মানুষ বুঝি এমনই হয়। কাচের কষ্ট কেউ বুঝতে পারে না অথচ হাত বাড়িয়ে দিলে বেদনাকে ছুঁতে চায়।
🌺🌺আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ক্লান্তিলঘ্ন সময় । আশা করি সবাই ভালবেসে পড়বেন ইনশাআল্লাহ ।
🌺সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি ঃ🌺🌺🌺🌺💐🌸💮🏵️🌹🥀🌻🌼🌷🌱🌲🌳🌴🌵🌾🌿☘️🍀🍁
🌺🌺 মানুষ বুঝি এমনই হয়। কাচের কষ্ট কেউ বুঝতে পারে না অথচ হাত বাড়িয়ে দিলে বেদনাকে ছুঁতে চায়। জীবনে সাদাকালো ছবি কে এড়িয়ে কল্পনার রং তুলি হাতে তুলে নেয়। আর কষ্ট যখন বাসায় এসে দাঁড়ায়। তখন তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। সুন্দর কোন মুখের জন্য হৃদয়ের সব টুকু আবেগ চোখের সবটুকু জল ঢেলে দেয়। যে মুখের সৃষ্টি কোন লেখাকে কল্পনা অথবা কোন কবিতার পঙক্তিতে আমি ঘৃণা করি সেসব মুখকে। কারণ তারা মুগ্ধ করাতে পারে ভালবাসতে পারে না।🌺🌺
🌺🌺জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কিন্তু অন্যরকম ভাবে চলছে। কোনটির সাথে কোন মিল নেই।
🌺🌺আমি আমার পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। আমরা চার বোন তিন ভাই। আমি আমার বাবার ১০০ বছরের মেয়ে। সবাই বলে খুব আশ্চর্যের বিষয়। যাইহোক জন্ম-মৃত্যু রিজিক বিয়ে এই সবগুলো বিধাতার হাতে।
🌺🌺 যাই হোক বাবা আমাকে খুব আদর করতেন। পরিবারের সবার কাছে খুব আদরের ছিলাম। খুব আনন্দে দিন কেটে ছিল। এই ভালোবাসা নিয়ে এসএসসি পাস করলাম।
🌺🌺🌺 ২০০৩ সালের এলো এক কালবৈশাখীর ঝড়। আমার জীবনের প্রথম কষ্ট পাওয়া শুরু করলাম। আমার মেজো ভাই আমার চেয়ে ১৭ বছরের বড়। তবুও অনেক বড় অনেক ভালো বন্ধু ছিল আমার।আমরা একসাথে টাশ খেলেছি, সিনেমা দেখেছি, বৈশাখী মেলায় ঘুরতে গিয়েছি অনেক কিছু এতো কিছু লেখা সম্ভব নয়। মেজো ভাইয়া ছিল আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু।
💚💚💛💛💝❤️আমার সব আবদার মিটাতেন। সব চাওয়া পূরণ করতে এসে আমার জীবনের একটা অংশ জুড়েই ছিল। সেই মানুষটিকে কিছু দুষ্কৃতী মেরে ফেলল । ২০০৩ সালের ৫ মে ।
💘💘💘 সেই থেকে শুরু হলো সঙ্গি হারা, বন্ধু, ভালোবাসা হীন জীবন। অশয্য কর জীবন। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ২০০৩ সালের ২৯ শে মে আমার এইচএসসি পরীক্ষা ছিল।আমি আর সেই পরীক্ষা দিতে পারলাম না। দেওয়ার মত সুস্থ ছিলাম না। তাকে হারানোর ছিল সবচেয়ে বড় কষ্টের।মানুষ যদি আল্লাহর নিয়ে যায় তবে আল্লাহ মানুষের প্রতি এত মায়া কেন দিলো। সেই শুরু হল কষ্ট পাওয়ার কত কষ্ট পেয়েছি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি।
