আমার জন্ম প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু।
কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া আদায় করছি
সেই মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে যিনি আমাকে এই করোনা কালীন সময়ে আমাকে সহ পরিবারের সকল সদস্যদের ভালো রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
আমি ও আপনাদের দোয়া ও আশুকবাদে আল্লাহর রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ ।
আশা নয় বিশ্বাস থেকে বলছি আপনারা সবাই ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন । এই দোয়ায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন ভাল রাখেন সবাইকে ।
আমি আজকে আমার জীবনের গল্প শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ । আপনারা কি শুনবেন, তাহলে শুনুন
এবং ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আন্তরিক অনুরোধ করছি । অনুগ্রহ পূর্বক পড়ার পর গঠন মূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ ইনশাআল্লাহ - আশা করি ইন্সপায়ার করবেন ঘাড়ে ও পিটে চাপিয়ে দিয়ে বলবেন- তুমি পারবে তোমাকে পারতেই হবে ভাই। আন্তরিকতার সাথে সাহায্য সহযোগিতা করবেন প্লিজ ।
আমার এখন ধ্যান জ্ঞান ,চিন্তা চেতনা ধারণা শক্তি সাহস সবকিছুই এখন নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন ও এই গ্রুপের আপন ভাই ও বোনেরা আপনারাই এখন রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি আপন মনে হয় । আমি সবসময় আপন মনে করি সবসময়।
আমি মোঃ লোকমান হোসাইন মামুন
পিতা মোঃ নজরুল ইসলাম সরকার
মাতা মোছাঃ নুরুন্নাহার বেগম ওরফে (নুরনেছা )
গ্রামের বাড়ি হলদিয়া -সাঘাটা- গাইবান্ধা ।
আমার জন্ম প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি । জন্ম সাল ১৯৮৮ ।
আমার মায়ের কোল আলো করে জন্ম নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখলাম । সেই বাবা-মাকে আমার পক্ষে কৃতজ্ঞতা ও অসংখ্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা । আমার বাবা-মায়ের অত্যন্ত আদরের ছেলে ছিলাম , আমাকে অনেক আদর ও ভালোবাসা দিয়ে লালন পালন করছেন ।
আমাকে নিয়ে মা বাবার অনেক স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল ছেলে একদিন অনেক বড় হয়ে মা- বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে । কারণ আমি ছিলাম তৃতীয় আমার বড় দুই বোন ছিল । এর পর আবার আমার এক ছোট ভাই আসেন আমাদের মাঝে । আমরা হলাম দুই বোন দুই ভাই পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০৬ জন । ০৬ জন পরিবারের সদস্য । ভালোই দিন চলছিলো তখন আমাদের পরিবারের তেমন কোন অভাব নেই আমি তখন খুব ছোট ছিলাম তেমন কিছু বুঝতাম । এখন আমার বড় আপু আমাদের মাঝে নেই চলে গেছেন উপর আল্লাহর কাছে । আপু ব্লাড ক্যান্সার নামক এক মরণব্যাধি রোগের সাথে যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেন মৃত্যু কালীন সময়ে আপু রেখে যান তার ফুটফুটে তিনটি ছেলে সন্তান মাশাল্লাহ তার ছেলে সন্তান গুলো আসমানের চাঁদের মত সুন্দর । সবচেয়ে ছোট ছেলের বয়স মাত্র ১.৬ বছর
মানে দের বছর । আপুর জন্য আমরা দুইপক্ষেই থেকে চিকিৎসা করেছি । কোন কিছুই তেই ওষুধে কাজ করে
