আমি একজন সিঙ্গেল মা
প্রথমে আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে মহান আল্লাহর কাছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে,আমি সুস্থতার সাথে বেঁচে আছি। আরো অভিনন্দন জানাচ্ছি,ইকবাল বাহার স্যার কে। শুভেচ্ছা রইল জেসমিন আক্তার জুই আপুর প্রতি।
আমি যদিও খুবই কম সময়াতীত করেছি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের পরিবারের সাথে।তবুও আমার আত্মবিশ্বাস জন্মেছে এই পেইজের আপু ভাইয়া দের প্রতি।সম্মানিত স্যারের উপর।তার এই কস্ট স্বার্থক।তিনি সেখাতে পেরেছেন, জীবনে সাফল্য লাভের জন্য টাকা দরকার নয়।একজন ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। কিভাবে আমাদের অপরের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতে হয়?সত্যি অসাধারণ লাগছে। এই শিক্ষা আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটা আশীর্বাদ।
এবারে আমি আমার জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।
আমি একজন সিঙ্গেল মা। আমার ছেলে(২১+) আর মেয়ে (১৭)
নিয়ে আমার পথচলা। ওদের জন্য আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সঠিক মুল্যায়ন করতে পারি নি।আমি মানষিক ভাবে ভেঙে পরেছিলাম।তবে একটু একটু করে দাড়াঁনোর জন্য এহেন কোন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করিনি।আমি সকল কস্টগুলোকে আমার জীবনের হাসিখুশি তে ভাসিয়ে দিয়ে চলতে চেষ্টা করেছি।বারেবারে পরে গেছি আবারও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।আমি মহিলাদের সকল আইটেম নিয়ে কাজ করছি।
😭২০১৮ এর বানিজ্য মেলায় অনেক সাহস করে স্টল নিয়ে ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই শুরু করেছিলাম।আমাদের মালামাল ঢুকানোর আগেই আমার মা অসুস্থ হয়ে জরুরি ভাবে স্কয়ার হসপিটালে ভর্তি হন।আমি দিনের বেলা আমার মেলার কাজকর্ম করি আর রাতে মায়ের কাছে থাকি।মেলা শুরু হয়,আমি রাতে যেতাম ১১ টায়।সারারাত থেকে সকালে কোনদিন মেলায় আবার কোনদিন বাসায় এসে ওদের জন্য রান্না করে সবকিছু গুছিয়ে যেতাম।দুঃখের বিষয়,মেলা যখনই জমতে শুরু করে আমার মায়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।আমি আর যেতেও পারছি না সময় মত।মাকে নিজের হাতে খাওয়ানো বা আই সি ইউ তে জরুরি যোগাযোগ করতেও পারছিনা।ল;২০১৮ এর বানিজ্য মেলায় অনেক সাহস করে স্টল নিয়ে ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই শুরু করেছিলাম।আমাদের মালামাল ঢুকানোর আগেই আমার মা অসুস্থ হয়ে জরুরি ভাবে স্কয়ার হসপিটালে ভর্তি হন।আমি দিনের বেলা আমার মেলার কাজকর্ম করি আর রাতে মায়ের কাছে থাকি।মেলা শুরু হয়,আমি রাতে যেতাম ১১ টায়।সারারাত থেকে সকালে কোনদিন মেলায় আবার কোনদিন বাসায় এসে ওদের জন্য রান্না করে সবকিছু গুছিয়ে যেতাম।দুঃখের বিষয়,মেলা যখনই জমতে শুরু করে আমার মায়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।আমি আর যেতেও পারছি না সময় মত।মাকে নিজের হাতে খাওয়ানো বা আই সি ইউ তে জরুরি যোগাযোগ করতেও পারছিনা।আমার ভাইবোন দের বলে আমি কিছুদিন যাইনি।আমার মা আমাকে দেখার জন্য পাগলের মতো করেন।আমি মেলার শেষদিকে আর মন দিতেই পারছিনা।লোক ও পাচ্ছি না।এক পর্যায়ে আমার অনেক গুলো কাপড় চুরি হয়।আমি যখনই মায়ের কাছে যাই এবং খুলে বলি আমার কাজের কথা।মা বললেন,তুই তো উড়াল পাখি! তোর সব কাজ পড়ে থাকবে শুধু তোর মা থাকবে না!
