এভাবেই কেটে গেল ছয় মাস
আমার জীবন
আমার নিজের বলার মত একটা গল্প
আসসালামু আলাইকুম
আমি আনিসা জারা জেলা বরিশাল।আমরা এক ভাই এক বোন।আমি বড় আমার ছোট ভাই এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
যখন আমার বয়স তিন বছর তখন থেকে ঢাকায় থাকা হয় আব্বু আম্মুর সাথে।আমার প্রথম ঢাকায় জীবন শুরু হয় বাদামতলী থেকে তারপরে মালিটোলা, আরমানিটোলা, তাতিবাজার আরো অনেক আশেপাশের এলাকায় ছিলাম। ছোটবেলা প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি সুরিটোলা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বংশাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। আমার পড়াশোনার মাঝে দাদা মারা যাওয়ার পরে আম্মু ছোট ভাইকে নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।আমি রয়ে যাই আব্বু এবং নানুর সাথে ঢাকায়। আব্বু কখনই রাজি ছিল না আমাকে গ্রামের স্কুলে পড়াতে।যখন ক্লাস এইটে পরীক্ষা দিলাম ফাইনাল তার আগে থেকেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল নানু বাড়িতে চলে যাবে মামারা বিদেশে থাকতো তারা চলে এসেছে তাই নানুর বাড়িতে চলে যাবে আর ঢাকায় তখন একা থাকা সম্ভব ছিল না তাই আমাকেও বাধ্য হয়ে যেতে হবে বাড়িতে সেখান থেকেই পড়াশোনা করতে হবে।
এর মধ্যেই আব্বুর কাছে আমার বিয়ের প্রস্তাব আসে কেন জানি আব্বু সেখানে রাজি হয়ে গেল। ওরা বলেছিল দেখতে আসবে আমি এতোটুকুই জানি কিন্তু জানতাম না দেখতে এসে যে বিয়েটা হয়ে যাবে।😭
সবকিছু কেন জানি চোখের পলকে ধ্বংস হয়ে গেল এত স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করব আম্মুর স্বপ্ন ছিল নার্সিং পড়াবে মানুষদের সেবা যত্ন করব কিন্তু কই সেসব। যাইহোক আব্বু কে অনেক কথা বলেছিলাম তখন কিন্তু আব্বুর কাছ থেকে শুনেছিলাম গ্রামে গেলে সেখানে ছেলে মেয়ে একসাথে পড়াশোনা করে আর ওই টাইমটা নাকি ছেলে মেয়ে উভয়ের জীবনে ভুল করার সময় তাই আব্বু কোনরকম রিক্স নিতে চায় না।এটা কোন কথা? আব্বু একজন টিচার হয়ে এই ভুলটা করেছে। যাইহোক ক্লাস নাইন থেকে শুরু হয়ে গেল নতুন একটা জীবন সংসার জীবন পড়াশোনা জীবন।
যে মেয়েটা বিয়ের আগে অবধি প্লেটটা ধুয়ে ভাত খাইনি সেই মেয়েটা আজ কয়েকটা দিন এর মধ্যে বাড়ির বড় বউ হয়ে গেছে সব দায়িত্ব তার মাথায় নিতে হবে আর সেই মেয়েটার বয়স তখন মাত্র 13 বছর। 😭😭
আমার বাবা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমিও সেই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।কেন জানি বিয়ের একটা বছর সবকিছু ঠিক ছিল তারপর থেকেই শ্বশুরবাড়ির সবাই যৌতুক এটা-ওটা চাওয়া আমার বাবার বাড়ি থেকে সেগুলো না পাওয়া এবং তার প্রেক্ষিতে আমাকে মানসিক-শারীরিক পারিবারিক-সামাজিক সব ব্যাপারে টর্চারিং করা সব সময় এবং সেটা সবাই করতো। কারো কাছে কখনো সাপোর্ট পায়নি।
