বিনা পারিশ্রমিকে কারখানার কাজ করেছি কারন আমাকে জানতে হবে শিখতে হব প্রোডাক্ট সম্পর্কে এই জন্য।
#উদ্যোক্তা_বিমূখ_এই_আমার_উদ্যোক্তা_হওয়ার_গল্প।
__বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
__আসসালামু আলাইকুম,ওরাহমাতুল্লাহ।
__সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে।এই মহামারী পরিস্থিতিে যার দয়ায় ও করুনায় এখনও সুস্থ স্বাভাবিক ভালো আছি। শুকরিয়া।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি এত বড় একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য। এই বিশাল ভালো মানুষের পরিবারে পেয়েছি আমরা হাজার হাজার ভাই ও বোন। প্রিয় স্যার আপনি তৈরি করে দিয়েছেন আমাদের বিশাল বড় একটি প্ল্যাটফর্ম আমরা সকলেই আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ।...............
*********** আমি আসমা যে কিনা ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন দেখতাম অনেক বড় অফিসার হব সবাই আমাকে চিনবে সম্মান করবে। কিন্তু কখনও কল্পনায়ও ভাবি নি যে আমি একজন উদ্যোক্তা হব কেননা আমি উদ্যোক্তাদের খুব ছোট করে দেখতাম মনে হতো যারা কোন কাজ পায়না জীবিকার তাগিদে তারাই শুধুমাত্র উদ্যোক্তা হয় ব্যবসা করে। আমার এই ভুল ধারনা পাল্টে দিয়েছে আমাদের সকলের প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। স্যার আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে একজন সফল উদ্যোক্তা কোন অংশে একজন বিসিএস ক্যাডার থেকে কম না। কারণ একজন সফল উদ্যোক্তাকে অফিসের হাতেগোনা কয়েকজন নয় তাকে চেনে সারা পৃথিবী তার মৃত্যুর পরও তার তৈরি করা ব্রান্ড/প্রতিষ্ঠান রয়ে যায় বছরের পর বছর।
***********আমি আসমা বর্তমানে দুচোখে স্বপ্ন ভরা একজন তরুণ উদ্যোক্তা। এখন আমি সবার সামনে গর্ব করে বলি আমি একজন উদ্যোক্তা। যাইহোক এখন ফিরে যাই আমার অতীতে। স্কুল পেরিয়ে কলেজ কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটি এই দীর্ঘ সময় ধরে সেই একই স্বপ্ন লালন করছিলাম যে আমি অনেক বড় অফিসার হবো। আমি তখন ম্যানেজমেন্ট প্রথম বর্ষের ছাত্রী ও তখন হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যায়। এরপর সংসার ,বেবি, শ্বশুরবাড়ির সবাই কে মানিয়ে পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে পারিনি হাজবেন্ডের চাকরির কারণে মুন্সীগঞ্জে চলে যাই ওখানে নতুন পরিবেশ কাউকে চিনিনা তো একরকম ঘর বন্দি হয়ে গেলাম হঠাৎ করেই একদিন খেয়াল হল কোথায় আমার সেই অফিসার হওয়ার স্বপ্ন।কোথায় আমার সেই পরিচিতি।তখনকার সময়ে না ছিল কোন স্বপ্ন না ছিল আশেপাশে কোন পরিচিত মানুষ। মাঝে মাঝে খুব একা একা লাগতো তাই সময় কাটানোর জন্য বেশিরভাগ সময়ই ফেসবুক-ইউটিউবে কাটাতাম। একদিন মনে হলো যেহেতু সারাক্ষণ ফেসবুকেই থাকি সেহেতু দেখি এখানে কিছু করা যায় কিনা। তো ফেসবুকে খেয়াল করে দেখলাম ভালো ফ্যামিলির মেয়েরা ও পেজ খুলে প্রোডাক্ট সেল করছে।তাই আমিও ভাবলাম যে দেখি কিছু করা যায় কিনা।তো একটি পেজ খুলি ও জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করি। মুন্সিগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলে করে সেই রূপগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ যেতাম প্রোডাক্ট আনতে। একদিন প্রোডাক্ট আনতে গিয়ে হঠাৎ করে মারাত্মক একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই।প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরি সেই দুর্ঘটনায়। সেদিন দেখেছিলাম জীবনটা কত কঠিন। আমার সন্তানের চোখের জল ও স্বামীর গায়ের ঘাম একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন।তখন থেকেই আমার হাজব্যান্ড সাফ জানিয়ে দেয় হয় ব্যবসা ছাড়ো নাহয় সংসার ছাড়ো। একগাদা টাকার গচ্চা সেই সাথে আমার সন্তানের চোখের জল ও আশেপাশে মানুষের কটু কথাই ছিল সেই সময় আমার ব্যবসার প্রাপ্তি।
*************** তখন ছিল 2018 সাল তখন মনে হচ্ছিল আসলেই ব্যবসা আমার জন্য নয় মনে হচ্ছিল আমার দ্বারা কিছু সম্ভব না আমি ভালো কিছু করতে পারবো না কোনদিনও না। তখন খুবই হতাশ হয়ে যাই। প্রায়ই ডিপ্রেশনে ভুগতাম খুব একা একা লাগত সারাক্ষণ খিটখিটে মেজাজ থাকতো অকারণে ছেলেকে ধরে মারতাম ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে শান্তি পেতাম। সারাক্ষণ ইউটিউবে ভিডিও দেখে কাটাতাম। এভাবে প্রায় এক বছর চলে যায়।
************ 2019 তখন হঠাৎ করেই স্যারের একটা ভিডিও আমার চোখে পড়ে যায়।