সারাদিন রিক্সা চালিয়ে যা উপার্জন হতো তা দিয়ে সংসার চালানোই অনেক কষ্ট কর হয়ে যেতো।
💠আমি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (আমির)আমি নিতান্তই গরীব পরিবারের সন্তান। আমরা দুই ভাই, কোনো বোন নেই। আমাদের পরিবারের আমিই প্রথম ও বড় সন্তান। আমার বাবা একজন গরিব রিক্সাচালক।
🌀সারাদিন রিক্সা চালিয়ে যা উপার্জন হতো তা দিয়ে সংসার চালানোই অনেক কষ্ট কর হয়ে যেতো। তার মধ্যেই আবার আমাদের দুই ভাইয়ের পড়াশুনা খরচ।বাবা এত খরচ মিটাতে না পেরে উঠায় আমাকে এক মাদ্রাসার এতিম খানায় ভর্তি করে দিলো। সেখানেই আমার থাকা খাওয়া ও পড়াশুনা। কিন্তু আমি ছিলাম আমার পরিবারের প্রতি দূর্বল। মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে একা কোথায় থাকতে পারতামনা। সে জন্য অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে এমনকি বাবার হাতে মাইরও খেয়েছিলাম।
💠আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে আমাদের সংসার চলে অনেক কষ্টে। মাঝে মাঝে আামাদের পরিবারে অভাব নিয়ে ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকতো। অনেক খারাপ লগতো। মনে হতো নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দেই। কারন এর ওর কথা তাছাড়া সংসারের ঝগড়া ঝাটি আর ভালো লাগতোনা। কিন্তু পরিবারের মায়ায় কোথাও বের হতামনা।
🌀আামাদের নিজস্ব কোন ঘর-বাড়ি ছিলোনা। অন্যের জমিতে থাকতাম। একদিন আমার বাবা খোজ পেলেন যে যাদের বাড়ি ঘর নাই তাদের সরকারি ভাবে ঘর বরাদ্দ দেয়। বাবা সেখানে গেলেন (টি,এন,ওঅফিসে) অনেক ঘুরাঘুরি ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০০৬ সালে আমরা একটি ঘর পেলাম শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে (বরগুনা জেলার অবস্থান খাকদন) নদীর তীরবর্তী এলাকায়।
💠 সেখান থেকে পায়ে হেটে শহরে এসে ক্লাস করতাম। অভাব অনটনের মধ্যদিয়েই ভালোই চলছিলো আামাদের সংসার। হঠাৎ ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর প্রলয়নকারি ঘূর্ণিঝড় সিডরে লণ্ডভণ্ড করে দিলো সমগ্র বরগুনা জেলা।
🌀তখন আমার বয়স ছিলো ১২ (বারো)। আমরা ছিলাম একেবারে নদীর পাড়ে ঘূর্ণিঝড় এর কবলে পড়ি আমরা, তখনই আমি প্রথম বারের মত ঝড়ের কবলে পরি।আমার চোখের সামনে অনেক মানুষকে দেখেছি আহত অবস্থায়, দেখেছি অনেক লাশও তবে হ্যা, কথায় বলে না যে, আল্লাহ যা করে বান্দার ভালোর জন্যই করে,ঠিক তেমনি,, ২০০৮ সালের এপ্রিল /মে মাসে বেসরকারি সংস্থা প্লান ইন্টারন্যাশলান বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় একটি প্রজেক্ট (এনএসএস) এর বাস্তবায়নে আমরা শিখতে শুরু করলাম।
💠ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে ও ভলান্টিয়ারিং। তখন থেকে আমি বিভিন্ন ভলেন্টিয়ারিং সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে আসছি। পাশাপাশি আমরা একটি দল গঠন করি এবং দলীয় ভাবে কাজ করতাম এবং করাতাম। বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে আমরা অনেক ট্রেনিং পাই পাশাপাশি নাটক এর ট্রেনিং গ্রহন করি। নাটকের এই ট্রেনিং গ্রহন করে আমি একজন ভালো অভিনয় শিল্পী পদ লাভ করি। এক পর্যায় আমি নাটক লেখা থেকে শুরু করে মঞ্চায়ন পর্যন্ত কাজ শিখে ফেলি।