এর মধ্যেই আমার জীবনে চলে আসলো আমার সন্তান শুরু হয়ে গেল নতুন আর একটা যুদ্ধ সবদিক সামলে নিয়ে বাবার বাড়ির আবদার শ্বশুর বাড়ির কাছে শ্বশুর বাড়ির আবদার বাবার বাড়ির কাছে সব দিক নিজে একা মেইনটেইন করেও পারিনি কারো মন জোগাতে।😭😭
12 বছর সংসার জীবন একযুগ প্লাস কিন্তু কাউকে খুশি করতে পারেনি আমার হাজব্যান্ড শারীরিকভাবে অনেক টর্চারিং করছে আমার উপরে একটু হলেই থাপ্পর একটু হলে বকা একটু হলেই মাইর যেখানে সেখানে যখন তখন যার তার সামনে।😭😭
বাবা মাকে বলেছি কিন্তু তারাও আমাকে সাপোর্ট করেনি উল্টো বলেছে তোমার দোষ তুমি ঠিকভাবে চলো সব ঠিক হয়ে যাবে সবার সেই একই কথা আমার হাজব্যান্ড কখনো আমার বাবার বাড়ির সামনে বসে আমাকে খারাপ ভাবে একটা কথা বলত না কিভাবে দোষ দিব আমার বাবা-মার কখনো দেখেনি যে জামাইকে আমার উপরে খারাপ ব্যবহার করতে।
শেষ পর্যন্ত 12 বছর সংসার করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম আর সম্ভব না এবার নিজেকে কিছু করতে হবে বাবা-মার কাছ থেকে কোনো হেল্প পাব না আর শ্বশুরবাড়ির কেউ ভালো হবে না সারা জীবন এরকম টর্চারিং আমার উপরে করতে থাকবে তাই হাজারকষ্ট হাজার দুঃখ অভিমান নিয়ে আমার ছোট্ট পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে বাসার থেকে বের হয়ে যাই।
এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে কোথায় যাবো কি করবো কিভাবে থাকবো কিভাবে আমার সন্তানকে মানুষ করব ওর মুখে ভাত তুলে দিব কিছুই জানিনা কিন্তু তারপরও এভাবে আর থাকতে পারব না কখনোই না সম্ভবই না কিন্তু আত্মবিশ্বাস ছিল নিজের উপরে আমি অনেক রকম কাজ জানতাম কিছু না কিছু একটা করে অবশ্যই খেতে পারবো আবার ভয় ছিল তখন পুরোপুরি লকডাউন ছিল বাংলাদেশে।
যাই হোক সকল চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে শুরু করেদিলাম অনলাইনে আমার উদ্যোক্তা জীবন মোটামুটি চলছে কাজ যেভাবে হোক কোনো রকম দিন পার করছি আমার ছেলে আর আমি তাও এই নিষ্ঠুর ঢাকা শহরের আশেপাশে সাপোর্ট করার মত কেউ নাই। ছিল মানসিক অনেক চাপ ফাস্ট টাইম বাবা-মা সবার থেকে ভিন্ন,কারো সাথে কোন যোগাযোগ নাই, হচ্ছিল অনেক কষ্ট তারপরও সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সময় বলতাম আমি পারবো।
এভাবেই কেটে গেল ছয় মাস হঠাৎ একদিন আমার বাবা আমাকে খুঁজে পেল তারপর থেকে তো তাদের সেই আগের বোঝানোর ক্ষমতা আমার উপর প্রয়োগ করলো আমিতো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি দুনিয়া উল্টে যাবে ওই সংসারে আমি আর যাব না। তাই আর সম্ভব হলো না বাবা-মার আমাকে বোঝানোর।
ডিসেম্বরের ২ তারিখে জয়েন করলাম Young Entrepreneur নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের ফেসবুক গ্রুপে। প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত যারা আমাকে হেল্প করে আসছে তাদের মধ্যে অন্যতম Sane Rafi Abdul Ahaad Md Sohel Rana Isɱʌt Hʌsʌŋ Md Mahbubur Rahman Bhuiyan এবং আরও অনেক ভাই বোনেরা।
