সন্তানকে হারিয়ে এতটাই মুমুর্শ হয়ে গেলো যে সে আর চারিদিকের কিছুই দেখতে পেলোনা।
🕋🕋 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 🕋🕋
❤️❤️❤️ আসসালামু আলাইকুম ❤️❤️❤️
🌹🌹লিখার শুরুতেই আমি শুকরিয়া জানাই মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে ।যিনি আমাকে সৃস্টি করেছেন তার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসাবে।এবং বর্তমান সময়ের চলমান সৃষ্ট মহামারী" করোনা"(covit 19) ভাইরাস,এর মত দুর্যোগ পুর্ন মুহুর্তে ও আমাকে, আমার পরিবারকে এবং আমার প্রিয় প্ল্যাটফর্মের সকল ভালো বাসার মানুষদেরক সুস্হ ও ভালো রেখেছেন।
🌹🌹আমি চির ঋনি আমার জন্মদাতা পিতা ও গর্ভ ধারীনি মাতার কাছে, যারা আমাকে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। এবং তাদের সব আদর ভালো বাসা উজাড় করে দিয়ে বড় করে তুলেছেন।
🌹🌹বিনম্র শ্রদ্ধা ও চির অম্লান অসীম কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরন করছি জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান ৭১'র রনাঙ্গনের অকুতোভয় দুঃসাহসী শহীদ বীর মুক্তি যোদ্ধাদের, যাদের তাজা রক্তের উপর দাড়িয়ে আজ আমি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সন্মানিত নাগরিক।
🌹🌹তারপর,যার অমর সৃষ্টি লাখ লাখ তরুন,তরুনীর চোখে আশার আলো, যিনি লক্ষ কোটি বেকার যুবকের স্বপ্নদ্রস্টা,তার আপন আলোয় উদ্ভাসিত উদ্দোক্তা তৈরির কারিগর," নিজের বলার মত একটা গল্প "ফাউন্ডেশন। জীবন্ত কিংবদন্তি মাননীয় মেন্টর, আমাদের সকলের প্রিয় শিক্ষা গুরু, জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে আমি শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্বরন করছি।
🌹🌹তিনি আমাদের কে উপহার দিয়েছেন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা আমাদের "নিজের বলার মত গল্প গুলো অনায়াসে একে অপরের সাথে খুব সহজেই সেয়ার করতে পারি। বোনাস হিসাবে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম একটা ভালো মানুষের মিলন মেলা।রয়েছে অগনিত মানবতার সেবক মানবতার ফেরীওয়ালারা।তাদের কে স্বরনে রেখেই আমি আমার নিজের বলার মত একটা গল্প শুরু করছি।
🌹🌹আমার মা বাবা এবং বড় ভাই সহ পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে থাকে। আর আমার চাকুরী ও ব্যবসার সুবাদে, আমি ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাস্হ ভাদাইলে থাকি। আমার স্ত্রী দুই ছেলে এক মেয়ে। আমার মেয়ে ২০২১ সালের এস,এস,সি পরীক্ষার্থী। আর বড় ছেলে ক্লাশ ওয়ানে, মেয়ের বয়সঃ ১৫ আর বড় ছেলের বয়সঃ৮ বছর ছোট ছেলের বয়স ৩ বছর।
