আমার জীবন থেকে নেওয়া আজ আমি বাস্তব জীবনে গল্প লিখবো।
***আমার জীবন থেকে নেওয়া আজ আমি বাস্তব জীবনে গল্প লিখবো।
পাওয়া না পাওয়ার কিছু গল্প লিখবো আজ। এই বৃষ্টি ঘন মুহুর্তে আবেগ জড়ানো সেই সৃতিময় দিনগুলো।যে অতিতের দিন গুলো মাঝে মধ্যে আমাকে দুমড়ে মুচড়ে দেয় ছারখার করে দেয়।তবুও বেচে আছি আধমরা জিবন কাটিয়ে নতুন আশার আলো খুজতে।
শুরুটা ছিলো গ্রামের এক মফস্বলে বেড়ে উঠা মেয়ের।বাবার চাকরির সুবাদে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়।ভালোই চলছিলো সব মিলিয়ে আমাদের জিবন যাত্রা।২০০২ এ বাবা হঠাৎ করে চাকরি টা ছেড়ে দিলেন।চলে আসতে হলো নিজ এলাকায়।
ওই সময় টা ছিলো একটা চ্যালেঞ্জিং। হুঠ করে নিজের গ্রাম। কাউকে সেভাবে চিনি না।এত দিন বাহিরে বাহিরে ছিলাম।বাড়ির লোকজনের সাথে না মিশতে পারার একটা ভয় কাজ করছিলো।আসলে সেভাবে কাউকে চিনতামই না।
এভাবেই চলতে লাগলো।আমিও ভর্তি হয়ে গেলাম গ্রামের একটা স্কুলে।সবকিছু ঠিক চলছিলো।
বাবার একমাত্র কন্যা ফ্যামিলির আদরের সন্তান অভাব কি বুঝতামই না।খুব স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাতাম।যখন যা ইচ্ছা হত তাই করতাম তাই কিনতাম।বাবা মা অবশ্য মাঝেমধ্যে বাধা দিতো আবার একমাত্র সন্তান বলে বেশি রাগ স্বরেও কথা বলতে পারত না।
ভুল পথে পা দেওয়ার শুরুটা ২০০৭। আমি তখন এস এস সি পরিক্ষার্থী।আর সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আমার জন্য বন্ধু নির্বাচন। যাদের সাথে সবচেয়ে বন্ধুত্ব পুর্ন সর্ম্পক্য ছিলো তারা আসলে আমার বন্ধুই ছিলো না।তারা মন থেকে আমাকে কখনো বন্ধুই ভাবতো না।সবসময়ই টাকা পয়সা খরচ করানোর জন্য তাদের কাজ হাসিল করানোর জন্য লেগেছিলো। যদিও এটা ভুল করার পরে বুঝতে পারছি।
একের পরে এক ভুল ২০০৭ সালের দিকে।বয়স বা কত ছিলো ১৫ বা ১৬ মাঝামাঝি। ভুল ঠিক এর পার্থ্যক টাই বুঝিনি।স্কুলের অন্যান্য স্যার বা ম্যাম রা বলতেন তুমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হয়ে সবসময় মানবিক শাখার বন্ধুদের সাথে থাকো এটা কিন্তু ঠিক না।নিজ বিভাগের সবার সাথে ভালো সর্ম্পক্য রাখাটা জরুরী।সত্যি কথা বলতে ২০০৫/২০০৬/২০০৭ আমি এই বছর গুলো তে বিজ্ঞান বিভাগের কারো সাথেই মিশিই নি।সবসময়ই মানবিক শাখার বন্ধুরদের সাথে চলতাম।
এগুলোই ছিলো লাইফের একেক টা ভুল। ২০০৭ এস এস সি পরিক্ষার্থী আমি।হুট করে পরিক্ষার ২৬/২৭ দিন যতদুর মনে হয় একটা অফার আসে। অফার টা হলো প্রেম আবার বিয়েও এরকম টাইপের।এই অফার টাই জিবনের সব স্বপ্ন আশা আকাংক্ষা ধুলিস্বাত করে দেয়।
বাবা মা কখনো কোন স্বিদ্ধান্তে নিষেধ করে নি বা জোর গলায় বাধাও দেয় নি হয়ত বা একমাত্র সন্তান বলে। একের পরে এক ভুল স্বিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে ২০০৭ এ আমি রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়ে ফেল করলাম😭😭
এটা এলাকা বা স্কুলের সবাই মানতেই পারেনি।কারন আমি ছাত্রী হিসেবে অনেক ভালো ছিলাম।ফেল করা টা আমার জন্য একটা দুর্ভাগ্যজনক ছিলো।
যাই হোক একেরপর এক স্বপ্ন ভেংগে গেলো।২০০৭ এর ডিসেম্ভরে এসে ফাইনালী একটা বড় ভুল করে বসলাম।সেই ভুলের খেসারত হিসেবে ২০০৮ আর পরিক্ষাই দেওয়া হয় নি।দেওয়া হয় নি বললে ভুল হবে দিতে দেয় নি পরিক্ষা।
