মনে হলো আাবার শরীরটা বেশি একটা ভালো যাচ্ছে না একটু অসুস্থ অসুস্থ মনে হচ্ছে।
গল্পের শুরুতে বলে রাখি আমি একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের খুবই সাধারন একটা ছেলে।
#আমি বেলাল শেখ বেলাল। আমাদের ফ্যামিলিতে সদস্য সংখা মোট ৫ জন #মা-বাবা আমি বোন ও ছোট একটা ভাই নিয়ে আমাদের পরিবার। আমদের এই ছোট পরিবারের চালিকা শক্তি ছিলেন আমার এক মাএ আমার বাবা। আমার বাবার উপার্জনের টাকা দিয়েই আমাদের ছোট সংসার কোন রকম চলে যেত। আমার বাবা ছিলেন পেশায় একজন কৃষক। মা ছিলেন গৃহিণী। ছোট থেকে বড় হওয়া আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামেই। সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে লালন পালন করেছেন। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিলো লেখা পড়া শিখে বড় হয়ে কিছু একটা করবো। আমি যেহেতো বড় ছেলে সেই হিসেবে আমার উপর দায়িত্ব ও বেশি নিজে কিছু একটা শুরু করে বাবাকে একটু অবস্বর দিবো।
যাই হোক #সময় টা ছিলো ২০১৬ সাল,,, বাবা কে খুব কাছ থেকে দেখলাম,,, মনে হলো আাবার শরীরটা বেশি একটা ভালো যাচ্ছে না একটু অসুস্থ অসুস্থ মনে হচ্ছে। বাবা অসুস্থ শরীর নিয়ে ও কাজে যেতেন। এই দৃশ্যগুলো আমার মনে অনেক কষ্ট পেতাম এই ভেবে যে বাবার বড় ছেলে হয়ে ও কিছু করতে পারছি না। নিম্নবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে আমি আমাদের পরিবারে অভাব অনটন সব সময় লেগেই থাকতো। ৩ বেলা ৩ মোঠো খাবার জোগার করতে যেখানে কষ্ট হয়ে যেতো সেখানে আমার লেখা পড়ার খরচ শালানো এটা চিন্তা ও করা যায় না।
তার পর ও খুব কষ্ট করে লেখা পড়া করতে হয়েছে মাঝে মধ্যে দিন মজুরের কাজ করে ২০১৬ সালে আমি এইচএসসি পাস করি। মা বললেন তোর বাবা তো অসুস্থ দেখনা ঢাকায় গিয়ে কোন কাজ কর্মের ব্যবস্থা করতে পারিস কিনা ? মায়ের কথা শুনে ভাবনায় পরে গেলাম। ভাবলাম হঠাৎ কি ভাবে ঢাকায় আসবো। ঢাকায় আসতে হলে তো পরিচিত জন কেউ লাগবে। তখন আমি আমাদের এলাকার কেউ ঢাকায় থাকে কি না খুঁজতে থাকি। ভাবতে লাগলাম কার সাথে ঢাকা যাওয়া যায়।
কারণ আমি এর আগে গ্রাম ছেড়ে কখনো ঢাকা যাইনি। জীবনের প্রথম ঢাকা যাবো, একা একা ঢাকাতে আসবো সাহস করতে পারছিলাম না। সেই জন্য কাউকে দরকার খুঁজতে খুঁজতে কয়েক দিন পর দেখি পাশের বাড়ির এক মামাতো ভাই ঢাকায় থাকতো সে বাড়িতে এসেছে। সে কোন এক সময় আমাদের বাড়িতে আসে এসে জানতে পারে আমাদের পরিবারে অনেক অভাব অনটন পরিবারের হাল ধরার মতো
আমি ছাড়া আর কেউ নেই।
তাকে আমি অনেক রিকোয়েস্ট করে বললাম ভাইয়া আমি ঢাকা যেতে চাই। আপনি তো দেখছেনই আমার ফ্যামিলির অবস্থা।
ঢাকায় গিয়ে কিছু করতে চাই,, তখন ভাইয়া বললেন তুই ঢাকায় গিয়ে কি করবি ? আমি বললাম ভাইয়া আমি জানিনা আমি কি করবো তবে এই মুহূর্তে আমার কোন একটা চাকরি বা কাজ বেশি প্রয়োজন । তখন ভাইয়া বললেন,, আচ্ছা আমি দেখছি তোর জন্য কিছু করতে পারি কি না।
পরের দিন ঐ মামাতো ভাই আমাদের বাড়িতে আসে
এসে আমাকে বলল তোমার জন্য অনেক কষ্টে একটি চাকরির ব্যাবস্থা করতে পেরেছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কি চাকরি ভাইয়া ?