🌹🌹আমাদের ছয় ভাই বোনের মধ্যে আমি ৪র্থ।আমার বড় ছেলের বয়স যখন ৫ বছর তখনকার ঘটনা।আমার ছেলেটা জন্মের পর থেকেই খুবই চঞ্চল প্রকৃতির।ওর বয়স যখন ১ বছর তখন সবে মাত্র কথা বলা শুরু করেছে, আব্বা আম্মা দাদা দাদী এসব বলা শিখেছে। যখন ২ বছরে পা দিলো তখন থেকে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো।এবং ওর চঞ্চলতা আরো বেড়ে গেল। হঠাৎ দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসে। এজন্য অনেক সময় অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়।যেমন হঠাৎ একদিন খুব ভোরে এভাবে দৌড় দিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এমতবস্তায়,বিপরীত দিক থেকে আসা প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। ভাগ্যিস ড্রাইভার ওকে দেখতে পেয়েছিলো এবং ড্রাইভার আমার পরিচিত ছিল। সে যাত্রায় বেচে গিয়েছিলো তা না হলে কি যে হতো আল্লাহই ভালো জানেন।
🌹🌹এরকম ঘটনা ওর সাথে অসংখ্য বার হয়েছে। এভাবেই চলতে লাগলো, তার কিছু দিন পর শুরু হলো মাটি খাওয়া। ওর মা ওকে খুব চোখে চোখে রাখতো তা সত্বে ও মাটি খাওয়া, পাথর খাওয়া, দেওয়াল চাটা এসব এভাবেই চলতে থাকলো।মানে একের পর এক বিপদ লেগেই থাকলো। সাথে কথা বলা ও একদম বন্ধ হয়ে গেলো, কিন্তু ওকে নাম ধরে ডাকলে শুনতো, কিন্তু মুখে জবাব দেয়না।আমার স্ত্রী ছেলের এই এমন অবস্হায় খুবই হতাসায় ভেঙে পড়লো।ছেলেকে কোন অবস্থায়ই একা রাখতো না।সে আল্লাহর কাছে ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে দোয়া চাইত।আমি তাকে শান্তনা দিয়ে বললাম, চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
🌹🌹এ সময় আবার তার মা মানে আমার শ্বাশুড়ি মারা গেল।এক দিকে মায়ের মৃত্যু অন্য দিকে ছেলের এই অবস্থা একেবারে বিমর্শ হয়ে ভেঙে পড়লো বেচারী সে ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছে, মা ই তার একমাত্র আপন জন ছিলো। সেও আজ পরপারে চলে গেলো এতিম হয়ে গেলো, তাকে শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা নাই আমার কাছে। সব মিলিয়ে এক অসহায়ত্ব তাকে ঘিরে ধরলো।সবশেষ ভরসার জায়গাটা শুধু আমি।
🌹🌹এদিকে চারপাশের লোক জন বলাবলি করছে, ছেলেটা মনে হয় বোবা।এগুলো শুনে এক রকম চিন্তায় পড়ে গেলাম কি করা যায়। যে যা বলে তাই করতাম ৷ কেউ বলে পরীর আছর, তাই ফকিরের কাছে যাই,কেউ বলে নজর লেগেছে, আবার কেউ বলে বান মেরেছে। আবার কেউ বলে আল্লা জিহবা ছোট। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মন্তব্য শুনে আরো হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়লাম।কিছুতেই কিছু হচ্ছে না,কোন পরামর্শ কাজে আসছে না।নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে লাগলাম।
🌹🌹এক শুক্রবার ভোরে স্বপ্ন দেখলাম যে আমরা সিলেটে যাচ্ছি, এবং আমর ছেলে কথা বলছে। তারপর ফজর নামাজ আদায় করে,বাসায় এসে সিদ্ধান্ত নিলাম সিলেট যাবো হযরত শাহজালাল রঃ এর মাজার শরীফ জিয়ারত করবো।যেই ভাবা সেই কাজ, তার পরের দিন স্বপরিবারে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। জিয়ারত করলাম মাজার শরীফ,এবং দুই রাকআত নফল নামাজ আদায় করে ছেলের দোয়ার দরখাস্ত করলাম।
