আর্থিক অনটন আর বৃদ্ধ বয়সে বাবার কষ্ট দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না সাথে ছিল আশেপাশের মানুষের কটু কথা।
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
আজ আমি আপনাদের বলব জীবনে যুদ্ধ করার এক বাস্তব কাহিনী। আমার জীবনের কাহিনী। চাইলে আপনারা এটা আমার জীবনের গল্প বলেও অভিহিত করতে পারেন। কিন্তু আমি বলব না। কারণ আমার জীবনের গল্প বলার মত সময় এখনো হয়নি।
আমিও চাই নিজের বলার মত একটি গল্পে নিজের গল্প খানা বলতে আমার লক্ষ্য পূরন হবার পর ইনশাল্লাহ বলব।
তবে আজ আমি বলছি আমার ছোট বেলা থেকে এই পর্যন্ত অতিক্রম করা জীবন কাহিনী। এই গ্রæপের সাথে যুক্ত হবার কাহিনী। গ্রুপ থেকে প্রাপ্ত ভালবাসা ভাল লাগার কাহিনী।
জন্ম স্থান ও পরিচয় ঃ
আমি হানিফ বেপারী। মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানায় ১৯৯৭ সালে একটি দরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। শুধু দরিদ্র নয় আমাদের পরিবার কে হতদরিদ্র বললেও ভুল হবে না। আমার ছেলে বেলা কিভাবে কেটেছে তা আমার খুব ভাল মনে নেই। শুধু মনে আছে বাবা সারা দিন কাজ করে ০১ কেজি চাল কিনতো আর আমি সেটা নেয়ার জন্য আসরে পরন্ত বিকেল টাইমে রাস্তায় এসে দাড়িয়ে থাকতাম। সেটা নিয়ে বাড়ি যাবার পর আমাদের খাবার তৈরী হত। আর এমনও দিন গেছে যেদিন আমাদের ঘরে কোন খাবার তৈরী হত না । সবাই না খেয়ে বা পানি খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এমন অভাব অনটনের মাঝেই কেটেছে আমার ছেলে বেলা।
শিক্ষাজীবন ঃ
আমার জীবনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অধ্যায় হল আমার পড়াশুনা। আমার লেখা পড়ায় আমার মনোযোগ অনেক ভাল ছিল। তাই অভাবের সংসার হলেও মা বাবা আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিল। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রিয় পাত্র হতে লাগলাম। ২য় শ্রেনিতেই ক্লাস রোল ০১ আয়ত্ত করে নিলাম। কিন্তু সঠিক গাইডলাইনের অভাবে ধীরে ধীরে তা হারিয়েও ফেললাম। ৫ম শ্রেনিতে রোল হল ০৬। সমাপনী পরীক্ষায় খুব ভালভাবে উত্তির্ণ হলাম। যেখানে সবাই গাড়িতে চড়ে পরীক্ষা দিতে যেত সেখানে আমি হেটে হেটে যেতাম। একসাথে দুইটা পরীক্ষা ছিল দুপুরে ২ টা সিঙ্গারা খেয়ে বিকেলের পরীক্ষায় অংশ নিতাম। আলহামদুলিল্লাহা খুব ভালভাবে উত্তির্ণ হয়েছি।
৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে ভালভাবেই কাটালাম। ৭ম শ্রেনীতে পড়াশোনা বন্ধ হবার উপক্রোম কিন্তু ধন্যবাদ তৎকালিন বাংলাদেশ সরকারকে ফ্রিতে উচ্চমাধ্যমিকে বই দেয়ার জন্য। যার ফলে আজ আমি অনার্স শেষ করতে পেরেছি। কষ্ট করে জে,এস,সি দিলাম এস,এস,সি দিলাম। অবশ্য এসএসসির ফরমপূরনের টাকাটা আমার নিজের জোগার করতে হয়েছিল। এর পর থেকে আমার নিজেরটা আমি সব নিজেই ব্যবস্থা করেছি। এর পর থেকে চলছে আমার জীবন নিয়তির নিয়মে। আস্তে আস্তে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে লাগলাম এখন আমি অনার্স ৪র্থ বর্ষে দীর্ঘ দেড় বছর যাবত করোনার প্রকোপে আটকে আছে আমার শিক্ষা জীবন।
হাতেখড়িঃ
