গল্পে_গল্পে_সেল_পোস্ট
❤️❤️ #গল্পে_গল্পে_সেল_পোস্ট ❤️❤️
আসসালামু আলাইকুম
আমি আমার আম্মুকে দেখেছি সব সময় সবার সাথে সুন্দর সুসম্পর্ক বজায় রাখতে।সবার খুঁজ খবর নেওয়া,কথা বলা,কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা,কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া সকল কিছু খুব খুশি মনে করতো।নতুন নতুন মানুষের সাথে কথা বলা,তাদের কে সহজেই আপন করে নেওয়ার এক অদম্য মমতা যেন সৃষ্টিকর্তা আমার আম্মুকে দিয়েছেন।এমন অনেক মানুষ আছে যারা হয়তো রক্তের সম্পর্কে আমাদের কেউ হয়না শুধু চেনাজানা একটু তাদের প্রতি ও দায়িত্ববোধ দেখে অবাক হতাম।শুধু চেনা জানা এমন কেউ অসুস্থ হলেও আম্মু সব সময় দেখতে যায়।যদি কেউ বলে কেউ হয়না তাকে দেখতে যাও কেন?আম্মু বলে কেউ হয়না কে বললো?রক্তের সম্পর্কের বাহিরেও অনেক সম্পর্ক থাকে।সেগুলো ও সম্পর্ক। আরো বলতো যে কোন মানুষ অসুস্থ হলে তাকে কেউ দেখতে গেলে সে খুব খুশি হয়,আর অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে অনেক সওয়াব হয়।আম্মুর এই গুণ গুলো সব সময় খুব বেশি ভালো লাগতো।এখন তো আমরা যান্ত্রিক মানুষ হয়ে গেছি,আমাদের ইমোশন গুলো ও কেমন যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
কারো সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারিনা।কারণ প্রতিটি সম্পর্কের মিনিমাম কিছু দায়িত্ব থাকে আমরা নিজেকে নিয়ে এতো ব্যস্ত যে সেটা পালন করতে পারিনা।তাই দেখা যায় দিন দিন শুধু মাত্র একটু যত্নের অভাবে অনেক সুন্দর সম্পর্ক গুলো কেমন যেন হারিয়ে যায়।তবে আমি আম্মুর থেকে দেখে শিখছি কি করে সম্পর্ক কে সম্মান করতে হয়,কি করে সম্পর্কের দায়িত্ব পালন করতে হয়।সুন্দর একটা সম্পর্ক কি করে আরো সুন্দর করে তুলা যায়।যেটা আমরা এখন অনেকেই পারিনা।
কয়েকদিন আগে খালামনির বাসায় গিয়েছিলাম।প্রথম কাজ ছিলো আমার মিষ্টি একটা খালাতো বোন আছে সে দারুণ ছবি তুলতে পারে,তার কাছে প্রিয়ণিকার গহনা নিয়ে গিয়েছিলাম ছবি তুলে দিবে বলে।তারপর আরেকটা কারন ছিলো তাকে একটু ম্যাথ করে দিতে হবে।দুইজনের কাজ ই হয়ে যাবে এক ডিলে।😁
তারপর তার বাসায় যাওয়ার পর সে ছবি তুলে দিবে।গহনা ছবি তোলার জন্য সাজাচ্ছে তখন তাদের পাসের ফ্ল্যাটের এক আন্টি আসে তাদের রুমে।আন্টি গহনা গুলো দেখে বলতাছে কয় থেকে কেনা হয়েছে,ছবি কেন তুলি?দাম কত?এমন অনেক কথা জিজ্ঞেস করে।তখন খালামনি বললো এগুলো আমি বানিয়েছি।আন্টি তো বিশ্বাস ই করতে চায় না।একটু পর উনার পিচ্চি খুব কিউট আর চঞ্চল প্রানোবন্ত একটা মেয়ে মা মা করে দৌড়ে আসে।সে একটা কানের দুল দেখে সেটা নিবেই নিবে।