🌹🌹মহান মহান আল্লাহ তায়ালা মনে হয় আমার দোয়া কবুল করেছিলেন।আমরা বাড়িতে আসার পর থেকেই আমার ছেলে ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করলো। এবং এভাবে কিছু দিনের মধ্যে সে কথা বলতে লাগলো।আমি মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করলাম যে এত বড় একটা পেরেশানি থেকে তিনি আমাকে মুক্ত করেছেন।
🌹🌹চার বছরের মাথায় আমার ছেলে পরিপুর্ন কথা বলা শুরু করলো।কিন্তু চঞ্চলতা রয়েই গেলো সময় সুযোগ পেলেই বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসে রাস্তায়। সে প্রায় সকালে, এবং দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে খেলা ধুলা করতো পরে তার মা খুজে খুজে বাসায় নিয়ে যেত। এবং আমি লক্ষ করলাম ছেলের প্রতি সে একটু বে খেয়ালি হয়ে যাচ্ছে। আমার একটি ইলেকট্রনিকস এর দোকান ছিল, বাসা থেকে একটু দূরে। আমি তাকে কয়েকবার বলার পর ও সে একটু বেখেয়ালি রয়ে গেল। তখন আমি তাকে একটু শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটা উপায় বের করলাম।
🌹🌹একদিন আমি বাসা থেকে দোকানে যাওয়ার পথে দেখলাম ছেলে খেলাধুলা করছে। আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আমারবকোলে উঠলো।তার পর আমি ছেলেকে নিয়ে দোকানে চলে গেলাম।এবং কিছু খাবার কিনে দিলাম খাবার পেয়ে ছেলে খুবই খুশি হয়ে খাচ্ছে আর খেলাধুলা করছে। এদিকে দুই ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে ছেলে বাসায় আসছে না তাই তার মা খুজতে বেরিয়ে পড়লো।এদিক ওদিকে সব দিকে ভালো ভাবে খুজলো কিন্তু ছেলের সন্ধান মিললো না।মিলবেই বা কি করে ছেলে তো আমার কাছে।
🌹🌹সে একা খোজা খুজির পর যখন পেলোনা, তখন বাসার অনেকে মিলে খোজা শুরু করলো। কিন্তু কোথা ও খুজে পেলোনা। না পেয়ে অস্থির হয়ে পাগলের মত এদিক ওদিক ঘুরতে থাকলো। এ দিকে আমার দোকান একটু দুরে হওয়ার কারনে আমার এখানে আসতে পারে এটাও ভাবতে পারছেনা। এবং সে আমার কাছে ও বলতে পারছেনা।কারন আমি তাকে বহুবার সতর্ক করেছিলাম এব্যাপারে।ছেলেকে না পেয়ে বেচারী পাগল প্রায়। এভাবে দিক বিদিক ছুটা ছুটির এক পর্যায়ে তার মাথায় আর কোন কাজ করছিলো না।
🌹🌹সন্তানকে হারিয়ে এতটাই মুমুর্শ হয়ে গেলো যে সে আর চারিদিকের কিছুই দেখতে পেলোনা।ফলে এক মসজিদের পাশে বেহুশ হয়ে পড়ে যায়।তখন আমার এক পরিচিত লোক ফোন করে বললে, আমি গিয়ে দেখি যে সে পড়ে আছে।তাকে বাসায় নিয়ে আসি,এবং তেল পানি দিয়ে যখন জ্ঞান ফিরে আসে, জিজ্ঞেস করি হয়েছে সে কিছুই বলতে পারছেনা।শুধুই বলছে আআআ,আমার ছেলে।
🌹🌹বিশ্বাস করবেন না আমি তার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। তার কান্ড দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।শুধু টপ টপ করে চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।একজন মা তার সন্তানের জন্য এতটা পাগল হতে পারে, তাকে এভাবে না দেখলে আমি কোনদিন ও বুঝতাম না। বেচারী এতটাই শোকবিহবল হয়েছে যে কাঁদতে ও পারছেনা সইতে ও পারছেনা। লোকজন জড়ো হয়ে যাচ্ছে, যে এই দৃশ্য দেখছে, সে ই কাঁদছে। উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষের চোখে পানি ঝরছে।এমন একটি দৃশ্য দেখার জন্য আমি মোটে ও প্রস্তুত ছিলাম না।
