তুমি এগিয়ে চলো আগামীর পথে এখনো অনেক পথ বাঁকি অনেক স্বপ্ন এখনো বাঁকি।
উদ্যোক্তা হলো সেই লড়াই, যে লড়াইয়ে নিজের জন্য কিছু থাকে না!
যা থাকে তার সবটুকু উদ্যোগের লালিত স্বপ্ন কে পূরনের জন্য।
কখনো কখনো মনে হয় আগের দিনগুলোই ভালো ছিলো,কেন যে উদ্যোক্তা হতে গেলাম?নিজের ভালো বেশ কয়েকটা ব্যাবসা ছিলো, বাজার মূল্যে পণ্য কিনে লাভ করে বিক্রি করতাম কোন টেনশন ছিলো না।পণ্যের মূল্য বেড়ে গেলে বেশি মূল্যে কিনে,বেশি মূল্যে বিক্রি,কোন লস নেই! স্বাধীন জীবনের আয়েশি ভাবনা।মন বললো তো দোকানে গেলাম না বললো তো বাড়িতে অথবা কোথায় আয়েশি হাওয়া লাগাতাম।
আর আজ উদ্যোক্তা হতে গিয়ে নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি কোন এক অজানায়।বাড়ির গিন্নিটার সাথে আর রশিক গল্পে সময় দিতে পারিনা।সময়ের খাওয়া টাও সময়ে হয়না।নিজের তো দূরের কথা কিংবা গিন্নির কোন শখটাও আজকাল আর পূরন করতে পারি না। বাবা মাকে সেই ভাবে সময় দিতে ব্যার্থ হচ্ছি সময়ে অভাবে।ভাই বোনদের সাথে আর কাছে বসে আড্ডা দেওয়াটাও হয়ে ওঠে না!কিন্তু এমন জীবন তো আমি চাইনি!যদিও সবাই আমার সফলতা চাই, আমি সবসময়ই পরিবার পরিজনের সবরকম সাপোর্ট পাই,তারা সবসময় আমার পাশে আছে এবং আমার ব্যাস্ততাকে সময়ের প্রয়োজনে মেনে নিয়েছে।
যদিও ক্লান্তি আমায় ভয় পায় তবুও আমি যেন এক একাকিত্বের পৃথিবীতে চলে যাচ্ছি কিন্তু কেন?
আজ আমাকে সকালে কর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে।দিনের প্রডাকশন টার্গেট পূরনের তাগাদা দিতে হচ্ছে।নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি ও ডিলার তৈরিতে কাজ করতে হচ্ছে। সব পার্টিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে। মার্কেটের সেলস্ কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে টার্গেট পূরনের জন্য কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন প্রডাকশন কস্টের দিকে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে।কখনো কখনো কাঁচামালের ক্রয় ও কোন না কোন মার্কেট পরিদর্শন করার জন্য সফর করতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় ফিরে প্রডাকশনের হিসেবটা নিতে হচ্ছে। সবাইকে ছুটি দিয়ে আমাকে আবার খাতা কলম নিয়ে বসতে হচ্ছে,
সব হিসেবের তথ্য টুকে রেখে আগামীকালের প্ল্যান করে রাখতে হচ্ছে। ঘড়ীটার কাটা যখন রাত ১২ টা ছুই ছুই। চারিদিকে নিস্তব্ধ নিশুতি আমি তখনো ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাববার সময়টুকু পাচ্ছি না। আমার স্বপ্ন তখনো মারওয়া নিয়ে আর নিজেকে প্রশ্ন করা মারওয়া সঠিক পথেই এগোচ্ছে তো?চুপিসারে যখন ঘরে ফিরি তখনও ঘুম ঘুম চোখে গিন্নিটা না খেয়ে বসে আছে আমার অপেক্ষায়। কত বলি অপেক্ষা না করার জন্য কিন্তু শোনে না কখনো!বুঝি এটা অপ্রকাশ্য ভালোবাসা আর সবই মেনে নিয়েছে আমার স্বপ্নটা যেন সফলতার মুখ দেখে।