যাই হোক জোর জবরদস্তি করে ২০০৯ এস এস সি পাশ করলাম A- পেয়ে।ভর্তি হলাম এলাকার একটা কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায়।শুরু হলো আরেক টা যুদ্ধ।ইন্টার মিডিয়েট পড়তে দেওয়া হবে না।ফার্স্ট ইয়ার এর ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষা দেওয়া হলোনা।টোটালি ফার্স্ট ইয়ার আর সেগেন্ড ইয়ার মিলে ৪ মাস ক্লাশ করেছি।সবকিছু যখন সহ্যের বাহিরে চলে যায় শরিলে যখন লাথি গুতা আর বেতের বাড়ি না সহ্য করতে পারলাম তখন আবারো চলে আসলাম বাবার আশ্রয়ে এক্কেবারে সব পিছুটান ছেড়ে। সময় টা ছিলো ২০১০। সমগ্র ভুলের অবসান ঘটিয়ে চলে আসি।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান বলেই হয়ত এত ভুলের পরেও বুকে টেনে নিয়েছিলেন।
অনেক যুদ্ধ করে পরিক্ষা দিয়ে ইন্টার মিডিয়েটে A পাই।শুরু হলো লাইফ নিয়ে কিছু একটা স্বিদ্ধান্ত নেওয়ার।ভর্তি হলাম আই এইচ টি তে ল্যাবরেটরি বিভাগে ২০১১ তে ইন্টার পাশ করে।
প্যারামেডিকেল জিবনে ২০১৩ তে খুজে পাই এক সংগ্রামী নায়ক কে আমার চলার রাস্তায়।যার অক্লান্ত শ্রম আর একনিষ্ঠ সততার জন্য আমি নিজের একটা পরিচয় খোজে পাই।প্যারামেডিক্যাল সেগেন্ড ইয়ারে যখন উঠলাম তখন ভর্তি করিয়ে দেয় সংগ্রামি জিবন সাথী আমার সরকারি সাদত কলেজে।
এতকিছু লাইফে ঘটে যাওয়ার পরেও এই লোক টা স্বাদরে গ্রহণ করে নেয় আমাকে তার জিবনে।হয়ত বা কোন একটা পুন্যের ফলে এরকম স্বামী পাওয়া যায়।
২০১৩/২০১৯ ছিলাম চাকরি হীন হতাশায় ডুবে।অনেক গুলো ভুল করে এই বছর গুলো শুধু অতীত আর অতীত নিয়ে কেদেছি।ঠিক সেই সময় গ্রুপের M H Akanda ভাইয়া দেব্দ্বুত হয়ে চলে আসেন এই হতাশায় ঘেরা মেয়েকে বুদ্ধি দেওয়ার জন্য।লিংক দিলেন গ্রুপের রেজিষ্ট্রেশন করে গ্রুপে লেগে থাকতে বললেন।তার কথা মত লেগেও ছিলাম কিন্তু সফলতা বা আশার আলো দেখিনি।
আবারো হতাশায় চলে গিয়ে সুইসাইড পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম।ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার একটা পোস্ট দেখে গ্র্যপের আপু Sagarika Ekbal আমার সাথে ৩০ মিনিট কথা বলে সর্ম্পন আমাকে ব্রেন ওয়াশ করে ফেলে।তার কথায় তার জিবনি শুনে আমি অনেক টা হতবম্ভ হয়ে যাই।এটা সম্ভবত ২০২০ এর আগস্ট বা সেপ্টেম্ভরের কথা। তার সাথে কথা বলে জিবনের মানে খুজে পাই।আশার আলো দেখতে পাই,লেগে থাকার একটা শক্তি পাই।আপুর সাথে কথা বলার পরে থেকে আজ অবধি এক টানা গ্রুপে সময় দিয়েছি যাকে বলে আঠার মত লেগে ছিলাম।
আমার মনে হয় না আমি কোন একটা দিন খুব বড় সমস্যা না হলে গ্রুপে পোস্ট দেয় নি বা কমেন্ট লাইক করিনি।সর্বোপরি লেগে ছিলাম।
ডিসেম্ভর থেকে শুরু হয় সেলের বন্যা।রোযার ইদের টোটাল সেল ছিলো ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা।
আর সবচেয়ে বড় খুশি হচ্ছে গ্রুপে ১১+ রিপিট ক্রেতা পেয়েছি। ৮৫% সেল এখন গ্রুপে মাস হিসেবে এটা হিসাব।আর বাকি টা পেইজ আর অফলাইনে।
গতকাল ১৮/০৬/২১ আমার এক দিনে সেল ১ লাখ ৩ হাজার+। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে স্যারের সেশন আর আমার লেগে থাকার মানসিকতার ফলে।
