কিছু সুখ-দুঃখ আর ঘটনা মিলিয়ে লিখবো আজকের গল্প।
✅ সাকসেস! সাকসেস!! সাকসেস!!! কি?
✅ আমি আজ নিজের জীবনের গল্প বলবো। যদিও নিজের জীবনের বলার মতো গল্প এখনো তৈরি হয়নি তবুও জীবনের যেটুকু পথ পাড়ি দিয়েছি সেখান থেকে কিছু সুখ-দুঃখ আর ঘটনা মিলিয়ে লিখবো আজকের গল্প।
✅ প্রথমেই বলে রাখি আমি এমন এক এলাকা থেকে বড় হয়েছি এটা সুন্দরবনের পরে বাংলাদেশের বন্য প্রাণীর বৈচিত্রের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভায়ারণ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত। নাম তার রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এখানে নেই কোন ভাল রাস্তা। নেই কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া। বলতে পারেন গহীন জঙ্গলের ভিতর ছোট্ট একটি গ্রাম।
✅ একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি, ক্লাস ফাইভ পাস করেছি কিভাবে মনে নেই। এক দিন আমার প্রতিবেশী সম্পর্কের এক মামা নাম তার জসিম আমাকে বললো_
- ভাগিনা কালেঙ্গা প্রাইমারি স্কুলতো পাশ করলা এখন মিরাশী হাই স্কুলে পড়ো। তুমি কি জানো হাইস্কুল কত দূর? ছ...য় মাইল দূর। পথে আছে করাঙ্গী নদী তাতে নেই পুল। আরো আছে পাঁচ-ছয়টা খাল এগুলোতেও পুল নেই। কিভাবে যাবা স্কুলে? সাইকেল চালাতে পারো?
- না আমি সাইকেল চালাতে পারি না।
- তাহলে তো তোমার কাম শেষ।
পাশে দাঁড়ানো ছিল আমার মামাতো ভাই জামাল। আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সে বলল আমার কোন সমস্যা নেই। আমি সাইকেল চালাতে পারি।(এখন তাদের অবস্থা একজন কৃষক অন্যজন ড্রাইভার)
✅ আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিভাবে স্কুলে যাব। স্কুলে না গেলে তো পড়তে পারবো না। আর মেট্রিক পাশ করাকে আমি সাকসেস মনে করতাম। আমি ভাবতাম যেকোনো মূল্যে আমাকে সাকসেস অর্জন করতে হবে।
✅ ক্লাস সিক্স, ক্লাস সেভেন, ক্লাস এইট কিভাবে পাশ করেছি জানিনা। কারণ রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে বাসস্থান হওয়ায় নিয়মিত স্কুলে যেতে পারিনি। যতটুকু মনে পড়ে তা হল পরীক্ষার আগের রাতে শুধু বই পড়তাম তারপর গিয়ে পরীক্ষা দিতাম এভাবে ক্লাস এইট পর্যন্ত পাস করলাম।
✅ স্কুলের রাস্তা পুরোটাই কাঁচা ছিল। রাস্তার মাঝে ছিল করাঙ্গী নদী নদীতে সেতু ছিলনা। সাঁকো ছিল। কিন্তু বৃষ্টির সময় সাঁকো ভেঙ্গে যেত। তখন কলাগাছের ভেলা বানিয়ে মানুষ পারাপার করা হতো। একদিনের কথা ভুলার নয় যেদিন বেলা ডুবে গিয়েছিল। সেদিনের কথা মনে হলে আজও গা শিউরে উঠে।
✅ স্কুল দূরে হওয়ার কারণে প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারতাম না। মাঝে মাঝে যেতাম। একদিন টঙ্গী নগরের হাওর নামক জায়গায় ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পড়লাম। তখন অবশ্য সাইকেল চালাতে পারতাম। সাইকেল সাথে ছিল কিন্তু কাদার কারণে সাইকেল সামনে নেওয়া যাচ্ছে না। সেদিন মনে হয়েছে যদি সাইকেল টা আমার সাথে না থাকতো তাহলে আমি একা হেঁটে যেতে পারতাম। আর এই সাইকেলটাকে সাথে আনতে কত যে কষ্ট হয়েছে, কত ফোটা চোখের পানি পড়েছে সেদিন রাস্তায় তা আমি নিজেও জানিনা।
✅ আর কষ্ট সহ্য করতে পারিনি তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে কোনো মূল্যে আমার সাকসেস দরকার। প্রয়োজনে বাড়ি ছেড়ে দিব। সিদ্ধান্ত নিলাম লজিং থাকবো। প্রয়োজনে পরের বাড়ীতে থেকে হলেও আমাকে সাকসেস ছিনিয়ে আনতে হবে।
✅ সাকসেস পাওয়ার আশায় ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পর বাড়ি ছেড়ে দিলাম। চলে গেলাম লজিংএ। রাণীগাওয়ে সাংবাদিক মুহিত চৌধুরীর বাসায় থাকতাম। তার মেয়ে দিবা এবং তার ভাগনা সাগরকে পড়াতাম এবং নিজে পড়তাম। এই বাড়ির মুরুব্বি জনাব আকল মিয়ার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি বলতেন নাতি আর যাই হোক তুমি পাশ করবেই।
