আমার এগারো বছরের স্বপ্ন
সেই ছোট থেকেই নিজে কিছু করব। নিজে ইনকাম করে মা আর ছোট ভাই বোন দের মানুষ করার ইচ্ছা জাগে সেই সাত বছর বয়স থেকেই। কিন্তুু আমার মা আমাকে ভরসা করতে পারল না। মেয়ে তাই যত তারাতারি বিয়ে দেয়া যায় ততই ভালো। এই সমাজের বাবা মায়ের এটাই নাকি তাদের প্রধান কর্তব্য। তাই এস এস সি পাশ করে সবে কলেজের দরগরায় দারাতে না দারাতেই বিদায় করার জন্য উঠে পরে লাগল। অনেক বোঝানোর চেস্টার ফল বিফলে গেল। তাদের পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়ে দিল।
তখন ভেবেছিলাম কি হবে আর পড়াশুনা করে। যাদের নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখেছি তারাই আমাকে পর করে দিল।
অনেক অভিমান আর রাগ জন্মেছিল।
ভেবেছিলাম এইচ এস সি টা কোনো মতে দিয়ে আর পড়াশুনা করব না।
কিন্তুু এইচ এস সি দিয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিলান সংসার নামক চার দেয়ালেই বন্দি থাকব তখনই চার পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার চার পাশেই মাদক নামক ভাইরাসে ঘেরা। একটা পরিবার নাই যে এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছে। তারপর খেয়াল করলাম। এই ভাইরাস শুরু আমার চার পাশেই না আমার ঘরেও তখন সারা পৃথিবী ঘুরছিল। কি করব আমি কি করা উচিৎ আমার। কিভাবে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত করব। যেই সময় এত কিছু বুঝলাম। ঠিক ওই সময় আমার কোল জুরে আমার প্রথম ছেলে। ছেলের মুখের দিকে তাকালে আরও বুকের ভিতর কেমন করে ওঠে। কিভাবে নিজের সন্তান কে এই ভাইরাস থেকে দুরে রাখব। তাই আবারও পড়াশুনা শুরু করলাম।আমাকে ঘোরে বন্দি রাখলে চলবেনা।
প্রতিদিন কলেজে যাবার পথে দেখেছি অপেন ড্রাগ বিক্রি হচ্ছে। এই মরন বিষ ভ্যান ওয়ালারাও তাদের ঘাম জরানো টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছে। খুব ভয় আর কস্ট লাগত। তখন থেকে মনে মনে প্লান করেছিলাম কিছু একটা করব। এই ভাইরাস কিভাবে দুর করা যায়। প্রথমেই শশুরের কাছ থেকে অনুমতি চাইলাম। নিজের ইচ্ছের কথাটা যানালাম । তিনি হেসে বলল তুমি এটা কিভাবে করবে মেয়ে মানুষ।
এই একটা কথাই আমাদের কে দুরে ঠেলে দেয়। কিন্তুু আমি পিছিয়ে পরিনি। মনে মনে খুজে চলেছি কি করলে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত করতে পারব এই পার্বতিপুর শহর কে।
যার কাছেই পরামর্শ চাই সেই বলে যতদিন এই মাদক দেশ থেকে উৎপাদন বন্ধ না করছে। ততদিন সম্ভব না।
কিন্তুু এটাওতো সম্ভব না।
এগারো বছর শুধু ভেবেই গিয়েছি আর চারপাশে মানুষের আহাজারি দেখেছি।
কিন্তুু যখন নিজের বলার মতো একটি গল্প গ্রুপের সদস্য হলাম। আমাদের প্রাণপ্রিয় স্যারের সেশন গুলো ফলো করলাম। তখনই মাথার ভিতর আইডিয়া খুজে পেলাম।
আমার এই শহরের তরুণদের যাদের আমি চিনি এমন কয়েকজন কে এই গ্রুপে এড করে দিলাম। তাদের কে আমার ভিশনের কথা যানালাম। তারা আমার কথায় রাজি হলো। আমি প্রতিদিনি তাদের সাথে কথা বলি আমি তাদেরকে বলেছি একটা গ্রুপ করতে। সেখানে কিভাবে মাদক থেকে মুক্ত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হবে। এবং সমাজে মাদকের কুফল সম্পর্কে
ধারণা দেয়া হবে। প্রথমে নিজের পরিবারকে তারপর সমাজে।
আগামী শুক্রবার এই নিয়ে একটা মিটাপ করব আমি নিজে।
আমার এগারো বছরের স্বপ্ন দিনাজপুর জেলার পার্বতিপুর থানাকে আমি আগামী 10 বছরের মধ্যে মাদক মুক্ত করব। আর এই সপ্ন আমি আমার চার পাশে তরুণদের কাজে লাগিয়েই পুরন করব ইনশাআল্লাহ।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন এই উদ্যোগে সফল হতে পারি।
এখন মানুষ যেমন বলে পার্বতিপুর ছেলেদের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিওনা। দশ বছর পর যেন সেই মানুষগুলোই বলে পার্বতিপুরের ছেলেরাই সোনার ছেলে।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 127
Date: 01.02.2020
হামিদা আক্তার
সপ্তম ব্যাচ
রেজিঃ 1660
জেলা ঃদিনাজপুর