প্রবাসে থেকেও জড়িয়ে থাকি "মা
🍀🌷প্রবাসে থেকেও জড়িয়ে থাকি "মা"🌷🍀
🌷🌹আসসালামু-আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের সকলের প্রিয় মানুষ এই প্রজন্মের লাখো তরুণ তরুণীর আইকন শ্রদ্ধা বাজন জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে যার জন্য আজ আমরা পেয়েছি ভাল মানুষের একটি বিশাল প্লাটফর্মের নেটওয়ার্ক। 🍀🌹
'🍀মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রিভুবনে নাই।।’
🍀কবি কাদের নেওয়াজের এ কবিতায় যেন ঝরে পড়ছে মায়ের মায়া, মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব কথা। মা আসলেই পৃথিবীর সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কের নাম, সবচেয়ে পবিত্র ও মধুরতম শব্দ। এই রঙিন পৃথিবী দেখার পিছনে যার সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে সেই মানুষটি আর কেউ নয়। তিনি হলেন আমার প্রিয় মা। এই নামটি সবার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। জন্মের পূর্ব থেকেই যেমনি মায়ের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে তেমনি জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। মায়ের ভূমিকার নেই কোনো জুড়ি। মনের মনি কোঠায় উকি দিচ্ছে বার বার।দিবালকের ন্যায় স্পষ্ট ‘মা’ নামটি অতি ছোট্ট হতে পারে। কিন্তু তাতে রয়েছে অজস্র মধু। কারণ মায়ের মুধুমাখা ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর কোনো ভালবাসার তুলনা হয় না । মায়ের মতো করে কেউ কখনও আদর করে না। কাছে টেনে নেয় না।
🍀মা নিজের কথা ভুলে গিয়ে মধ্যরাতে আমার কান্নায় ঘুম থেকে নির্দ্বিধায় উঠে পড়ে ছিলেন বিছানা ছেড়ে৷ হোক গরম, হোক শীত, মাঝরাতে আমার কান্না বন্ধ করতে গিয়ে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি৷ মা উঠেপড়ে লেগে গেলেন আমার সেবায়৷ মা তার বিনিময়ে কি পাবেন? নিশ্চয় এই হিসাব-নিকাশটি একবারের জন্য ও করেননি৷ প্রচণ্ড শীতের মাঝরাতে চরম ঠান্ডার মধ্য দিয়ে রাত কাটিয়েছিলেন একমাত্র মা৷ এই কারণটাও ছিল আমার, অসময়ে মূত্র নিষ্কাশন৷ আমরা সন্তানেরা মায়ের কাছে একটি আয়নার মতো৷ মা আমাদের দেখতেই অতীতের সকল কষ্ট ভুলে থাকতে পারেন৷ মা সন্তানদের সুস্থ মুখ দেখতেই মনে করেন নিজেই সুস্থ আছেন। আমরা প্রবাসীরা মায়ের চোখের আড়াল হতেই মা তাঁর অতীতের সমস্ত কষ্টটা যেন চোখের পাতায় স্পষ্ট দেখতে পান৷ কাউকে কিছুই বলেন না, শুধুই ভাবতে থাকেন, যার জন্য এই জীবন উজাড় করে দিলাম।
🍀জন্মভূমিতে থাকা বেশিরভাগ মানুষের দিন শুরু হয় মমতাময়ী মায়ের মুখ দেখে। আর আমরা এক কোটির ও বেশি প্রবাসী নানাবিধ কারণে বিদেশ-বিভূঁইয়ে থাকায় মাকে ছাড়াই দিন শুরু হয় । মায়ের কথা মনে হলে-ই স্মৃতির ডালপালা বিস্তৃত হতে শুরুকরে। মায়ের স্মৃতি নিয়ে আমাদের একরাশ আকুলতা ঝরে পড়লতে থাকে। বারবার ফিরে জাই শৈশবের ফেলা আসা দিনগুলোতে। আমার মা হলেন জীবনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