😇😇😇২০০৪ সালে আমাকে সুন্দর ও ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিল। সবাই বললো মাশাল্লাহ সেইরকম একটি হাজবেন্ড পেয়েছো। কিন্তু তা ছিল মাকল ফল। উপর দিয়ে চাকচিক্য ভেতরে কিছু নেই । আমাকে বলা হল সে এইচএসসি পাস।কিন্তু বিয়ের পরে জানতে পারলাম সে কোনরকমে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। তারপর আমি চিন্তা করলাম বিয়ে তো হয়ে গেছে কি করবো মানিয়ে নেই। পড়াশোনা দিয়ে কি হয় মানুষ ভালো হলেই হবে। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি তার চরিত্রই হইল মিথ্যা বলা। আর তার পরিবার হলো এমন যারা সমাজে মেয়েদেরকে মানুষ বলে ভাবে না। ঘরে বউ মানে কাজের লোক। তাদের স্লোগান """পেট ভরে খাবে পিঠ ভরে কাজ"" করবে। এককথায় কীটপতঙ্গের জীবন। সবার আচরণে এতটাই জঘন্য যে বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টের।
🌺🌺🌺🌺 তখন পর্যন্ত ছেলের আচরণ ধরা পড়েনি। যখন আমার কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে ছেলে আসলো তখন থেকেই শুরু হলো ছেলের খারাপ আচরণ। কারন এখন আর তার থেকে চলে আসতে পারবো না। সে তার মায়ের কথা মতন আমার সাথে খারাপ আচরণ করছেন। দে আচরণ আমার সাথে করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি কত আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে কেঁদেছি। আমাকে বানিয়েছে অবলা নারী।
💔💔💔💔 তখন আমি চিন্তা করলাম এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাকে। তাই আমি আমার ছেলেকে নিয়ে আবার এসএসসি পরীক্ষা দিলাম ২০০৭ সালে । রেজাল্ট ভালো হলো তারপর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এই লোকটির থেকে কিছু পাওয়ার নেই । বেশ কয়েকটি চাকরির অফার পেলাম তাও আমাকে করতে দিল না। একথা ঘরবন্দি করে রেখে দিল।
🚴🚴🚴 কিন্তু আমিতো সেই ধাতু দিয়ে তৈরি নয়। আমি আমার রাস্তা ঠিক খুঁজতে শুরু করেছি। আমি সেই অবস্থায় আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য আমার কাজ চালিয়ে গিয়েছে। আমিঃ বিউটি পার্লারে কাজ শিখেছি, রান্নার কাজ শিখেছি, শিখেছি বাটিকের কাজ ব্লোকের কাজ শিখেছি, সব ধরনের হাতের সেলাইয়ের কাজ শিখেছি, এপ্লিকের কাজ শিখেছি, পেইন্টিং এর কাজ শিখেছে, আমার হাতের সেলাইয়ের কাজ দেখে মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এতো সুন্দর হাতে করা যায়। আমি সামাজিক কাজ করে ৩০০ মানুষের রান্না করতে পারে সেই বাবুর্চিদের মত। বিয়ে রান্নায় যে সমস্ত আইটেম হয় সব। এবার একটি দোকান দিয়েছিলাম বুটিকের । আমি ছোটবেলা থেকেই সাইকেল চালাতে পারতাম।
🚵🚵🚵 এখন আমি সাইকেল চালিয়ে সব জায়গায় পণ্য সাপ্লাই দেই। এই হল একটি পাঠ।
😡😡😡😡 অন্য পাঠে আমার সাথে তার অমানবিক আচরণ । আমার থাকা এবং খাওয়া ছাড়া সব বহন করতে হইতো আমার বাবার বাড়ি থেকে । আমার চিকিৎসা, পোশাক, ঘরের আসবাবপত্র, ছেলের পড়াশুনা, সব আসতো আমার মায়ের কাছ থেকে । আমার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ।
💘💘💘আমার ছেলেকে যখন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোচিং করানো হয়। তখনকার সময় অনেক কষ্ট করতে হয় । তার একটি ঘটনা বলি। কতটা কষ্টের। শীতের সময় আমার এবং আমার ছেলের শীতের পোশাক নেই। শুধু একটি গায়ের চাদর আছে। আমরা মা-ছেলে একটি চাদরে জড়িয়ে কোচিংয়ে যেতাম আসতাম। এরকম হাজারো ঘটনা আছে।
