জীবন_থেকে_নেওয়া
#জীবন_থেকে_নেওয়া।
সময়টা ২০১৯ সালের শেষের দিকে অক্টোবর মাস জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছিলাম কি থেকে কি করবো বুঝতে পারছিলাম ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছিলাম কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নকে দাফন করতে হয়েছিলো 😥 ভার্সিটিতে এডমিশন পরীক্ষা দিবো কি দেবো না করতে করতে সময় চলে গেলো সেই সুযোগ চলে যাওয়ার সাথে সাথে যেন আমার মনোবলটাও হারিয়ে ফেললাম।
এর আগেও মন খারাপ হয়েছে রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় দিনরাত কষ্ট করে যখন পরীক্ষা দিয়ে কাঙ্খিত জিপিএ 5 (A+) পেলামনা তখন মনোবল হারিয়ে ফেলি। দাখিলের রেজাল্টও খারাপ দুইয়ে মিলে টোটাল ৮.৭৪ এতে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবো এই হীনোমন্নোতায় ভুগে শেষ পর্যন্ত কোন ভার্সিটিতেই এডমিশন পরীক্ষা দেওয়া হলো না ক্রমেই যেন কষ্ট বেড়েই চলেছে।
এদিকে এলাকার সামাজিক চাপ তো আছেই বাবা ক্ষেতনামা বড় একজন আলেম আর আমিও বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ যে মাদ্রাসা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে অনেক বার শীর্ষস্হান দখল করেছে স্বর্ন পদক প্রাপ্ত মাদ্রাসা নামকরা শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা অর্জন সব মিলিয়ে বাড়িতে থাকলেই যেন আমার মানসে চাপটা আরো বাড়িয়ে দেয় কি করছো কোথায় ভর্তি হবে কি করবে কবে যাবে আরো নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুক্ষিন হতে হয়েছে। তার মধ্যে একজনকে আমার খুব বিরক্ত লাগতো সম্পর্কে একটু ঘনিষ্ঠ কিন্তু তার কথার আঘাতটা ছিলো তীরের আঘাতের চেয়েও ভয়ংকর আঘাত যা সহ্য করার মতো শক্তি আমার ছিলো না। সর্বপরি সেই এক কথা আমাকে অযোগ্য প্রমান করতে যা করার প্রয়োজন তিনি করতে প্রস্তুত কিন্তু আমি ছিলাম ব্যাতিক্রম কারো কথাই আমলে নিতাম না খুব বেশি একটা কিন্তু মাঝে মাঝে কষ্ট পেতাম সাথে মানসিক ভারসাম্যটাও হারিয়ে ফেলতাম সাহস যোগানোর জন্য তেমন কোন মানষও কাছে পেতাম না কিন্তু এর মাঝে শক্তি পেতাম আমার আব্বুকে দিয়ে যার জীবনের গল্প শুনলে গায়ের লোম দাড়িয়ে যেতে কি কষ্ট করেছে আমার বাবা তার কথা মনে পড়লে সেই কষ্ট ভুলে নতুন করে সাহস পেতাম।
ছোট থেকেই বাবার ফার্মেসীতে সাহায্য করতাম যার বদৌলতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে প্রাথমিক সকল ধারণাও হয়ে গেছে শুধুমাত্র সার্টিফিকেট এর অভাবে এবং কম বয়সের কারনে রোগী দেখার বা ওষুধ দেওয়ার সাহস পাই না। বাবার সহযোগী হিসেবে এখনো বাসায় আসলে সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা আবার বিকেল ৪ টা থেকে রাত ১০ টা বা কোনদিন ১১ টা আমার বাবা একজন ম্যারিজ রেজিস্ট্রার হওয়ার কারনে কিছুটা কাজ ও করতে হয় তিন ভাই দুই বোনের ভিতরে বড় ভাইয়ের সরকারি চাকরি হয়েছে কিছুদিন আমার আব্বু মাদ্রাসা প্রধান এরপর কাজী ফার্মেসী আসলে আব্বু এতকিছু সামলায় কি করে আমার জানা নেই যাই হোক আব্বুর স্বপ্ন ছিলো বড় ভাইয়া তার সব কিছু ধরবে কিন্তু ভাইয়ার এসবের ইচ্ছে ছিলো না যাইহোক আব্বু আমাকে একজন আলেম বানাতে চায় পাশাপাশি আব্বুর সব কিছু আমাকে