🌹🌹মুহুর্তেই পরিবেশটা এমন হয়েছে যেন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আকাশ পাতাল এক হয়ে যাচ্ছে। আমি কি করে তাকে শান্তনা দিব ভেবে পাচ্ছি না।কি করেই বা বলি যে ছেলে হারায়নি, কি করে বলি যে ছেলেকে আমি দোকানে নিয়ে গেছি। শুধু তাকে একটু কাদতে দিলাম,কারন কাদলে মন হালকা হয়। তার মনের ভেতর যে ঝর বইছে, এই কান্নার মাধ্যমে হয়তো একটু হলে ও হালকা হবে।তখন আমি পাশের রুমের খালাকে বললাম, তাকে নিয়ে ঘরে শুইয়ে দিতে।
🌹🌹এই বলে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে
পারলাম না। চলে গেলাম দোকানে, যেতে যেতে ভাবলাম কাজটা মনে হয় ঠিক করিনি। সামান্য একটু শিক্ষা দিতে গিয়ে তাকে এত বড় কস্ট দিয়ে ফেললাম।আর এর জন্য আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত তাহলে নিজেকে কি করে ক্ষমা করতাম। বাচ্চাদেরই বা কি জবাব দিতাম।দোকান বন্ধ করে ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি খালা মাথায় পানি দিচ্ছে। আর সে শুধু কুকরে কুকরে কাদছে।
🌹🌹তাকে দেখে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে অপরাধী মানুষ বলে মনে হচ্ছে। আমি এই কাজটা না করলে ও পারতাম। ছেলে "আম্মু" বলে ডাক দিতেই বেচারী পানির মগটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না, কি আহাজারি, মনে হলো ছেলেকে ফিরে পেয়ে আকাশের চাদ হাতে পেয়েছে। চুমায় চুমায় আদর করছে।ছেলেকে ঠিক কত গুলো চুমা দিয়েছিল তার হিসাব করার সাহস পেলাম না। শুধু বোবার মত দাড়িয় মা ছেলের কান্ড দেখছি। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাদছে আর বলছে বাবা ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে এতিমের মত বেচে আছি।আর কয়েক দিন আগে আমার মা ও চলে গেলো।
🌹🌹জানিস বাবা মা মারা যাবার পর ও আমার ততটা খারাপ লাগেনি, কারন আমার মায়ের বদলে মেয়ে পেয়ছি, আর বাবার অভাব টা তোকে দিয়ে পূরন করছি।সেই তুই যদি হারিয়ে যাস আমি কি নিয়ে বেচে থাকবো বল বাবা বল।আর কখনো আমাকে রেখে কোথায় যাবি না। তখন কার সেই দৃশ্য টা যদি কাউকে দেখাতে পারতাম বা বোঝাতে পারতাম, আমি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছি আর ভাবছি। মা তো মা ই হয় পৃথিবীতে এমন সম্পর্ক কি আর আছে?হায় রে মায়ের জাতি এত মমতা এত স্নেহ এত আদর এত ভালোবাসা।
🌹🌹মায়ের মাঝে আল্লাহ কিছু দিয়েছেন। একেবারে অকৃত্রিম যার তুলনা সে নিজেই,কবির ভাষায় মা কথাটি ছোট্ট অতি,কিন্তু যেনো ভাই। ইহার চেয়ে নাম যে মধুর এিভুবনে নাই।মা ছেলের এমন একটি দৃশ্য আমাকে ভেঙে চুরমার দিলো, ওদের কাছ থেকে একটু আড়ালে গিয়ে নিচের দিকে মুখ করে বসে আছি,আর অনবরত চোখের জলে আমার শরীর ভিজে যাচ্ছে। ভাবছি মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মা যদি এমন করতে পারে, তবে আমি তো আমার মায়ের কাছ থেকে কত দিন যাবত দুরে আছি, আমার মায়ের মনটা কেমন করছে। নিশ্চয়ই আমাকে দেখার জন্য তার মনটা ছটফট করছে, নিশ্চয়ই আমার মা ও এভাবেই আমাকে আদর করতো।