তখন আমাদের একটা ৮ শতাংশ জমি ছিল রংপুর শহরের সে জমি বিক্রি করে বাবা চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন , তবুও বাঁচাতে পারিনি আমরা ।আপু আমাকে সবচেয়ে বড় বেশি ভালবাসতেন ।
বড় আপুর জন্য সার্বক্ষণিক দোয়া করি মহান আল্লাহতালা উনাকে বেহেশত সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন আমীন।
আমার প্রিয় বাবা"
বাবা ছিলেন তাদের পরিবারের বড় ছেলে । আমার বাবা সহ উনারা ছিলেন নয় ভাই -বোন , পাঁচ ভাই আর চার বোন বাবা সবার বড় । পরিবারের বড় ছেলে বাবাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল বেশি দুর লেখা পড়া করার সুযোগ হয়নি , কিন্তু আমার বাবার মুখে এবং চাচা ও ফুপিদের মুখে শুনেছি বাবার কাছেই উনাদের লেখা পড়ার হাতের খরি । আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করি, কারণ উনি অত্যন্ত নির্বোধ এবং সৎ মানুষ হিসেবে আলহামদুলিল্লাহ এলাকায় উনার একটা সুনাম আছে । উনি সবার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে তার জীবন টা বিসর্জন দিয়েছেন ।
তার বিনিময়ে উনি পেয়েছেন সবার অবহেলা এবং অবহেলিত । বাবাকে অনেকেই ঠকিয়েছেন যা আমি কিছু টা দেখিয়েছি ।
একটু বলছি বাবাকে যদি তার কোন ভাই বা বোন এসে ডাক দিতো বড় ভাই আমার এটা লাগবে ওটা করব ইনশাআল্লাহ তাহলে ঐ ব্যক্তির কাজ হয়েছে নিজে থেকে ঐ কাজ শেষ করেছেন । এটাই চিরন্তন সত্য কথা আমার চোখে দেখা । তারা ছোট ভাই বোন আমাদের অভাবের সময় বা প্রয়োজনীয় সময় কেউ পাশে ছিল না এটাও দেখছি । অভাবের সময় চেয়ে ছিল আমি সাথে ছিলাম তারা বলেছেন ভাই তোমাকে দিলে তুমি তো পরিশোধ করতে পারবে না সুতরাং সম্ভব না 🥲🥲🥲
এবার আসি আমার দাদা জানের কথায়!
আমার দাদা মৃত্যু নবাব আলী সরকার যিনি ছিলেন সেই সময়ের একজন জোরদার উনার অনেক জায়গা সম্পত্তির টাকা পয়সার মালিক ছিলেন যা কোন কিছুর অভাব ছিল । দুই চার গ্রামের লোকজন আমাদের বাড়িতে বা জমিতে কাজ করতেন । এলাকায় সবাই উনাকে এক নামে চিনতেন নবাব আলী সরকার।
আমি যতদূর জানি উনার সম্পত্তির ছিল ৬৫ বিঘা জমির মালিক । প্রত্যেক দিন ২০/৩০ লোক কাজ করতেন । আমার দাদা ছিলেন পর উপকারী সব সময় অন্যের জন্য কাজ করতেন । যার জন্য মনে হয় উনি এই সুন্দর পৃথিবীতে বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারেন নি। উনার ক্ষণস্থায়ী জীবনটা বেশ ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারেনি । চলে যেতে হয় তাকে সুন্দর দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে । আমি তখন খুব ছোট আমার বয়স মাত্র ৪/৫ বছর হবে সম্ভবত , দাদুর চলে যাওয়া টা আমাকে মাঝে মাঝে মনে হয় তখন খুব কষ্ট পাই আমার কষ্টে বুকটা ফেটে কান্না চলে আসে, যদিও দাদুর সাথে অল্প কিছু স্মৃতি বিজড়িত ।দাদু আমাকে ঘাড়ে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন , বাজার থেকে মজা কিনে নিয়ে আসতেন , এসেই আগে আমাদের ঘরে চলে আসতেন (মাকে) বলতেন বউ মা আমার দাদু ভাই কই । আফছা মনে আছে দাদুর কথা । তারপর কোন একদিন সকাল বেলায় হঠাৎ করে চারদিকে শুধু হই -চই আমি আমার ছোট্ট ফুপির কোলে উনি আমাকে নিয়ে ছুটাছুটি করছেন , আমি কিছু বুঝতে পারছি না ? এরপর যে পুরোপুরি বুঝলাম আমাদের বাড়ীর আগে হাজার হাজার লোকজনের মেলা কি হয়েছে কি হয়েছে এমন আমাকে নিয়ে গেলেন সেখানে দেখলাম দাদুকে খুব আহত করা হয়েছে নারভূরি বের হয়ে গেছে , রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে পুরো যায়গায় । হাসপাতালে নেওয়ার পথেই দাদু মারা গেলেন । দাদু মারা যাওয়ার কারণ ছিল জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে , দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ।