🌀তারপর থেকে বিভিন্ন নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে আমরা মানুষকে নানান বিষয়ে যেমন দূর্যোগ, বাল্য বিবাহ, গর্ভবতী মায়েদের সেবা, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয় সচেতন করতাম এবং পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন এলাকায় অভিনয়/ নাটক করে উপার্জন করা শুরু করালম। একদিকে মানুষকে সচেতনও করা হতো অন্য দিকে আমরা আমাদের পড়াশুনার এমনকি আমাদের খরচও বহন করতাম।
💠কিন্তু এই নাটকে অভিনয় করতে গিয়েও সমাজের অনেকের কথা এমনকি পরিবারের ও অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। তাছাড়া এই নাটকে অভিনয় এর জন্য আমাকে বাবার হাতে মাইরও খেতে হয়েছে। তারপরও হাল ছাড়িনি। যখনি শুনেছি প্রোগ্রামের কথা লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে হাজির হতাম।
লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন চলা যায়। তাই পরিবারের বাধায় আর গেলাম না। গ্রামের লোক জনের কথা তাছাড়া মা-বাবার বকুনি আর ভালো লাগতোনা। তিক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
🌀যাই হোক সব কিছু মানিয়ে নিয়ে এস,এস,সি পরিক্ষা শেষ করলাম ২০১৫ তে এবং ২০১৭তে ইন্টারমিডিয়েট। আর ছোট ভাইটি ২০১৭ তে এস,এস,সি শেষ করে একটি দোকানে কাজ শুরু করে। আমাকেও বলছিলো কিন্তু আমি যাইনি। কারন আমি ভাবতাম এইচএসসি পাশ করে দোকানে কাজ করবো কেন? আমি ভালো অফিসে কাজ করবো। আসলে ওই কাজকে আমি ছোট মনে করছিলাম যেটা আমার বড় ভুল ছিলো তখন সেটা বুঝতে পারিনি।
💠তবে হ্যা আমি একটি কাজ ভালো করে আয়ত্ব করছিলাম সেটা হলো অভিনয়। স্বপ্ন দেখছিলাম একজন বড় অভিনেতা হব। সারা বিশ্ব আমাকে দেখবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। কারন কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পেতাম না বরং এটাই শুনতাম যে, "ছেড়া কাঁথায় শুয়ে লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখা বাদ দে,ভালোভাবে পড়াশুনা করে একটা চাকরি যোগাড় কর। কোন কিছু করতে হলে বা চাইলে টাকা লাগে নয়তো মামার জোড় লাগে। চাকরি ছাড়া কোন গতি নাই, এমন অনেক কথা বলতো,
🌀অনেকে। তা শুনতে শুনতে এক পর্যায় সেই চাকরির পিছনে শুটলাম কিন্তু কোথাও চাকরি পেলামনা। হঠাৎ একটি চাকরি পেলাম এন,জি,ও তে তাও মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবার আগের মত চাকরি খোজা শুরু করলাম। কোথায় কোনো চাকরি না পেয়ে পরিশেষে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে গত (১৫ই আগস্ট ২০২০) বর্তমানে ঢাকায় একটা গার্মেন্টস এ চাকরি পেলাম।আল্লাহর রহমতে অনেক কষ্টের মাধ্যমে চলতেছে। তারপরও হতাশায় কাটতেছে যদি এটাও যায় তখন কি অবস্থা হবে? তাই ভয়ে ভয়ে থাকি। আর হতাশা,,,,, সেতো লেগেই আছে। আমার জীবনে আরো অনেক কষ্টের কথা আছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি। যেহেতু এটা একটা প্রাইভেট গ্রুপ তাই এখানে প্রকাশ করতেও সংকজ বোধ হয়।