২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী এস,এস,সি পরীক্ষা শেষ করে এসেই একটা বইয়ের দোকানে যুক্ত হয়ে গেলাম। টানা আড়াই বছর কাজ করলাম ২০০০ টাকায় সেখানে এইচ,এস,সি ও শেষ করলাম। বেতন বাড়ানোর কথা বললে করা শুরু করে খারাপ ব্যবহার। চলে আসলাম সেখান থেকে। এর পর থেকে শুরু হল আমার জীবনের খারাপ অধ্যায়। বেকার জীবন নিয়ে যুদ্ধ শুরু হল। এর পর একটি সিমেন্টের দোকানে ম্যানেজার হিসেবে থেকে হাতে যখন যা কাজ পাই তাই করি। রাজমিস্ত্রীও বাদ যায় নি । চালিয়েছি ব্যাটারি চালিত রিক্সাও। এর পর বোনের বিয়ের উদ্দেেেশ্য আমার সব পুজি শেষ করে দিয়ে বোনের বিয়ের আয়োজন করলাম।
জীবনের বীপর্যয় ঃ
বেকার থাকা অবস্থাই ভর্তি হলাম অনার্সে জীবন চলছে সাথে অনার্সও শুরু হল ডিপ্রিশন। আর্থিক অনটন আর বৃদ্ধ বয়সে বাবার কষ্ট দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না সাথে ছিল আশেপাশের মানুষের কটু কথা। যা আমাকে মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নিয়েছিল। দিনটা ছিল ১১ই এপ্রিল, শেষ মনে আছে আমি যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলাম আমার বাবা আমাকে বাচানোর জন্য কাকুতি-মিনতি করছে তার কান্না জড়ানো কন্ঠে সবাইকে ডাকার সেই কন্ঠোস্বর আজও আমার কানে বাজে। এর পর আর মনে নেই যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি শে-রে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ।
নিজের বলার মত একটি গল্পের সাথে পরিচয় ঃ
২০২০ সালে দশম ব্যাচ চলাকালীন আমার এই গ্রæপের সাথে পরিচয় হয়। করোনায় তখন সারা পৃথিবী স্তব্ধ আমার কাকা কালকিনি উপজেলা এম্বাসেডর আসরাফুল ইসলামের মাধ্যমে আমার গ্রæপের সাথে পরিচয়। কাকার কথা মত রেজিষ্ট্রেশও করি। কিন্তু তেমন গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নেইনি কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রুপের কার্যক্রম বোঝার পর এটাকে আকড়ে ধরলাম। আল্লাহর রহমতে একদিন এই গ্রæপে আমার সফলাতার গল্প বলবো সেটা সুধু সময়ের অপেক্ষা ।
জীবনে ঘুরে দাড়ানো অধ্যায় ঃ
এর পর থেকে শুরু হল আমার বেচেঁ থাকার লড়াই। ফিরে এসে শুরু করলাম একটা সিমেন্টের দোকানের ম্যানেজারি। সেখান থেকে মূলধন জোগার করে কিনেছিলাম একটা পুরোনো অটোরিক্সা দেড় বছর চালিয়ে বেশ ভালই ছিলাম মা-বাবার সাথে। পুরোনে হবার করণে বিক্রি করে দেই একমাস পর আমার অনার্স ফাইনাল এটাও বিক্রি করার পেছনে কারন ছিল। কিন্তু আমার কাছে তখন এই বাণীটি ছিল না যে, চাকরি ছাড়ার আগে ব্যবসাটা দাড় করান। তখন আমার কাছে ছিল না নিজের বলার মত গল্প প্লাটফর্ম অনুপ্রেরনা দেবার মত কেউ থাকলে হয়তোবা আরও ভালোর পথে এগুতে পারতাম।
ও বলতেই ভুলে গেছিলাম ইজিবাইক বিক্রি করার আগে বিয়েটা করে ফেলেছিলাম নিজেদের পছন্দে দুই পরিবারের সম্মতিতে। অনেকেই বলে বিয়ে করলে নাকি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আমার ক্ষেত্রেও কিছুটা হয়েছে। তবুও আমি কথাটা বিশ^াস করতে পারি না। আপনি রাস্তা দিয়ে হাটছেন হঠাৎ আপনার মায়ের ফোনে আপনি থেমে গেলেন পাশ কাটিয়ে একটুর জন্য গাড়িটা আপনার সাথে না লেগে পাশের গাছের সাথে গিয়ে লাগল। আমার মতে এটা হল ভাগ্য। আমি বিশ্বাস করি বিয়ের আগে আপনি যে কাজটা অলসতার জন্য বা অন্য কোন কারণে সাহস করে করতেন না কিন্তু বিয়ের পর সেই কাজটাই আপনি জীবিকার তাগিদে কিংবা অন্য কোন কারনে করতে সাহস করে লেগে থাকেন ফলে সফলতাটাও সহজে চলে আসে। আর আমরা বোকার মত বিয়েটাকে আর্শিবাদ হিসেবে গ্রহন করি। আর যাই হোক বিয়ে মানুষকে সফলতার পথে ধাবিত করে সেটা আমি বিশ্বাস করি ।