আমি মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম,মেলা করব না।সবকিছু নিয়ে মেলা থেকে বের হতে কতৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।আমি সবকিছু গুছিয়ে বের হতে রাত তখন ২ টা বাজে।আমার মা না খেয়ে বসে আছেন। আমি মালামাল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে মায়ের কাছে যাই তখন রাত ২.৩০ মিনিট। তবে শেষ কয়টা দিন থাকতে পেরেছিলাম মায়ের পাশে।মেলা শেষ হলো ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে আর আম্মা আমাদের রেখে চলে গেলেন ১৬ ফেব্রুয়ারী। কেঁদেছিলাম মেলার জমজমাট অবস্থা দেখে। কিন্তু যখন মা'কে হারিয়ে ফেলেছি বুঝলাম আমি হেরে যাইনি।আমি মায়ের কাছে থাকতে পেরেছিলাম। আমার হাতেই শেষ পানি চেয়ে খেলেন মা আমার। দোয়া কালম পড়তে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ।
❤️ তবে আমি সামলে উঠতে পারিনি। পুরো একটা বছরই লেগেছিল। নিজেকে সামলানোর জন্য একটা স্কুলে জব নেই। ২০১৯ এর আগস্ট থেকে২০২০ এর ১৬ ই মার্চ আমার স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।কোন বেতন পাচ্ছি না।আবারও মানষিক ভাবে ভেঙে পরেছিলাম। এরপর আমি হোম মেড খাবারের অর্ডার নিয়ে কাজ শুরু করি।চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাহস ও শক্তি হারাইনি। মনোবল আছে। আছে আমার মা বাবার দোয়া।এরপরে যখন নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সম্মানিত ইকবাল বাহার স্যার এর লেখা গুলো আমি বেশ কিছু দিন যাবত পড়ি এবং দেখার চেস্টা করছি। ভালোই লাগছে। আরো উৎসাহ পাচ্ছি। বদলে যাচ্ছে আমার মানষিক অস্তিরতা।মনে মনে বলতে থাকি,আলহামদুলিল্লাহ আমি তো একজন ভালো মানুষ। কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়া আমার ছোট বেলার অভ্যাস।আনন্দ পাই কারো জন্য কিছু করতে পেরে।এটা আমার মা বাবার শিক্ষা। আমার নৈতিকতা, আমার দ্বীনের শিক্ষা আমাকে পথ দেখাবে, ইনশাআল্লাহ।
🍁এরপর আমি রেজিষ্ট্রেশন করতে সাহায্য পাই জেসমিন আক্তার জুই আপুর কাছে থাকে।আরো আগ্রহ বেরে গেল।একটা খাবারের অর্ডার নিয়ে আমি খুঁজে কোন ডেলিভারির জন্য যখন লোক পাচ্ছিলাম না ঠিক তখনই মনে পড়লো জুই আপুর কথা।তাকে কল করি এবং আমাকে মেসেন্জারে এড করেন।আমি পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই আমাকে সহায়তা করার জন্য অনেকে এগিয়ে আসেন।তার মধ্যে আমি নজরুল ভাইয়ের সহযোগিতায় একজন বিশ্বস্ত ডেলিভারি ম্যান পাই রনি ভাইকে।আমি কোনভাবেই বুঝতে পারিনি যে,অর্ডার কমপ্লিট করতে পারব? আল্লাহর অশেষ রহমত এবং ইকবাল বাহার স্যার এর একজন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য দিনের পর দিন এতদিনের পরিশ্রমের ফল! অসাধারণ অভিজ্ঞতা! অভিনন্দন রইল আবারও নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সম্মানিত পরিচালক সহ সকলের জন্য। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।আমার চলার পথটা যেন মসৃণ করে দিন আল্লাহ। আমিন
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৮
Date:- ২৫/০৬/২০২১
আসসালামু আলাইকুম
পরিচিতি পোষ্ট।
নামঃ হালিমা পারভীন রিনি
রেজিষ্ট্রেশন নং৬৩৩৪২
ব্যাচঃ১৪
মিরপুর -২