্দিত এখান থেকে অনেক অজানা কিছু জানতে পারছি শিখতে পারছি । প্লাটফর্মে আমি রেজিষ্ট্রেশন করি।
এই প্লাটফর্মে আমার অনেক ভাই ও বোনেরা আছেন তাদের পোষ্ট গুলো প্রতি নিয়ত পড়ার চেষ্টা করি। বাস্তব জীবনের গল্পগুলো পড়লে নিজের মনে একটা প্রশান্তি কাজ করে এটা মনে যে এই পৃথিবীতে আমি একা শুধু কষ্টে নেই। আমার থেকেও আরো অনেকেই অনেক কষ্টে আছেন। জীবন মানেই কষ্ট। আসলে কেউ প্রকৃত পক্ষে সুখী নেই।
আমি সবার সাথে হাসিখুশি থাকি,আমাকে সবাই পছন্দ করে এবং খুব সহজেই আমাকে আপন করে নেয় আলহামদুলিল্লাহ।
আমি এই প্লাটফর্ম থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
আমি পেয়েছি আমার ভাই বোনদের।
কত জেলার ভাই বোনের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। কুমিল্লা জেলার প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান প্রত্যেকটা মিটআপে আমি থাকার চেষ্টা করি । এই ধরনের ভলেন্টিয়ারিং কাজ গুলো করতে আমার খুবই ভালো লাগে। মনে শান্তি পাই আনন্দ লাগে। এই পর্যন্ত কাউকে কখনো কষ্ট দেইনি, দেওয়ার ইচ্ছে ও নেই। আমার দ্বারা যেন কেউ কোন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই প্লাটফর্মের সবার সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে সবাই আমাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে।
আমি সব সময় সবার সাথে একজন ভালো মানুষ হয়ে আন্তরিকতার সাথে থাকতে চাই,
আমি আরো শিখতে চাই এই প্লাটফর্ম থেকে। স্যার একটা কথা বলেছিলেন "মন খারাপ হলে কেউ আসবে না মন ভালো করে দিতে, নিজের মনকে নিজেকেই ভালো রাখতে হবে"
আমিও নিজের মনকে নিজেই প্রফুল্ল রাখার সর্বদা চেষ্টা করি স্যার। দোয়া করবেন।
★★বর্তমানে আমি★★
আমার এলাকায় যারা আমাকে একটা সময় পাত্তা দিতো না। বাবা মা মারা যাওয়ার পরে সবাই কেমন যে হয়ে গিয়েছিলো। অনেকেই খারাপ ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন সবাই আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
কারন আমি আমার এলাকায় হতদরিদ্রদের পাশে দাড়িয়েছি । তাদের যে কোন সাহায্যে সহযোগিতা আমি এগিয়ে যাই। ১ বছর কিন্ডার গার্ডেনে ফ্রি তেই পড়িয়েছি ।
বর্তমানে আমি ডাঃআজাদ আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেন্টারে জব করছি। এর আগে ছিলাম সূর্যের হাসি ক্লিনিকে।
এখন জবের পাশাপাশি টিউশনিও করছি । আমি টিউশনি করছি ১২ বছর যাবত ।
সবকিছুই খুব সুন্দরভাবে সামাল দিতে পারতেছি।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন । আমি আমার এবং আমার বোনের দায়িত্ব নিতে পারতেছি।
এখন আর খারাপ লাগা কিংবা মন খারাপ হয় না।
জীবনে সফল হতে হলে কষ্ট করতে হবে সেটা আমি এই প্লাটফর্ম থেকে শিখেছি
স্যারের শিক্ষাটাকে নিজের মধ্যে ধারন করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। আশা করছি সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং পাশে থাকবেন ।
আবার ও অনেক অনেক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের প্রিয় স্যারের প্রতি । যিনি এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম করে দিয়েছেন আমাদের বীনা মূল্যে অনেক কিছু শিক্ষার সুযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য.
মনের গভীর থেকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা স্যারের প্রতি।
ভালো থাকবেন সবাই। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্যে ও নিরাপদ জীবন কামনা করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭৪
Date:- ০২/০৩/২০২১
-
ধন্যবাদান্তে......
আমি সাজেদা সুলতানা (সারা)
ব্যাচ নাম্বার - সপ্তম
রেজি নং - ৩০৪৫
জেলা - সদর কুমিল্লা