এক ই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি দুজনে আপুর কাছ থেকে নুপুরের শব্দ ভেসে আসছিল,রিনঝিন
স্নিগ্ধ সকাল!!!সকালের ফুরফুরে বাতাসে শরীরের সাথে মন ও শীতল হয়ে যায়।সকালে প্রকৃতির রূপ মুগ্ধ করে সবাইকে।বসন্ত কাল,প্রকৃতি সেজেছে তার নিজের অপরূপ রূপে।অনেকদিন হলো ভোর দেখা হয়না।শীতে সকালে উঠা হয়নি অনেকদিন।তাই আজকের সকালটা অনেক বেশি ভালো লাগছে।মনটা ফুরফুরে হলে গেল।মূহুর্তেই আর দেরি না করে বের হলে পরলাম চারপাশের প্রকৃতি দেখতে।ইট পাথরের শহরে প্রকৃতির নিজস্ব রূপ খুব একটা দেখা যায় না।তবুও যতটা দেখা যায় সেই লোভ সামলাতে পারলাম না।প্রকৃতি ও দেখা হবে সাথে ব্যায়াম ও হয়ে যাবে।বের হয়ে পরলাম।
প্রকৃতির কি সুন্দর রূপ।চারপাশ কি সুন্দর।স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শিউলী ফুল নিচে পরে থাকতে দেখলাম।সাদা শুভ্র শিউলী ফুল গুলো কি সুন্দর রাস্তায় পরে আছে।যেন কাউকে বরন করার অপেক্ষায়।মনটা আরো ভালো হয়ে গেল।
অনেকদিন পর সকালের সূর্যের আলোটা প্রথম উঁকি দেওয়ার সময় ই দেখতে পারলাম।কি সুন্দর একটা দৃশ্য।তারপর আর দেরি না করে ৪০মিনিট পর বাসায় চলে আসলাম।আজ অনেক সময় হাতে আছে।রান্না বসিয়ে দিলাম।তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে প্রিয় প্লাটফর্ম এর সকলের পোস্ট পড়তে শুরু করলাম।পোস্ট পড়ে যে এতো কিছু শেখা যায় জানাই ছিল না আমার।তারপর সকল কাজ শেষ করে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।আজ কোন তাড়াহুড়ো নেই।খুব ভালো লাগছে।শান্তিতে রাস্তা টা যেতে পারবো।
যাওয়ার পথে এক আপু আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছে তাকে পিছন থেকে অনেকটা সময় ধরে দেখছি।এক ই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি দুজনে।আপুর কাছ থেকে নুপুরের শব্দ ভেসে আসছিল,রিনঝিন রিনঝিন শব্দ।ভালো লাগছিল খুব।আজ যেন সকল কিছুই ভালো লাগছে।প্রকৃতি মনকে অনেক বেশি সতেজ করে তুলে।আপুর নুপুর টা দেখতে পারিনি কিন্তু হঠাৎ করে দেখি রাস্তায় আমার সামনে একটা পায়েল পরে আছে।আপুর দিকে তাকালাম।আর শব্দ আসছে না নুপুরের।পায়েলটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি আপুর কাছে গিয়ে ডাকলাম,হ্যালো আপু আপনার পায়েলটা মনে হয় পরে গেছে,দেখেনতো আপনার কিনা?
আপু আমার দিকে একবার তাকিয়ে পায়েল এর দিকে তাকালো।তারপর বললো হে আপু এটা আমার।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।এটা আমার খুব পছন্দের।আপনি কিভাবে পেলেন?
