রাত ১২টার পর হবে,কাজ শেষে মোটরসাইকেলযোগে যখন ফিরছিলাম তখন গাড়ির সমানে এক ব্যক্তিকে
আসলে মানুষের জীবন খুবই বিচিত্র ময়, নানান রকম ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জীবন অতিবাহিত করি। তার মধ্যে কোন কোন ঘটনা বা কোন কোন স্মৃতি সারা জীবন মনে থাকে,যা কখনো চাইলেই ভুলা যায় না এবং আমরা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করতে পারি। সেরকমই একটা কথা আজকে আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করব।জানিনা আমার এই বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আপনাদের মনে কতটুকু দাগ কাটবে,তবে আমি মনে করি এটা আমার নিজের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
বছরখানেক আগে আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র মানবসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করি। হঠাৎ একদিন দুপুরে এমডি স্যার আমাকে ডেকে বললেন একটি প্রজেক্টের কাজে দুই মাসের জন্য বগুড়া যেতে হবে। আসলে সেই সময় আমার কোন প্রস্তুতি ছিল না, বা আমি কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। অফিস থেকেই সোজা বগুড়ার বাস ধরতে বলা হলো। কাজটা এতো কঠিন হবে যে আমার ধারণার মধ্যেও ছিল না। প্রতি মুহুর্তে আমাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে; সেটা ঢাকা অফিসের জন্য হোক বা যে প্রতিষ্ঠানের জন্য আমার যে প্রতিষ্ঠান কাজ করছিল তাদের চুক্তি বিভ্রাটের কারণে।
আমি ওই রাতেই বগুড়া চলে যাই। সময়টা শীতকাল ছিল। প্রথমত আমাকে প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গ মানিয়ে নিতে যুদ্ধ করতে হয়েছে।মানিয়েও নিয়েছিলাম।
একরাতের গল্প আপনাদের শোনাব একেবারে ঘটনা টা আমার জীবনে অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে গেছে। হয়তো আপনাদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি শতপ্রতিকূলতা পেরিয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগাতে পারে।
বগুড়া যাওয়ার ছয় দিন পরে রাত সাড়ে ১০টায় কাজের সাইট থেকে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে ফোন এলো। আমি হতভম্ব হয়ে পড়লাম। কনকনে শীতের রাত হওয়ায় একটু বেশি ভয়ও পাচ্ছিলাম। তারপরও সমস্যা সমাধানে সুপারভাইজারকে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। কাজের সাইটে গিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে সমস্যার সমাধানও করলাম। কিন্তু সমাধান করতে করতে প্রায় মধ্যরাত হয়ে গেল। তখনও রাতের খাবার কোথায় সারব সেটা নিয়েও চিন্তায় ছিলাম। এখানে বলে রাখি আমরা কিন্তু যাওয়ার সময় রাতের খাবারটা খেয়ে যায়নি।
সময়টা রাত ১২টার পর হবে,কাজ শেষে মোটরসাইকেলযোগে যখন ফিরছিলাম তখন গাড়ির সমানে এক ব্যক্তিকে সিগন্যাল দিতে দেখলাম। প্রথমে ছিনতাইকারী বা ডাকাত ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম। তারপরও গাড়ি থামালাম, দেখলাম ওই ব্যক্তি হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছেন। সমস্যা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার কাভার্ড ভ্যান ইউটার্ন নিতে গিয়ে বালির মধ্যে আটকা পড়েছে। কোনোভাবে সেখান থেকে আনতে পারছেন না। ওই ব্যক্তির কান্নার কারণ ছিল, মহাজনের চোখ রাঙানি। কারণ কাভার্ড ভ্যান গ্যারেজে না নিয়ে গেলে মহাজন তাকে নানাভাবে হয়রানি করবে। সমস্যা শোনার পর আমি ও সুপারভাইজার তাকে সহযোগীতা করতে যাই। প্রায় দুই ঘণ্টার অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে আমরা তিনজন সফলতার সঙ্গে কাভার্ড ভ্যান বালি থেকে তুলতে সক্ষম হই আলহামদুলিল্লাহ।
এরপর যখন বিদায় নিতে যাব তখন সবচেয়ে বেশি বিষ্মিত হই। ওই ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে আমাদের গলা জড়িয়ে কান্না করছিল। সত্যিই সেই মুহূর্তটা কখনো ভুলবার নয়, তারপর আমাদের অবাক করে দিয়ে উনি আমাদের তার বাড়িতে রাতের খাবার খেতে অনুরোধ করলেন. আমরা কিছুটা অবাক হলাম যে অচেনা লোক চিনিনা জানিনা সে আমাদেরকে তাঁর বাড়িতে খাবার খাওয়ার জন্য ইনভাইট করতেছেন।এই প্রথম কারো উপকার করে কেদেছিলাম।
যেখানে কোথায় রাতের খাবার খাবো সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম সেখানে ওই ব্যক্তির এমন প্রস্তাবে কিছুটা হতবাক হলাম। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের জন্য ওই ব্যক্তির বাড়িতে খাওয়ানোর মতো কোনো প্রস্তুতি ছিল না. তাছাড়া তখন গভীর রাত এটা চিন্তা করে আমরা যেতে রাজি হচ্ছিলাম না। তবে তিনি আমাদের রাতে খাওয়ানোর জন্য নাছড়বান্দা।উনার এই আকুতি দেখে অবশেষে আমরা উনার বাড়িতে খাবার খেতে রাজি হলাম। তিনি তার স্ত্রীকে ফোন করে আমাদের জন্য ভাত রান্না করে রাখতে বলেন,সেঙ্গ যা আছে তা গরম করে রাখতে বললেন।
কোনো উপায় না পেয়ে আমরা ওই রাতে তার বাড়িতে খেতে গেলাম। এবং খাওয়ার সময় চিন্তা করছিলাম, আল্লাহ কার রিজিক কোথায় রেখেছেন তা সময় না আসা পর্যন্ত কোনোভাবে বুঝা সম্ভব না। আর ওই সময় তাকে উপকার করে মানসিকভাবে যে তৃপ্তি পেয়েছিলাম সেটার কোনো পরিপূরক এখন পর্যন্ত আমি খুঁজে পাইনি।
আমাদের স্যার প্রায়ই একটা কথা বলেন,
" মানুষের জন্য কাজ করলে জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না "
এটার বাস্তব প্রমান কিন্তু আমি।আমি নিজে সবসময় চেষ্টা করি অন্যের উপকার চেষ্টা করি, ইনশাআল্লাহ আমার দ্বারা অব্যাহত থাকবে । তাছাড়া এখন যেহেতু নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে আছি আরো বেশি বেশি ভালো কাজ করার প্রত্যয়।
আমার লেখায় কোন ভূল এূটি থেকে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সবিনয় অনুরোধ রইল এবং যারা আপনাদের মহা মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার লিখাটি পড়ছেন তাদের কাছে আমি চির কৃতঙ ।
আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালবাসায় আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই সবসময় আপনাদের পাশে চাই যাতে করে আমি জীবনে সফল হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।আমিন....
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৮৩
Date:- ১৩/০৩/২০২১
নাম : জাহানঙ্গীর আলম
ব্যাচঃ ১২ তম
রেজিস্টেশন : ৪৩৫৯৮
ব্লাড : বি +
জেলা : সিলেট