💘💘💘 এমনি করে দীর্ঘ ১৩ টি বছর কেটে গেল। ২০১৭ সালে আমার মেজর একটি অপারেশন হলো। তখন তিনটি স্থানে ডক্টর বললেন এই রোগির এখন অপারেশন করা লাগবে না হয় বাঁচানো মুশকিল হবে। তখন কিবে একটা অবস্থা মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে আমি দাঁড়িয়ে আছি। তখন আমার হাজবেন্ড ছিল বরিশালে আর আমি ছিলাম ঢাকা। তখন আমি তাকে ফোন দিয়ে বললাম আমার খুব খারাপ অবস্থা আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। এখন আমাকে অপরেশন করা লাগবে না হয় আমাকে বাঁচানো যাবেনা। তখন তিনি আমাকে খুব সহজে একটি কঠিন কথা বলছেন।
💘💘💘( এই ব্যাপারে আমি কিছু জানি না আমার কাছে টাকা নেই তুমি তোমার ভাইদের বলো।)💘💘💘💘তখন তার কাছে আমার অস্তিত্ব কোথায় বলতে পারেন। আমি তার কথা শুনে নির্বাক হয়ে গেলাম। তিনি আমার জন্য আর কিছু করলেন না। আমার ভাইয়েরা আমাকে অপারেশন করিয়ে সুস্থ করে তুললেন। রেয়াপাড়া শুনে আমার চার থেকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত লেগেছে। ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লেগেছে অপারেশন করতে। তিনি আমাকে দেখতে আসলেন তিনদিন পরে। কি কঠিন ভালোবাসা।😭😭
💔💔💔 আমার অপারেশনের পর তার মধ্যে ধারণা হলো আমি সারা জীবন এভাবে পঙ্গু হয়ে গেলাম। আমাকে নিয়ে তিনি আর সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন না। এখন শুরু হল আরেক কষ্ট আমি হলাম তার মাথার বোঝা। আমার সাথে শেয়ার ও খারাপ আচরণ করা শুরু করলো। তিনি আরেকটি কাজ করতেন। আমার ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন দের কাছ থেকে ঋণ করে সেই ঋণ পরিশোধ না করা। সেটা নিয়ে আমাকে অনেক অসম্মানের হাতে করতে হতো। এবং আমাকে না হয় আমার মাকে পরিশোধ করতে হতো। আমি এই অশান্তি নিতে পারছিলাম না। তার কাছে বললাম ঋণ পরিশোধ করার জন্য তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছে না ঋণ পরিশোধ করতে। এমন অবস্থায় ঘরে বড় ধরনের একটি অশান্তি শুরু হলো। আমি বললাম ঋণ পরিশোধ তোমাকে করতেই হবে। আর সেই কারণে বাসায় অনেক ধরনের অশান্তি শুরু করলো । মারামারি গায়ে হাত তোলা। অনেক কিছু। আর সেই অশান্তি টেনশনে আমার মা ব্রেন স্ট্রোক করে মারা গেলেন। আমার মা অনেক কষ্ট পেয়ে মারা গেল ওর কারনে। ২০১৯ সালে আমি আমার মাকে হারাই চিরতরে । আর আমার পৃথিবীটা ভালোবাসা শূন্য হয়ে গেল।
💔💔💔💔 মা আমাকে এত ভালবাসত আমি বাকে এত ভালোবাসতাম যে আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম। তখন তার কাছ থেকে চলে আসলাম। তার কাছ থেকে চলে আসার কারণে আমি হয়ে গেলাম খারাপ মেয়ে। আমার ভাইবোনেরা আমার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। তারা বললেন তুমি যদি তোমার হাসবেন্ডকে ছেড়ে দাও তবে আমাদের দরজার সামনে কোনদিন আসতে পারবেনা। আমিও তাকে ছেড়ে এসে আমি আমার ভাইদের দরজার সামনে আর কোনদিন যাইনি। ছেলেকে নিয়ে চলে আসলাম বনবাসে জীবনে। তখন আমার কাছে কিছু ছিল না। এখন শুরু হল আরেক যুদ্ধ। যুদ্ধশেষ হয় না। আবার একটি বুটিকের ব্যবসা শুরু করলাম। তার দুই মাস পর শুরু হলো লকডাউন। তখন কি করব ব্যবসার পুঁজি যা ছিল বসে বসে খেয়ে ফেললাম।