🌹🌹মনে পড়ে গেল একদিনের একটা ঘটনাঃ আমার বয়সঃ ১৪ কি ১৫ হবে আমাদের দুই টি পালতোলা নৌকা ছিলো, যার একজন করে মাঝি আর ছয় জন করে মাল্লা থাকতো। মাঝি নৌকার বৈঠা ধরে বসে থাকতো আর মাল্লারা গুন টেনে গান গাইতে গাইতে হেটে চলতো।একবার গ্রীস্মের ছুটিতে আমাদের একটি পালতোলা নৌকা চার দিনের জন্য ঘাটে আসলো। আমরা মজা করে রাতে নৌকায় ঘুমাতাম।এমনই একদিন রাতে আমি একাই নৌকায় ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর রাতে স্বপ্নে দেখলাম তিন জন লোক আসলো, তারা অনেক লম্বা, পরনে ছিল জুব্বা আলখাল্লার মত পোষাক লম্বা দাঁড়ি ছিল তাদের।
🌹🌹তিন জন এসে আমাকে বললো বাবা আমরা নদীর ওপারে যাব, তুমি আমাদের পার করে দিবে? আমি বললাম ঠিক আছে, আপনারা উঠে আসুন আমি আপনাদের পার করে দিবো।তারপর আমি তাদের কে ওপারে নামিয়ে দিলাম। তিন জনের দুই জন নেমে গেল, আর পিছনের জন আমাকে মাথায় হাত দিয়ে বললো বাবা তুমি অনেক ভালো আমাদের পার করে দিয়েছো।এই নাও বলে কিছু একটা দিতে চাইলো।কিন্তু আমি না করলাম বললাম আসলে আমার কিছু চাইনা।এত রাতে
আপনারা একটু সাহায্য চাইলেন।আমি করলাম তাতে করে পয়সা নিতে পারিনা। তাছাড়া নৌকাটা আমাদের নিজস্ব।
🌹🌹আপনারা মুরুব্বী চাইলে আমার জন্য একটু দোয়া করবেন, তাতেই আমি খুশি। তখন উনি আমাকে বললেন,অবশ্যই দোয়া করি তুমি অনেক বড় হও।বাবা একটা কথা বলি কথা সব সময় মনে রেখ" কখনো নফসের অপচয় করোনা" ওনার এই কথার মানে আমি জানতাম না।কিন্তু কথাটা কেনো যেনো আমার হৃদয়ে গেথে গেলো।আর তখনি আমার ঘুম ভেঙে যায়,জেগে দেখি অন্ধকার এখনো কাটেনি।আবছা আলো নৌকায় আমি একা আর দেরি করলাম না।
🌹🌹আমি স্বপ্নে যা দেখলাম এটা মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। নৌকা থেকে নেমে জোরে পা চালালাম।বাড়িতে পৌছে দেখি মা পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করছেন।আর আমার মায়ের কোর আন পাঠ অত্যন্ত মধুর ও মিস্টি। এমন সুমধুর কোরআন তেলাওয়াত টুকু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলাম না। তাই মাকে আর বিরক্ত চিন্তা ও করলাম না। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের কোরআন তেলাওয়াত শুনছি মন মুগ্ধতার সাথে। মায়ের কোর আন পাঠ শেষ হলে সামনে গেলাম।
🌹🌹আমাকে দেখে মা তো অবাক,বললো বাবা কখন এলি, রাতে ঘুমাস নি? বললাম মা এই তো আপনি কোরআন পড়ছিলেন তাই বিরক্ত করিনি।পাগল ছেলে, তার জন্য বাহিরে দাড়িয়ে থাকবি নাকি।আমি বললাম মা আপনি তো দরজায় বসে কোর আন তেলাওয়াত করছিলেন, আর তাছাড়া আমার কাছে আপনার তেলাওয়াতটা খুবই ভালো লাগছিলো। কথাটা শুনে মা আমার দিকে যেই মমতা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন, সেই দৃশ্য আমি জীবনে কখনো ভুলবো না।