তখন সময়টা ছিল সকাল বেলা ৭/৯ টার মধ্যে
সাল ১৯৯২/৯৩ আমার কাছে লেখা ছিল ডায়রি তে
কাছে না থাকার জন্য সঠিক সময় টা দিতে পারলাম না দুঃখিত।
মজার বিষয় হলো এখন ও কেউ আমাকে আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে দাদুর নাম বলতেই , উনারা কান্নায় ভেঙে পড়েন আহা রে কি যে ভাল মানুষ ছিলেন তোমার দাদা ।
আমি তখন একটু একটু আমার আপা দের সাথে স্কুলে যাই আবার বাড়িতে গ্রহ শিক্ষকের কাছে লেখা পড়া শিখছি । উনার নাম ছিলেন আবদুল মতিন
খুবই ভালো পড়াইতেন । পাশাপাশি আমার সেজো কাকা আমাকে পড়াতেন , কিন্তু দুঃখের বিষয় কাকার ছিল ভিষন রাগ একটু না পাড়লেই খুব মার দিতেন । একদিন মারতে মারতে কাঁচা কনচি ভেঙে ফেললেন।
এখনো মনে পড়ে সেই দিনের কথা গুলো ।
এর এক কি দূই বছর পর আমরা আমাদের দাদার পুরাতন বাড়ীতে চলে আসি সবাই একসাথে ।
আগে যেখানে ছিলাম সে যায়গার নাম ছিল কানাইপাড়া - তারপর চলে আসলাম বীর হলদিয়াতে
অবশ্য আমরা চলে আসার কিছুদিন পর নদী ভাঙন শুরু হয় টানা তিন চার বছরে কয়েক টা গ্রামের বাড়ি ঘর জায়গা সব ভেঙ্গে নতনছ হয়ে যায় ।যাই হোক
এখানে আমরা বসবাস শুরু করলাম ।
এখানে হলদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম শুরু হলো নতুন একটা গল্প , এখানে তেমন কাউকে চিনতাম পরে আস্তে আস্তে চিনা পরিচিত লাভ করলাম অনেক বন্ধু হয়ে গেল। এখানে অনেক চাচাতো ভাই বোন ফুফাতো ভাই বোন এভাবে খালাতো ভাই বোন। মূলত এখানেই আমার বেড়ে উঠা প্রাইমারি স্কুল শেষ করে আবার ভর্তি হলাম হাই স্কুল এ
সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় । আমাদের গ্রাম থেকে ০৩/০৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত মুটামুটি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম । তারপর কেমন যেন হারিয়ে যেতে বসেছে লেখা পরা । ঐ সময় আমাদের সংসারে অভাব
চলে আসে এখানে আসার পর পরই আমার বড় আপুর বিয়ে হয়ে যায় ৯৫ সালে তখন আমি ক্লাশ থ্রি বা ফোরে পড়ি । বাবা অনেক গুলো টাকা ব্যয় করে বোনকে বিয়ে দিলেন । আবার আমি যখন ক্লাশ এইটে উঠলাম তখন মেঝ আপুর বিয়ে হয়ে যায় । সেখানেও তিনি আরও অনেক টাকা খরচ করলেন , কিছু টাকা ধার করতে হয়েছিল আমাদের । তখন বাবার অবস্থা তেমন ভালো ছিল না । বুঝতে পারছেন তো সংসারে যা জমানো কিছু সব শেষ এখন । এই দিকে তেমন জমিজমা নেই সব জমি গুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় । যেহেতু আমার বাবা ছিলেন একজন কৃষক , তিনি তার নিজস্ব জমিতে কাজ করতেন ভালো ফসল ফলাতেন । এই ভাবে আমার বেড়ে উঠা এখানে কিছু জমি ছিল ঐ দিয়ে কোন মতো দিন কাটে আমাদের ।
বিশেষ করে আমি আমাদের কষ্ট গুলো খুব কাছে থেকে দেখেছি কিভাবে যে আমরা দিন পার করছি
একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো যাযেন ।
