আমার কস্টে ভরা জীবনের গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আসসালামু আলাইকুম।
আমার কস্টে ভরা জীবনের গল্প,সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি।
শুরুতেই মহান আল্লাহর নিকট লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি,আলহামদুলিল্লাহ
যিনি আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন এবং অফুরন্ত নেয়ামত দিয়েছেন ভোগ করার জন্য।
সমস্ত আসমানী জমিনী বালা মশিবত এবং
বর্তমান করোনা মহামারী হইতে আমাকে এবং আমার পরিবারকে হেফাজত করছেন,সেই রাব্বুল আলামীনের দরবারে আবারো শুকরিয়া আদায় করি,আলহামদুলিল্লাহ।
আমি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশননের সম্মানীত ফাউন্ডার এ যুগের সেরা আবিস্কার, লাখো লাখো তরুন,তরুনীর আশার আলো,আমাদের আইকন, আইডল,প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি।স্যার অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের উপহার দিয়েছেন প্রিয় এই ফাউন্ডেশন, যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে হাজারো তরুন, তরুনী ভাল মানুষ এবং উদ্দোক্তা হচ্ছেন সেই সাথে তৈরী হচ্ছেন মানবতার সেবক।
আমি গর্বিত এমন একটা
ভাল মানুষের বিশাল পরিবারের আজীবন সদস্য হতে পেরে।
আমি প্রিয় স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
প্রানপ্রিয় ফাউন্ডেশনের প্রিয় ভাই ও বোনেরা সবাই কেমন আছেন?
আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন।
আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান,বাবা চাকুরিজীবি ছিলেন ২০০১ সালের কথা বলছি যখন আমার বয়স ১১ কি ১২ বছর হবে হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতার কারনে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বাবা চলে যাওয়ার পর আমি এবং আমার মা, আমাদের জীবনে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার নেমে আসে, একটা সময় আর্থিক অবস্থা খুব দুর্বল হয়ে যাওয়াতে মা আমাকে নিয়ে মামা বাড়িতে গিয়ে ওঠেন, অল্প কিছুদিন যেতেই শুরু হয়ে যায় আত্মীয়-স্বজনের বৈষম্যতা (বিনা লাভে তো কেও ভরণপোষণ দিবে না এটাই স্বাভাবিক) তাদের এই বৈষম্যতা আমি এবং মা আমরা সহ্য করতে পারছিলাম না, আমি মনে মনে একটি কর্মসংস্থানের অনুভব করলাম, আমার দূর সম্পর্কের মামাতো ভাইয়ের সাথে এই বিষয়ে আলাপ আলাপন করলাম তিনি খুব অল্প সময়ে আমাকে একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলেন ঢাকাতে এবং একটি থাকার জায়গাও বন্দোবস্ত করে দিলেন আমি মাকে নিয়ে সেখানে চলে আসলাম।
কর্মব্যস্ত হয়ে পড়লাম উপার্জন যদিও খুব কম ছিল কিন্তু এত বৈষম্য করার কোনো সুযোগ ছিল না, আমরা আমাদের মত করে দিন কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম।কোনো রকম দিন চলছিল আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তবুও আমরা খুশি।
আমার এই অল্প বয়সে কর্মঠ হয়ে উঠতে মায়ের কোন চিন্তার শেষ ছিল না,
আমি মাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যেটা হয়ে গেছে সেটা তো আর কখনো ফিরে আসবে না বরং আগামী দিনে কিভাবে ভালো থাকা যায় সেই চিন্তা করতে হবে, তবুও মায়ের মন মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি শুধু আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং এই চিন্তা এক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগে পরিণত হয়।
আমাদের আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না যে মাকে ভালো চিকিৎসা করাব এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে সাহায্য চাওয়া সেই ধরনের মনমানসিকতা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি এবং আমার মা। আল্লাহর রহমতে পাড়া-প্রতিবেশীরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করে মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন বেশ কয়েক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মা কিন্তু এক পর্যায়ে হাসপাতাল থেকে ডাক্তার বলে দিলেন বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এখন আর কোন চিকিৎসায় কোন লাভ হবে না, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বাসায় ফিরিয়ে আনা হলো মাকে অল্প কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে গেল এক পর্যায়ে মা ও আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন আমাকে একা রেখে,