আমি এগিয়ে যাচ্ছি ধৌর্য্যের সীমানা পেরিয়ে, দিনগুলো পার করছি কোন মুনাফা ছাড়াই,শুধু একদিন লাভবান হবো বলে।প্রতিনিয়ত কাঁচামাল দ্রব্যের মূল্যে বৃদ্ধিতে প্রডাকশন খরচ বেড়ে যাওয়া কিন্তু পন্যের মূল্য বৃদ্ধি না হওয়ায় এখনো ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে সাহস করে এগিয়ে চলছি সতর্কতার সাথে।আটমাস ফ্যাক্টরি চালু করে আজ পযন্ত সুনামের সাথেই কমিটমেন্ট রক্ষা করে চলছি কিন্তু ব্যাবসার টাকায় কোন শখ পূরন করতে পারলাম না। কারন এখনো নেওয়ার মতো বা খরচ করার মতো কোন লাভ কারতে পারছি না,যা খরচ আজ তাই বিক্রি। সাময়িক বন্ধ করার জন্য চিন্তাও করলাম কিন্তু কর্মীগুলোর দিকে তাকিয়ে পারলাম না।কিছু না হোক তাদের খরচটাতো উঠছে!অন্তত তারা সুখে থাক,একটু ভালো থাকুক নিশ্চিন্তে একটু স্বপ্ন দেখে ঘুমাক!আমার কর্মীগুলো কেউ বিধবা,
কেউ প্রতিবন্ধী,কেউবা বয়সের ভারে অন্য কারর অযোগ্য কিন্ত অভিজ্ঞতায় আমার কাছে অনেক বড় যোগ্য।আমি বন্ধ করে দিলে তার যে ঔষধ কেনাটা বন্ধ হয়ে যাবে,কারন তার সন্তানরা তাকে ঔষধ কিনে দেয় না!আমার ভরসায় মানুষটাকে থাকতে হয়।
মার্কেটে কাজ করা বেকার যুবকটার স্বপ্ন মাস শেষে মারওয়াকে ঘিরেই! তাই আমি পারিনি সাময়িক বন্ধ রাখতে।
আজ আমার ছোট ছোট প্রয়োজন গুলো,ভালোবাসার মানুষের স্বপ্ন গুলো পূরন না হলেও,আমার কাছে স্বপ্ন নিয়ে আসা মানুষ গুলোর ছোট ছোট প্রয়োজন আর স্বপ্ন গুলো পূরন হচ্ছে এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
এই লিখাটা যখন লিখছি তখন অনেক রাত,চারদিকে নিস্তব্ধ নিশুতি আমি একা একলা জেঁগে।খুব কষ্ট বুকটা আঁটকে উঠছে খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি পারছি না। চোখটা নোনা জ্বলে ঝাঁপসা হয়ে আসছে! উদ্যোক্তা জীবনটা যে প্রথম দিকে কতটা কষ্টের আগে বুঝিনি, কতটা ধৌর্যের কখনো কল্পনা করিনি!
অনেক কথা আছে এই কয়েক মাসের পথ চলায় যা আজ আর প্রকাশ করতে পারছি না চক্ষু লজ্জায়!যা খুব কষ্টের, খুব যন্ত্রণার,খুব আবেগের। কিন্তু এটাই হয়ত একদিন আমার জন্য গর্বের, অহংকার দিয়ে বলার মতো,ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে স্বাক্ষ দিবে আর সেই দিনের জন্য আজকের বলতে না পারা কথাটা না হয় রেখেই দিলাম।
কখনো কখনো মনে হয় কালকের দিনটিতে মনে হয় আর চলতে পারব না।আজ এখানে এই পযন্তই সবকিছু শেষ করে ইতি টানতে হবে।মনের অজান্তেই ভাবি,নিজেকে সফল করতে পারিনি তাতে কি সবার জন্য তো অভিজ্ঞ হয়ে পরামর্শ দিতে পারব,পারব কাউকে না কাউকে সফলতার পথ দেখিয়ে দিতে।
কিন্তু না!স্বপ্ন আর সাহস আমাকে জাগিয়ে তুলেছে,অনিশ্চিত আগামীর দিনটি আবার শুরু করতে পেরেছি। এটাই আমার কাছে আলহামদুলিল্লাহ।