বুঝিয়ে দিতে চায় আর এতে আমার জীবন এক প্রকার দাড় করানো কিন্তু এতে মানুষ বলবে বাবার করা সবকিছুর উপর ভর করে আছে নিজের কোন যোগ্যতা নেই এমন চিন্তা থেকেই মুলত অন্য কিছু করার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো পরিশেষে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর খোজ পেয়ে যুক্ত হওয়ার পর থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি বাবার সব কিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেও নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এ যুক্ত হওয়ার পর নিজের ভিতরে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে যা নিজের চোখেই দেখি।
এরপর উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াইয়ে নেমে পড়ি গত বছরের ১ জুলাই থেকে Alishan-bd.com নামের প্রতিষ্ঠান নিয়ে। এর সম্পুর্ন গল্প নিচে পাবেন।
জীবনের প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়ি এরপর গ্রুপের খোজ পাওয়া এবং গ্রুপে যোগদান নিজে নিজে রেজিষ্ট্রেশন করা পরে ২ য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মহা সম্মেলনে যাওয়া সেখান থেকে স্যারের কথায় অনুপ্রানীত হয়ে নতুন করে শুরু করা। চলে গেলাম আবার সেই পুরোনো ঠিকানায় চেনা পরিবেশে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায় অনার্সে আল কোরআন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়ে গেলাম এরপর কিছুদিন ক্লাস করার পর এবার এলো করোনার ভয়াবহ থাবা মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেলো টানা সাত মাস মাদ্রাসা বন্ধ এরপর এই সাত মাসের ভিতরেই মাথায় আসে বসে না থেকে কিছু করা উচিত স্যারের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন থেকে ৯ মাস পুর্বে ১ জুলাই ২০২০ এ Alishan-bd.com নামের প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব হয় কোন ইনভেস্ট ছাড়াই কাজে লেগে যাই আমার প্রিয় Jahangir Khan ভাইয়ার Euphoria থেকে টি শার্ট এবং Lipsana Bhuiyan আপুর কাছ থেকে খিমার নিয়ে শুরু করে দিলাম কাজ প্রথম মাসে কোন সেল হলো না মাত্র ৩৯০ টাকা সেল হলো পরের মাসে একটা খিমার ১৫০০ টাকা এরপর পরের মাসে ২ টি টি-শার্ট সহ ১ খিমার ৭০০+১৫০০ মোট-২২০০ টাকা সেল মাঝে কোন সেল নেই এরপর মাদ্রাসায় ফিরে যাই মাদ্রাসায় যাওয়ার পর পরিচিত এক ভাইর সাথে ব্যাবসার কথা শেয়ার করলে সে একটা খিমার নেন ১৪০০ টাকা দিয়ে পরবর্তীতে পন্য ভালো হওয়ায় আরো ৩ টি খিমার অর্ডার করেন মোট- ৫৯০০ টাকা সেল হলো এরপর মনোবল আরো বেড়ে যায কাজ করি আরো মনোযোগ দিয়ে এবার পরের মাসে ১৫০০ টাকা সেল এরপরের মাসে ৪০০০ টাকা সেল হলো কোন ইনভেস্ট ছাড়াই এরপরও কাজ করে যাচ্ছি।
এক পর্যায় কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম এডমিশন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোচিং এ ভর্তি হয়ে কুষ্টিয়ায় কোচিং করা শুরু করি তাই ব্যাবসার কাজ বন্ধ করে দেই কিন্তু এর আগে আমার সেল হয় ৩৯০+১৫০০+২২০০+৫৯০০+১৫০০+৪০০০ =মোট ১৫,৪৯০ টাকা কোন প্রকার ইনভেস্ট ছাড়াই।