🍀 জানি সেই মাকে ভুলে যাওয়া কখনো আমার পক্ষে সম্ভব না, তারপরও ভুলার চেষ্টা করি, কিন্তু দিনের আলো যখন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয় কেনো যেনো তখন আরও বেশি করে কাছে পেতে ইচ্ছে হয় মাকে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বুকের ভেতরটায় শুরু হয় কষ্টের ডুবসাঁতার। আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। অবসাদ আর বিষাদিত সন্ধ্যা আমাকে ঘিরে ধরে। কেউ বুঝবে না, মা আর বাংলাদেশেটা আমার কাছে কতো প্রিয়। পারিনা আমি একটি রাতও মাকে ছাড়া থাকতে। স্বর্গের সুখ এ জগতে লুকিয়ে যেথায় থাকে, সে'তো আর কোথাও নেই স্নেহময় মায়ের কোল ছাড়া। কেবলই কেঁদে ওঠে অন্তর। ইচ্ছে হলেও এখন আর ছু'তে পারি না মা কে। মাকে আর দেশকে যে কতোটা ভালোবাসি, প্রবাসে না এলে তা হয়তো জানা হতোনা কোনোদিনই। রাতের নক্ষত্রগুলো ও যেনো মায়ের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়ে যায়।
🍀খেতে বসলে মার কথা ভেবে চোখে জল আসে। মায়ের মমতামাখা হাতের রান্নাকে খুব বেশি মিস করি। দূর প্রবাসে থাকার ফলে মায়ের হাতের জাদুকরী রান্না অনেক মিস করি। বিশেষ করে কোরবানীর গোশত থেকে শুরু করে শুটকি, মুরগীর কোরমা,তেলের পিঠা, ফুলি পিঠা, ভাপা পিঠা, কচুর লতি,কচুর শাক, হাঁসের গোশত, এমনকি রান্না করা খাশি গোশত। তবে আফসুস শুধু , দেশের বাইরে থাকার কারণে মায়ের হাতের অনেক খাবারের স্বাদ অনেকটাই ভুলে গেছি। চাইলেই সেটা খাওয়া হয় না।আমি মনে মনে খুবই গর্বিত যে আমার ব্যক্তিত্বের যা তার অধিকাংশটুকু আমার বাবার আর আমার অনুভূতির প্রায় সবটুকুই আমার মায়ের। সবাই বলে আমি দেখতে মায়ের মতোন।
🍀সেই মাকে ছেড়ে এখন থাকতে হয় কয়েকহাজার মাইল দূরে। মাঝে মাঝে মাকে ছেড়ে দূরে থাকার কষ্টটা খুব বেশি ভার হয়ে বুকের পাঁজরে চিনচিন ব্যথা অনুভব হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি। দেশে থেকে ও আমার মা সবসময়ই সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো মৃত্যু অবধি তাই করে যাবেন। আর এ জন্য মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসাও অসীম। এই দূর প্রবাসে যখন জ্বরে অসুস্থ হয়ে ছটপট করতে থাকি জ্বরের তাড়নায় পুঁড়ে যাই, দু'চোঁখে ঘুম আসেনা শরীরে শক্তি লাগেনা কেহো আসেনা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। আদরযত্ন করে কিছু খাইয়ে দিতে। রাত জেগে পাশে বসে শান্তনা দিতে। যখন মধ্যরাতে জ্বরে যন্ত্রনায় ছটপট করতে থাকি তখন তোমার কথা ভেবে দু’চোখ জলে ভিজে উঠে। নিরবে চিৎকার দি য়েউঠি "মা,মা" বলে কাউকে বলতে পারিনা। তোমার মত মাথায়হাত বুলাতে এখন আর কেউ এগিয়ে আসেনা, তাই চোখে ঘুমও আসেনা। কষ্টের মাঝেই সারা রাত পার করতে হয়।
🍀অথচ দেশে থাকতে সামান্য জ্বর আসলে মায়ের স্নেহময় মায়া ভরা যাদুর হাত মাথায় কপালে বুলিয়ে সারারাত জেগে থেকে বসে থাকতে আমার পাশে। তোমার অস্থিরতা দেখে হাজার ছটপটের মাঝেও স্নেহময় হাত কপালে রাখার পর দু'চোখ নিভে ঘুম আসত। তোমার আদর দেখে তোমার অস্থিরতা দেখে খুব সহজেই জ্বর সেরে যেত। মা! আমি জানি আমার এই কষ্টগুলো সবার আগে তুমি'ই শুনতে পাও, বুঝতে পার। তোমার চোখে এখনো আমি সে-ই ছোট্র শিশু। সত্যি মা আমি সবসময় তোমার শিশুপুত্র। সেজন্যইতো সামান্য ব্যথা পেলেও মনের অজান্তে মা'মা' বলে উঠি!😪
"বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে" শ্বাসত এই প্রবাদ বাক্যটি চিরন্তন সত্য। মাকে ভালবাসেনা এমন সন্তান অনেক আছে কিন্তু সন্তানকে ভালবাসেনা এমন মা বোধ করি পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। ধর্ম-বর্ন-জাতি নির্বিশেষে মায়ের জাতি সবার উপরে। মা সে কালো হোক কিংবা শেতাঙ্গ হোক লম্বা কিংবা খাট মোটা কিংবা চিকন। হিন্দু কিংবা মুসলিম ধনী কিংবা গরীব সে একজন মা এটাই বড় কথা এখানে বর্ন, স্বাস্থ্য, ধর্ম, অর্থ সকল বিষয়ে পাথর্ক্য করা গেলেও মায়ের মমতার কোন ভিন্নতা নেই । তাইতো অনেকে আবেগের বসে বলেই ফেলে গায়ের চামড়া ছিলে মায়ের জন্য জুতা বানালেও মায়ের একফুটু দুধের ঋন শুধ হবে না। প্রবাসে মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ে। আমরা প্রবাসী ছেলেরা মায়ের মন কতখানি বুঝলাম? এক সময় মা হয়তো চিরতরে বিদায় নিয়ে যাবেন৷ তারপর আমরা ছেলেরা প্রবাস থেকে শুধুই ভাবতে থাকব, মা থাকতে মার জন্য কিছুই করতে পারলাম না৷ কথায় বলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দাও৷ মা বাবা এখন বয়স্ক হচ্ছেন । বার্ধক্যজনিত শারীরীক অসুবিধেয় পড়ছেন। আমি জানিনা মা’কে ঠিক সেভাবেই সেবা যত্ন দিতে পারছি কিনা কিন্তু উনারা আমায় দিতেন সব সময়, বিপদে-আপদে, সুখে-অসুখে! জিনি আমার শেষ আশ্রয় স্থল হচ্ছেন মা। যা কিছুই হোক ভুলের জন্য বাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও একমাত্র মা’ই আমার সাথে আমার ভুল শুদ্ধ ধরিয়ে দিয়ে আছেন শেষ ভরসা হয়ে।
তবে প্রবাসে থাকলেও বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে দুরত্বের সীমা কিছুটা ঘোচানো সম্ভব হয়েছে , অবসরে বা কাজের পাঁকে একা থাকার সময় মায়ের সঙ্গে পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করার মধ্য দিয়েই সময় কাটাই। দূরে থাকায় মায়ের স্পর্শ পাই না। সময় পেলেই দ্বারস্থ হই ইমো বা স্কাইপের। তবে যোগাযোগ যাই হোক না কেন সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কের নাম মা। এ সম্পর্কের পরিধি বিশাল, যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়।মাকে নিয়ে কখনো লিখতে সাহস হয় না, হাজার হাজার পৃষ্টা লিখলেও শেষ হবার নয় এই বর্ণনা। প্রত্যেক মা সন্তানের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ।মাথার তাজ।
মায়ের কাছে এখনো আমি সেই খোকাটি আছি।যেমন করে ছোট্ট বেলায় মিষ্টি করে হেসেছিলাম। এযেন ভূল করে ও ফুল হয়ে রই হাজার বছর বেঁচে থাকি। মাকে দেখলেই আমি যেন প্রানবন্তে আনন্দে আদর মাখা হৃদয়ের স্পন্দন খুঁজে পাই। প্রবাস পারে মায়ের হাজারো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি।“প্রবাসে থেকেও জড়িয়ে থাকি মা” আবার ও বলি, মায়ের গুনগান করা সম্ভব নয়। এখনো মা আমার জন্য তুলে রয় দুহাত। আল্লাহ্ তায়ালা কবুল করেন আমার মায়ের মোনাজাত যার কারণে এত সুখে আছি মরুর দেশে।যাকে শীতের রাতে অঘুম রেখেছি,বাবার কাছে বকুনি শুনিয়েছি,যার চোখের জ্বলে আমি সুখি হয়েছি,আদর-শাষনে আমি মানুষ হয়েছি। আসুন আমরা সকলে মমতাময়ী মাকে অনেক ভালবাসি,তার-ই মতো তার তরে দোহাত তোলে সৃষ্টার দরবারে চোখের জলমিশ্রিত দোয়া করি "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগিরা"। আমীন
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৪১**
Date:- ০২/০৬/২০২১
🍀আমি, আবু তাহের মিয়াজী
ব্যাচ নং: ১৩
রেজিস্টেশন নম্বর : 52878
চাঁদপুর সদর,
জেলা;- চাঁদপুর
রক্তের গ্রুপ : 0+
কাতার প্রবাসী -রেমিটেন্স যোদ্ধা