সেদিন দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম আমি মানসিক ভাবে সমস্যায় ভুগছিলাম কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না এই পৃথিবীতে তখন আমার আপন বলার মত আর কেউ রইল না আমার, শৈশবকালে মা-বাবাকে হারিয়ে আমি একা হয়ে গেলাম।
মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ঢাকার মোহাম্মদপুরে আমার চাচতো মামা থাকতেন তিনি চলে আসেন এবং মায়ের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেন এবং আমাকে নিয়ে তার বাসায় চলে আসেন।
মামার বাসায় কিছুদিন থাকার পরে মামা আমাকে একটি ওয়ার্কশপে কর্মস্থান করে দিলেন। কিন্তু সেই কষ্টের কাজ আমার সহ্য হতো না, কোন রাত ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি চোখের যন্ত্রণায়, কারন সারাদিন ইলেকট্রিক ওয়েল্ডিং করতে হতো আমায়। কিছুদিন যাওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে থাকা যাবেনা এই কাজ আমার দ্বারা সম্ভব না যে কাজ আমার দ্বারা সম্ভব সেই কাজের সন্ধান করে সেই কাজ করতে হবে।
২০০৬ সালের জুলাই মাস,
৫০০ টাকা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম মোহাম্মদ পুর থেকে চলে আসলাম অচেনা নতুন একটা জায়গায়, "উত্তরা" কোনো মতে একজনের সাথে পরিচয় ছিল তার সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকার এবং চাকুরীর ব্যবস্থা করলাম "টেক্সাস গ্রুপে এমব্রয়ডারি ইউনিট" যেটা বর্তমান আমরা গ্রুপ নামে পরিচিত। শুরু হলো নতুন এক জীবন যুদ্ধ বয়সটা অনেক অল্প ছিল বিভিন্ন রকম মানুষের বিভিন্ন রকম মন্তব্য, সব কিছু এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম আপন গতিতে, প্রথমেই আমার কাজ ছিল সুতা কাটা কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল বহুদূর তাই নিজেকে প্রস্তুত করলাম, কাজ আমাকে শিখতেই হবে সব ধরনের, এক মাসের মাথায় কাজের গতি ভালো থাকার কারণে প্রমোশন হলো QI "Quality Inspector" সাথে থাকা অনেকেই ব্যাপারটা হজম করতে পারছিলেন না তবু আমি এক জায়গায় থেমে থাকেনি নৈশ শিফটে সবাই ৩ ঘন্টা বিশ্রাম নিত আমি ঐ ৩ ঘন্টা অন্যান্য কাজ শিখায় বেস্ত সময়ে পার করছিলাম দ্রুত গতিতে কাজ শিখতে দেখে, পিছিয়ে পড়ার ভয়ে কিছু অভিজ্ঞ ব্যক্তি আমার পিছনে পড়ে যায়, এবং ইতিমধ্যে উপরস্থ কর্মকর্তার কাছে নালিশ পৌঁছে যায়, উপরস্থ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে চাপ আসে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখতে হলে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে আগামী তিন বছরে এই প্রতিষ্ঠানেই চাকুরী করতে হবে বর্তমান বেতনেই ঠিক সেই মুহুর্তে আমার ওস্তাদ/শিক্ষক মোঃ আতাউর ভাই আমাকে পরামর্শ দিলেন তুমি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে কাজে লেগে পড়ো ইনশাল্লাহ আর কেউ তোমাকে কাজ শিখতে বাধা দিতে পারবে না বাকিটা পরে দেখা যাবে, যে কথা সেই কাজ আমিও চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়ে দিলাম লেগে পড়লাম এবং তিন মাসের মধ্যে কাজটা শিখে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য আবেদন করলাম এবং কি চাকরি ও হয়েও গেলো, মোঃ আতাউর ভাই আমাকে সাহস দিলেন তুমি যোগদান করো ইনশাআল্লাহ তুমি পারবে (প্রথম বলেই ছক্কা) ২.৫ গুন বেশি বেতনেই ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি এবং নিজের কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে চাকুরী বহাল রাখতে সক্ষম হই।