স্কুলে ভর্তি করতে চাই না পরিবার থেকে কিন্তু ভালো ফলাফলের কারনে এবং আমার কান্নার কারনে ভর্তি করতে
আমার জন্ম এক অতিসাধারণ পরিবারে।আমার বাবা এক জন দিন মজুরি, অন্যের জমিতে কামলা খেটে আমাদের সংসার চালান।আমরা ভাই বোন সাত জন। পাঁচ বোন ও দুই ভাই।তিন বোনের পর আমার বড় ভাইয়া।আমি ছয় নম্বর সন্তান আমার বাবার।যেহেতু আপুরা বড় সেহেতু বাবার উপরেই আমাদের পুরা সংসার এর ভার ছিলো যার ফলে আমাদের পরিবার টা অস্বচ্ছতায় পড়ে থাকতো। যার কারনে আমাদের তিন বেলার খাবার টা জোগার হতো না অনেক দিন।
📖কি করেছি ছেলে বেলায়ঃ
আমি ছোট বেলা থেকে মাঠে গরু চরাতাম। আমার শৈশব জীবন কেটেছে মাঠে মাঠে বকাটে ছেলে মেয়েদের সাথে। যারা আমার মতোই অতিসাধারণ পরিবারের সন্তান। তাদের সাথে মাঠে মাঠে গরু চরানো গাস কাটা এটাই ছিলো আমার নিত্যদিনের কাজ। এমন পরিবারের সন্তানদের দ্বারা পড়ালেখা অসম্ভব ছিলো তবুও আমি ভর্তি হলাম আমাদের গ্রামের এক ব্র্যাক স্কুলে। সেখানেই আমার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু।
👑অদ্ভুত জীবন যা মনে পড়লে আজও আমার চোখে পানি এনে দেয়ঃ
আমার স্কুল জীবনটা ছিলো এক অদ্ভুত ধরোনের। কারন আমি সারাদিন মাঠে মাঠে গরু চরায়, যার ফলে প্রতিদিন স্কুল করা আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। আমাদের স্কুল টাইম ছিলো দুপুরে ফলে সকাল থেকে ১২ টা পর্যন্ত গরু চরিয়ে তারপর পারলে স্কুলে যেতাম। এভাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলাম এবং স্কুলের ভিতরে সবথেকে বেশি নম্বর অধিকারি আমি হয়।
🏔️আমার হাই স্কুল জীবনঃ
আমি যেহেতু অতিসাধারণ পরিবারের সন্তান। সেহেতু হাই স্কুলে ভর্তি করতে চাই না পরিবার থেকে কিন্তু ভালো ফলাফলের কারনে এবং আমার কান্নার কারনে ভর্তি করতে রাজি হয় তবে শর্ত দেয় কিছু।
🍾শর্ত শুলো ছিলোঃ
🌼১ম ; আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারবো না কারন আমাকে গরু চরাতেই হবে।
🌺🌺২য় ; আমাকে সারে চার কিলোমিটার পথ হেটে স্কুলে যেতে এবং আসতে হবে। অন্য ছেলে মেয়ের মতো আমাকে কোন সুযোগ দিতে পারবে না।
আমি সব শর্ত মেনে হাই স্কুলে ভর্তি হলাম। প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারি না বলে সব পড়া পারতাম না বুঝতাম। যেদিন স্কুলে যেতাম সকালে উঠে গরু মাঠে বেধে তারপর সারে চার কিলোমিটার হেটে স্কুল যেতাম এবং আবার হেটে এসে গরু বাড়িতে আনতে হতো। এভাবে ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা হলো ফলাফল দিলো আমি মেধা স্থান দখল করি।আমার ক্লাসে ছাত্র -ছাত্রী ছিলো ২০০০ +। কোন কোচিং করার সুযোগ পায়নি। একি ভাবে ৭ম ৮ম শ্রেণীর পড়া চললো। ৮ম শ্রেণীর পরীক্ষা শেষ ফলাফল দিলো। ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। ৯ম শ্রেণিতে শাখা থাকে বিজ্ঞান মানবিক ব্যবসা। আমি জানতাম বিজ্ঞান শাখায় পড়তে অনেক খরচ হয় যা বহন করা আমার পরিবারের দ্বারা একদমি অসম্ভব। তাইতো ঠিক করেছিলাম মানবিক নিয়ে পড়বো কিন্তু স্কুল থেকে মানবিক দিলো না বিজ্ঞান শাখার বই দিলো। বললো কোচিং এর টাকা লাগবে না। শুরু হলো বিজ্ঞান নিয়ে পড়া। কোচিং ফ্রী তবে শুধু জেনারেল গনিত পড়াতো। কিন্তু বিজ্ঞান এর বই গুলো আলদা পড়তে হয়। যেহেতু বিজ্ঞান নিয়ে পড়ি সেহেতু কোচিং তো পড়তেই হবে।তবে কি করে বাড়ি থেকে টাকা দিতে পারবে না। আর টাকা চাইলে,বলবে পড়াশুনা বন্ধ করে দাও কি হবে গরীব মানুষ এর পড়াশুনা করে। ।ভয়ে বাসয় কোচিং এর কথা বলতে পারছিলাম না।
🏺শুরু করলাম আর এক যুদ্ধ ও জীবন সংগ্রাম ঃ
শুরু করলাম বাসার আশে পাশের কয়েকজন শিশুকে কোচিং করানো। সেই থেকে শুরু হলো জীবনের সংগ্রাম নিজের পড়া নিজের চালানো পাশাপাশি গরু চরানো।