💔💔💔 লকডাউন সারার পর শুরু করলাম রকমারি মসলার ব্যবসা তাও আবার লোন করে। তখন আমরা মা এবং ছেলে খাবারের অনেক কষ্ট করেছি। একবেলা ভাত খেয়েছি, একবালা রুটি খেয়েছি, আর একবেলা না খেয়ে থেকেছি। অনেক কষ্ট করে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। খুব ভালো একটা পজিশনে চলে এসেছিলাম ব্যবসা নিয়ে। তখন দিল আবার লকডাউন। এখন আমি আবার নিঃস্ব ।
❤️❤️❤️❤️ স্যার এর শিক্ষা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি রকমারি মসলা আর বুটিকের কাজ নিয়ে।
🌺🌺🌺🌺স্যারের কথা শুনেছে ২০১২সালে আমার এক বন্ধু বলেছে ইকবাল বাহার নামে একজন লোক আছে। সমাজের অসহায় দুস্থ মানুষের নিয়ে কাজ করেন। শুক্রবার খাবার রান্না করে গরীবদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। ২০১৫ সালে আমি স্যারের ফেসবুক ফ্রেন্ড হই। সমাজের ছেলেদের মেয়েদের কিভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায় সেই বিষয়ে কাজ করেন । স্যার এর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ২০২০ সালে নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এর সদস্য হয়েছে।
🌺🌺🌺🌺 আমার এই প্রচেষ্ঠা আমার ছেলেটাকে পড়াশোনা করানোর জন্য। এই ফাউন্ডেশনে এসে আমি অনেক ভাই এবং বোন পেয়েছি। আমার হৃদয় ভাই ও বোনদের কাছে একটি আবেদন। আপনারা যখন আমার কাছ থেকে পণ্য কিনবেন। তখন ভেবে নিবেন আপনাদের বোনের সন্তানের পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা করছেন। আমি আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি কোন সাহায্য নয়।
🌺🌺🌺 আমরা সবাই সহ যোদ্ধা। সবার জীবনে একটি করে যুদ্ধ আছে। আর একটি করে গল্প আছে। স্যার যে কাজ করেছেন সেই কাজ করা এবাদত। আসুন আমরা আমাদের কাজকে এবাদাত মনে করে কাজ করি। স্যারের কাছে আমার একটি অনুরোধ আমি স্যারকে সরাসরি দেখতে চাই। আমার বাবা মা নেই। আমি স্যারকে আমার অভিভাবক হিসেবে মান্য করি । আমি স্যারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠে দাঁড়াবোই যত কষ্ট হোক ইনশাল্লাহ।
🌺🌺🌺❤️❤️❤️ আমি স্যার এবং স্যারের পরিবারের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন তাঁর পরিবারের সবাইকে। এই পৃথিবীতে স্যার কে খুব প্রয়োজন। পৃথিবীতে স্যার সুস্থ ভাবে অনেক বছর বেঁচে থাকুক এই আশা করি ।
❤️❤️❤️ পরিশেষে সবাইকে বলছি আমার ও আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
🙏🙏 আপনাদের সবার জন্য দোয়া রইল।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৪
Date:- ২১/০৬/২০২১
🌺🌺ধন্যবাদান্তে🌺🌺🌺
🌺 আমি সাবিনা ইয়াসমিন
🌺🌺 নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের একজন গর্বিত সদস্য
🌺🌺🌺 ব্যাচ নং ১১
🌺🌺🌺🌺রেজিস্ট্রেশন নং ২১৩৯২
🌺🌺🌺🌺🌺জেলা ঃ বরিশাল
🌺🌺🌺🌺🌺🌺বর্তমান অবস্থান ঃ লালবাগ, ঢাকা
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺 সাবিনার রশিঘর