তখন বললাম আপু আমি আপনার পেছন পেছন আসছিলাম আপনার পায়েলের শব্দ শুনছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে দেখি পায়েল পরে আছে রাস্তায় আর আপনার থেকেও শব্দ আসছে না,তখন ভাবলাম আপনার ই হবে,তাই জিজ্ঞেস করলাম।আপুটা খুব খুশি হলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো আমাকে নাম কি আমার,বাসা কোথায়,কোথায় যাচ্ছি, এইসব কথা বলে পরিচয় হলো আপুর সাথে।আপুর নাম টা খুব মিষ্টি অনুরাধা।আপু আমি যেই দিকে যাব সেই দিকেই যাবে।তাই গল্প করতে করতে এক সাথেই গেলাম।আপুর নাকি পায়েল আর টিকলি অনেক পছন্দের।এইরকম অনেক গল্প করলাম।
আমার হাতে একটা ব্রেসলেট পরা ছিল,অটোতে উঠারপর সেটা আপু খেয়াল করে জিজ্ঞেস করলো এটা কোন জায়গা থেকে কিনেছি।আপুর অনেক পছন্দ হয়েছে।তখন বললাম এটা আমি বানিয়েছি।আপুর সাথে ততক্ষণে গল্প করতে করতে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে অল্প সময়ে।আপু বলতাছে তুমি বানিয়েছ?তুমি বানাতে পারো?খুব সুন্দর হয়েছে।
তখন আপুকে বললাম জি আপু আমি টুকটাক পারি।হাতের তৈরি গহনা নিয়ে কাজ করি আমি।আমার পেইজ আছে একটা প্রিয়ণিকা-prionika আমার পেইজ।আপনি চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন।আর আপনার পছন্দের পায়েল,টিকলি ও পাবেন।আপু সাথে সাথে ফোন বের করে ফেইসবুকে ডুকে বললো তোমার আইডি ও দেও,পেইজ ও।আমি আইডিতে রিকুয়েষ্ট দিলাম আর পেইজ সার্চ করে দিলাম।আপু দেখলো একটু।অনেক প্রশংসা করলো।তারপর আমার গন্তব্য চলে এলো আর আমি নেমে পরলাম।আপু বললো তোমার সাথে কথা হবে,ভালো থেকো।
খুব ভালো লাগছিল।সব কিছুই যেন ভালো হচ্ছিল।এইভাবে সারাটাদিন ই ভালো কাটলো।রাতে নেটে ডুকে দেখি অনুরাধা আপু মেসেজ করেছে।আপু হাই দিল।তারপর কথা বললাম একটু।আপু আমার সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলো।আমিও করলাম।আপুটা আমার সিনিয়র।তবে বেশি বড় ও না।তখন আপু বললো যা যা পায়েল বানিয়েছি সব গুলোর যেন ছবি দেয় তাকে।আমিও ছবি দিলাম।আপু রিপ্লাই দিল সবগুলো ই উনার পছন্দ হয়েছে, কোনটা রেখে কোনটা নিবে সেটা নিয়ে বিপদে আছে।আসলে পছন্দের জিনিস নিয়ে আমাদের সকলের ই এই সমস্যা টা হয়।আমি বললাম আপু যেটা তে প্রথম দেখাতেই চোখ আঁটকে গেছে সেটা নেন।তারপর আপু ৩টা পায়েল নিবে ঠিক করলো।আমিও খুশি হলাম।পায়েল গুলো অনেক সুন্দর, সবাই পছন্দ করে।কয়েকদিনে অনেক গুলো বানাতে হয়েছে।তারপর টিকলি দেখতে চাইলো।দেখালাম।সিলভার কালার পায়েল নিবে তাই সিলভার কালার টিকলি ই আপু পছন্দ করলো।অর্ডার করলো ৩টা পায়েল,১টি টিকলি।
দুইদিন পর আপুকে নিজেই দিতে গেলাম।পছন্দ হবে নাকি সেটা নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছিল।আপুর পায়েল খুব প্রিয় পছন্দ না হলে আমারও কষ্ট লাগবে আপুরও।তারপর গেলাম নির্দিষ্ট জায়গায়।আপু আসলো।আপুকে দিলাম,তারপর আপুকে বললাম খুলে দেখতে পছন্দ হয় কিনা।আপুও খুলে দেখলো।আর দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো খুব পছন্দ হয়েছে।আলহামদুলিল্লাহ আমিও খুশি হলাম।তারপর সাথে সাথে আপু টাকা পেমেন্ট করে দিল বিকাশে।আপুর সাথে আরেকটু গল্প করে চলে আসলাম।তারপর বিকালে আপু জানালো আরো পায়েল লাগবে।সাথে আমার হাতে দেখেছিল সেই ব্রেসলেট ও।আপুর বান্ধবীরা দেখে খুব পছন্দ করেছে এখন তারাও নিবে।এই প্রাপ্তি গুলো ই কাজ করার শক্তি জোগায়।তখন সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত ছিলাম কিন্তু আপুর কথাটা শুনে সকল ক্লান্তি যেন চলে গেল।মূহুর্তেই শক্তি ফিরে এলো।কাজ করতে বসে পরলাম।এইভাবেই অল্প অল্প করে স্বপ্ন পূরনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমি,সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে প্রিয়ণিকা।সবাই দোয়া করবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার এই লেখাটা আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৭৪
Date:- ০২/০৩/২০২১
হিজাব ইমতিয়াজ সায়মা
ক্যাম্পাস এম্বাসেডর (নেত্রকোনা সরকারি কলেজ)
ব্যাচ-১২
রেজি-৩৮২৮২
জেলা-ময়মনসিংহ
কাজ করছি হাতের তৈরি গহনা নিয়ে