💠একদিন আমার ফেজবুক প্রোফাইলের নোটিফিকেশনে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর সেশন দেখতে পাই এবং শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর ভিডিও সেশন দেখে ভালো লাগলো। তারপর আমি কমেন্ট দেখা শুরু করি এবং আরো অনুপ্রাণিত হতে থাকি। পরে আমিও একটি কমেন্ট করি ফাউন্ডেশনে যুক্ত হবো বলে তখন, Mehedi Hasan Sahid রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জ এর ভাই আমার কমেন্টের রিপ্লাই করে এবং ম্যাসেঞ্জারে তার সাথে কথা হয়। সে আমাকে বলে দেয় যে আমি কিভাবে কি করবো। তার কথা মত সব কাজ সম্পন্ন করে আমি গত ১৬ই জানুয়ারি ২০২১ সালে #নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প ফাউন্ডেশনে চলমান ১৩তম ব্যাচে আজীবন সদস্য পদ লাভ করি।
🌀তারপর Mehedi Hasan Sahid আমাকে সাগরকন্যা বরগুনা জেলা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, প্রিয় ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর আরও এক জনকে পেলাম সে হলো প্রিয় Aal Mamun ভাই(কান্ট্রি এম্বাসেডর, মরিশাস) তার সার্বিক সহযোগিতায় আস্তে আস্তে এগুচ্ছি অনেক অজানাকে জানতে পেরেছি,শিখাচ্ছেন অনেক কিছু।আমার জীবনে চলার পথে আমার ভুল গুলো পদে পদে ধরতে পারছি।
প্রিয় এই ভাইকেও আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
💠এক সময় আমি ভাবতাম আমার এলাকায় কোনো কাজ নেই কোনো ইনকামের সুযোগ নেই, কিন্তু নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে এখন দেখতেছি আমার এলাকায় কাজের কোনো অভাব নেই। আমি সহ চাইলে আমার এলাকার তরুন-তরুণী বেকার মুক্ত হতে পারে।
🌀তবে হ্যাঁ,, একটা কথা না বললেই নয়, এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আমি আমাকে চিনতে পেরেছি। আমার নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি যেটা এখানে যুক্ত হওয়ার আগে ছিলোনা। আমি চাইলেই আমার কর্মসংস্থান আমি নিজেই তৈরি করতে পাড়ি। আমি এখন মনে করি যে, "হ্যাঁ আমার দ্বারাই সম্ভব, আমি পারবো"।
💠তাই #ইকবাল_বাহার_জাহিদ স্যার এর একটি স্লোগান,,,,,,,
🔘স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই।
এই স্লোগানকে বুকে ধারন করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করছি। ভাবছি অনলাইন বিজনেস করবো তাই, আপনাদের দো'য়ায় ১ম ও ২য় ধাপের কাজ চমৎকার একটি নাম ও লোগো ডিজাইন শেষ করেছি। এখন অতি শিগ্রই ৩য় ধাপের কাজ একটি পেইজ ক্রিয়েট করবো ইনশাল্লাহ। পাশাপাশি শেখাটা চালু রয়েছে। কারন স্যার একটি কথা বলছেন সেটা হলো, আগে শিখতে হবে তারপর শুরু করতে হবে।
🌀এতক্ষন আপনাদের মুল্যবান সময় ব্যয় করে আমার লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
লেখার মাঝে ভুলত্রুটি হলে নিজ গুনে ক্ষমা করার অনুরোধ করছি।
💠পরিশেষে সকলের কাছে দো'য়া ও সহযোগিতা কামনা করছি। যাতে আমি যেন নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে পারি এবং প্রানপ্রিয় ফাউন্ডেশনে সেচ্ছাসেবক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"-৫০৭
তারিখ :- ১১.০৪.২০২১
🔯মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (আমির)
🔯ব্যাচ নং-১৩
🔯রেজিস্ট্রেশন নং-৫৩০২৫
🔯থানা: বরগুনা সদর
🔯জেলা: বরগুনা
🔯বর্তমান অবস্থান: মিরপুর-১১,ঢাকা।