এত ভুল করেও জিবন আমাকে সুযোগ দিয়েছিলো।আর আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে স্বাদরে গ্রহণ করে নেই।
২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল আমার জিবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। জিবনের কালো অধ্যায় আমার কাজ দিয়ে মুছিয়ে দিতে চাই।যারা এতকাল আমাকে হাসি বা করোনার পাত্র বানিয়ে রেখেছিলো।তাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই আমি মুক্তি আমি সেই হতভাগা যে জিবনের শুরু টাই ভুল পথে পা দিয়ে শেষ করেছিলাম।কিন্তু আজ আমি মুক্তি পরিপুর্ন আমার জিবন এখন আপন আলোয় আলোকিত।
যারা এতকাল ভাই বোন ছিলো না বলে গোপনে বা প্রকাশ্যে শত্রুতা করে গেছেন।আজ তারা দেখেন আমি মুক্তি এখনো বেচে আছি। নিজের পরিচয় তৈরি করছি।
আমার সাথে এখন কাজ করে ৪০/৫০ জন মহিলা।যাদের সংসারে অভাবের ভার দূর করছি।সেলাইয়ের কাজ করে তাদের সংসারে হাসি ফুটেছে।
নিজস্ব প্রডাকশনে তৈরি হচ্ছে ৪০০/৫০০ হাতের কাজের ড্রেস আর বাটিক। সংখ্যা টা হয়ত অনেক কম তবে স্বপ্ন দেখি এই গ্রুপের মাধ্যম্যে একদিন এই সংখ্যা ৪০০/৫০০ থেকে ৪০০০/৫০০০ ছাড়িয়ে যাবে।
এক সময় আমিও হতাশায় থেকেছি। আমি জানি হতাশা মানুষ কে কোথায় নিয়ে যায়।তাই তো হতাশা দূর করার জন্য প্রডাকশন এর সাথে ব্লক বাটিকের ট্রেনিং দিচ্ছি অসহায় মেয়েদের কে।স্বাবলম্ভী হয়ে তারা যেনো দেশ ও দশের জন্য রোল মডেল হতে পারে।
আমার আত্তীয় স্বজন কখনো আমাকে সাহস দেয় নি।আমি যে কিছু পারবো কখনোই তারা বিশ্বাস করত না।সব সময় বলে যেত এর দ্বারা কিছুই হবে না।
কিন্তু আজ তারাই আবার বলে ভালো কিছু হবে।লেগে থাকো সময় দাও।
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা আমার মেন্টরকে।আমার মেন্টর তো ধন্যবাদের উর্ধে।স্যার আপনি নিজেও হয়ত জানেন না আমার মত কত মুক্তি আপনার গ্রুপে আছে।শুধু একটু ভালভাবে বাচার আশায় একটা নিজ পরিচয়ের জন্য লেগে আছে।
জ্বনাব ইকবাল বাহার এ যুগের কান্ডারী।তার মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন তৈরি হচ্ছে আমাদের মত হাজারো মুক্তির।
স্যার আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি একদিন আমিও দেশ ও দশের জন্য কিছু করে যাবো।সেই অবস্থান তৈরি করবোই ইনশাআল্লাহ।
আশা করি লিখাটা নতুন পুরাতন সব ভাই বোনেরা পড়বেন।এতে করে হতাশা আর অধৈর্য কেটে যাবে আশার আলো পাবেন।
মানুষ মাত্রই ভুল, যদি কিছু ভুল করে থাকি বা লিখে থাকি ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ🙏🙏🙏
সবার সহযোগিতা পেলে আমি মুক্তি একদিন একটা দেশিয় ঐতিহ্য এর ব্যান্ড হবো সেই দিন খুব বেশি দুরে নয়।
আর বেশি কিছু লিখে আপনাদের মহা মূল্যবান সময় নষ্ট করব না।ভুল হলে ক্ষমা করবেন এবং শিখিয়ে দিবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আজকের মত এখানেই বিদায় নিলাম ।আল্লাহ হাফেজ।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৩
Date:- ১৯/০৬/২০২১
মুক্তি আক্তার
অনলাইন ও অফলাইন ট্রেনার( ব্লক,বাটিক)
জেলা টাংগাইল
বর্তমান অবস্থান খামারবাড়ি জামালপুর
ব্যাচ ১০ ম
রেজিষ্ট্রেশন ২১১২০
স্বত্তাধিকারী
Mukty's Handicrafts