এই ভাবেই ছোট ছোট আশা পূরণ হতে থাকলো। ২০১০ সালে এক সুন্দরীর প্রেমে পড়ে যাই সে এখন আমার স্ত্রী, জমিয়ে বছর খানিক প্রেম করলাম ইতিমধ্যে ২০১১ তে আমার চাকুরী হয় গাজীপুরে, উত্তরা থেকে গাজীপুরে চলে আসতে হলো চাকুরীর জন্য গাজীপুর। তখন আমাদের মধ্যে দূরত্ব যেমন বেড়ে যায় ভালোবাসা ও ঠিক তেমনি বেড়ে উঠে ২০১২ সালে সাহস করে তার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখলাম তারা প্রথমেই আমার কাছে বিয়ে দিত রাজি ছিল না কারণ আমার বাড়ি বাগেরহাট মা বাবা ও বেঁচে নেই আমার আত্মীয় স্বজনদের সাথে ও আমার ভাল পরিচয় নেই তার জন্য , তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ, তারা প্রথমেই কোন মতেই রাজি ছিল না পরে অনেক কষ্টে রাজি করালাম কেন জানি তারা আমাকে বিশ্বাস করলো জানি না তবে হ্যা এই বিশ্বাসের এখন নবম বছর চলছে ইং ২০১২ সালে
আমাদের বিয়ে হয়, আলহামদুলিল্লাহ,
আল্লাহর রহমতে দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকেই অর্থ সম্পদ না থাকলেও সুখের কোন কমতি নেই আমাদের পরিবারে।আমি এখন ২ সন্তানের জনক কন্যার বয়স ৭ বছর আর ছেলের বয়স সাড়ে চার বছর,আমার সহ ধর্মিনীও আমাদের প্রিয় ফাউন্ডেশন এর একজন একটিভ সদস্যা।এরাই আমার পৃথিবী এদের নিয়ে খুব আনন্দে কাটছে আমাদের জীবন।মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি,
আলহামদুলিল্লাহ।
আমার প্রত্যেকটা চাওয়া পাওয়া আল্লাহ খুব অল্পতেই পূরণ করেছেন এবং ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণ হওয়ার প্রত্যেকটা মুহূর্ত কে আমি উপভোগ করেছি এটাই আমার কাছে মনে হয় সফলতা.. এই প্রত্যেকটা সফলতার পিছনে সব থেকে বড় হাত হলো আমার মায়ের, ঠিক ছেলেবেলায় যে কোন কারণ বশত আমি এক জনকে বকা দিয়েছিলাম মা এই কথাটি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের কাঠি দিয়ে অল্প খানি জিব্বহা পুড়ে দিয়েছিলেন কেঁদে কেঁদে ভেবেছিলাম মা আমাকে এত বড় শাস্তি দিলেন, কিন্তু এটাই আমার জীবনের অন্যতম বড় একটা শিক্ষা হয়ে দাঁড়াবে তখন এটা বুঝতে পারি নাই.. মা ও সেদিন অনেক কেঁদেছিলেন তবে সময়ে মত সঠিক শিক্ষা দিয়েছিলেন। আজ আমার এই বাস্তব জীবনের কাহিনী লিখতে লিখতে দুই নয়ন থেকে অঝরে অশ্রু গড়িয়ে পরছে,এখন আমার মা বাবাকে খুব মনে পড়ে তারা আজ বেচেঁ থাকলে কতই না ভালো হতো, সব সময় দোয়া করি আল্লাহ যেন তোমাদেরকে জান্নাত দান করেন,আমিন।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা সবাইকে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া করার অনুরোধ করছি।
শৈশব থেকে আজ এই পর্যন্ত এসেছি কত যে কস্ট আর আপনজনদের যন্ত্রনা সইতে হয়েছে তা শুধু বিধাতাই জানে যেহুতু এটা পাবলিক ফাউন্ডেশন তাই সব ধরনের কথা প্রকাশ করতে পারছি না। সংসারে যার মাতা পিতা নাই তারাই শুধু জানে মাতা পিতা হারানো কি যে কস্ট কি যে যন্ত্রনা,কত যে বেদনাময়।
"আজ পর্যন্ত যারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন তাদেরকে আমি কখনোই মনে রাখিনি বরং তাদের কাছ থেকে শিখেছি, যারা আমার উপকার করেছেন তাদেরকে আমি আজীবন মনে রাখবো... আর এটাই আমার বৈশিষ্ট্য"
আজ আমি আমার চাকুরির পাশা পাশি একজন ভাল মানুষ হতে পেরেছি, একজন উদ্দোক্তাও বটে আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রিয় এই ফাউন্ডেশন এবং ভাল মানুষের বিশাল পরিবারের বদৌলতে,
আমি কাজ করছি,খাটি অগার্নিক পণ্য এবং গার্মেন্টস আইটেম নিয়ে।
সকলের দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে
যেতে চাই,আমি আমার প্রতিষ্ঠানে কয়েকজনের জীবিকার ব্যবস্থা করার চেস্টা অব্যাহত আছে,সবাই আমার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় মেন্টর সহ প্রিয় পরিবারের সকলের প্রতি।
এতক্ষন আপনাদের সময় ব্যয় করে আমার লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি,সবার তরে অফুরন্ত ভালবাসা রইল।
সকলের সু স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত বিদায় নিলাম,আল্লাহ হাফেজ।
আসসালামু আলাইকুম।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৪৯
Date:- ১৩/০৬/২০২১
নামঃমোহাম্মদ নোমান NOMI
ব্যাচ নং১৩ তম।
রেজিঃনং৫৪০২৫
জেলাঃবাগেরহাঁট
বর্তমান অবস্থানঃ বাংলাবাজার, রাজেন্দ্রপুর, অতন্দ্র গাজীপুর।
রক্তের গ্রুপঃ O- ve
বিজনেস পেজ লিংকঃ NoMi Online Shop