মামাতো ভাই টা বললো সেনা কল্যাণ সংস্থা অফিসের পিয়োন। ভাইয়ার কথা শুনে আমি তো মহা খুশি।
কিন্তু সেই পিওন পোষ্টে চাকরি নিতে হলে তো টাকা লাগবে। টাকা ছাড়া চাকরি হবে না। সেই কথা শুনে মনটাই ভেঙ্গে গেলো।
তার পর ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কত টাকা লাগতে পারে। ভাইয়া বললেন ৪০,০০০ টাকা দিতে পারলে তোর চাকরিটা হয়ে যাবে।
আমি বললাম ভাইয়া এত টাকা কোথায় পাবো। আর আপনি তো নিজেই দেখছেন আমার ফ্যামিলির করুন অবস্থা। তিনি লাষ্টে বললেন ভেবে দেখো কি করবে বেতন কিন্তু মাসে ১৫,০০০ টাকা,,, থাকা ফি খাওয়া নিজের এই বলে সে চলে গেলো।
আমি আম্মু ও আব্বু বাড়িতে রাতে বসে চিন্তা করতে থাকি কি করা যায় ? আমাদের একটা ছোট গরু ছিলো আব্বু বললো গরু টা বিক্রি করে দেও দিয়ে চাকরি টা নাও। আমি বললাম এই ছোট গরু বিক্রি করে তো ৪০,০০০ টাকা হবে না বাকি টাকা কোথায় পাবো?
আম্মু বললো একটা ব্যাবস্থা হবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখো গরু টা কোন রকমে ৩০,০০০ টাকা
বিক্রি করলাম কিন্তু চাকরির জন্য লাগবে ৪০,০০০ টাকা --- বাকি টাকা কোথায় থেকে ব্যাবস্হা করবো এই ভেবে টেনশনে পরে গেলাম। এদিক সেদিক কোন ভাবেই বাকী ১০ হাজার রাকা জেগার করতে পারলাম না। পরে গরু বিক্রির সেই ৩০,০০০ টাকা নিয়েই আমি ও আমার আম্মু যাই ঐ মামাতো ভাই দের বাসায়।
গিয়ে সেই ভাই কে বলি ভাইয়া আমরা অনেক অসহায় অবস্থায় আছি । বাসার গরু বিক্রি করে কোন রকমে ৩০,০০০ টাকা ব্যাবস্হা করতে পেরেছি। এখন আপনি আমার চাকরির ব্যবস্থাটা করে দিলে অনেক উপকৃত হবো
ভাইয়ার হাত ধরে কাকোতি মিনতি করে বললাম ভাইয়া প্লিজ একটু ব্যাবস্হা করে দেন। এক পর্যায় উনি রাজি হয়ে গেলেন।
ভাবলাম চাকরিটা হয়ে গেলে আমার সংসারের অভাব অনাটন থেকে ফ্যামিলির সবাইকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারবো। আমার ঢাকা যাবার পালা পরের দিন আমি ওই ভাইটার সাথে ঢাকায় চাকরির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
যেতে যেতে রাত্রে গিয়ে ওই ভাইটার বাসায় থাকলাম
পরেরদিন সকালে আমাকে নিয়ে সেনা কল্যাণ সংস্থার অফিসে নিয়ে গেলেন এবং ওখানকার দালালের মাধ্যমে আমাকে ঢুকিয়ে অফিসে আমার হাইট মাপলেন তারপরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার বাসা কোথায় আমার পড়াশোনা কতদূর তারা আমার সার্টিফিকেটগুলো দেখলেন এরপরে বললেন পরের দিন থেকে চাকরিতে জয়েন্ট করবা। এই অফিসেই কাজ করবা। এবার দূর সম্পর্কের মামাতো ভাই টা আমাকে বলল তুমি এখানে থাকো আমি যাই কিছু হলে আমাকে ফোন করো, অফিসের পাশে কিছু থাকার রুম আছে আমাকে থাকার জন্য ওখানকার এক ব্যক্তি রুমের দিকে নিয়ে গেল রুমে গিয়ে ফ্লোরে একসাইডে জায়গা দেখিয়ে দিল দেন আমি ওখানে পরিষ্কার করে আমার বেডিং পত্র রেখে বিছানা তৈরি করলাম বিকেল গড়িয়ে আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হলো আমি দুপুরে কিছু খাওয়া-দাওয়া করিনাই খাওয়া-দাওয়া কোথায় করে কিভাবে কি আমি কিছুই জানতাম না।
বাইরে গিয়ে যে কোথাও গিয়ে একটা বিস্কুট খাবো সেটা ও আমার দ্বারা সম্ভব হয়নি। ঢাকা শহরে আমি নতুন। ঢাকা শহর সম্পর্কে আমার তেমন একটা ধারনা ও নেই। বাইরে তেমন কোন জায়গা চিনি না। কোথায় যাব দুপুর থেকে না খেয়ে রাত্রি ৮ টা পার করে দিলাম এভাবেই আমার অফিস থেকে অন্যান্য কর্মচারীরা আসছে এসে সবাই সবার মত বিছানা করে শুয়ে পড়ছে ৮:৩০এর দিকে বয়স্ক করে এক চাচা আসলো আমার পাশে তার বেটা সে বেড ঠিক ঠাক করতে লাগল মশারী ঠিক করা ছিল সবার জন্য এমন সময় আমার দিকে তাকাই আমাকে বলল বাবা তোমার বাসা কোথায় এখানে কবে আসছো ? আমি বললাম চাচা আমি আজ সকালে আসছি।
পরে চাচাকে আমি আমার পরিচয় দিলাম অশ্রুঝরা চোখে আমাকে জিজ্ঞেস করল তুমি খাওয়া দাওয়া করছো রাত্রে ? জিজ্ঞেস করতেই আমার চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি বেরিয়ে এলো। আমি বললাম না খাওয়া-দাওয়া করি নাই। চাচা বলল দুপুরে কি খাওয়া-দাওয়া করছো ?
