মা বাবার সাথে কাটানো কিশোর স্মৃতি
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
🌺🌺🌺- মা বাবার সাথে কাটানো কিশোর স্মৃতি(প্রবাসে বসে স্মৃতিচারণ
🌷🌷প্রথমেই মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। যিনি আমাকে তার সৃষ্টির সেরা তথা মানব কুলে সৃষ্টি করেছেন।
🌷🌷🌷সেই সাথে আরও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় মেন্টর জনাব @iqbal bahar zahid স্যারের প্রতি। যিনি সবসময় আমাদেরকে একটি পরিবারের মত আগলে রেখেছেন। উপহার দিয়েছেন ভালবাসার প্লাটফর্ম "" নিজের বলার মত একটি গল্প ""।
প্রিয় স্যারের প্রতি ভালবাসা জানাই।
🌺আজকে আমি আপনাদের সামনে ছোট একটি বাস্তবতার গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি।
আশা করি সকলে মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
🌷🌷মায়ের ছোট বেলার কথাগুলো এখন মনের মধ্যে সবসময় নাড়া দেয়।যা ছিল ভালবাসা মিশ্রিত শাসন।
👇👇
--- রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোন মেয়ের দিকে তাকাবি না।
--- আচ্ছা, তাকাবো না।
--- নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটবি, ডানে বামে তাকিয়ে গাড়ী দেখে তারপর যাবি।
--- আচ্ছা ঠিক আছে।
--- টিফিনের টাকা যেন পকেট থেকে না হারায়, খেয়াল রাখবি।
--- আচ্ছা, খেয়াল রাখব।
--- টিফিন করে ক্লাসে বসে পড়বি, খেলাধুলা করে হাত পা ভাঙ্গার দরকার নেই।
--- আচ্ছা, খেলবো না।
--- এবার কপাল কাছে নিয়ে আয়।
কপাল কাছে নেয়ার পর অাম্মু কপালে চুমো দিল। তারপর বলল, "এবার লক্ষ্মী ছেলের মতো স্কুলে যা, স্কুল ছুটি হলে সোজা বাড়ি চলে আসবি।
এটা স্কুলে যাওয়ার সময় আম্মুর আর আমার প্রতিদিনকার রুটিন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যেন কোন মেয়ের দিকে না তাকাই সেটা বলার একটা বিশেষ কারণ আছে। অামার অাম্মু অনেক কষ্টে উনার নাম লিখাটা শিখেছেন। আম্মু লেখাপড়া জানে না। কিন্তু আম্মুর অনেক বড় স্বপ্ন, আমি এলাকার সব ছেলে মেয়ের চাইতে বেশি শিক্ষিত হব। সেটা অাব্বুও চায়। আর সেজন্য যেদিন প্রাইমারী ছেড়ে হাইস্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাব সেদিন অাব্বু বলেছিল,
তিনটি কারনে ছাত্রজীবন ধ্বংস হয়ে যায়।
১, ছাত্র জীবনে টাকার প্রতি লোভ থাকলে।
২, নেশাগ্রস্থ হলে।
৩, ছাত্র জীবনে কোনো মেয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসায় জড়ালে।
অার আমার অাম্মুও সেজন্য সবকিছু সাবধান করার পাশাপাশি এটাও সাবধান করে দেয় যেন রাস্তাঘাটে কোনো মেয়ের দিকে না তাকাই।
অামার বাবা মা অামার বন্ধুর মতো। সবকিছুই সহজভাবে বুঝাবে, সতর্ক করবে। অামার খুব ভালো লাগে।
যখন গাল আর ঠোঁটের উপর দিয়ে ছোটো ছোটো লোম গজাচ্ছিল তখন আব্বু আম্মুই বলেছিল, খবরদার বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে সেভ করতে যাবি না কিন্তু। তাহলে এই বয়সেই প্রতি সপ্তাহে সেভ করতে হবে। বছর খানেক যাক, সেভ করার বয়স হলে আমরাই তোকে বলব। অামিও চেষ্টা করি বাবা মায়ের প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য। সেজন্য এলাকায় আমাকে কিছু বলার আগে বাবা মায়ের কথা বলে। অমুকের ছেলেটা সোনার ছেলে।
সংসারের সারাদিনের খাটুনির পর আম্মু ঢুলু ঢুলু চোখে কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে আমার পাশে বসে থাকতো, আমি পড়তাম। যখন আমি বলতাম অাম্মু অামার ঘুম পেয়েছে। তখন পাশের রুমে বিছানা করে মশারি টাঙ্গিয়ে দিত। শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই তো আর ঘুম আসতো না। প্রতিদিনই যখন চোখ বুজে শুয়ে থাকতাম, আম্মু মশারী সরিয়ে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে কপালে টুপ করে একটি চুমো দিয়ে আসত। আম্মু চুমো দেবার পর আমার চোখে ঘুম আসত। আম্মুর সেই চুমোর কত বড় শক্তি সেটা আমি জানি। প্রতিদিন বাড়ির বাইরে বের হলেও অাম্মু কপালে চুমো দিত। জিজ্ঞেস করতাম, আম্মু প্রতিদিন কপালে চুমো দাও কেন? বলত, আমার তো একটি মাত্র ছেলে। তাই কপালে চুমো দেই, যেন অামার ছেলে আমার কাছে অাবার ফিরে আসে।
তো একদিন চরাঞ্চল থেকে নৌকায় ফিরে আসছিলাম। একটি ট্রলার ধাক্কা দিলে নৌকার মাচার উপরের মানুষগুলো নদীতে পড়ে যাই, আমিসহ। ইঞ্জিন চালিত নৌকার সাইটে সবাই সাতরিয়ে ধরতে পারলেও আমি ছিলাম খানিকটা দূরে। প্রাণপন লড়ে সাতার কেটে যাচ্ছি নৌকাটি ধরার জন্য। ইঞ্জিন বন্ধ করলেও গতি কমছিল না। মনে মনে ভাবছি, আমি কি আর আম্মুর চুমো খেতে পারবো না? এই মাঝনদীতে ডুবে মরবো?