যাইহোক
এই টান পরনের মধ্যে দিয়ে চলছে আমার পড়াশোনা
প্রথম বার এস, এস, পি তে ফেল করলাম , ফেল করার মনে হলো আর পড়াশোনা করবো না ,তারপর পরের বছর পরিক্ষা দিয়ে পাশ করলাম ।
প্রথম একটা অর্জন পাশ করলাম আমার পরিক্ষার ফলাফল দেখে আনন্দে আত্মহারা এক দৌড়ে বাড়িতে এসে মাকে ছালাম করলাম । তারপর বাড়ীর আশে পাশে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াইলাম ।
এরপর শুরু হলো নতুন ইতিহাস ভর্তি হয়ে গেলাম নিজ এলাকায় সাঘাটা ডিগ্রী কলেজে । শুরু গেল এক নতুন জীবন কলেজ জীবন এ এক অদ্ভুত আনন্দ উপভোগ করলাম । ভালোই চলছিল কিছু দিন কিন্তু সংসারে অভাব থাকার কারণে তখন থেকেই সংসারের হাল ধরতে হবে । চাকরি খোঁজার চেষ্টা করছি , আমার খুব ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনী তে চাকরি করব ,সে ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আর টুকটাক পড়াশোনা করছি , কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সেনাবাহিনী কেন , কোন বাহিনী তে ঠুকতে পারলাম না , মেডিক্যাল, রিটার্ন পর্যন্ত যেতে পারছিলাম ✅ তারপর চেষ্টা করলাম আনসার ব্যাটালিয়ন সেখানে ৫৬ দিন ট্রেনিং করার পর একটা সমস্যার চলে আসতে হলো । এভাবে প্রায় ৫/৬ লক্ষ টাকা নষ্ট হয়ে গেল এগুলো শুধু ঘুষ দিতাম । ঘুষের টাকা গুলো অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি তুলতে পারি নাই ।
এই নানান প্রতিকূলতা মাঝে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিলাম আবারও সেই একই অবস্থা ইংলিশে ফেল করলাম । ফেল করার পর দেখলাম আমার থেকে সবাইকে কেমন যানি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ! অনেকেই মুখের উপর বলে জানান দেয় তোকে আর কিছু হবে না । তখন আমি কারো কোন কথার উত্তর দিতে পারতাম না ,কারণ তাদের বলার সুযোগ আছে আমার নেই । পরে একা একা বসে নিরবে কেঁদেছি ।পরের বছর একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । পরিক্ষা দিয়ে পাশ করলাম ।
তারপর জীবিকার তাগিদে আমাকে অনেক রকমের কাজ করতে হয়েছে ।
আমার প্রথম জীবনের চাকরি নিলাম
রহিমা আফরোজ সোলার ফাউন্ডেশনে ।
জব নিলাম এবং জয়েন করলাম শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় ।
ইউনিট সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কাজ করলাম টানা
প্রায় দুই বছর । তারপর আর ভাল লাগে না কেমন যেন ভিতরে ছেলে মানুষি কাজ করে , মনের সাথে যুদ্ধ করে টিকতে পারলাম না । চাকরি ছেড়ে চলে আসলাম বাড়ীতে আবার বাড়িতে কিছু দিন থাকার পর ঢাকায় চলে আসলাম মাল্টিপারপাস co-operative সোসাইটি
লিমিটেড। এটা একটা এনজিও সিস্টেম যেখানে প্রত্যেকদিন কিস্তি তুলতে হয় ।
১৩০ জন ব্যবসাহিক কে ঋণ দেওয়া হয় । প্রত্যেক দিন কিস্তি তুলতে হবে একই গ্রাহকের কাছ থেকে ।নয় মাস চাকরি করলাম । ভালো লাগে না কিছু তবে কাজ শুধু বিকাল পাঁচটা থেকে রাত আটটা বা নয় টা পর্যন্ত । সারা দিন বাসায় বসে থাকি একা , বেতন ৬০০০ টাকা মাত্র । এই দিয়ে আমার চলতো না আমাকে অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে । পরে আমার এক দুঃসম্পর্কের ভাইকে আমি ফোন করে বললাম ভাই আমার একটা চাকরি দিতে পারবেন উনি বললেন তুমি চলে আসো দেখছি কি করা যায় । তিন চার দিন পর ভাই ফোন দিয়ে বললো চলে আসো । চাকরি ছেড়ে চলে আসলাম ঢাকার বাইরে প্রিয় গাজীপুর সময় টা ছিল ২০১০ সাল ।