অথচ তার কান এখনো ফুরা করা না😁।কিন্তু তার এতোই পছন্দ হয়েছে যে সে নিবে।এখন তারপর আর কি কি আছে সেটাও আমাকে দেখাতে বললো।সব তো নিয়ে যাইনি তাই মোবাইলে ছবি দেখালাম।সে ব্রেসলেট পায়েল আর কানের দুল পছন্দ করলো।আন্টি আর না করবে কিভাবে এমন মেয়ে কে?কিন্তু কানের দুল টা শুধু শুধু ঘরে রেখে দিতে হবে তারপরও নিবে সে।আমাকে বললো বানিয়ে দিতে।আমিও বললাম দিয়ে দিব।
আন্টি আমার কাজ খুব পছন্দ করেছে।উনি একটুও খারাপ চোখে দেখেননি বিষয়টাকে।অনেক এপ্রিয়িয়েট করেছে।এটা খুব ভালো লেগেছে।আন্টির সাথে অনেক কথা হয়।আন্টি অনেক বেশি ভালো,তার কথা গুলো মুগ্ধ করছিলো আমাকে।ভালোই একটা পরিচয় হয়ে যায় একদিনে।
তারপর সব কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসি।
পরদিন আমার বোন কল দিয়েছে যেন পিচ্চির গুলো বানিয়ে দেই।আমার কাছে তখন বানানোর জিনিস নেই সব।বললাম ২দিন পর দিব।জিনিস কিনে নিয়ে এসে বানাবো বানাবো করে অনেক ঝামেলার কারনে হয়ে উঠছিলো না।ঐদিকে মেয়ে তো আমার বোনকে খুব জ্বালাচ্ছিলো কেন দিচ্ছি না?এতো লেইট কেন হচ্ছে?তাই রাতে বসে বসে ওর গুলো বানিয়ে সকালে নিয়ে গেলাম।পিচ্চি দেখে খুব খুশি🥰,তার খুব পছন্দ হয়েছে।বার বার বলছে আপু ছবি তুলে দেও ছবি তুলে দেও।আন্টি আবার তার মেয়ের ছবি অন্যকারো মোবাইলে তুলতে দেয় না।এই ব্যাপারটাও খুব ভালো লেগেছে আমার।মেয়েকে ছোট থেকেই কিছু বিষয়ে সঠিক শিক্ষা টা দিচ্ছেন উনি।তাই ওদের মোবাইলেই ছবি তুলে দিয়েছি।আন্টি অসুস্থ ছিলো সেদিন।এতো চমৎকার একজন মানুষ অসুস্থ?একদিনের কথা বলাতেই আন্টিকে খুব ভালো লেগেছিলো।তার চিন্তা ভাবনা অনেক বেশি সুন্দর।মন টা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো উনার সাথে বেশি কথাও হয়নি।তারপর আর কি মন খারাপ করে চলে আসি।😔
রাতে আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছিলো।আম্মু সবার কতো কেয়ার করে আমরা কি করি?মানুষ এর খারাপ দিক গুলো নিয়ে কথা বলি,কি করে ছোট করা যায় সেটা ভাবি কিন্তু তাদের যে কষ্ট হয় সেটা?সেটা কয়জন ভাবতে পারি?খুব কম মানুষ এটা পারে।
মনে হচ্ছিলো আম্মু সব দিক দিয়ে বেস্ট।আম্মুর গুণ গুলো যদি থাকতো!!মনে হলো আচ্ছা আমার নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সে অসুস্থ,আমি কি করবো?আচ্ছা আম্মু হলে কি করতো?ঝটপট উত্তর কাল অবশ্যই আন্টিকে দেখতে যেত।🥰।তাহলে আমিও যাব।সরাসরি না বলে গহনার ছবি তুলবো এই বাহানা নিয়ে যাব।তারপর পরদিন সেটাই করলাম।খালামনিদের বাসায় গেলাম।বোন কে বললাম ছবি তোলে দিতে।কয়েকটা বকা দিলো ছবি তুলতে পারো না এখনো?তুমি আমার বোন কি করে হলে?😁,এমন অনেক অপমান করলো।সুযোগ পেলে যা হয় আরকি।