🌹🌹বলে রাখি আমি বারান্দার যেই ঘরটিতে থাকতাম। মা ঠিক তার পাশে প্রতি দিন মা সকালে ভোরে কোরআন শরিফ পাঠ করেন।আর এই মায়ের কোরআন শরীফ পাঠের শব্দ শুনেই আমার ঘুম ভাঙতো। কতটা মধুর সময় ছিল সেই দিন গুলি আজ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তার পর মাকে জিজ্ঞেস করলাম,মা নফস মানে কি?মাকে সব ঘটনা বলার পর মা বললেন।বাবা নফস মানে হলো চরিত্র। উনি তোমাকে এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে তুমি যেনো তোমার চরিত্রটাকে কখনো নস্ট না করো ।
🌹🌹মা আমাকে যা বলে ছিলো তা আজো অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে আসছি। ইনশাআল্লাহ নিজের চরিত্র এখনো হেফাজত করে রেখেছি। আমি নামাজের শিক্ষা আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। মা বলতো আমি লিখে লিখে নামাজের সব নিয়ম কানুন গুলো মুখস্ত করে নিতাম। সেই থেকে চেষ্টা করি নিয়মিত ভাবে নামাজ আদায় করার জন্য।মা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, কারন আমি আমার জীবনের যত কঠিন পরিস্থিতির সমাধান গুলো মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছি।
🌹🌹এই কথা গুলো যখন একা একা বসেভাবছিলাম তখন একটি হাত আমার কাধে,আর দুটি হাত আমার গলায় জড়িয়ে ধরা।মোটেও অবাক হলাম না।কারন আমি জানি এই হাত গুলো কার। সে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার আগেই আমি বললাম আসলে আমি কাজটা ঠিক করি নাই। আমি বুঝতে পারি নাই মায়ের মমতা সব কিছুর উর্ধে।সত্যি তুমি আজ আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে মা কি জিনিষ।না জানি আমার মা আমার জন্য এভাবে কত দিন কেদেছেন। যা আমি আমি জানার চেষ্টা ও করি নাই।
🌹🌹চোখের পানি মুছে ঘরে গিয়ে মা কে কল দিলাম, কিছুক্ষন পর মা কল রিসিভ করলেন। হ্যালো হ্যালো, কিরে বাবা কিছু বলবি? । হ্যালো কিরে বল বাবা আমি শুনছি। কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারলাম না।কি বলবো মাকে কিই বা বলা উচিত জানিনা।শুধু বুকটা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে। "আই লাভ ইউ মা" আই লাভ ইউ মা। আমার গলা দিয়ে কোন আওয়াজই বের করতে পারলাম না।অঝোরে বৃস্টির পানি মত কাদতে লাগলাম। মা বললো বাবা,কি হয়েছে তোর কথা বলছিস না কেনো। আমি শুধু বিড় বিড় করে
বললাম, আমি জানি না মা আমার কি হয়েছে,
আমি জানি না,,, আমি কি বলবো তোমাকে আমি
কিছুই জানি না,,,,।
🌹🌹ততক্ষণে ফোনটা কেটে গেছে, ওপাশ থেকে কল আসলো, কিন্তু রিসিভ করে কি বলবো। কিছু বলার সাহস পেলাম না। অবশেষে তৃতীয় বার আমার মেয়ে ফোন রিসিভ করে সব ঘটনা বলে। মা আমাকে শান্তনা দিয়ে বললেন,বাবারে পৃথিবীতে পরিবারের চেয়ে ভাল শুভাকাঙ্ক্ষী আর কেহ হতে পারে না।আমি মা যেখানে থাকিনা কেন।তোমার জন্য আমার দোয়া সব সময় মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকবে। বাবা, এখন নিশ্চই বুঝতে পারছো যে সন্তান তার মায়ের কাছে কত বড়