আর সফলতার জন্য প্রথম সফলতা।
উদ্যোক্তা জীবনে ভেঙে পরিনি এমন টা না।নানান চ্যালেঞ্জ,বাঁধা প্রতিবন্ধকতা ও চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পথ হাটতে হচ্ছে।এই চলার পথে কখনো হয়ে যাচ্ছি প্রতিদ্বন্দী ব্রান্ডের সুচতুর কুট কৌশলের স্বীকার।কখনো কখনো আমিও যেন ক্ষনিকের জন্য হাল ছেড়ে বাঁচতে চেয়েছি কিন্তু আমার স্বপ্ন আমাকে ছাঁড়তে দেয়নি।
যখন মনটা হতাশায় মগ্ন হয়ে যায় তখন একাকি এক কোনায় বসে আমার প্রিয় মেন্টর,প্রিয় স্যার ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ইউটিউব এর কথা গুলো শুনি।গল্পগুলোর কথা বারবার শুনি,কথা গুলো বারবার মন দিয়ে শুনি।গ্রুপের সংগ্রাম করা ভাই বোনদের লেখা গুলো বারবার পড়ি।আর এই লেখা গুলো পড়ার মধ্য দিয়ে আমি আবার জেগে উঠার শক্তি খুঁজে পাই। নতুন উদ্যোম খুঁজে পাই।
আবার নিজেকে বিদ্রোহী করে তুলি।
জেঁগে উঠো রুপক তুমি জেঁগে উঠো।
থেমে যাওয়াটা তোমার জন্য না।
তুমি উদ্যোক্তা তোমার স্বপ্ন আছে আকাশ ছোঁয়ার। তুমি এগিয়ে চলো আগামীর পথে এখনো অনেক পথ বাঁকি।অনেক স্বপ্ন এখনো বাঁকি।
তুমি জেঁগে উঠ রুপক। থেমে যাওয়াটা তোমার জন্য না।
নতুন উদ্যোক্তাদের বলব।জেগে জেগে কখনো স্বপ্ন দেখবেন না।স্বপ্ন দেখবেন কাজের মধ্যে দিয়ে। কখনো লাভ আছে জেনে কোন কাজে হাত দিবেন না। আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করে কাজ শুরু করবেন।ইউটিউবে বা কারর দেখাদেখি- দেখে কোন ব্যাবসা শুরু করবেন না, ব্যাবসা শুরু করবেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে।
কখনো হুট করে বড় ইনভেস্টে যাবেন না, ছোট ছোট করে শুরু করে সময়ের প্রয়োজনে বড় করবেন।
আর কখনোই ভেঙে পড়বেন না।ভেঙ্গে পড়লে স্যারের ইউটিউবের কথা গুলো মন দিয়ে শুনবেন। গ্রুপের সদস্যদের জীবন গল্পের চড়াই- উৎরায়ের সংগ্রামের গল্প শুনবেন,
দেখবেন আপনি অনেকটাই শক্তি আর সাহস পাবেন, পাবেন স্বপ্ন বুনার মতো প্রেরনা।
জীবনের জন্য স্বপ্ন।
জীবনটা জোয়ার ভাটার মতো এক সমীকরণ কখনো কখনো মনে হয় সবকিছু এখানেই শেষ,কালকের জন্য আর কিছুই নেই কিন্তু জীবনটা আসলে তা নয়।বরং কালকেরটা আরও সুন্দর আরও সহজ,শুধু সাহস করে জীবনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হয়।
আগামীকালের স্বপ্নটা আজকেই দেখতে হবে,তবেই আগামীকালের কাজটা সফল হবে।স্বপ্ন ছাড়া কখনো সফলতা আসে না। সফলতার জন্য স্বপ্ন দেখতেই হবে।
স্বপ্ন বেঁচে থাকার জন্য,সফলতার জন্য সাহস যোগাবে।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৮০
Date:- ১০/০৩/২০২১
মোঃ-ইব্রাহিম খলিল(রুপক)
কর্মীঃ-
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
নবম ব্যাচ
রেজিঃ-১০৫১৯
উদ্যোক্তাঃ-
মারওয়া ন্যাচারাল এগ্রো ফুড প্রাঃ লিঃ
মিরপুর কুষ্টিয়া।