✅ মেট্রিকে স্কুলের সেরা রেজাল্ট করে দেখি তাতেও সাকসেস নেই। ভাবলাম আইএ পাশ করলেই সাকসেস আসবে। চাকরি হবে। তাই শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে আইএ ভর্তি হয়ে গেলাম। অন্যের বাড়িতে লজিং থাকতাম এবং মন দিয়ে পড়াশোনা করতাম। পরীক্ষা হয়ে গেল।
✅ জনাব আজহার স্যার রেজাল্ট নিয়ে কলেজে আসলেন। আগে রেজাল্ট জানার জন্য আমি, রনি, সেকুল, শিপন, মোস্তাক, শিহাব, নুপুর, হ্যাপিসহ আরো অনেকে স্যারকে ঘিরে ধরি রেজাল্ট বলার জন্য। স্যার বললেন বলতো তোমরা কে কি পাবা? তখন সবাই বললো যে আমি এই পাবো সেই পাব কিন্তু আমাকে যখন জিজ্ঞেস করলেন আমি বললাম স্যার আমার উত্তরপত্রগুলো যদি আমি নিজেই মূল্যায়ন করি তাহলে 3.60 এর বেশি পাই না। স্যার বললেন, আজব ব্যাপার ছেলের কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই। স্যারের কথাগুলো আজও কানে বাজে।
✅ আইএও পাস করলাম তাও কলেজ সেরা রেজাল্ট নিয়ে কিন্তু সাকসেস পাইনি। সামনে আসলো অনার্স। অনার্স করলে নাকি সাকসেস পাওয়া যায়।
✅ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এমসি কলেজ সিলেট-এ অনার্সে ভর্তি হয়ে গেলাম। অনার্সের চার বছরের কোর্স ছয় বছর সময় নিল। তাও সাকসেসের আশায় কমপ্লিট করলাম।
✅ অনার্স কমপ্লিট করে দেখি মাস্টার্স নাকি করতে হয় সাথে। তাই সাথে মাস্টার্সও করলাম। এখন চাকরির জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু সার্টিফিকেট চাকরি দিচ্ছে না। তাই সাকসেস ও আসছে না। শুধু সার্টিফিকেট নয় সার্টিফিকেট এর সাথে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় সেটি তো আমার নেই।
✅ স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবো। শিক্ষক হতে এসে দেখি আমার জায়গা এখানে নেই। কারন আমার যে এনটিআরসি-এর নিবন্ধন সার্টিফিকেট নেই।
✅ নিবন্ধন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আবার পড়াশোনা করা শুরু। আবার নিবন্ধন পরীক্ষা। তারপর নিবন্ধন পাস। তারপর নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন। তারপর অনলাইনে কলেজ পর্যায়ে রিকমেন্ডেশন লেটার পেলাম।
✅ এই রিকমেন্ডেশন লেটার দিয়ে মাসুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করলাম। আমি মনে করি, আমি এখন সাকসেস। কারণ আর কিছু পাই আর না পাই আমার শিক্ষকতা কর্মের মাধ্যমে আমি এখন হাজারো হৃদয়ে বেঁচে থাকতে পারবো। ইনশাআল্লাহ।
✅ আমি মনে করি, আমি সাকসেস। কারণ_
🌺 রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে বাসস্থান হওয়া সত্বেও আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ছুঁতে পেরেছি।
🌺 মাস্টার্স পাশ করার পর আবার নতুনভাবে পড়াশুনা করে এনটিআরসিএ কেও ছুঁতে পেরেছি।
🌺 শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গর্ব করার মতো একটি প্রভাষক পদ পেয়েছি।
🌺 শিক্ষকতার মতো একটি মহৎ কর্মের মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারছি।
✅ জীবনের এই পর্যন্ত আমি ভুল করেছি আমি পরীক্ষা পাস করা কে, চাকরি পাওয়া কে, বেতন পাওয়া কে সাকসেস মনে করেছি। কিন্তু এগুলো সাকসেস নয়।
❤️"সাকসেস হচ্ছে ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা।"
✅ সবশেষে "নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন" এর প্রতিষ্ঠাতা বাংলার সূর্যসন্তান, যার আলোয় আলোকিত লাখো লাখো যুবকের হৃদয়, আমার সেই প্রিয় মেন্টরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"-৫২৩
Date:- ০১/০৫/২০২১
🌺 মোঃ আকবর হোসেন
🌺🌺ব্যাচ নং 12
🌺🌺🌺রেজিস্ট্রেশন নং 38380
🌺🌺🌺🌺ব্লাড গ্রুপ AB+
🌺🌺🌺🌺🌺জেলা হবিগঞ্জ।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺 মোবাইল 01723-719449
✅ আমি কাজ করছি চামড়া শিল্প নিয়ে।
✅ বিঃদ্রঃ আমার এই গল্প সম্পূর্ণ সত্য। কেউ যদি তদন্ত করে তাহলে তার সত্যতা পাবে। ইনশাআল্লাহ।