এরপর থেকেই শুরু হয় নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এর সাথে আমার পথচলা এরপর দীর্ঘ এক বছর ধরে স্যারের সমস্ত ভিডিও গুলো আমি ধারাবাহিকভাবে খুবই মনোযোগের সাথে দেখতাম। এরপর যে 11 তম ব্যাচে আমি রেজিস্ট্রেশন করি এবং এর পরে টানা 90 দিনের সেশন শেষ করে হয়ে উঠি আমি একজন আত্মবিশ্বাসী নারী এরপর থেকে আমার জীবনে আর কোন নেগেটিভিটি আসেনি সব সময় শুধু পজিটিভ চিন্তাভাবনা।এখন ভাবি আমার দ্বারাই সম্ভব ইনশাআল্লাহ আমি। আমি পারবো আমি করে দেখাবো। স্যার সবসময়ই বলে স্বপ্ন দেখুন সাহস করুন শুরু করুন এবং লেগে থাকুন স্যার। ইউটিভি লাইভ এর ভাইয়া-আপুদের সকল ভিডিওগুলো আমি খুব মনোযোগ সহকারে দেখতাম এরপর আমিও ভাবি আবার পুনরায় শুরু করব।কিন্তু তখন আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় আমার হাজব্যান্ডকে বোঝানো। স্যার সব সময়-ই বলেন যদি নিজের পরিবারকেই না বোঝাতে পারেন তাহলে সারা পৃথিবীকে কিভাবে বোঝাবেন। তখনই ভাবির যে করেই হোক আমার পরিবারকে আমি বোঝাবো এবং অবশেষে আমি সফল হই।
********আমি আসমা, দু'চোখে স্বপ্ন ভরা এক নবীন উদ্যোক্তা।এই উদ্যোক্তা হতে গিয়ে আমি কি কি করেছি সেটা এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
👉ঈদে ড্রেস কেনার টাকা মূলধন হিসেবে নিয়েছি।
👉বিনা পারিশ্রমিকে কারখানার কাজ করেছি কারন আমাকে জানতে হবে শিখতে হব প্রোডাক্ট সম্পর্কে এই জন্য।
👉সারাদিনের কাজ শেষে রাত জেগে স্যারের সেশন কমপ্লিট করেছি।
👉 সবার কটু কথা উপেক্ষা করে এখনো লেগে আছি।
👉প্রডাক্ট আনতে গিয়ে একদিন একটুর জন্য মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি।
👉ছোটবেলা থেকেই একটু অত্নকেন্দ্রিক ছিলাম সহজে কারো সাথে সহজে মিশতে পারতাম না এখন আমি সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠে মিটআপের সকলের সামনে স্বচ্ছন্দ ভাবে কথা বলতে পারি এই সমস্ত কিছু সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আমাদের প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের জন্য। উদ্যোক্তা হবার সকল ক্রেডিট প্রিয় স্যারের তিনি হাজার তরুণ-তরুণীর স্বপ্নগুলো দেখার ও পূরণ করতে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই পথের পথিক আমি নিজেও প্রিয় স্যার আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।অনেক অনেক দোয়া রইল আপনার জন্য 🤲🤲।
********************২০২০ সাল আমি আবার পুনরায় শুরু করি এবার কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্যারের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালোন করি।স্যার সবসময়ই বলে নিজের জেলায় কি পাওয়া যায় সেটা নিয়েই শুরু করেন তো আমি আমার বর্তমান জেলা মুন্সীগঞ্জে খেয়াল করে দেখলাম এখানে প্রচুর বাচ্চাদের ড্রেসের কারখানা আছে। তখন ভাবলাম এটা নিয়েই কাজ করা যায় এবং সুযোগ আমার হাতের মুঠোয় চলে আসলো। আমি যে বাসায় থাকতাম ঐ বাসার পাশে অনেকগুলো কারখানা ছিল এবং ঐ বাসার বাড়িওয়ালারা ঐ প্রোডাক্ট গুলো বাসায় এনে বিভিন্ন মহিলাদের দিয়ে ডেসগুলোর হাতের কাজ করাতো। আমি এই সুযোগে হাত ছাড়া করিনি আমি বিনা পারিশ্রমিকে ঐ কাজগুলো করতাম। এই সুবাদে ড্রেসের কোয়ালিটি,রেটসহ বিভিন্ন জিনিস জানতে পারি। এককথায় বলতে গেলে স্যারের প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। কিন্তু তখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় আমার হাসবেন্ড। তিনি সরাসরি বলে দিলেন তুমি বিজনেস করবা ভালো কথা তবে আমি কোনো সাহায্য করতে পারবোনা।তখন আমি আমার ঈদের ড্রেস কেনার ৩০০০ টাকা দিয়ে আবার শুরু করি। ইনশাআল্লাহ তারপর থেকে আমার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।এবং এখন আমি অনেক ভালো করছি। এখন আমার আগ্রহ দেখে আমার হাজব্যান্ড নিজেই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে। আমার হতাশা ও কষ্ট গুলো এখন সফলতার একধাপ পারি দিয়েছে।
****************আজকে এতটুকুই সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। আমি যেন একজন সফল উদ্দ্যোক্তা হতে পারি। নিজের একটা বেবি ড্রেসের প্রতিষ্ঠান করা স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি যেন আমার মতো হাজারো নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি। সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাচ্ছি।প্রিয় গ্রুপের সবার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৪৫
Date:- ০৭/০৬/২০২১
ধন্যবাদন্তে💖💖💖💖
আমি আসমা।
নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন একজন গর্বিত সদস্য
ব্যাচঃ১১
রেজিঃ৩২১২২
জেলাঃ নিজ জেলা খুলনা বর্তমানে আছি মুন্সীগঞ্জে।
কাজ করছি বেবি ড্রেস নিয়ে।
পেজ্A.R Fashion.