আমি বললাম দুপুর থেকেই না খেয়ে আছি।
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলেন উনি আমাকে কোথাও থেকে এক বাটি ভাত সবজি আর ডিম এনে দিলেন দিয়ে বললেন এটা তুমি খেয়ে নাও রাত্রে কাল থেকে আমার সাথে গিয়ে খাবা মেছে।
পরদিন থেকে আমার অফিসে কাজ শুরু হল অফিসের স্যার দের চা আনা হুকুম সোনা কাগজপত্র তাদের এগিয়ে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ৫ দিন না যেতেই আমার নামে কমপ্লেইন আসে যে আমি কিনা স্যারদের ঠিকমত কথা শুনিনা আমি কিনা ঠিকমতো কাজ করতে পারিনা ওখানকার এক অফিস সহকারি কর্মচারী আমাকে বলে দিল তুমি কাল থেকে আর অফিসে এসো না। তুমি তোমার জিনিস পত্র নিয়ে চলে যাও। তোমাকে স্যারেরা বাদ দিয়ে দিয়েছেন।
এমন ধরনের কথা শুনে মনে হলো আকাশটা আমার মাথার উপর ভেঙ্গে পরেছে।
আর ভাবছি এখন আমি কি করবো ? শাকরি করবো বলে এতগুলো টাকা খরচ করে ঢাকায় আসছি। এখন স্যারেরা বলে আমার চাকরি শেষ।
কঠিন ভাবনায় পরে গেলাম, কোথায় যাব কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। পরে আমি আমার ঐ দূর সম্পর্কের মামাতো ভাইকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত বললাম যে, তারা আমাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এখন আমি কি করবো ?
এই কথা শুনে উনি একটু ইতস্তত করে আমাকে বললেন তুই কি করেছিস ? তুই হয়তো কোন দোষ করেছিস তুই কিছু না তো এই ভাবে তোকে চাকরি থেকে বাদ দিতে পারবেনা।
নিশ্চই কিছু একটা অপরাধ করছিস হয়তোবা সেই কারণে তোকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
পরে উনি আমাকে বললেন আচ্ছা আমি দেখছি তুই অফিসের বাইরের গেটের দোকানে বসে থাক এই কথা বলেই উনি ফোনটা কেটে দিলেন। অনেকক্ষণ সময় পেরিয়ে গেলো উনার কোন সাড়া নেই।
আমি আবার ফোন দিলাম উনি আমার ফোন রিসিভ করছে না। এমনি করে উনার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছি সময় কাটছে না টেনশনে। কি করবো বুঝতে পারছি না।
2 ঘন্টা পরে আমাকে ফোন দিয়ে বলল তুই যেখানে আছস সেখানে থাক, আমি আসতেছি। একটা সময় তিনি আসলেন এসে আমাকে সাৎে নিয়ে গিয়ে আমাকে 10 হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন তুই এই টাকাটা নিয়ে দেশে চলে যা,,,
বাকি টাকা অফিসের দালালরা খেয়ে ফেলেছে।
তখন আমি কাউকে কিছু বলতে ও পারছি না। তাকে কিছু করতেও পারছিনা। আমি শুধু কান্নাকাটি করছি ভাবলাম আমি দেশে গিয়ে কি করবো? এই এতগুলো টাকা শেষ হয়ে গেলো ভাবছি পরিবারকে কি বলে বুঝাবো?? যাক যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। এক পর্যায়ে দূর সম্পর্কের মামাতো ভাই টা আমাকে বাসে উঠিয়ে দিলো আমি বাড়ি চলে আসলাম।
আসলে বর্তমানে চাকরি দেওয়ার নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন সিটিগুলোতে এই ধরনের কাহিনী অহরহ ঘটে চলছে। আমি চাই আমার মতো এমন করে যেন কেউ প্রতারিত না হয়। কারন আমি ধোকা খেয়েছি,, আমার গল্পটা পরে অন্যেরা ও সতর্ক হয়ে যাবে।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৪৮৪
Date:- ১৫/০৩/২০২১
আমি বেলাল শেখ
নাটোর লালপুর থানা থেকে
রেজিষ্ট্রেশন - ২৬১৬৮
ব্যাচ -১১