তারপর ওকে বললাম চল পিচ্চিদের ঐখানে যাই।দেখে আসি কি করে।তারপর গেলাম।আংকেল বাসায় থাকে না তাই যেকোন সময় যাওয়া যায়।গিয়ে দেখি আন্টি বসে বসে রান্নার সকল কিছু রেডি করছে।অসুস্থ বলে তো রান্না বাদ যাবে না,মায়েদের অসুস্থতার কোন ছুটি নেই।তারপর বসে টুকটাক কথা বললাম।তখন মনটা ভালো হয়ে গেলো।একটা মানুষের একটু খুঁজ নেওয়ার আনন্দ টা অনুভব করলাম।আমার মনে হলো এই আনন্দের টানেই আমার আম্মু সব সময় সবার খুঁজ খবর রাখে।আম্মুর প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেলো।
তখন আন্টির কাছে আরেকটা আপু আসে।আপু আমি কেউ কাউকে চিনি না, তখন আপু জিজ্ঞেস করলে আন্টি বললো আমি আমার খালা মনিদের বাসায় এসেছি।আপুকে তখন পিচ্চি এসে তার পায়েল ব্রেসলেট দেখালো।ব্রেসলেট আপুর ও খুব পছন্দ হলো।সে নিবে সেটা।আর মালা হবে নাকি জিজ্ঞেস করলে আমি তাকে পেইজ লিংক দিলাম। সে ছবি দেখলো।তারপর তার পছন্দ হয়ে যায় অনেক গুলো সেট,কিন্তু শাড়ির কালারের সাথে ম্যাচ করছিলো না।উনি শাড়ির ছবি দেখালো আমাকে।একটু আনকমন,কিন্তু সুন্দর।কালার টা পাব কিনা সিউর ছিলাম না।আপু অনেক খুঁজেছে কিন্তু ম্যাচ করতে পারেনি।আমিও বললাম দেখবো পাই কিনা।তখন চলে আসলাম।(আপুর গহনার ছবি নিজের টা)।
বাসায় এসে অনেক গুলো হিসাব মিলানোর চেষ্টা করলাম।ঐদিন খালামনির বাসায় যাওয়ার পর থেকে অনেক গুলো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো।আন্টির সাথে পরিচয়,তার মেয়ের জন্য গহনা,তারপর একদিনের পরিচয়ে আন্টিকে দেখতে যাওয়া,তারপর সেখানে আপুর সাথে দেখা হওয়া,পরিচয় হওয়া,তার জন্য গহনা বানানোর অর্ডার এগুলো একটাও তো ভাবিনি।কিন্তু কেমন একটা সার্কেল হয়ে গেলো।একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের সাথে পরিচয়,একটা সম্পর্ক থেকে নতুন সম্পর্ক তৈরি।আমাকে তারা চিনতো না, আমি কে,কি কাজ করি কেউ জানতো না কিন্তু এখন যেন অনেক পরিচিত।কি চমৎকার নেটওয়ার্কিং।
সত্যি জীবনের সব হিসেব আমাদের ক্যালকুলেশনে হয়না।কিছু হিসেব না মিলা টাই ভালো।নতুন সম্পর্ক গুলো একদিনে অনেক ভালো বন্ডিং হলেও সেটা ধরে রাখতে হলে যত্নের প্রয়োজন।মনে হচ্ছিলো এই সম্পর্ক গুলোর কি যত্ন নিতে পারবো?আমি তো আম্মুর ই মেয়ে পারবো কি??হয়তো পারবো,হয়তো না।।।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৫
Date:- ২২/০৬/২০২১
হিজাব ইমতিয়াজ সায়মা
ক্যাম্পাস এম্বাসেডর
ব্যাচ-১২,রেজি-৩৮২৮২
জেলা-ময়মনসিংহ
কাজ করছি হাতের তৈরি গহনা নিয়ে
পেইজ---- প্রিয়ণিকা-prionika
#প্রিয়কে_সাজাই_প্রিয়ণিকা