হঠাৎ পিছন দিয়ে দুইজন যাত্রী নিয়ে এক স্পীড বোড আসল। অামার কাছাকাছি এসে স্পীডবোড থামিয়ে দিল। সামনে নৌকা ইঞ্জিন বন্ধ করে অপেক্ষা করছিল আর আমি স্পীডবোডে করে সেই নৌকায় পৌঁছলাম।
আমাদের এলাকায় একটি ভাঙ্গা রাস্তা ছিল। বন্যায় সে রাস্তা দিয়ে ছোটো ছেলে-মেয়েরা গেলে ডুবে যেত। বড়দেরই বুক পানি ছিল। আব্বু আমাকে কাঁধে করে সে জায়গাটুকু পাড়ি দিতেন। একদিন বলেছিলাম, "আব্বু তুমি তো আমার অনেক বড়। আমি যে তোমার কাঁধে চড়ছি আমার গুনাহ হবে না?" বাবা বলল, "পাগল ছেলে। বাবার কাঁধে চড়েই তো ঘোড়া দৌড়াবি।" আবারো বললাম, "বাবা তোমার কষ্ট হয় না?" বলেছিল, "এই কষ্টটা, এই ব্যথাটা তোর কাঁধে চড়েও আমি দেব।" জিজ্ঞেস করেছি, "কবে বাবা?" বলেছিল, "আমি যেদিন মরে যাব সেদিন আমার লাশের খাটটা তোর কাঁধে করে নিয়ে যাবি। সেদিন তোরও অনেক কষ্ট হবে।"
ধুর, পারলামই না চোখের পানিকে আটকাতে। বাবা মা তার সন্তানকে এত ভালোবাসে কেন? আরো কম ভালোবাসতে পারে না? তাদের ভালোবাসায় হিংসে হয় আমার।
একমাত্র বাবা মা'ই পারে সন্তানের ভাতের থালায় পাতিলের শেষ মাছের টুকরো তুলে দিয়ে বলতে, " "আমি একটু আগে খেয়েছি, তুই খেলেই আমার খাওয়া হবে।"
বাবা মা'ই পারে সন্তানের অসুখে রাত জেগে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে বলতে, " আল্লাহ আমার সন্তানের অসুখ আমাকে দিয়ে আমার সন্তানকে ভালো করে দাও।" সন্তান দেখে ফেললে বলবে, "আমি কাঁদছিনা তো, চোখে কী যেন একটা পড়ছে।"
আমি বলছি, তোমার ঘরের বউ তোমাকে ছাড়া ঘুমিয়ে পড়বে। কিন্তু তুমি বাইরে থাকলে মায়ের চোখে কোনোদিন ঘুম আসবে না।
কতদিন কত আস্তে আস্তে দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে চেয়েছি, তাও আবার গভীর রাতে। আম্মু পাশের রুম থেকে বলে উঠত, "বাবা আইছস?"
আবারো পানি আটকাতে পারলাম না চোখের।
অ আব্বু, অ আম্মু আমি অনেক অনেক ভালো আছি দূর প্রবাসে। শুধু তোমাদের কথা মনে পড়ে আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। এত ভালো ভালো খাবারও তোমাদের হাতে তুলে দেয়া খাবারের কাছে কিছুই না।
আমার মতো যার বাবা মা দুনিয়ায় আছে, সারাটা পৃথিবীই তার। বাবা মা থাকতে তাদের সেবা করুন, তাদের মনে কষ্ট দিয়েন না।
আব্বু, আম্মু আমি তোমাদের এত্তগুলা ভালোবাসি।
আবারও বলছি প্রিয় মা বাবার সাথে সর্বদা ভাল ব্যবহার করুন।
গল্প নয় সত্যি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৪৭
Date:- ১০/০৬/২০২১
✅মোহাম্মদ এম আলী
⭕ কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
⭕ রেজিষ্ট্রেশন টিম মেম্বার
✅ব্যাচঃ ১২
✅রেজিঃনংঃ- ৩৬১০৫
✅জেলাঃ টাঙ্গাইল ।
✅বর্তমান অবস্থানঃআল কাছিম সৌদি আরব
পেজঃ
https://www.facebook.com/শ্রেষ্ঠ-বাজার-104494994905510/
Website:
http://sresthobazar.soppiya.com