😚আমি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন সামনে এস এস সি পরীক্ষা এবারতো মাঠে প্রতিদিন গরু চরানো সম্ভব না। বাসায় অনেক কয়ে বলে বাবাকে রাজি করালাম রাজি হলো তবে গরু সকালে মাঠে বেধে যেতে হবে। আমি সেই মতো চলতে থাকলাম।
আসলো জীবন যুদ্ধে আর এক বাঁধা ঃ
🇧🇩যা আমাকে এখনো কাঁদায়
হঠাৎ মা ব্রেনস্টোক করলো পরিবারে নেমে আসলো অন্ধকারে ছায়া মায়ের চিকিৎসার খরচ সংসার চালানো সব মিলেয়ে অন্ধকার নেবে আসলো আমাদের জীবনে। আমার পাশাপাশি আমার ছোট বোনও পড়ে হাই স্কুলে। মা অস্বুস্থ্য শুরু হলো না খেয়ে স্কুলে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। কোন টিফিন ফী দিতে পারতো না বাসা থেকে। না খেয়ে ক্লাস করতাম চার টা পর্যন্ত ক্লাস শেষ তারপরে কোচিং তারপর বাড়িতে ফিরা।
মা আমার মা ঃ তোমাকে মিস করি মা।তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি মা, তুমি বলেছিলে কষ্ট কর বাবা তুমি একদিন অনেক বড় হবা।
😰সন্ধ্যায় হয়ে যায় বাসায় না ফেরাতে দেখি মা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। সেই মা অসুস্থ্যে হয়ে বিছানায় পড়ে গেলো। পরিবার থেকে বড় ডাক্তার দেখানো সম্ভব হলো না তাই তো মা আর সুস্থ হলো না এভাবেই এস এস সি পরীক্ষা দিলাম ভালো ফলাফল হলো।
🚻শুরু হলো কলেজে জীবন ঃ
কলেজে ভর্তি হলাম বাইসাইকেল কিনে দিলো পুরান একটা। কলেজে বাংলা বাদে ইংরেজি গনিত পদার্থ রসায়ন জীব বিজ্ঞান ও আই. সি. টি কোচিং করতো সবাই। আমি জানতাম আমার দ্বারা সম্ভব না কোচিং করা তাইতো শুধু গনিত কোচিং করতাম। প্রতিদিন কলেজ করা হতো না কারন কলেজের খরচ ছিলো বেশি তাইতো মাঝে মাঝে অন্যের জমিতে কামলা খাটতে হতো।
🚸মা হারানোঃ
এর ভিতরে আমি যখন একাদশে পড়ি তখন মা মারা গেলো এবার আমাদের জীবনে নেমে এলো ঘর অমাবস্যা। সংসার হয়ে পড়লো ছন্দ ছাড়া। অনেক কষ্ট করে কলেজ করা। মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত মনে পড়ে না খেয়ে স্কুল বা কলেজে গিয়েছি।এভাবে কলেজ পাশ করলাম।
এখন বি.এস.সি. অনার্স করতেছি গনিত নিয়ে। এখনতো বছরে ২০ থেকে ২৫ দিন কলেজে যায় কারন কলেজ আমার বাসা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে। তাইতো প্রতিদিন কলেজ যাওয়া সম্ভব না। এটাই আমার স্কুল জীবন। যাদের সাথে শৈশব জীবন কাটিয়েছি তারা এখন সেই মাঠেই পড়ে আছে আর আমি আল্লাহ রহমতে আমার প্রচুর চেষ্টায় আর অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ এখানে এসেছি।
🍅🍅🍅🍅🍅🍅🍅মজার ঘটনা🍑🍑🍑🍑🍑
সবচেয়ে মজার ঘটনা হলো আমি কলেজে যাওয়া শুরু করলে গ্রামের বেশির ভাগ লোক বলতে লাগলো তুই কি পড়ালেখা করিস। আমি বললাম হ্যা তারা বললে কি বলিস তুইতো সারাদিন গরু চরাস দেখি এমন কি আমার গরু চরানোর বন্ধুরাও একি কথা বললো। আমি বলতাম হ্যা আমি গরু চরানোর মাঝেই পড়াটা চালিয়ে গিয়েছি। তারা সবথেকে বেশি আর্চায্য হতো এটা ভেবে যে আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ি তাও আমাদের গ্রামের আমার সাথের সবার থেকে ভালো আমি।
এভাবেই আমার ছাত্র জীবন। অনেক কষ্ট আর প্রচেষ্টার ফলে আজো পড়া চালিয়ে যেতে পারছি এর জন্য আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া।
🙏🙏🙏আমার লেখা এর মাঝে ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি এখন স্বপ্ন দেখি। আমার মা বলোতো তুই অনেক বড় হবি। আমি জানি আমি পারবো। পারতেই হবে আমাকে।আপনাদের সহোযোগিতা কামনা করছি।
ধন্যবাদান্তে
👉নামঃ মোস্তাফিজুর রহমান
👉👉ব্যাচঃ ১২
👉👉👉রেজিষ্ট্রেশন নং ঃ ৫১৪৯১
👉👉👉👉নিজ জেলাঃ ফরিদপুর