কাজ বন্ধ করে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পর গ্রুপেও সময় কম দেওয়া হলো মাঝে মাঝে পোস্ট করা মেসেঞ্জারে যোগাযোগ এভাবেই চলছিলো বর্তমানে এখনো এডমিশন পরীক্ষার অপেক্ষায় আছি কিন্তু সমস্যা হলো আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় থেমে গেলো পরীক্ষার সম্ভাবনা বাসার প্যারায় ঢাকা হয়ে শরীয়তপুরে চলে এলাম এরপর আবার গ্রুপেও সময় দেওয়া শুরু করলাম কম বেশি।
মাঝে যে সময়টা গ্রুপের সাথে ছিলাম তাতো বলতে ভুলে গেছি মহাসম্মেলনের পর আমাকে ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব দেওয়া হলো এরপর অনেক ভাই বোনদের সাথে পরিচয় হয়েছে যার মধ্যে অনেকের সাথে তো রক্তের সম্পর্কের চেয়েও গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছি যাদের সাথে পরিচয় হয় তাদের সাথেই মিশে যেতে থাকলাম এক নিমিষে। আজ দায়িত্ব পাওয়ার পর কেটে গেছে অনেক দিন কেটে বহু রাত্রি যার ভিতর পরিচয় হয়েছে কতগুলো মণিমুক্তার সাথে।
এভাবেই যখন এগিয়ে যাচ্ছি তখন স্যারের অমিয় বানী
"বেকার থাকবো না একদিন ও
শুরু হোক ছাত্র জীবন থেকেই"
[ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার ]
এর কথা মনে পড়তেই বর্তমানে আবার সেই থেমে যাওয়া Alishan-bd.com এর কাজকে নতুন করে নতুনভাবে শুরু করতে চাচ্ছি এক ভিন্ন কায়দায় সবাই যদি এক জিনিস নিয়ে কাজ করে যাই তাহলে নতুন কিছু হবে কার দ্বারা সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই মনে হলো আমি যেহেতু মাদ্রাসায় পড়ুয়া তাই আমার ইসলামিক পোশাক নিয়ে কাজ করায় ভালো হবে তাই আমিও যেই চিন্তা সেই কাজ শুরু করলাম খোজ করা কোথা থেকে পাওয়া যায় কোয়ালিটি সম্পন্ন পন্য যা ক্রেতার হাতে তুলে দিলে ক্রেতা খুশি মনে পকেট থেকে টাকা বের করে দিবে এখনো কাজ চলছে ইনশাআল্লাহ খুব শীগ্রই নতুন কিছু নিয়ে আলিশানের সাথে ফিরে আসবো। সবার দোয়া চাই।
প্রিয় Iqbal Bahar Zahid স্যারের সেশন চর্চার মাধ্যমে নিজের জীবনকে সফল করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি লেগে আছি থাকবো সফল না হওয়া পর্যন্ত থামবো না তৈরী করবো নিজের বলার মতো একটা গল্প।
নিজের সফলতার দ্বারা ঐসব মানুষের কথার জবাব দিতে চাই যাদের তিক্ত কথা শুনে আমি মনোবল হারিয়ে ফেলেছিলাম।
সত্যি এটাই যখন আপনি বিপদে থাকবেন তখন আপনার পাশে খুব কম লোককেই দেখতে পাবেন যারা আপনাকে সাহস দিবে আর আপনার কষ্টের ভাগ নিবে। এতে কেউ রাজি নয় সেটা আমি আমার জীবন থেকে শিক্ষা পেয়েছি তাই এখন আর তাদের কথায় না দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি নিজের স্বপ্ন পূরণের রাস্তায়। ইনশাআল্লাহ আমিও পারবো দেখিয়ে দিবো আমি কোন অযোগ্য ব্যক্তি ছিলাম না।
পরিশেষে সবার নিকট দোয়া চেয়ে বিদায় নিচ্ছি আমার অগোছালো জীবনের গল্পে যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে সেই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৪৫
Date:- ০৭/০৬/২০২১
দোয়া কামনায়ঃ
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন
ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর
জেলাঃ শরীয়তপুর
বর্তমানঃ ঝালকাঠি
ব্যাচঃ অষ্টম
রেজিঃ ৬২৭০
প্রতিষ্ঠানঃ Alishan-bd.com
পেইজঃ https://www.facebook.com/Alishan-bdcom-106408994462192/
মোবাইলঃ ০১৯৫২৭৪৮২২২