আমাদের বিয়েতে দেন মোহর ছিলো ১ লাখ টাকা
আমাদের বিয়েতে দেন মোহর ছিলো ১ লাখ টাকা এবং এটা নিয়ে তেমন কোনো উচ্চ বাচ্চ ও হয়নি।সবাই ই জানে জাহীরের সাথে এসব নিয়ে হাউকাউ করে লাভ নেই।আমার কথা হচ্ছে ১ এর বদলে ১০ দিলেই কি ই বা হতো? আমরা তো আলাদা কেউ না।আর বিয়ের সময় স্যালারি পাইতাম ৪০ হাজার টাকা।এর বেশি দিবো ও বা কেমনে?বাইক আর দুই খান কিডনিই ছিলো তখন আমার সম্পদ।তাও তো ১০ লাখ হয়না! বাপের কাছে চাইতে হইতো।বাপের থেকে টাকা নিয়ে সমাজের কাছে মান সম্মান বাড়ানোর কি দরকার?
তো সুন্দর ভাবেই বিয়ে হয়ে যায়।যদিও বন্ধুরা টুকটাক হাসাহাসি করছে।ইসরাত রে বোকা বানায় নাকি আমি অল্পের মধ্যে দান মাইরা দিছি।আমি এন্স রেডি করে রাখছিলাম।এমন কথা বললে বলতাম ওরে তো এর পরেও এক লাখ টাকা দিছি।আমার মতো সোনার টুকরারে যে ফ্রি তেই পাইলো?? তার কি?
খুব সিম্পল বিয়ে হয় আমাদের।যদিও এস্টিমেশন থেকে এর পরেও খরচ বেশি হইছিলো আমার।
ইসরাত বললো বিয়ের শাড়ি লাগবে।আমি টাকা পাঠাইলাম।ও নিজেই চয়েস করে ৩৮০০৳ দিয়ে একটা নীল শাড়ি কিনলো আর আমার জন্য ২২০০৳ দিয়ে নীল পাঞ্জাবী।ভাবছি শপিং শেষ।কিন্তু এই শাড়ি পাঞ্জাবি নিয়ে বগুড়া যাওয়ার পরে আমার নিজেরই আম্মু রিজেক্ট করে দিছে।ডবল শপিং করতে হইছে।খুব আহামরী দামী শাড়ি অবশ্য কিনা লাগেনি।ছবির আউটফিট আর কি।কিন্তু বিয়ের পরে আর কখনো এটা পড়া হয়নি।তবে নীল শাড়ি পড়ে ইসরাত মাঝে মাঝেই বের হইছে আমার সাথে।আমার পড়নে নীল পাঞ্জাবি।
বিয়ের দিনেই মোটামুটি দেন মোহর সব শোধ করে দেই।ইসরাত রে বললাম আগে যে টুকটাক গিফট দিছি ওগুলা দিয়ে কাটাকাটির অপশন নাই? মুখ বেকায় বলে লাগবেই না তর টাকা!
বোকা মেয়ে ফান বোঝেনা! সব টাকাই শোধ করে দেই আমি।তবে ইসরাত রে জিজ্ঞাসা করলে বলবে ৭৫০৳ এখন ও পায়।এই ঈদে ওর সেলামি থেকে নাকি আমি মাইরা দিছি।
এদিকে আমার শ্বশুর মশাই এর ও মন খারাপ।তাদের ভাষ্যমতে আমি তাদের কিছুই দেওয়ার সুযোগ দেইনাই।অন্তত কিছু ফার্নিচার না দিলে তাদের মান সম্মান থাকে না! এদিকে আমি চিন্তা করি আমার ছোট্ট ঢাকার বাসাতে কিছু দিলে রাখবো টা কই? থালা বাসন বটি পাতিল দুইজন এর জন্য যা লাগে সবই তো কিনে ফেলছি।তাদের মান সম্মান রাখতে হইলে তো বড় বাসা নিতে হবে।মুসিবত না?
অনেক গুলা হিসেব একেবারে টাকার অংকতেই লিখে দিলাম।বুঝানোর জন্য যে আসলেই কতোটা সিম্পল বিয়ে ছিলো আমাদের।কিন্তু এতে ক্ষতি হয়নি একদম।কিছু টাকা সেভ হইছিলো।বিয়ের পর পরেই ইন্ডিয়া ঘুরতে চলে গেছি।নিজেদের ব্যাবসা শুরু করছি।ঘরে কোনো বেড নাই সত্য কিন্তু একটা এসি কিনে লাগাইছি।প্রত্যেকবার ঢাকা যাই একটা করে পাতিল না হয় ফ্রাই প্যান কিনি।গতবার গিয়ে কিনলাম জাজিমের উপর এর তোষক।
এখন পর্যন্ত একটা পইসা না নিছি নিজের বাপ থেকে না নিছি শ্বশুর আব্বা থেকে।সম্পুর্ন নিজেদের বলে একটা সংসার গড়ে তুলতেছি।এটার একটা আনন্দ আছে।সেটা আমরা কোনো ভাবে নষ্ট করিনি,করতে চাইও না।
তবে হ্যা একটা জিনিষ আমরা অফুরন্ত চাই।সেটা হচ্ছে তাদের দুয়া।ও পাইলেই আমরা ভালো থাকবো,ভালো আছি।মাত্র তো দুইজন মানুষ আমরা।বোঝা পড়া থাকলে ভালো থাকতে কতোটুকুই বা আর লাগে??
বলছিলাম বিজনেস শুরু করছি।সেইখানেও অন্য রকম সাফল্য পাইছি।মাত্র ১০ মাসে এতো এতো মানুষের ভালোবাসা পাবো কল্পনাও করিনি।শুধু তাদের না অসংখ্য মানুষের দুয়া নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।শতরঞ্জি,শাড়ি,ব্যাগ,জুট রাগ,হ্যামক,কাস্টমাইজড দেয়াল ঘড়ি অলরেডি চলে এসেছে।দেশীয় পন্যের সুপার শপ হতে চলতেছে পেজটা।
আর পেজের নামটাও Deshio-দেশীয় 💞
জহির
জেলাঃঢাকা,ব্যাচঃ১১, রেজিঃ৩৬২২১
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৪৯
Date:- ১৩/০৬/২০২১