দামি জিনিস। কিন্তু আমরা সন্তানরা অনেক সময়
এগুলো বুঝতে পারি না।
🌹🌹আমার মা এখনো বেচে আছেন। আর তাই মায়ের দোয়া আমার মাথার উপরে আছে, কিন্তু যাদের মা নেই শুধু মাত্র তারাই বুঝে মা কি জিনিস। মায়ের মতন আপন এই পৃথিবীতে আর কে হতে পারে? না হতে পারে না।তাই মাকে ভালো বাসুন মায়ের ভালো বাসায় কোন কৃপনতা নেই, কৃত্রিমতা নেই। এটাই হলো আসল ভালো বাসা।আজ অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে।এই মায়ের সাথে ধর্ষনের মত জঘন্য অপরাধ করা হচ্ছে। যা একজন সন্তান হিসাবে নিজের পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করছে।মা যদি হয় বিবস্ত তবে সন্তান হিসাবে আমাদের বেচে থেকে লাভ কি।আসুন প্রতিবাদ করি যার যার জায়গা থেকে। মা জাতি কে সম্মানের সাথে মাথা উচু করে বাচাতে লড়াই করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব ও কতর্ব্য।
🌹🌹মা হোক প্রত্যেক সন্তানের মাথার মনি,কারন এই মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।ভালো থাকুক আমার মা, ভালো থাকুক "নিজের বলার মত একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের সকল ভালো মানুষের মা।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা। আমরা আমদের সকলের মাকে একটি বারের জন্য হলেও বলি। আই লাভ ইউ মা"।
🌹🌹আমি আমার মাকে যেমন ভালো বাসি, ঠিক
তেমনি, একজন মহান মানুষ অজান্তেই আমার
শ্রদ্ধা, ভালো বাসা, কৃতজ্ঞতা সহ অকৃত্রিম সম্মান
আমার হৃদয় থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন।যার জন্য
মনের অজান্তেই দোয়া ও গভীর শ্রদ্ধা চলে আসে
যে আমাকে একজন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য
সুস্বাস্থ্য, সুশিক্ষা, সুখ, ও সম্পদের সন্ধান দিয়েছেন। যার অনুপ্রেরনায় আজ আমি আমার" নিজের বলার মত একটা গল্প " লিখার উৎসাহ পেয়েছি। যার শিক্ষায় আজ আমি নিজের ভাগ্য বদলানোর সাহস পেয়েছি, সেই জীবন্ত কিংবদন্তি অসংখ্য রেকর্ডের বরপুত্র, প্রিয় মেন্টর, জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
🌹🌹যার অমর সৃষ্টি "নিজের বলার মত একটা গল্প" ফাউন্ডেশন না হলে আমার স্বপ্ন গুলো আজ অধরাই থেকে যেত। আজ আমার না বলা কথা গুলো আড়ালেই রয়ে যেত। তাই প্রিয় স্যারকে স্যালুড এমন একটি বিশ্ব সেরা ভালো মানুষের পরিবার আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।
এতক্ষণ মনোযোগ সহ কারে আমার লেখা টি পড়ার জন্য আপনাদের সকল কে অসংখ্য ধন্যবাদ
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫০২
Date:- ০৪/০৪/২০২১
🏵️🏵️🏵️🏵️ কৃতজ্ঞতায় আমি 🏵️🏵️🏵️🏵️
❤️ নামঃ মোঃ আব্দুল আলীম
❤️ গর্বিত সদস্যঃ নিজের বলার মত একটা গল্প৷ ফাউন্ডেশন।
❤️ কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
❤️ ব্যাচঃ দশম
❤️ রেজিষ্ট্রেশনঃ ১৮৪৮৩
❤️ রক্তের গ্রুপঃ এ/বি পজিটিভ
❤️ নিজ জেলাঃ শরীয়তপুর,বাংলাদেশ
❤️ বর্তমান অবস্থানঃ পোর্ট লুইস, মরিশাস
❤️ রেমিট্যান্স যোদ্ধা, দেশের অক্সিজেন