তখন থেকে এই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাষ্টার বাড়ি তে থাকা শুরু । খুব ভালো লাগে এখানে থাকতে সবকিছু যেন আপন মনে হয় ।
নিজ বাড়ীর মতো চলাফেরা করি । এখন ও আছি এখানে ।
শুরু করলাম বন্দি জীবন সকাল ৮ টায় ডুকি রাত ১০ টায় বের হই। এই সুন্দর পৃথিবীর আলো বাতাস আর তেমন চোখে পড়ে না । প্রথম এক মাস আমার খুব কষ্ট হইছে যা আজও ভুলতে পারেনি 🥲🥲। চাকরি নেওয়ার দুই তিন বছর এই ভাবেই চলছি । বেতন পাই খাই চলি কিছু বাড়ীতে দেই । কিন্তু বিশ্বাস করুন চলতে খুব কষ্ট হতো বেতন পাবার, তিন চার দিন পর একটা চা খাওয়ার টাকা থাকত না ।
ঠিক তখন থেকেই আমি অন্য কিছু একটা করার চিন্তাভাবনা আমার মাথায় কাজ করতে লাগলো , এই চাকরির পাশাপাশি আমাকে অন্য কিছু করতে হবে কিন্তু কি করব বুঝতে পারছিলাম। শুধু সারাক্ষণ নিজে নিজে চিন্তা ভাবনা করলাম । যেহেতু আমার কাছের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন পরিচিত ভাই তারা ভালো ভাবে পড়াশোনা করছেন ভালো মানের ইউনিভার্সিটি থেকে বের হবে । ভালো চাকরি করবেন অনেকেই -আর সেখান আমি চিন্তা করলাম আমার এই গার্মেন্টসের চাকরি কোন গ্যারান্টি নাই কোনো ভবিষ্যৎ নাই । মনে মনে ভাবলাম শুক্রবার দিন যেহেতু বন্ধ পাওয়া যায় তাহলে এই দিন টাই বাসায় বসে না থেকে সময় কে কাজে লাগাই । শুক্রবার করে বিভিন্ন যায়গায় ঘোরাঘুরি শুরু করলাম এইভাবে বেশ কিছু দিন পার করছি না মাথায় কোনো আইডিয়া কাজ করে না । লোকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছি না 🤔🤔🤔
মানে কিছু করতে আমার মানসম্মানে বাধা দেয়।
তার পর একদিন হঠাৎ করে কিছু রেডিমেড গার্মেন্টস গেঞ্জি । টি শার্ট আর কিছু পলো শাট কিনলাম ।
ক্যাশ মাত্র 2 হাজার টাকা । পাইকারি দামে কিন্তু সেগুলো বিক্রি করব কিভাবে। মার্কেটিং করব কি করে সম্ভব এই নিয়ে ভাবতে থাকি , তখন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো শুক্রবার দিন বিকালে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে বিক্রি করব সেই অনুযায়ী একটা কাটুন সংগ্রহ করলাম । এরপর শুক্রবার দিন কোন কিছু মনে না সোজা সামনে দিকে তাকিয়ে গেলাম বাজারে ফুটপাতে ডানে বামে না তাকিয়ে , প্রথম দিন ১২০০ টাকা বিক্রি করে ছিলাম । তারপর থেকে মনের ভেতরে একটা সাহস নিলাম । অফিসে কিছু বন্ধু আছে বললাম দোস্ত তোমরা টি শার্ট আর পলো শাট অন্য যায়গায় থেকে কিনছো । আমার কাছে আছে বন্ধু ।
তো আমি কিছু পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করছি , আমার প্রডাক্ট দেখে পছন্দ হলে নিবে। ব্যস পরের শুক্রবার থেকে আমার একটু একটু করে বেচাকেনা হয়ে গেল আর এগিয়ে যেতে থাকলাম ।
তখন থেকে লেগে আছি আজো ও ঐ একটু করে ।
তখন থেকে আমার শুরু উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা
বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ছিলাম ৫০০০০ টাকা সেটা দিয়ে আবার শুরু করলাম এইভাবে চলছে দিন ।