আমাদের বিয়ের পর পরই তার চাকরি হল মাদারীপুর আছমত আলীখান সেন্ট্রাল হাসপাতালে। কিছু দিন চাকরি করার পর শুরু হল করোনা আমার ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষাও মাঝামাঝি অবস্থায় স্থগিত আবার হতাশা হলেও ভেঙে পরিনি। নিজেদের সাধ্যমত চলতে থাকলাম দুইজনই। করোনার মাঝেও অনেক কষ্ট করে চলেছি । কিন্তু হতাশ হইনি। নিয়মিত মাÑবাবা, শ^শুর-শাশুড়ির খোজ খবর নিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সাধ্যমত। কিন্তু করোনার প্রকপে ছাটাই জনিত কারণে তার চাকরিও চলে গেল । এর পর ফিরে এলাম বাড়িতে । প্রায় এক মাস বেকার থাকার পর আমার কাজের সন্ধান পেলাম। এর কিছুদিন পর তারও চাকরি হয়ে গেল ভোলা জেলায়।
এখন আমি আমাদের কালকিনি উপজেলার বসুন্ধারা এলপিজি গ্যাসের ডিলারের ম্যানেজার ইনচার্জের দায়িত্বে সাথে কাজ করছি “উপায়” এর সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। আর সে ভোলার চরফ্যাশনে সেন্ট্রল ইউনাইটেড হাসপাতালে “সিনিয়র স্টাফ নাসর্” পদে কর্মরত আছে। মিলেমিশে চলছে দুজনের জীবন।
আলহামাদুলিল্লাহ, দুজনে মিলে বাবা মায়ের সাথে খুব ভাল আছি ।
সবচেয়ে বড় কথা আমারা দুজনেই এই গ্রæপের গর্বিত সদস্য। স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী চলছি সফলতার পিছনে। আমি আমার চাকরির পাশাপাশি আইটি ক্যারিয়ার গাড়ার লক্ষ্যে আমাদের জেলা এম্বাসেডর মেহেদী হাসান শুভ ভাইয়ের দেখানো পথে হাঠছি। প্লান আছে অবসার সময়ে দুজনেই ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করব। বাকীটা আল্লাহর সহায়, মা-বাবা ও আপনাদের দোয়া এবং আমার কর্মের গতির মাধ্যমে পারাব ইনশাল্লাহ।
মন্তব্য ঃ আমার এস, এস,সি পরীক্ষার পর আািম কাজ শুরু করেছিলাম কিন্তু আজও ভালোকিছু করতে পারিনি। খুব আফসোস হচ্ছে সেদিন কেন নিজের বলার মত গল্প প্লাটফর্ম ছিল না। আরও আগে কেন এই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হলাম না। জানি আফসোস করে কোন লাভ নেই, তাই তো আবার নতুন করে শুরু করেছি। আপনারা যারা এখনো সুপ্ত অবস্থায় আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন। ইনশাল্লাহ সফল হবেন। সময় নষ্ট করা যাবে না। সময় নিন,সময় দিন,সময় বদলাবে,সময়ই সব ঠিক করে দিবে।
তাই আমিও স্যারের সাথে সুর মিলিয়ে বলছি “বৃষ্টি সবার জীবনেই আসে, কিন্তু ভিজে কেউ কেউ” আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভেজার । আপনি ভিজবেন কি না সেটা আপনি সিদ্ধান্ত।
এক ওভারে ৬ টি বল ব্যাট হাতে আপনি ৩৬ রান নিবেন নাকি ৩০, ২৪, ২০, ১৬, ১২, ০৮, ০৪, নাকি ওভার শেষে ০ রানে ব্যাভিলনে ফিরবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।
আপনার প্রস্তুতির ওপর আপনার পারফরমেন্স নির্ভর করবে।
তাই তো বলি স্বপ্ন দেখুন, প্রস্তুতি নিন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই।
আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য রইলো অগ্রীম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫০২
Date:- ০৪/০৪/২০২১
শুভেচ্ছান্তে-
হানিফ বেপারী
দশম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশনঃ ১৯২৩০
মদারীপুর জেলা।
কালকিনি উপজেলা।