আস্তে আস্তে নিজের পরিচয় তুলে ধরে নিজের পণ্যের পরিচিতি তুলে ধরে পরিচিত হতে শুরু করলাম।
চার দিনের মাথায় আমার এই গ্রুপ থেকে অর্ডার চলে আসে খেজুরের আচার এর।
আস্তে আস্তে করে এই গ্রুপের সাথে পথ চলা এখন কাজ করছি রায়েরবাগ থেকে ওয়ারী জোনে এবং কদমতলী থানার অন্তর্ভুক্ত।
এখান থেকেই পেলাম অনেক সাহস পরিবার না থাকলেও পেলাম বিশাল বড় একটা পরিবার তার ওপরে ওয়ারী জোনের প্রতিটা ভাই-বোন এতোটা আপন করে নিয়েছে আমাকে যা বলার বাইরে। ব্যবসায়ীক কাজে হোক বা ব্যক্তিগত কাজে যে কোন সমস্যায় তাদেরকে বারবার নক করি যেকোনো সময় তারা সবাই চেষ্টা করে সেই সমস্যার সমাধান করার। অনেক ভালবাসি ওয়ারী জোনকে এবং অনেক ভালোবাসি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর সবাইকে এবং প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যার কে।
এখন গত 3 মাস যাবত অফলাইনে আমার ছোট্ট একটা দোকান দিয়েছি কিন্তু ওরকম ভাবে এখনো দোকান টা কন্টিনিউ করতে পারছি না প্রথমত এলাকার মধ্যে দোকানটা তার উপরে আমি একা বাসার সব কাজ করতে হয় সন্তানকে মাদ্রাসায় নিয়ে যেতে হয় আনতে হয় ওর দিকে খেয়াল রাখতে হয় তার মধ্যে মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে যায় তারপর আর সময় হয়ে ওঠে না অফলাইনে দোকানটায় সময় দেওয়া তাই অনেকটা পিছিয়ে গেছি কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমি পারবো অবশ্যই পারব আমাকে পারতেই হবে।
আমি চাইনা আমার ছেলে কখনো আমাকে বলুক যে ওর বাবা থাকলে সে ওর ইচ্ছে গুলো পূরণ করত কিন্তু আমি পারছি না বা কখনো এসে আমাকে বলুক ওর বন্ধু আজকে এটা কিনেছে এটা খেয়েছে কিন্তু আমি ওকে দিতে পারছিনা।😥😭
আমি চাই ওর সকল ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে এবং ভালো একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এ যেন সব সময় নিজেকে উজাড় করে দিতে পারে সবার জন্য প্রতিটা ভালো কাজের জন্য আল্লাহ সেই তৌফিক যেন আমার ছেলেকে দেয়।
সবাই দোয়া করবেন ওর জন্য এবং আমার জন্য যেন কোনরকম ভাবে থাকতে পারি এবং অন্যকে সাহায্য করতে পারি সবসময়।☺😍🤝💗
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৮
Date:- ২৫/০৬/২০২১
আমি আনিসা জারা
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
রেজিস্ট্রেশন নং - 45734
ব্যাচ নং - 12
রক্তের গ্রুপ - B+
জেলা - বরিশাল
বর্তমান ঠিকানা - ঢাকা, রায়েরবাগ ( ওয়ারী জোন)
কাজ করছি
মাশরুমের তৈরি প্রোডাক্ট
খেজুরের আচার
রেডি টু কুক গরুর ভুড়ি
ডাবের পুডিং
হোমমেড খাবার এবং অন্য দেশি পণ্য নিয়ে।
ওনার অফ Sob Deshi সব দেশী (ঘরোয়া খাবার এবং দেশি পণ্য)
https://www.facebook.com/sobdeshi1