আমার ভিতরে কাজ শিখার খুব আগ্রহ ছিল ,তাই আমি আস্তে আস্তে মোটামুটি চার পাঁচ টা সেকশনের কাজ শিখতে থাকলাম । কাটিং , সুইং ,ফিনিশিং, প্রিন্টিং এমব্রয়ডারি ,নিটিং ডাইং সেলস মার্কেটিং ।এসব কাজ মোটামুটি ভালই পারি । যে কোন সেকশনে কাজ করতে পারব ইনশাআল্লাহ । একটা চাকরি গেলে আরেকটা ধরতে পারব । এটাও আমার একটা এচিভমেন্ট ।
আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে আমি সিনিয়র (MOH স্টাফ )চাকরি করছি আলহামদুলিল্লাহ । ম্যানেজমেন্ট অপারেশন হোল্ডার স্টাফ । মহান আল্লাহতালা উপর কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া আমাকে ভালো রেখেছেন।
আমি জানি লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে গেছে অনেক সময় নিয়ে ফেলেছি সেজন্য আপনাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম আপনাদের । আমি বর্তমানে চাকরির পাশাপাশি কিছু করার চেষ্টা করছি ।
এরি মধ্যে আমি ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে একটা দোকান ভাড়া নেই যেহেতু ,আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার একটা ছোট কাপড়ের শো -রুম দেওয়ার ।
এক লক্ষ টাকা জামানত ,আর ভাড়া ৩০০০ টাকা প্রত্যেক মাসে । আসলে শো-রুম দেওয়ার মতো আমার কাছে টাকা ছিল না , কিন্তু আমি একটা রিস্ক নেই
এক লক্ষ ছাব্বিশ আট শত চল্লিশ টাকা খরচ করে ডেকোরেশন করলাম । আর দুই লক্ষ টাকার মালামাল তুললাম । যাই হোক আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলাম । কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে কিছু দিন পরেই দেশে শুরু হয়ে গেল করোনা ভাইরাস মহামারী । আমার দোকান বন্ধ হয়ে গেল । আমি দুই লক্ষ টাকা ধার নিয়ে ছিলাম ,করোনার কারণে পাওনা দার দের কথা ঠিক রাখতে পাচ্ছিলাম না , আমি যে কমিটমেন্ট করছি প্রত্যেক মাসে মাসে দিয়ে দিবো । তা তো পারলাম আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না
আমি কথা ঠিক রাখতে বাধ্য হয়ে সখের শো+রুমে বিক্রি করে দেই । সেখানে আমার লজ হয়েছিল এক লক্ষ আটচল্লিশ হাজার ছয়শ টাকা 😭😭😭
০১-এরপর আমি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি কিন্তু ভেঙে পরি নি এখন আমার একটা ফুটপাতে হকার্স মার্কেটে ছোট্ট একটা কাপড়ের দোকান আছে ।
০২- কাজ করছি কবুতর ও পাখি নিয়ে
মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর কালেকশন আছে
আমার লফ্ট এ এখন প্রোডাকশন ভালো প্রত্যেক মাসে ডিম বাচ্চা পাচ্ছি খুব ভালো লাগে ।
আমার অফিস টাইম বাদে , আমি এগুলো নিয়ে সময় কাটাই ।
এই হচ্ছে আমার ক্ষুদ্র জীবনের গল্প আংশিক কিছু তুলে ধরলাম আপনাদের মাঝে ইনশাআল্লাহ।
দয়া করে কিছু মনে করবেন প্লিজ
আপনাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম
এই জন্য জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাচ্ছি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য আমার লেখার মধ্যে ভুল ক্রুটি হলে অনুগ্রহ পূর্বক আমাকে ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং শিখিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ ।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৫
Date:- ২২/০৬/২০২১
লোকমান মামুন
১৩ -তম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ৫৩৩৩৭
নিজ জেলা গাইবান্ধা
পেশা চাকরি এবং উদ্যোক্তা
বর্তমান অবস্থান- গড়গড়িয়া মাষ্টার বাড়ি,শ্রীপুর গাজীপুর।